প্রবাসী-আয়ে ভাটা
আশঙ্কাটা সত্যি হলো। সত্যটা আরও কঠিন না হোক। প্রবাসী-আয়ে ভাটা পড়া কেবল অর্থনীতির জন্যই নয়, দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্যই একটি অশনিসংকেত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রয়োজন, গাফিলতির খতিয়ান প্রয়োজন। গতকাল বুধবারের প্রথম আলো জানাচ্ছে, প্রবাসী-আয়ের প্রবাহে ভাটা চলছে। ২০১২-১৩ সময়ের তুলনায় ২০১৩-১৪ সময়ে এই আয় কমেছে ৮ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের চেয়ে এই অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশ থেকে অর্থ আসা কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এই তথ্য উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। ব্যাংকের ভাষ্যমতে, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় ব্যাংক মারফত টাকা আসার পরিমাণ কমেছে। এটা হতে পারে, কিন্তু অতীতেও এ রকম পরিস্থিতিতে প্রবাসী-আয় আসার পরিমাণ তো এভাবে কমেনি। প্রধান কারণ হিসেবে বলা যায়, কয়েক বছর ধরে ক্রমেই জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়া। এই কমার মাত্রা গত বছরই ছিল সবচেয়ে বেশি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অবশ্যই এর একটি কারণ। কিন্তু কারণগুলো আরও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশি জনশক্তির প্রধান গ্রাহক মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়া শ্রমিক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
গত বৈশ্বিক মন্দার সময়ও যে প্রবাহ কমেনি, সেটা কেন এ রকম অনুকূল বৈশ্বিক সময়ে কমল, তার কারণ বের করতেই হবে। প্রবাসী-আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। এই উৎসে ভাটার টান পড়লে বিপদ হতে বাধ্য। প্রবাসীদের অনেকের বেকার হয়ে ফিরে আসা অথবা অনেক বেকারের বিদেশে কর্মসংস্থান না হতে পারার সম্ভাবনা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি। দুবাই, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যে বিরাট বিরাট নির্মাণকর্ম শুরু হতে যাচ্ছে, সেসব প্রকল্পে বাংলাদেশের শ্রমিক ও প্রযুক্তিবিদ এবং বিভিন্ন ধরনের বিশেষজ্ঞের চাকরি নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে হবে শ্রম ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে। তা ছাড়া বাংলাদেশের জনশক্তির দক্ষতাকে কায়িক শ্রমের চেয়ে আরও ওপরে ওঠানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক উন্নয়নেও মনোযোগী হতে হবে।
No comments