প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফর by নুরুল ইসলাম বিএসসি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুনিয়া
জোড়া একটা ইমেজ আছে। পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুকে চেনে না এমন লোক বিরল।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাকেও পৃথিবীর প্রায় মানুষ চেনে ও
জানে। শুধু চেনে ও জানে বললে ভুল করা হবে, সবাই সম্মানের চোখে দেখে।
গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে চীন যাওয়া একটা গর্বের বিষয়। চীনে
সফর নিয়ে অনেকে এখন আশাবাদী যে, পশ্চিমা দেশগুলো এ সরকারের ওপর যে চাপ
সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়েছিল, এতদিনে তার উপশম হবে এবং নতুন করে তারাও বিশ্ব
রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করবে। চীন এক বিরাট অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় দেশ। চীন এক
পরাশক্তি। চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। চীনে এমন
জায়গা নেই, যেখানে কলকারখানা নেই।
আমরা সর্বপ্রথম কুনমিং শহরে যাই। পাহাড়ঘেরা এ শহরের দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। উঁচু উঁচু সরকারি দালান ছাড়াও প্রশস্ত রাস্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থা, শৃংখলা- না দেখলে বোঝা যায় না। কুনমিং প্রদেশ শুধু একটি সম্পদ দিয়ে চিরজীবন বেঁচে থাকার মতো ক্ষমতা রাখে। স্টোন ফরেস্ট যে দেখেনি, সে জীবনে কিছুই দেখেনি। আমরা এতদিন চীনের প্রাচীরের কথা জানতাম, কিন্তু এবার স্টোন ফরেস্ট দেখে মনে হয়েছে স্রষ্টা নিজ হাত দিয়ে এই এলাকা সাজিয়েছেন এবং স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্টোন ফরেস্ট দেখার আগে আমার ধারণা ছিল, এটি শুধু পাথরের স্তূপ হবে এখানে ওখানে। কিন্তু না, গিয়ে দেখি যেখানে গাছপালা দিয়ে ফরেস্ট হওয়ার কথা, ওখানে গাছের জায়গা দখল করেছে পাথর। আর এই পাথর যেমন-তেমন সধারণ পাথর নয়। গাছের সমান উঁচু খণ্ড খণ্ড পাথরের জঙ্গল। মাঝে ফাঁকা জায়গা। হাজার হাজার দেশী-বিদেশী মানুষ এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে ব্যয় করেন, আর আশ্চর্য হয়ে ভাবেন স্রষ্টার এ কী লীলাখেলা!
বেইজিং বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। প্রতিদিন রাস্তায় ১০ লাখের মতো মোটরযান চলে এ শহরে। লাল-সবুজ বাতির জন্য ক্ষণে ক্ষণে থামতে হলেও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয় না। যেহেতু আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলাম, ১২ সারির মধ্যে একটা সারি আমাদের চলাচলের জন্য নির্ধারিত ছিল।
যে চুক্তিগুলো হল এবং ভবিষ্যতে যে চুক্তিগুলো কার্যকর হবে, বিশেষ করে কর্ণফুলী টানেল হলে চট্টগ্রামের চেহারাই পাল্টে যাবে। চট্টগ্রাম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। গার্মেন্টের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে এবং এখানে সবচেয়ে ফলপ্রসূ সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু চীনে শ্রমিকের মজুরি বেশি, বাংলাদেশকে তারা এখন থেকে গার্মেন্ট সামগ্রী আমদানি ও রফতানির প্রথম সারিতে রাখবে। যোগাযোগ, বন্দর, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, স্বল্প সুদে ঋণসহ নানা বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে এবং চীন সরকারের মুখপাত্ররা এ বিষয়গুলোর ওপর অত্যন্ত জোর দিয়েছেন।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান অনুষ্ঠান। এত সুন্দর অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য এই প্রথম হল। মন্ত্রী, আমলারা, উপদেষ্টারা ছাড়াও আমি ও আমার স্ত্রী ওই গার্ড অব অনারে আমন্ত্রিত ছিলাম। বেশি লোকের প্রবেশাধিকার ছিল না, কয়েকজন সাংবাদিক ও আমরা ছাড়া সৈনিক কর্মকর্তারা ছিলেন। সাংবাদিকদের জন্য আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট ছিল। ওখান থেকেই ভিডিও বা ক্যামেরা ব্যবহার করার সুযোগ ছিল।
আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলাম। আমি ও আমার স্ত্রীর জন্য একটি গাড়ি নির্দিষ্ট ছিল। প্রতি ইভেন্টে যাওয়ার আগে ড্রাইভার ১০ মিনিট আগে হাজির। গাড়ির বহরে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী যেখানে গেছেন, আমাদেরও সেখানে নেয়া হয়েছে।
কুনমিং ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশী যারা আছেন, আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং খবরাখবর নিয়েছেন। যেখানে আমাদের খরচ করার কথা, সেখানে তারাই করেছেন। ওদিকে তো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ছিল।
এক কথায় চীন সফর করে প্রধানমন্ত্রী একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের কাজ করেছেন। চীন সফর থেকে আমরা অনেক লাভবান তো হবই, মিয়ানমারের সঙ্গে মাঝেমধ্যে যে টুকটাক অপ্রীতিকর ঘটনা হয় এটাও কমবে। মিয়ানমারের ওপর চীনের বিরাট প্রভাব আছে।
কারও সঙ্গে বিরোধ নয়, আমাদের বৈদেশিক নীতি যে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব- চীন সফর এটাই প্রমাণ করে। আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতেরও সাহায্য ও সহযোগিতা চাই। জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে চীন, জাপান, ভারত- সবার সাহায্য ও সহযোগিতা আমাদের কাম্য। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ রচনা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প বাংলাদেশে নেই।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : রাজনীতিক ও কলাম লেখক
No comments