সরল গরল- ইউনূসকে নিয়ে হিং টিং ছট্ by মিজানুর রহমান খান
আমাদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অর্থমন্ত্রী এ
এম এ মুহিত ও আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ যা করছেন, তাতে মনে হচ্ছে তাঁরা যেন
অবতীর্ণ হয়েছেন নিজেদের নিচে নামানোর এক অভূতপূর্ব প্রতিযোগিতায়।
মন্ত্রিপরিষদ
সচিব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ তোলার
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোল পাল্টালেন এনবিআরের চেয়ারম্যান। ‘কর ফাঁকি’ নয়,
‘কিছু অনিয়ম’ পাওয়ার দাবি করেছেন তিনি। ওই দুই জাঁদরেল মন্ত্রী তন্নতন্ন
করে নোবেল বিজয়ীর ছিদ্রান্বেষণ করেছেন। তাঁদের যুগান্তকারী যৌথ আবিষ্কার,
‘অফিসের কাজের জন্য ব্যবহূত তাঁর টেলিফোন ও চারটি পত্রিকা কেনার খরচ অফিসের
বহন করাই যৌক্তিক। তবে তাঁর বাসায় ব্যবহূত দুটি টেলিফোন, একটি ইন্টারনেট
কানেকশন, একটি পিএবিএক্স ফোনের ব্যয় তাঁর কাছ থেকে আদায়যোগ্য।’ আওয়ামী
লীগের দেওয়া ‘অপশাসন’ এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক
লুটপাট-সংক্রান্ত ‘অপপ্রচারের’ বিপরীতে এই নথিপত্র দেখে আমজনতা ভাবতেই
পারেন, তাঁরা হঠাৎ নির্মল সততা ও স্বচ্ছতার রূপকথার যুগ ফিরে পেয়েছেন।
দুই মন্ত্রীর দুই জোড়া বিচক্ষণ চোখ যে কতটা অতলস্পর্শী, তার প্রমাণ তাদের এই টেলিফোন বিল উদ্ধারের পণ থেকেই অনুমেয়। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তাঁর হিং টিং ছট্ নতুন করে লিখতেন। হবুচন্দ্র রাজা ও গবুচন্দ্র মন্ত্রীরা লজ্জায় পড়তেন। আমাদের আইনমন্ত্রী অতিশয় দিলদরিয়া বলেই মন্ত্রণা দিয়েছেন: ড. ইউনূসের ১১ বছরের ‘বেআইনি চাকরিকালে’ নেওয়া তাঁর বেতন নয়, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা ফেরত দিতে হবে।
বর্তমান শাসকেরা বলছে, এই রাষ্ট্রের ছায়ায় যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংক জন্মেছে, তাই সরকার তার যথেষ্ট স্বাধীন সত্তা মানবে না। হল-মার্কীয় সোনালী এমডি আর নোবেলওয়ালা গ্রামীণ এমডির মধ্যে যেন কোনো পার্থক্য থাকতেই পারবে না। কারণ, দুজনই জনসেবক। ড. ইউনূস জনসেবক না হলে প্রকৃত জনসেবক কে হবেন? কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁকে জনসেবক বলছে সেই অর্থে, যাতে তাঁর ব্যক্তিগত মৌলিক উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে অপমানিত ও প্রত্যাখ্যান করার ফন্দি কাজে লাগে। যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ নানা সামাজিক ইস্যুতে ব্যক্তি ইউনূসের নীরবতা বা নিস্পৃহতা আমাদের অনেককে আহত করতে পারে। কিন্তু এই রাষ্ট্রযন্ত্র এখন তাঁর ও গ্রামীণের ওপর যেভাবে ড্রাগনীয় নিঃশ্বাস ফেলছে, তা আমরা মানতে পারি না। স্বায়ত্তশাসন থেকে যে জাতি স্বাধীনতা পেয়েছে, সেখানে স্বায়ত্তশাসিত গ্রামীণের মতো শত ফুল ফুটবে, শত ইউনূস জন্মাবে। কারও অনুমতি নিয়ে ফুল ফোটে না। সব ফুল যত্রতত্র ফোটে না। ইউনূসরা ফুটবে মালির পরম পরিচর্যায়। রাষ্ট্র হবে মালি।
