মোদি বলতেই পারেন জয়ী তিনি আজ
সুখ চাহি নাই মহারাজ। জয়, জয় চেয়েছিনু। জয়ী আমি আজ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা নরেন্দ্র দামাদোর দাস মোদি পড়েছেন কি-না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, তিনিও জয় চান এবং তার নিজের জীবনটা জয়েরই ইতিহাস। দুই দিনের এক ব্যস্ত সফর শেষে ফিরে গেলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যে সফরকে সব মহল থেকে বর্ণনা করা হয়েছে ঐতিহাসিক হিসেবে। অভূতপূর্ব তো বটেই। শনিবার সকাল ১০টার কিছু পর বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার পরপরই আসলে তিনি তৈরি করেন এক নতুন ইতিহাস। এই প্রথম কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এলেন কোন ধরনের বিরোধিতা ছাড়াই। সব রাজনৈতিক দলই স্বাগত জানায় তাকে। আর এই সুর ধরে রাখেন মোদি নিজেও। তিনি মুগ্ধতা তৈরি করতে ভালবাসেন। একে একে ছুটে গেলেন জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা দিলেন বাংলা ভাষায়। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম আর মুক্তিসংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার আবেগ প্রকাশ করলেন অকপটে। বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করলেন যুগশ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করতে গিয়ে বয়ান করলেন তিনি নিজে কিভাবে সমর্থন করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে। বাজপেয়ীর কথা ধার করে তার দীপ্ত উচ্চারণ, রক্তের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা কখনও ভাঙে না।
এটা সত্য, এই সফরে নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের কথাই বেশি বলেছেন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্যও এ সফর কম বার্তাবহ নয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দেখা হবে কি-না তা নিয়ে চাপানউতোর চলেছে বেশ। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় সব দল-মতের মানুষের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই দেখা হলো তার। তালিকা থেকে বাদ যাননি সংসদের বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদ, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু। খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠকও হলো। এর আগের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। যে বৈঠকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের বৈঠকে স্বাক্ষরিত হয় ১৯টি চুক্তি সমঝোতা স্মারক। সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিমিয়ও হয়। ঐতিহাসিক এ ঘটনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় ছিটমহলগুলোতে।
এসব চুক্তি সমঝোতায় ভারত কি পেলো তা অনেকটাই স্পষ্ট। চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে ভারতকে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। মোদির সফর শুরুর আগে এক ভারতীয় সাংবাদিক লিখেছিলেন, নদীতে নয় দরিয়ায় ঢেউ তুলতে চান মোদি। তবে শুধু দরিয়াতে ঢেউ তুলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। সমঝোতা আর স্মারকে একটি বিষয় পরিষ্কার, জল আর সড়ক দুই পথেই ট্রানজিট পেয়ে গেছে ভারত। তবে নদীর বেলাতেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নরেন্দ মোদি। বলেছেন, তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি সমস্যার ন্যায্য সমাধান হবে সীমান্তের মতোই। তবে এসব চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভের বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হবে বলে মনে করেন কোন কোন পর্যবেক্ষক। যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশের অবকাঠামো এখনও ট্রানজিটের জন্য প্রস্তুত নয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান যেমনটা বলেছেন, আমাদের অবকাঠামো এখনও প্রস্তুত নয়। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।
ঐতিহাসিক এই সফরে নরেন্দ্র মোদি মুগ্ধ করেছেন বাংলাদেশের মানুষকে। রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকায় তিনি সরকার ও বিরোধী উভয় শিবিরেরই মন জয় করেছেন। তার এ সফরে উল্লসিত ক্ষমতাসীন দল। অন্যদিকে, সন্তুষ্ট বিরোধী শিবিরও। বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মোদির সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার বক্তব্য শুনতে এক কাতারে উপস্থিত ছিলেন সব দলের নেতারা। সফরের শেষ বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে তার আবেগি যোগাযোগের কথা বলেছেন। যে কারণে হিসাবের চোখে নয় নরেন্দ্র মোদিকে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশের এক আবেগি বন্ধু হিসেবে। দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে নরেন্দ্র মোদি বলতেই পারেন, জয়, জয় চেয়েছিনু। জয়ী আমি আজ।
ঢাকেশ্বরীতে পূজা দিয়ে দিন শুরু: জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে অর্ঘ্য ও আরতি নিবেদন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকালে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা, আরতি ও প্রার্থনা শেষে তার দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি যান রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দিরে। সেখানেও অর্ঘ্য নিবেদন ও প্রার্থনা করেন তিনি। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় নরেন্দ্র মোদিকে বহনকারী গাড়িবহর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল ফটকের কাছে পৌঁছলে তাকে অভ্যর্থনা জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) সি আর দত্ত, সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মণিসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় উলুধ্বনি ও ফুল দিয়ে তাকে বরণ করা হয়। অভ্যর্থনা শেষে মোদি যান মন্দিরে। সেখানে দেবদেবীর উদ্দেশে করজোড়ে প্রণাম করে তিনি কিছু সময় প্রার্থনা করেন। পরে দেবদেবীর উদ্দেশে আরতি নিবেদন করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত পূজাপর্ব শেষে চরণামৃত গ্রহণ করেন মোদি। মন্দিরে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) সি আর দত্ত। এরপর নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পক্ষ থেকে একটি রেপ্লিকা ও ক্রেস্ট উপহার হিসেবে তুলে দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পরে শিবমন্দির পরিদর্শন শেষে ঢাকেশ্বরী মন্দির ত্যাগ করেন নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেন, নরেন্দ্র মোদি বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। মন্দিরে পুজো দিয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। এদিকে সকাল ৯টার কিছু পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসেন রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দিরে। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (বেলুড় মঠ)-এর সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ মহারাজ, ঢাকা মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজসহ দেশের বিভিন্ন মিশন থেকে আসা সন্ন্যাসী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ফুল দিয়ে বরণ করার পাশাপাশি এ সময় তাদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় বৈদিক মন্ত্র। তিনটি কন্যা শিশু অতিথির কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়। বৈদিক মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি চলে যান মন্দিরে। সেখানে ফুল, বেলপাতা দিয়ে পুজো করে আরতি করেন তিনি। কিছু সময় প্রার্থনাও করেন মোদি। পুজোপর্ব শেষে তিনি উপস্থিত সন্ন্যাসী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের সঙ্গে হাত মেলান। অংশ নেন ফটোসেশনে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং শতবর্ষী রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও গুজরাটি ভাষায় লিখিত ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং স্বামী বিবেকানন্দের জীবনচরিত গ্রন্থ উপহার হিসেবে দেয়া হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে রামকৃষ্ণ মিশন ত্যাগ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমরা তাকে সনাতন প্রথা অনুযায়ী বরণ করেছি। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে তিনি পূজা ও প্রার্থনা করেছেন।
ভারতীয় অনুদানে ছয় প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মোদি: ওদিকে গতকাল দুপুরের আগে ঢাকার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চান্সেরি কমপ্লেক্সে গিয়ে ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে কমপ্লেক্স চত্বরে রোপণ করেন বকুলের চারা। প্রকল্প ছয়টির মধ্যে রয়েছে- নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী গার্লস হোস্টেল; ঢাকার মিরপুরের অন্ধ শিক্ষা ও পুনর্বাসন উন্নয়ন কেন্দ্র ভবনের চতুর্থ তলা নির্মাণ এবং টাঙ্গাইলে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে হিন্দি বিভাগ প্রতিষ্ঠা, সংগীত বিভাগে রেকর্ডিং স্টুডিও এবং নৃত্যকলা বিভাগে সহযোগিতা প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন মোদি। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে সবার সঙ্গে ক্যামেরার সামনেও দাঁড়ান মোদি।
মোদি-রওশন বৈঠক: এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। গতকাল বিকালে সোনারগাঁও হোটেলে মোদির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে তিনি নিজেই সেই তথ্য জানান। বলেন, মোদি আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে রওশনের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ ও তাজুল ইসলাম চৌধুরী। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে রওশন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় আমরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে বিদ্যমান সমস্যাগুলোরও ধীরে ধীরে সমাধান হবে।’ আটকে থাকা তিস্তা নিয়ে কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়েও কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেছেন, আমরা সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করলে সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। তবে বিএনপিবিহীন গত সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কোন কথা হয়নি বলে জানান বিরোধীদলীয় নেতা। বৈঠক জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রতীক নাঙ্গলের একটি কোটপিন মোদিকে পরিয়ে দেন রওশন।
বাম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক: রওশনের পর জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ইনু সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত চুক্তির সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনাকে পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে। অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে। কারণ পানি হচ্ছে উন্নয়নের বিষয়। ভারত-বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূর করতে হলে পানি সমস্যার সমাধান দরকার।’ ‘তিস্তা এবং ফেনী নদীর পানি সমস্যার সমাধনে উনি (মোদি) ইতিবাচক কথা বলেছেন, অতি দ্রুত তিনি এগুলোর সমাধান করবেন বলে বলেছেন; আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি।’ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চক্রান্তের কথা মোদী উল্লেখ করেছেন বলে তথ্যমন্ত্রী জানান।
