উন্নয়নের ঘাস যেন উন্নয়নের ঘোড়াই খেয়ে না ফেলে by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
ঢাকার একটি দৈনিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার চীন সফরের গুরুত্ব ও সাফল্য সম্পর্কে একটি কলাম লিখেছি। লেখাটি
প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা থেকে বেশ কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে ঘুরেফিরে একটি
প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। তারা যা বলেছেন, মোদ্দা কথায় তা হল, আপনার
মন্তব্যের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। সন্দেহ নেই, একই সঙ্গে চীন ও জাপানের
কাছ থেকে বিরাট অর্থনৈতিক সাহায্য ও সহযোগিতা আদায় করা এবং বিগ নেইবার
ভারতে সরকার পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও নতুন সরকারের সঙ্গে এত শিগগির
সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়া হাসিনা সরকারের বিদেশ নীতির এক বিরাট
সাফল্য। বিদেশ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা আদায় করে পদ্মা সেতু নির্মাণ,
কর্ণফুলী নদীতলে সুড়ঙ্গপথ তৈরি, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
ইত্যাদি দ্বারাও এই সরকার তাদের বর্তমান মেয়াদেই দেশে উন্নয়নের এক অভাবনীয়
গতিধারা সৃষ্টি করতে পারবে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি
হল, এ মুহূর্তেও দেশে নির্বাচন হলে সরকার কি ভোট পাবে?
আমার বন্ধুদের মতে, এত উন্নয়ন সত্ত্বেও মানুষ সরকারের ওপর খুশি নয়। সাম্প্র্রতিক ছোটখাটো নির্বাচনগুলোতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ জয়ী হচ্ছে না। এর মূল কারণ, দেশে উন্নয়ন ঘটছে, কিন্তু দেশকে সুশাসন উপহার দিতে পারছে না সরকার। মানুষ রাতে স্বস্তিতে ঘুমাতে পারছে না। দিনে নিরাপদে পথ চলতে পারছে না। কে কখন গুম হবে, খুন হবে তার নিশ্চয়তা নেই। আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের কথা, দেশের সাম্প্র্রতিক সব কটি গুম-খুনের ঘটনায়, তা নারায়ণগঞ্জের সাত খুন হোক কিংবা ফেনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড হোক, তাতে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এখন মানুষের মনে প্রশ্ন- রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে রক্ষা করিবে কে?
আমার আরেক বন্ধু সম্ভবত কিছুটা ঠাট্টা করে আমাকে লিখেছেন, বাংলাদেশে এখন একমাত্র আদর্শবাদী ও ঐক্যবদ্ধ দল হচ্ছে জামায়াত ও ছাত্রশিবির। তাদের আদর্শ আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরোধী হতে পারে, কিন্তু তাদের আদর্শে তারা নিষ্ঠ। অন্যদিকে তাদের মধ্যে এতটাই ঐক্য যে, জামায়াত ও শিবিরের নেতারা একে অন্যের গলা কাটে না; কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা এখন একে অন্যের গলা কাটে। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে; কিন্তু এ আদর্শের প্রতি তাদের অধিকাংশের কোনো আস্থা নেই। তাদের রাজনীতির মূলধন এখন চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, লাইসেন্সবাজি ও টেন্ডারবাজি। একদিকে সংগঠনের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল, অন্যদিকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি এই ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে এমনভাবে কব্জা করে ফেলেছে যে, জনগণ এখন এদের দাপুটে নেতা ও কর্মীদের অনেককে ভয় পায়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের জনবিচ্ছিন্নতা ক্রমেই বাড়ছে।
এ বন্ধুর মন্তব্যকেও উড়িয়ে দিতে পারি না। সম্প্রতি ঢাকার একটি কাগজে প্রকাশিত একটি খবরের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। খবরটির শিরোনাম হল- মোরেলগঞ্জে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মানববন্ধন। তাতে বলা হয়েছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে মাছের ঘের নিয়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বাদশাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের পোস্টারিং ও ছাত্রলীগের পরিচয়ে ঘের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। দক্ষিণ বাংলা কলেজ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার নজরুল ইসলাম। সম্মেলন শেষে সমাদ্দারখালী বাজার এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা জিউধরা ইউনিয়নে মাছের ঘের দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দলের মধ্যে গ্র“পিং সৃষ্টির জন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান শামীম ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগকে দায়ী করেন।