মন্ত্রিসভার গত ৭ আগস্টের সারসংক্ষেপে আছে, ইউনূসের ‘ব্যক্তিত্ব, নিবেদন ও উদ্ভাবনশীলতা বিবেচনা করে সরকার তাঁকে ইচ্ছেমতো চলতে দেয়।...ব্যাংক পরিচালনায় আইনকানুন ও নিয়মাবলি অনুসরণে তিনি যত্নবান ছিলেন না।’ এটা আমরা সত্য ধরে নিলেও পরের বাক্যেই তাঁর এই বিচ্যুতির মার্জনা বা অনুমোদনের প্রমাণ পাই। ‘পরিচালনা পর্ষদ বা তাঁর চেয়ারম্যান এসব বিষয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি।’ এত কিছুর পরও এই সদয় বাক্যগুলোর সমন্বয়ে নথি প্রস্তুতের জন্য অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কিন্তু এর পরই অসত্য তথ্যের সন্নিবেশ: ‘২০১০ সালের নরওয়ের টিভি প্রোগ্রামের প্রতিফলন হিসেবে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।’ এটা অগ্রহণযোগ্য এ কারণে যে খোদ নরওয়ে সরকার ও দাতারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, কোনো অনিয়ম হয়নি। ইউনূস যে পরশ্রীকাতরতা ও দ্বিমুখী নীতির শিকার, তার প্রমাণ, যে কাজ ডেস্ক অফিসার করবেন, তা করছে মন্ত্রিসভা। প্রত্যেকের আয়কর নথির গোপনীয়তা এনবিআর রক্ষা করে, তাঁর ক্ষেত্রেই বল্গাহীন ব্যতিক্রম। আদালতই বলেছেন, তিনি ২০০০ সালের মে থেকে আর জনসেবক নন। অথচ এখন ওই তারিখের পরে সরকারি কর্মকর্তা বিবেচনায় তাঁকে আসামি বানানো হচ্ছে।
বলছিলাম ফুল ফোটানোর কথা। কখন কোথায় আইনের কোন অক্ষর, কোন নোক্তা ছুটল, তা দেখার সময় বা দায় ইউনূসদের সব সময় থাকবে না। মালিকে তার গরজেই পানি ঢালতে হবে, সার দিতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আফসোস, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমরা এ-সংক্রান্ত কোনো পর্যবেক্ষণ দেখিনি। অথচ সংবিধান থেকেও আমরা বিচ্যুত হই, জনস্বার্থে তাকে ভূতাপেক্ষ বৈধতা দিই। ব্যক্তির জন্য সংবিধান পাল্টাই। গ্রামীণ ব্যাংক জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ গর্বের ধন। আবার কবে, কখন, কার হাত দিয়ে মানবজাতি কোটি কোটি দরিদ্র নারীর এমন মোহিনী নীড় অবলোকন করবে, তা কারও জানা নেই।
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। ইউনূসের বিরুদ্ধে দৃশ্যত সত্যিকারের অভিযোগও এমন কলুষিত প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে, যাতে সরকারের অসূয়াপ্রসূত মনোভাব চাপা পড়ছে না। গ্রামীণের উন্মেষকে মন্ত্রিসভা নথিতে ঠিকই ‘ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন’ হিসেবে দেখা হয়েছে। অথচ এখন তার অনন্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় না নিয়ে গোঁয়ার্তুমির সঙ্গে কেবলই একটি প্রথাগত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এটিকে দেখার মনোভাব আমাদের বিবেচনায় সবচেয়ে আপত্তিকর। যদু মধুও এমডি, সরকারি কর্মকর্তা, ইউনূসও তাই। তা-ই যদি হবে, তাহলে তো আর স্বতন্ত্র গ্রামীণ অধ্যাদেশের দরকার ছিল না। অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মতো পুঁজি ও নীতিনির্ধারণের সবটারই জোগান দিত সরকার।
কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তাই ২০১২ সালের ৭ অক্টোবরে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি নথিতে (ডায়েরি নং ২৮) লেখা হয়, বয়স ৬০ বছর উতরানোর পরও ‘ড. ইউনূসের কার্যকলাপের দরুন গ্রামীণ ব্যাংক বা সরকার কোনো প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মর্মেও উল্লেখ নেই। বরং সরকার তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অব্যাহত রেখেছিল।’
নির্দলীয় সরকারের পক্ষে সরাসরি মত প্রকাশের সপ্তাহান্তে তাঁর বিরুদ্ধে চাবুক চালাল মন্ত্রিসভা। এক-এগারোতে কর ফাঁকির দায়ে মামলা দায়েরকে মহা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়েছিল। বিএনপির ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর দণ্ড হওয়ায় আওয়ামী শিবিরেও শোকের ছায়া নেমেছিল। এখন মন্ত্রিসভার সারসংক্ষেপ বলেছে, ‘১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৫ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ড. ইউনূস এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’ অথচ এই আইনে এক-এগারোতে মামলা হওয়ার কারণে ১০ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ডাকা হয়েছিল। ইকবালকে খালাস দিয়ে রায় দানকারী বিচারপতি মো. আবদুর রশীদ (পরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান) তাঁর রায়ে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের অধীনে তাঁর কথায় ‘ইতিহাসের প্রথম মামলা বন্যা’ দেখে অবাক হয়েছিলেন।
এই বিচারপতির আক্ষেপ: ‘আমরা এটা মানতে অক্ষম যে কর ফাঁকি দুর্নীতির প্রধান উৎস। বিশ্বে এমন অর্থনীতি কি পাওয়া যাবে, যেখানে কর ফাঁকির মাধ্যমে কালোটাকা উৎপন্ন করা হয়নি? অর্থনীতিতে কালোটাকাকে দ্রুততার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাওয়ানো যায়, সেই চ্যালেঞ্জ প্রতিটি জাতির সামনে। যে কারণে প্রতিটি অগ্রসর অর্থনীতিতে কর ফাঁকির বিষয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বলা হয়, ফাঁকি দেওয়া করের টাকা জমা করো। অপ্রদর্শিত অর্থ থাকলে তার ওপরে ধার্য কর জমা দাও। এর ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক, প্রলোভনমূলক।’ (১০ ডিএলআর, ২০০৮, পৃ. ১২৮) এই মনোভাবের হাওয়া ঢাকার ওপর দিয়ে তখন সিডর কি নার্গিসের মতো বইছিল।
এটা সেই দেশ, আজ তথাকথিত কর ফাঁকির জন্য নোবেলজয়ী কাঠগড়ায়। এবারের উদ্যোগ আরও কলঙ্কজনক, সরাসরি মেধাসত্তার বিরুদ্ধে। বিদেশে সম্মানী, পুরস্কার ও রয়্যালটি বাবদ এক বাঙালির ৫০ কোটি টাকার অর্জন অহংকারদীপ্ত এক অসাধারণ অর্জন। সরকারের নিচতায় এটা প্রকাশ না পেলে আমরা তা জানতে হয়তো সচেষ্ট হতাম না। সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদ বলেছে, বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে খেতাব বা পুরস্কার নিতে রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন লাগবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এদিকে ড. ইউনূস ও ফজলে হোসেন আবেদদের মনোযোগ আকর্ষণ করে গেছেন। এটা তাঁর ভালো উদ্যোগ ছিল। কারণ, দেশে এই বিধানের চল ছিল না। এরপর থেকে ইউনূস অবশ্য সরকারকে অবহিত রাখছেন। কিন্তু ভরসা পাই না। কে