ঢাকা ছাড়ার আগে টুইটে মোদি ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ’: ৩৬ ঘণ্টার সফর শেষে দিল্লির বিমানে পা দেয়ার আগে এক টুইট বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ। এই সফর আমার স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে থাকবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় করবে।’ গত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ভারতী বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে চড়ে দিল্লির পথে রওনা হন এখানে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফর করে যাওয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। তাকে বিদায় জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাওয়ার আগে মোদি বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি তিন ভাষাতেই বিদায়ী টুইট করেন। পরপর দুটি বাংলা টুইটে মোদি তার ঢাকা সফরের অর্জন তুলে ধরেন। বলেন, এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আমরা অতীতে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সাফল্যের সঙ্গে কাটিয়ে উঠেছি। এটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে। মোদিকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা ছিল তার ২০তম দেশ সফর।
এটা সত্য, এই সফরে নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের কথাই বেশি বলেছেন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্যও এ সফর কম বার্তাবহ নয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দেখা হবে কি-না তা নিয়ে চাপানউতোর চলেছে বেশ। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় সব দল-মতের মানুষের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই দেখা হলো তার। তালিকা থেকে বাদ যাননি সংসদের বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদ, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু। খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠকও হলো। এর আগের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। যে বৈঠকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের বৈঠকে স্বাক্ষরিত হয় ১৯টি চুক্তি সমঝোতা স্মারক। সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিমিয়ও হয়। ঐতিহাসিক এ ঘটনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় ছিটমহলগুলোতে।
এসব চুক্তি সমঝোতায় ভারত কি পেলো তা অনেকটাই স্পষ্ট। চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে ভারতকে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। মোদির সফর শুরুর আগে এক ভারতীয় সাংবাদিক লিখেছিলেন, নদীতে নয় দরিয়ায় ঢেউ তুলতে চান মোদি। তবে শুধু দরিয়াতে ঢেউ তুলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। সমঝোতা আর স্মারকে একটি বিষয় পরিষ্কার, জল আর সড়ক দুই পথেই ট্রানজিট পেয়ে গেছে ভারত। তবে নদীর বেলাতেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নরেন্দ মোদি। বলেছেন, তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি সমস্যার ন্যায্য সমাধান হবে সীমান্তের মতোই। তবে এসব চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভের বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হবে বলে মনে করেন কোন কোন পর্যবেক্ষক। যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশের অবকাঠামো এখনও ট্রানজিটের জন্য প্রস্তুত নয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান যেমনটা বলেছেন, আমাদের অবকাঠামো এখনও প্রস্তুত নয়। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।
ঐতিহাসিক এই সফরে নরেন্দ্র মোদি মুগ্ধ করেছেন বাংলাদেশের মানুষকে। রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকায় তিনি সরকার ও বিরোধী উভয় শিবিরেরই মন জয় করেছেন। তার এ সফরে উল্লসিত ক্ষমতাসীন দল। অন্যদিকে, সন্তুষ্ট বিরোধী শিবিরও। বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মোদির সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার বক্তব্য শুনতে এক কাতারে উপস্থিত ছিলেন সব দলের নেতারা। সফরের শেষ বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে তার আবেগি যোগাযোগের কথা বলেছেন। যে কারণে হিসাবের চোখে নয় নরেন্দ্র মোদিকে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশের এক আবেগি বন্ধু হিসেবে। দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে নরেন্দ্র মোদি বলতেই পারেন, জয়, জয় চেয়েছিনু। জয়ী আমি আজ।
ঢাকেশ্বরীতে পূজা দিয়ে দিন শুরু: জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে অর্ঘ্য ও আরতি নিবেদন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকালে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা, আরতি ও প্রার্থনা শেষে তার দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি যান রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দিরে। সেখানেও অর্ঘ্য নিবেদন ও প্রার্থনা করেন তিনি। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় নরেন্দ্র মোদিকে বহনকারী গাড়িবহর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল ফটকের কাছে পৌঁছলে তাকে অভ্যর্থনা জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) সি আর দত্ত, সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মণিসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় উলুধ্বনি ও ফুল দিয়ে তাকে বরণ করা হয়। অভ্যর্থনা শেষে মোদি যান মন্দিরে। সেখানে দেবদেবীর উদ্দেশে করজোড়ে প্রণাম করে তিনি কিছু সময় প্রার্থনা করেন। পরে দেবদেবীর উদ্দেশে আরতি নিবেদন করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত পূজাপর্ব শেষে চরণামৃত গ্রহণ করেন মোদি। মন্দিরে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) সি আর দত্ত। এরপর নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পক্ষ থেকে একটি রেপ্লিকা ও ক্রেস্ট উপহার হিসেবে তুলে দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পরে শিবমন্দির পরিদর্শন শেষে ঢাকেশ্বরী মন্দির ত্যাগ করেন নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেন, নরেন্দ্র মোদি বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। মন্দিরে পুজো দিয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। এদিকে সকাল ৯টার কিছু পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসেন রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দিরে। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (বেলুড় মঠ)-এর সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ মহারাজ, ঢাকা মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজসহ দেশের বিভিন্ন মিশন থেকে আসা সন্ন্যাসী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ফুল দিয়ে বরণ করার পাশাপাশি এ সময় তাদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় বৈদিক মন্ত্র। তিনটি কন্যা শিশু অতিথির কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়। বৈদিক মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি চলে যান মন্দিরে। সেখানে ফুল, বেলপাতা দিয়ে পুজো করে আরতি করেন তিনি। কিছু সময় প্রার্থনাও করেন মোদি। পুজোপর্ব শেষে তিনি উপস্থিত সন্ন্যাসী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের সঙ্গে হাত মেলান। অংশ নেন ফটোসেশনে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং শতবর্ষী রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও গুজরাটি ভাষায় লিখিত ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং স্বামী বিবেকানন্দের জীবনচরিত গ্রন্থ উপহার হিসেবে দেয়া হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে রামকৃষ্ণ মিশন ত্যাগ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমরা তাকে সনাতন প্রথা অনুযায়ী বরণ করেছি। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে তিনি পূজা ও প্রার্থনা করেছেন।
ভারতীয় অনুদানে ছয় প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মোদি: ওদিকে গতকাল দুপুরের আগে ঢাকার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চান্সেরি কমপ্লেক্সে গিয়ে ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে কমপ্লেক্স চত্বরে রোপণ করেন বকুলের চারা। প্রকল্প ছয়টির মধ্যে রয়েছে- নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী গার্লস হোস্টেল; ঢাকার মিরপুরের অন্ধ শিক্ষা ও পুনর্বাসন উন্নয়ন কেন্দ্র ভবনের চতুর্থ তলা নির্মাণ এবং টাঙ্গাইলে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে হিন্দি বিভাগ প্রতিষ্ঠা, সংগীত বিভাগে রেকর্ডিং স্টুডিও এবং নৃত্যকলা বিভাগে সহযোগিতা প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন মোদি। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে সবার সঙ্গে ক্যামেরার সামনেও দাঁড়ান মোদি।
মোদি-রওশন বৈঠক: এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। গতকাল বিকালে সোনারগাঁও হোটেলে মোদির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে তিনি নিজেই সেই তথ্য জানান। বলেন, মোদি আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে রওশনের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ ও তাজুল ইসলাম চৌধুরী। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে রওশন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় আমরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে বিদ্যমান সমস্যাগুলোরও ধীরে ধীরে সমাধান হবে।’ আটকে থাকা তিস্তা নিয়ে কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়েও কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেছেন, আমরা সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করলে সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। তবে বিএনপিবিহীন গত সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কোন কথা হয়নি বলে জানান বিরোধীদলীয় নেতা। বৈঠক জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রতীক নাঙ্গলের একটি কোটপিন মোদিকে পরিয়ে দেন রওশন।
বাম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক: রওশনের পর জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ইনু সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত চুক্তির সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনাকে পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে। অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে। কারণ পানি হচ্ছে উন্নয়নের বিষয়। ভারত-বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূর করতে হলে পানি সমস্যার সমাধান দরকার।’ ‘তিস্তা এবং ফেনী নদীর পানি সমস্যার সমাধনে উনি (মোদি) ইতিবাচক কথা বলেছেন, অতি দ্রুত তিনি এগুলোর সমাধান করবেন বলে বলেছেন; আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি।’ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চক্রান্তের কথা মোদী উল্লেখ করেছেন বলে তথ্যমন্ত্রী জানান।
ঢাকা ছাড়ার আগে টুইটে মোদি ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ’: ৩৬ ঘণ্টার সফর শেষে দিল্লির বিমানে পা দেয়ার আগে এক টুইট বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ। এই সফর আমার স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে থাকবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় করবে।’ গত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ভারতী বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে চড়ে দিল্লির পথে রওনা হন এখানে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফর করে যাওয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। তাকে বিদায় জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাওয়ার আগে মোদি বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি তিন ভাষাতেই বিদায়ী টুইট করেন। পরপর দুটি বাংলা টুইটে মোদি তার ঢাকা সফরের অর্জন তুলে ধরেন। বলেন, এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আমরা অতীতে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সাফল্যের সঙ্গে কাটিয়ে উঠেছি। এটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে। মোদিকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা ছিল তার ২০তম দেশ সফর।
No comments