এ খবরটি ঢাকায় একটি কাগজে প্রকাশিত হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে। এর কোনো প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এ ধরনের কোন্দল এবং পরিণতিতে গুম ও খুন হওয়ার খবর এখন অহরহই চোখে পড়ে। আমার পরিচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ভদ্রলোক আমাকে জানিয়েছেন, তার কলেজে পড়ুয়া মেয়েটিকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করছে এক যুবক। এমনকি অপহরণেরও ভয় দেখাচ্ছে। পুলিশের কাছে বলে সেই যুবকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। কারণ যুবক ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত এক প্রভাবশালী নেতা অথবা কর্মী।
এ অবস্থারই সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। তারা দেশের মানুষের কাছে প্রমাণ করতে চাইছে আওয়ামী লীগ দেশ শাসনে ব্যর্থ একটি সরকার এবং দলটিও সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে পূর্ণ। খালেদা জিয়া এখন একথাই গলা ফাটিয়ে তার সভা সম্মেলনে বলছেন এবং মিডিয়াতেও তার বক্তব্য খুব গুরুত্ব পাচ্ছে। আরও দুর্ভাগ্যজনক খবর হল, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ মন্ত্রী ও এমপি এখন স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ পাহারা ছাড়া যেতে পারেন না। বিএনপি ও জামায়াতপন্থী দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হবেন, তার চেয়েও বেশি ভয় তারা নিজ দলেরই পাল্টা পক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে এ পাহারা। আর এ পাহারার জন্য তাদের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে।
বিদেশেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের কেউ কেউ জনসভায় উপস্থিত হতে ভয় পান। সম্প্রতি লন্ডনে এসেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার বক্তব্য শোনার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ম্যানচেস্টার শহরে এক জনসভার আয়োজন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগেরই সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েক ব্যক্তি মন্ত্রীকে জানায়, সভায় গণ্ডগোল হবে। ফলে তিনি ম্যানচেস্টারের সভায় আর যাননি। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা নয়; আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্যই ম্যানচেস্টারে আওয়ামী লীগের সভাটি পণ্ড হয়। মন্ত্রী মহোদয়ের মুখ থেকে দেশের সঠিক পরিস্থিতি জানার জন্য যেসব প্রবাসী বাংলাদেশী সভায় এসেছিলেন, তারা হতাশ হন। এভাবেও আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতা ক্রমশ বাড়ছে।
যে কোনো গণতান্ত্রিক দলেরই শক্তির আসল ভিত্তি হচ্ছে জনসমর্থন। এ জনসমর্থন না থাকলে কেবল সিভিল-মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির সমর্থন দ্বারা কোনো সরকার ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। আমরা চোখের সামনে তার উদাহরণ দেখছি ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল কংগ্রেসের শোচনীয় পতনে। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর থেকেই কংগ্রেস ক্রমশ আমলাতন্ত্র ও বিগ বিজনেসের হাতে বন্দি হয়ে তার রাজনৈতিক ভূমিকা ও নেতৃত্ব হারায়। মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে কংগ্রেসের জনবিচ্ছিন্নতা সম্পূর্ণ হয় এবং দল ও সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ব্যাপক হয়ে ওঠে। ফলে ভারতের ইতিহাসে ঘটেছে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা। এবারের সাধারণ নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দল গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতাও কংগ্রেস পায়নি। তার সম্পূর্ণ ভরাডুবি হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় উঠে এসেছেন গুজরাট রাজ্যের সবচেয়ে বিতর্কিত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রনাথ দামোদর মোদি। যাকে দুদিন আগেও আমেরিকা তাদের দেশে যেতে ভিসা দেয়নি।