জানে ইউনূস চরিত্রহননের ষোলোকলা পূর্ণ করতে অনুমতি ছাড়া নোবেল গ্রহণকেও নিষিদ্ধ করা হয় কি না! মনে হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে নিরতিশয় নিশ্চিন্ত সরকারের হাতে হেসেখেলে কাটানোর মতো অফুরন্ত সময়, স্পিকারও অবশেষে নির্বাচনের তারিখ দিলেন, তাহলে ‘সংবিধান মোতাবেক’ নোবেল নিষিদ্ধ হতে কতক্ষণ! আনুষ্ঠানিক বিচারের আর দরকার আছে কি? সরকারের বিদ্বেষমূলক ঘোষণার বিষমাখা তির ইউনূসকে ইতিমধ্যে বিদ্ধ করেছে।
এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার সরকার তো কিছুই করেনি, এটা তো সুপ্রিম কোর্টের বিষয়। এবারও হয়তো তিনি নিউইয়র্কে সুপ্রিম কোর্টকেই ব্যবহার করবেন। কারণ, মন্ত্রিসভার সারসংক্ষেপেও দেখি সেই সুপ্রিম কোর্ট। তাঁরা বলেছেন, তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট। গ্রামীণ-সংক্রান্ত আইনের কোথাও তাঁকে সরকারি কর্মকর্তা বলা হয়নি, সেই শূন্যতা পূরণে আদালতের কাঁধে বন্দুক রাখা। দণ্ডবিধির ২১ ধারায় পাবলিক সার্ভেন্ট সংজ্ঞায়িত আছে। প্রত্যেক বিচারকও জনসেবক। অধ্যাপক ইউনূস জনসেবক বটে, কিন্তু তা সরকার ও আদালতের চলতি ব্যাখ্যা অনুযায়ী নয়। তিনি কখনো সরকারি মতের জনসেবক ছিলেন না, এটা প্রমাণ করা গেলে তাঁর অপসারণসহ অন্য সব পদক্ষেপ বেআইনি ও এখতিয়ারবহির্ভূত বলে গণ্য হবে।
আদালতে এর মীমাংসা হয়েছে দাবি করা অসত্য। এই প্রশ্নে মামলাও হয়নি, রায়ও হয়নি। বিচারপ্রার্থীর প্রতিকূলে অযাচিত অথচ মামুলি পর্যবেক্ষণ এসেছে মাত্র। এটা অকাট্য যুক্তি: বিশেষ আইনে সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক দেশের অবশিষ্ট অন্য সব ব্যাংক থেকে আলাদা। সরকারের মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ শেয়ার। বাকি ৭৫ ভাগ গ্রামীণের। সরকারের বিনিয়োগ মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ দেশে ১৯৮৪ থেকে বহু সরকারি কর্মকর্তা বহু প্রকল্পে সরকারের কোটি কোটি টাকা ঢেলেছেন, গ্রামীণের সঙ্গে তুলনা করে তাঁদের কীর্তির একটি ফিরিস্তি প্রকাশ করুন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ মঞ্জুর করেননি আপিল বিভাগ। বর্তমান আইন কমিশন চেয়ারম্যান তখন প্রধান বিচারপতি। আদালতের বক্তব্যের মুসাবিদা করেছিলেন বিচারপতি এস কে সিনহা। অন্যরা আর কোনো মন্তব্য ছাড়াই তাঁর সঙ্গে একমত হন। লিভ মঞ্জুর না হওয়ার অর্থ আদালতের মতে এটা মামলাই না, শুনানিরও অযোগ্য। আদালতের বরাতে বলছি, ড. ইউনূস সরকারি কর্মকর্তা কি না, তা আইনের চোখে অবশ্যই মীমাংসিত নয়।
এমডি পদে তাঁর বৈধতার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া গোটা বক্তব্যকেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেছেন আপিল বিভাগ। তবে সেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ বক্তব্যের বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবীদের ধরনা দেওয়াটাও যে ‘অপ্রয়োজনীয়’, সেই কথা লিখতে আপিল বিভাগের ৫৭ পৃষ্ঠার প্রয়োজন পড়েছে। সেখানে তাঁকে পাবলিক সার্ভেন্ট বলা আকস্মিক, আরোপিত এমনকি প্রাসঙ্গিক বলেও প্রতীয়মান হয় না। এবারে তাঁর ‘কর ফাঁকি’ আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে এই প্রশ্নের ওপর হয়তো নতুন আলো পড়বে।
