বিহারি ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ড
স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে নিরীহ একটি পরিবারকে তাদের নিজ ঘরে আটকে রেখে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ এটি সভ্যতা, আইন ও মানবিকতার চোখে গুরুতর অপরাধ৷ মিরপুরের পল্লবীর বিহারি ক্যাম্পে গত শনিবার ভোর থেকে দুপুর অবধি যে তাণ্ডব চলেছে, তা ঘৃণা ও বর্বরতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে৷ দুঃখের বিষয়, এ ব্যাপারে জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা আইনি পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন৷ মিরপুর বিহারি ক্যাম্পের ঘটনাটিকে বাঙালি বনাম বিহারি সংঘাত হিসেবে চিত্রিত করা সমীচীন নয়৷ এটা জমি দখলের জন্য পরিকল্পিত হামলা বলে আক্রান্ত ব্যক্তিরাসহ এলাকাবাসীর অনেকেই স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহর ইন্ধনের অভিযোগ করেছেন৷ সাংসদের ইচ্ছামতো বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ-সংযোগ অন্য বস্তিতে দিতে ক্যাম্পের অধিবাসীরা রাজি না হওয়ায় তিনি তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পরই এই নারকীয় ঘটনা ঘটল৷ সে ক্ষেত্রে তিনি দায় এড়াবেন কীভাবে? শনিবার ভোরে যেসব বহিরাগত যুবক কালশীর বিহারি ক্যাম্পে হামলা-নির্যাতন ও লুটপাট চালিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যেও তাঁর অনুসারী যুবলীগের কর্মীরা ছিলেন৷ পুরো ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমেই তার জবাব মিলতে পারে৷ ক্যাম্প থেকে বিহারিদের উচ্ছেদ না করা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসিত করা এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাও সরকারকেই করতে হবে৷ এখানে পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ৷ যারা আক্রমণের শিকার, তাদেরই নির্বিচারে আটক করেছে পুলিশ৷ আক্রমণকারীরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
দৃশ্যত, জমি দখলের উদ্দেশ্যেই বিহারিদের ঠাঁই কেড়ে নেওয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে৷ নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ঘটনার পর মিরপুরের এই নৃশংস হত্যা িকসের ইঙ্গিত দেয়? মিরপুরের ঘটনায় ইলিয়াস মোল্লাহর, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় শামীম ওসমান, ফেনীর ঘটনায় নিজাম হাজারী ও লক্ষ্মীপুরের ঘটনায় আবু তাহেরের নাম এসেছে৷ এঁরা কেবল দলের সাংসদ বা স্থানীয় পৌরসভা চেয়ারম্যান নন, অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত৷ কারও কারও নামের আগে গডফাদারের তকমাও জুটেছে৷ যেখানেই হত্যা-লুটপাট-দুর্নীতির ঘটনা ঘটে, সেখানেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না৷ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি জনজীবনকে উদ্বিগ্ন ও বিপন্ন করছে৷ ১৯৭১ সালে কতিপয় বিহািরর নৃশংস ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গোটা সম্প্রদায়কে দায়ী করা যায় না৷ তাই এই জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্র, সরকার ও সংখ্যাগুরু বাঙালি সম্প্রদায়কে হতে হবে আরও মানবিক ও সংবেদনশীল৷ যে দেশের মানুষ জাতিগত বৈষম্য ও বৈরিতার বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে তারা কোনোভাবেই অন্য জাতি বা জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈরিতা ও বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না৷ মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করছি৷
No comments