বাংলাদেশেও কি ভারতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে? আমার আশংকা, হতে পারে যদি আওয়ামী লীগ সরকারের এত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও তার সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর না হয়, দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করা না হয় এবং সর্বোপরি আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে মাফিয়াতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে দলের ভিত্তিকে সংশোধিত ও শক্তিশালী করা না হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যেসব নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে দল থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করা উচিত। নেহেরু যেমন কংগ্রেসকে পুনর্গঠনের জন্য কামরাজ পরিকল্পনা গ্রহণ করে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগেও তেমন একটি শুদ্ধি অভিযান শুরু করা প্রয়োজন। এ অভিযানটি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রসারিত করা দরকার।
অন্য অনেক দেশের পুলিশের মতো বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধেও ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ আছে এ কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু দেশে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতা সম্পর্কে পুলিশের অপারগতার কারণও আমাদের জানা দরকার। বাংলাদেশের বহু এলাকায় সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের গডফাদার এখন আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর মন্ত্রী ও এমপি। কোনো দুর্বৃত্ত বা সন্ত্রাসীকে পুলিশ ধরলেই একশ্রেণীর মন্ত্রী বা এমপির নির্দেশে তাকে ছেড়ে দিতে হয় বা দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হয়। একশ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা তো ঘুষ খায় বটেই, তার সঙ্গে নিয়ত তাদের কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যুক্ত হওয়ায় দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি কিছুতেই ঘটানো যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে এমন তুমুল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে যে, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক হিসেবে অভিযুক্ত নূর হোসেনের খোঁজ পেতে পুলিশের দেরি হয়নি। কিন্তু সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের কিনারা করতে পুলিশ আজ পর্যন্ত পারছে না, তার কারণ কী? এর পেছনেও কি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যুক্ত রয়েছে? এ প্রশ্ন অনেকের মনেই জমা হয়ে আছে।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করার অর্থ দলটির বিরোধিতা করা নয়। দেশের এবং দলটির স্বার্থেই এ সমালোচনা প্রয়োজন। কারণ আত্মকলহে জর্জরিত দল এবং আত্মসন্তোষের গুহায় শায়িত সরকারকে যদি সতর্ক করা না হয় এবং সময় থাকতে তারা নিজেদের সংশোধিত ও সংগঠিত না করেন, তাহলে বাংলাদেশের জন্য, দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য এক বিরাট বিপদ অনিবার্য হয়ে উঠবে। বিএনপি নয়, জামায়াতই ক্ষমতা দখলের দিকে এগিয়ে যাবে। কারণ তারাই এখন সংগঠিত ও শক্তিশালী। ভারতে বিজেপির মুখোশে যেমন শিবসেনা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক দল ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশেও তেমনি বিএনপির মুখোশের আড়ালে জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারে।
এটা যে ঘটবেই তা আমি বলি না। কিন্তু এ রূঢ় সম্ভাবনার দিকে আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়, দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ও নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশের এ মহাসর্বনাশটি যেন তারা ঘটতে না দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার সাম্প্রতিক লেখাগুলোর জন্য বিরক্ত হতে পারেন; কিন্তু তাকে আমার অনুরোধ, তার সরকারের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে তিনি যে বিস্ময়কর সাফল্য দেখাচ্ছেন, সেই সাফল্য তিনি দেশকে সুশাসন দেয়ার ক্ষেত্রেও দেখান। উন্নয়নের ঘাস এখন অবশ্যই সবুজ দেখাচ্ছে; কিন্তু এই ঘাস যেন উন্নয়নের ঘোড়াই খেয়ে না ফেলে। দেশকে উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসন দানও এ সরকারের দায়িত্ব।
লন্ডন, সোমবার, ১৬ জুন ২০১৪
No comments