হবুচন্দ্র স্বপ্নে তিনটা বাঁদরকে উকুন বাছতে দেখেছিলেন। রাজার আদেশে এর অর্থ খুঁজতে পণ্ডিতকুল জড়ো হলেন। ‘কেহ ব্যাকরণ দেখে, কেহ অভিধান/ কোনোখানে নাহি পায় অর্থ কোনোরূপ/ বেড়ে ওঠে অনুস্বর-বিসর্গের স্তূপ/ চুপ করে বসে থাকে বিষম সংকট/ থেকে থেকে হেঁকে ওঠে—‘হিং টিং ছট্।’ দুই মন্ত্রীর উল্লিখিত টেলিফোন বিল ভাবনা আমাকে ওই একই দৃশ্যপট মনে করিয়ে দিচ্ছে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
দুই মন্ত্রীর দুই জোড়া বিচক্ষণ চোখ যে কতটা অতলস্পর্শী, তার প্রমাণ তাদের এই টেলিফোন বিল উদ্ধারের পণ থেকেই অনুমেয়। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তাঁর হিং টিং ছট্ নতুন করে লিখতেন। হবুচন্দ্র রাজা ও গবুচন্দ্র মন্ত্রীরা লজ্জায় পড়তেন। আমাদের আইনমন্ত্রী অতিশয় দিলদরিয়া বলেই মন্ত্রণা দিয়েছেন: ড. ইউনূসের ১১ বছরের ‘বেআইনি চাকরিকালে’ নেওয়া তাঁর বেতন নয়, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা ফেরত দিতে হবে।
বর্তমান শাসকেরা বলছে, এই রাষ্ট্রের ছায়ায় যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংক জন্মেছে, তাই সরকার তার যথেষ্ট স্বাধীন সত্তা মানবে না। হল-মার্কীয় সোনালী এমডি আর নোবেলওয়ালা গ্রামীণ এমডির মধ্যে যেন কোনো পার্থক্য থাকতেই পারবে না। কারণ, দুজনই জনসেবক। ড. ইউনূস জনসেবক না হলে প্রকৃত জনসেবক কে হবেন? কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁকে জনসেবক বলছে সেই অর্থে, যাতে তাঁর ব্যক্তিগত মৌলিক উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে অপমানিত ও প্রত্যাখ্যান করার ফন্দি কাজে লাগে। যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ নানা সামাজিক ইস্যুতে ব্যক্তি ইউনূসের নীরবতা বা নিস্পৃহতা আমাদের অনেককে আহত করতে পারে। কিন্তু এই রাষ্ট্রযন্ত্র এখন তাঁর ও গ্রামীণের ওপর যেভাবে ড্রাগনীয় নিঃশ্বাস ফেলছে, তা আমরা মানতে পারি না। স্বায়ত্তশাসন থেকে যে জাতি স্বাধীনতা পেয়েছে, সেখানে স্বায়ত্তশাসিত গ্রামীণের মতো শত ফুল ফুটবে, শত ইউনূস জন্মাবে। কারও অনুমতি নিয়ে ফুল ফোটে না। সব ফুল যত্রতত্র ফোটে না। ইউনূসরা ফুটবে মালির পরম পরিচর্যায়। রাষ্ট্র হবে মালি।
মন্ত্রিসভার গত ৭ আগস্টের সারসংক্ষেপে আছে, ইউনূসের ‘ব্যক্তিত্ব, নিবেদন ও উদ্ভাবনশীলতা বিবেচনা করে সরকার তাঁকে ইচ্ছেমতো চলতে দেয়।...ব্যাংক পরিচালনায় আইনকানুন ও নিয়মাবলি অনুসরণে তিনি যত্নবান ছিলেন না।’ এটা আমরা সত্য ধরে নিলেও পরের বাক্যেই তাঁর এই বিচ্যুতির মার্জনা বা অনুমোদনের প্রমাণ পাই। ‘পরিচালনা পর্ষদ বা তাঁর চেয়ারম্যান এসব বিষয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি।’ এত কিছুর পরও এই সদয় বাক্যগুলোর সমন্বয়ে নথি প্রস্তুতের জন্য অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কিন্তু এর পরই অসত্য তথ্যের সন্নিবেশ: ‘২০১০ সালের নরওয়ের টিভি প্রোগ্রামের প্রতিফলন হিসেবে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।’ এটা অগ্রহণযোগ্য এ কারণে যে খোদ নরওয়ে সরকার ও দাতারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, কোনো অনিয়ম হয়নি। ইউনূস যে পরশ্রীকাতরতা ও দ্বিমুখী নীতির শিকার, তার প্রমাণ, যে কাজ ডেস্ক অফিসার করবেন, তা করছে মন্ত্রিসভা। প্রত্যেকের আয়কর নথির গোপনীয়তা এনবিআর রক্ষা করে, তাঁর ক্ষেত্রেই বল্গাহীন ব্যতিক্রম। আদালতই বলেছেন, তিনি ২০০০ সালের মে থেকে আর জনসেবক নন। অথচ এখন ওই তারিখের পরে সরকারি কর্মকর্তা বিবেচনায় তাঁকে আসামি বানানো হচ্ছে।
বলছিলাম ফুল ফোটানোর কথা। কখন কোথায় আইনের কোন অক্ষর, কোন নোক্তা ছুটল, তা দেখার সময় বা দায় ইউনূসদের সব সময় থাকবে না। মালিকে তার গরজেই পানি ঢালতে হবে, সার দিতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আফসোস, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমরা এ-সংক্রান্ত কোনো পর্যবেক্ষণ দেখিনি। অথচ সংবিধান থেকেও আমরা বিচ্যুত হই, জনস্বার্থে তাকে ভূতাপেক্ষ বৈধতা দিই। ব্যক্তির জন্য সংবিধান পাল্টাই। গ্রামীণ ব্যাংক জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ গর্বের ধন। আবার কবে, কখন, কার হাত দিয়ে মানবজাতি কোটি কোটি দরিদ্র নারীর এমন মোহিনী নীড় অবলোকন করবে, তা কারও জানা নেই।
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। ইউনূসের বিরুদ্ধে দৃশ্যত সত্যিকারের অভিযোগও এমন কলুষিত প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে, যাতে সরকারের অসূয়াপ্রসূত মনোভাব চাপা পড়ছে না। গ্রামীণের উন্মেষকে মন্ত্রিসভা নথিতে ঠিকই ‘ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন’ হিসেবে দেখা হয়েছে। অথচ এখন তার অনন্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় না নিয়ে গোঁয়ার্তুমির সঙ্গে কেবলই একটি প্রথাগত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এটিকে দেখার মনোভাব আমাদের বিবেচনায় সবচেয়ে আপত্তিকর। যদু মধুও এমডি, সরকারি কর্মকর্তা, ইউনূসও তাই। তা-ই যদি হবে, তাহলে তো আর স্বতন্ত্র গ্রামীণ অধ্যাদেশের দরকার ছিল না। অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মতো পুঁজি ও নীতিনির্ধারণের সবটারই জোগান দিত সরকার।
কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তাই ২০১২ সালের ৭ অক্টোবরে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি নথিতে (ডায়েরি নং ২৮) লেখা হয়, বয়স ৬০ বছর উতরানোর পরও ‘ড. ইউনূসের কার্যকলাপের দরুন গ্রামীণ ব্যাংক বা সরকার কোনো প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মর্মেও উল্লেখ নেই। বরং সরকার তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অব্যাহত রেখেছিল।’
নির্দলীয় সরকারের পক্ষে সরাসরি মত প্রকাশের সপ্তাহান্তে তাঁর বিরুদ্ধে চাবুক চালাল মন্ত্রিসভা। এক-এগারোতে কর ফাঁকির দায়ে মামলা দায়েরকে মহা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়েছিল। বিএনপির ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর দণ্ড হওয়ায় আওয়ামী শিবিরেও শোকের ছায়া নেমেছিল। এখন মন্ত্রিসভার সারসংক্ষেপ বলেছে, ‘১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৫ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ড. ইউনূস এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’ অথচ এই আইনে এক-এগারোতে মামলা হওয়ার কারণে ১০ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ডাকা হয়েছিল। ইকবালকে খালাস দিয়ে রায় দানকারী বিচারপতি মো. আবদুর রশীদ (পরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান) তাঁর রায়ে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের অধীনে তাঁর কথায় ‘ইতিহাসের প্রথম মামলা বন্যা’ দেখে অবাক হয়েছিলেন।
এই বিচারপতির আক্ষেপ: ‘আমরা এটা মানতে অক্ষম যে কর ফাঁকি দুর্নীতির প্রধান উৎস। বিশ্বে এমন অর্থনীতি কি পাওয়া যাবে, যেখানে কর ফাঁকির মাধ্যমে কালোটাকা উৎপন্ন করা হয়নি? অর্থনীতিতে কালোটাকাকে দ্রুততার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাওয়ানো যায়, সেই চ্যালেঞ্জ প্রতিটি জাতির সামনে। যে কারণে প্রতিটি অগ্রসর অর্থনীতিতে কর ফাঁকির বিষয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বলা হয়, ফাঁকি দেওয়া করের টাকা জমা করো। অপ্রদর্শিত অর্থ থাকলে তার ওপরে ধার্য কর জমা দাও। এর ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক, প্রলোভনমূলক।’ (১০ ডিএলআর, ২০০৮, পৃ. ১২৮) এই মনোভাবের হাওয়া ঢাকার ওপর দিয়ে তখন সিডর কি নার্গিসের মতো বইছিল।
এটা সেই দেশ, আজ তথাকথিত কর ফাঁকির জন্য নোবেলজয়ী কাঠগড়ায়। এবারের উদ্যোগ আরও কলঙ্কজনক, সরাসরি মেধাসত্তার বিরুদ্ধে। বিদেশে সম্মানী, পুরস্কার ও রয়্যালটি বাবদ এক বাঙালির ৫০ কোটি টাকার অর্জন অহংকারদীপ্ত এক অসাধারণ অর্জন। সরকারের নিচতায় এটা প্রকাশ না পেলে আমরা তা জানতে হয়তো সচেষ্ট হতাম না। সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদ বলেছে, বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে খেতাব বা পুরস্কার নিতে রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন লাগবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এদিকে ড. ইউনূস ও ফজলে হোসেন আবেদদের মনোযোগ আকর্ষণ করে গেছেন। এটা তাঁর ভালো উদ্যোগ ছিল। কারণ, দেশে এই বিধানের চল ছিল না। এরপর থেকে ইউনূস অবশ্য সরকারকে অবহিত রাখছেন। কিন্তু ভরসা পাই না। কে জানে ইউনূস চরিত্রহননের ষোলোকলা পূর্ণ করতে অনুমতি ছাড়া নোবেল গ্রহণকেও নিষিদ্ধ করা হয় কি না! মনে হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে নিরতিশয় নিশ্চিন্ত সরকারের হাতে হেসেখেলে কাটানোর মতো অফুরন্ত সময়, স্পিকারও অবশেষে নির্বাচনের তারিখ দিলেন, তাহলে ‘সংবিধান মোতাবেক’ নোবেল নিষিদ্ধ হতে কতক্ষণ! আনুষ্ঠানিক বিচারের আর দরকার আছে কি? সরকারের বিদ্বেষমূলক ঘোষণার বিষমাখা তির ইউনূসকে ইতিমধ্যে বিদ্ধ করেছে।
এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার সরকার তো কিছুই করেনি, এটা তো সুপ্রিম কোর্টের বিষয়। এবারও হয়তো তিনি নিউইয়র্কে সুপ্রিম কোর্টকেই ব্যবহার করবেন। কারণ, মন্ত্রিসভার সারসংক্ষেপেও দেখি সেই সুপ্রিম কোর্ট। তাঁরা বলেছেন, তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট। গ্রামীণ-সংক্রান্ত আইনের কোথাও তাঁকে সরকারি কর্মকর্তা বলা হয়নি, সেই শূন্যতা পূরণে আদালতের কাঁধে বন্দুক রাখা। দণ্ডবিধির ২১ ধারায় পাবলিক সার্ভেন্ট সংজ্ঞায়িত আছে। প্রত্যেক বিচারকও জনসেবক। অধ্যাপক ইউনূস জনসেবক বটে, কিন্তু তা সরকার ও আদালতের চলতি ব্যাখ্যা অনুযায়ী নয়। তিনি কখনো সরকারি মতের জনসেবক ছিলেন না, এটা প্রমাণ করা গেলে তাঁর অপসারণসহ অন্য সব পদক্ষেপ বেআইনি ও এখতিয়ারবহির্ভূত বলে গণ্য হবে।
আদালতে এর মীমাংসা হয়েছে দাবি করা অসত্য। এই প্রশ্নে মামলাও হয়নি, রায়ও হয়নি। বিচারপ্রার্থীর প্রতিকূলে অযাচিত অথচ মামুলি পর্যবেক্ষণ এসেছে মাত্র। এটা অকাট্য যুক্তি: বিশেষ আইনে সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক দেশের অবশিষ্ট অন্য সব ব্যাংক থেকে আলাদা। সরকারের মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ শেয়ার। বাকি ৭৫ ভাগ গ্রামীণের। সরকারের বিনিয়োগ মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ দেশে ১৯৮৪ থেকে বহু সরকারি কর্মকর্তা বহু প্রকল্পে সরকারের কোটি কোটি টাকা ঢেলেছেন, গ্রামীণের সঙ্গে তুলনা করে তাঁদের কীর্তির একটি ফিরিস্তি প্রকাশ করুন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ মঞ্জুর করেননি আপিল বিভাগ। বর্তমান আইন কমিশন চেয়ারম্যান তখন প্রধান বিচারপতি। আদালতের বক্তব্যের মুসাবিদা করেছিলেন বিচারপতি এস কে সিনহা। অন্যরা আর কোনো মন্তব্য ছাড়াই তাঁর সঙ্গে একমত হন। লিভ মঞ্জুর না হওয়ার অর্থ আদালতের মতে এটা মামলাই না, শুনানিরও অযোগ্য। আদালতের বরাতে বলছি, ড. ইউনূস সরকারি কর্মকর্তা কি না, তা আইনের চোখে অবশ্যই মীমাংসিত নয়।
এমডি পদে তাঁর বৈধতার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া গোটা বক্তব্যকেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেছেন আপিল বিভাগ। তবে সেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ বক্তব্যের বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবীদের ধরনা দেওয়াটাও যে ‘অপ্রয়োজনীয়’, সেই কথা লিখতে আপিল বিভাগের ৫৭ পৃষ্ঠার প্রয়োজন পড়েছে। সেখানে তাঁকে পাবলিক সার্ভেন্ট বলা আকস্মিক, আরোপিত এমনকি প্রাসঙ্গিক বলেও প্রতীয়মান হয় না। এবারে তাঁর ‘কর ফাঁকি’ আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে এই প্রশ্নের ওপর হয়তো নতুন আলো পড়বে।
হবুচন্দ্র স্বপ্নে তিনটা বাঁদরকে উকুন বাছতে দেখেছিলেন। রাজার আদেশে এর অর্থ খুঁজতে পণ্ডিতকুল জড়ো হলেন। ‘কেহ ব্যাকরণ দেখে, কেহ অভিধান/ কোনোখানে নাহি পায় অর্থ কোনোরূপ/ বেড়ে ওঠে অনুস্বর-বিসর্গের স্তূপ/ চুপ করে বসে থাকে বিষম সংকট/ থেকে থেকে হেঁকে ওঠে—‘হিং টিং ছট্।’ দুই মন্ত্রীর উল্লিখিত টেলিফোন বিল ভাবনা আমাকে ওই একই দৃশ্যপট মনে করিয়ে দিচ্ছে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments