সংঘাত এড়াতে একটি নির্বাচনী ফর্মূলা by আবদুল হামিদ মাহবুব
দেশ আসন্ন সংঘাতের পথে। একটিমাত্র বিষয়
নিয়ে এই সংঘাতের আশঙ্কা। আগামী সংসদ নির্বাচন কার অধীনে হবে? তত্ত্বাবধায়ক,
অন্তর্বর্তী না বর্তমান সংবিধানের বিধান অনুযায়ী?
আমাদের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।
সংবিধান থেকে একচুল নড়া যাবে না। অপরদিকে প্রধান বিরোধীদলের নেত্রী (বেগম
খালেদা জিয়া) বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন
না; দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়াও হবে না। দুদিকের এই অনড় অবস্থানে দেশের
সাধারণ মানুষ ভীষণ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। আসন্ন দিনগুলোতে দেশের অবস্থা কি
হয় তা আল্লাহ্ই জানেন।
থাকি রাজধানী থেকে অনেক দূরে এক মফস্বল শহরে। রাজধানীর সাথে তুলনা করলে আমার শহর একটি গ্রামের মতো। এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমার ধারণা সারাদেশের সকল শহরের মানুষই শান্তিপ্রিয়। আর আমাদের গ্রামগুলোর মানুষতো কেবল শান্তিপ্রিয়ই নয়, তারা নিরিহ বটে।
আমি এক অভাজন। সাংবাদিকতা করি। এই পেশার বয়সও তিন দশকের বেশি হয়ে গেছে। মফস্বল শহরে আমরা যারা সংবাদিকতা করি সাধারণ মানুষ তাদের সবজান্তা মনে করেন। দেশের কিংবা বিদেশের কোথাও কিছু ঘটলে চেনাজানা সাধারণ মানুষগুলো সাংবাদিকের কাছে ছুটে আসেন, ওই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান।
বর্তমানে আমার চেনাজানা সাধারণ মানুষগুলো আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষ অনড় অবস্থানে থাকায় শঙ্কিত। দেশ কোথায় যাচ্ছে? কবে থেকে মারামারি শুরু হবে? সেনাবাহিনী কি কোনো ভূমিকা রাখবে? সমাধানের কি কোনো পথ নেই? ইত্যকার প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি। কেউ কেউ টিভি চ্যানেলে শোনা গভীর রাতের টকশোজীবীদের টক টক কথার প্রসঙ্গ এনে আমার মতামত চান। কিন্তু আমি তাদের কি বলবো? আমিওতো শঙ্কার মধ্যে আছি।
এই অভাজনের হঠাৎই গতকাল মনে হলো একটি চমৎকার সমাধান উদ্ভাবন করে ফেলেছি। আমার উদ্ভাবন গ্রহণযোগ্য হলে দেশ সংঘাত থেকে বেঁচে যাবে। আমি জানি ইতোপূর্বে অনেক বিজ্ঞজন তাঁদের ফর্মূলা তথা উদ্ভাবন তুলে ধরেছেন। সেগুলো এখনো কোনো ফল দেয়নি। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার উদ্ভাবন ফল দেবে। কারণ বর্তমান সংবিধানের ভিতরে থেকেই আমার উদ্ভাবন দিয়ে কাজ করা যাবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন বর্তমান সংসদে থাকা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এগারোজন সংসদ সদস্য। পক্ষপাতের অভিযোগ এড়ানোর স্বার্থে এই ১১জন আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন; ‘সংবিধান থেকে একচুল নড়বেন না।’ আর বিরোধীদল নেত্রী বলেছেন; ‘প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবেন না, নির্বাচন করতে দেবেন না।’ এদিকে আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনায় আসতে পারবেন না।
সংবিধান সমুন্নত রাখার কথাটি মাথায় রেখে আমি একটা সমাধানসূত্র বের করেছি। আর সেটা হচ্ছে, বর্তমান সংসদে একজনই আছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। নির্বাচনকালীন তিন মাস সময়ের জন্য তাঁকে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করলে তিনি আনন্দের সাথেই রাজি হবেন বলে আমার বিশ্বাস। আরো দশজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী করে এগারো সদস্যের মন্ত্রী পরিষদের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া। এই দশজন নেওয়া যেতে পারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে। তবে এখানে আমার প্রস্তাব থাকবে বিগত সংসদ সদস্য নির্বাচনে মোট প্রাপ্ত ভোটের গড় অনুপাতে-আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচজন, বিএনপি থেকে চারজন ও জাতীয় পার্টি থেকে একজন সংসদ সদস্যকে এই মন্ত্রী পরিষদে নেওয়ার।
মন্ত্রী পরিষদভূক্ত এই এগারো জনের উপর একটি অবশ্যপালনীয় শর্ত আরোপ থাকবে; আর সেটা হচ্ছে, এরা কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আমি নিশ্চিত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমান সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ এগারোজন দেশপ্রেমিক সংসদ সদস্য আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকতে রাজি হবেন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে? মানে এই উদ্যোগটা কে নেবেন? এরও জবাব খুব সহজ। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই উদ্যোগ নিতে পারেন।
আমার এই ফর্মূলা গ্রহণযোগ্য হলে; প্রধানমন্ত্রীর বলা ‘সংবিধান থেকে একচুল নড়বো না, বিরোধীদল নেত্রীর ‘প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাব না’ এবং সংবিধানে থাকা ‘অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনায় আসতে পারবেন না’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেইসব বক্তব্যের প্রতিটিরই মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর সেটা হলে আসন্ন এক অনিবার্য সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা পাবে দেশ, দেশের মানুষ।
আমার এই বক্তব্য অনেকেই আকাশকুসুম কল্পনা বলতে পারেন। তবে দেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমি আমার উদ্ভাবনটা তুলে ধরলাম। এখন যার যা খুশি বলুন। আমি সবই হজমের জন্য প্রস্তুত।
লেখক: ছড়াকার, সাংবাদিক,,স্টাফ রিপোর্টার:দৈনিক কালেরকণ্ঠ মৌলভীবাজার জেলা।
থাকি রাজধানী থেকে অনেক দূরে এক মফস্বল শহরে। রাজধানীর সাথে তুলনা করলে আমার শহর একটি গ্রামের মতো। এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমার ধারণা সারাদেশের সকল শহরের মানুষই শান্তিপ্রিয়। আর আমাদের গ্রামগুলোর মানুষতো কেবল শান্তিপ্রিয়ই নয়, তারা নিরিহ বটে।
আমি এক অভাজন। সাংবাদিকতা করি। এই পেশার বয়সও তিন দশকের বেশি হয়ে গেছে। মফস্বল শহরে আমরা যারা সংবাদিকতা করি সাধারণ মানুষ তাদের সবজান্তা মনে করেন। দেশের কিংবা বিদেশের কোথাও কিছু ঘটলে চেনাজানা সাধারণ মানুষগুলো সাংবাদিকের কাছে ছুটে আসেন, ওই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান।
বর্তমানে আমার চেনাজানা সাধারণ মানুষগুলো আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষ অনড় অবস্থানে থাকায় শঙ্কিত। দেশ কোথায় যাচ্ছে? কবে থেকে মারামারি শুরু হবে? সেনাবাহিনী কি কোনো ভূমিকা রাখবে? সমাধানের কি কোনো পথ নেই? ইত্যকার প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি। কেউ কেউ টিভি চ্যানেলে শোনা গভীর রাতের টকশোজীবীদের টক টক কথার প্রসঙ্গ এনে আমার মতামত চান। কিন্তু আমি তাদের কি বলবো? আমিওতো শঙ্কার মধ্যে আছি।
এই অভাজনের হঠাৎই গতকাল মনে হলো একটি চমৎকার সমাধান উদ্ভাবন করে ফেলেছি। আমার উদ্ভাবন গ্রহণযোগ্য হলে দেশ সংঘাত থেকে বেঁচে যাবে। আমি জানি ইতোপূর্বে অনেক বিজ্ঞজন তাঁদের ফর্মূলা তথা উদ্ভাবন তুলে ধরেছেন। সেগুলো এখনো কোনো ফল দেয়নি। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার উদ্ভাবন ফল দেবে। কারণ বর্তমান সংবিধানের ভিতরে থেকেই আমার উদ্ভাবন দিয়ে কাজ করা যাবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন বর্তমান সংসদে থাকা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এগারোজন সংসদ সদস্য। পক্ষপাতের অভিযোগ এড়ানোর স্বার্থে এই ১১জন আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন; ‘সংবিধান থেকে একচুল নড়বেন না।’ আর বিরোধীদল নেত্রী বলেছেন; ‘প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবেন না, নির্বাচন করতে দেবেন না।’ এদিকে আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনায় আসতে পারবেন না।
সংবিধান সমুন্নত রাখার কথাটি মাথায় রেখে আমি একটা সমাধানসূত্র বের করেছি। আর সেটা হচ্ছে, বর্তমান সংসদে একজনই আছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। নির্বাচনকালীন তিন মাস সময়ের জন্য তাঁকে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করলে তিনি আনন্দের সাথেই রাজি হবেন বলে আমার বিশ্বাস। আরো দশজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী করে এগারো সদস্যের মন্ত্রী পরিষদের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া। এই দশজন নেওয়া যেতে পারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে। তবে এখানে আমার প্রস্তাব থাকবে বিগত সংসদ সদস্য নির্বাচনে মোট প্রাপ্ত ভোটের গড় অনুপাতে-আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচজন, বিএনপি থেকে চারজন ও জাতীয় পার্টি থেকে একজন সংসদ সদস্যকে এই মন্ত্রী পরিষদে নেওয়ার।
মন্ত্রী পরিষদভূক্ত এই এগারো জনের উপর একটি অবশ্যপালনীয় শর্ত আরোপ থাকবে; আর সেটা হচ্ছে, এরা কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আমি নিশ্চিত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমান সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ এগারোজন দেশপ্রেমিক সংসদ সদস্য আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকতে রাজি হবেন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে? মানে এই উদ্যোগটা কে নেবেন? এরও জবাব খুব সহজ। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই উদ্যোগ নিতে পারেন।
আমার এই ফর্মূলা গ্রহণযোগ্য হলে; প্রধানমন্ত্রীর বলা ‘সংবিধান থেকে একচুল নড়বো না, বিরোধীদল নেত্রীর ‘প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাব না’ এবং সংবিধানে থাকা ‘অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনায় আসতে পারবেন না’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেইসব বক্তব্যের প্রতিটিরই মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর সেটা হলে আসন্ন এক অনিবার্য সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা পাবে দেশ, দেশের মানুষ।
আমার এই বক্তব্য অনেকেই আকাশকুসুম কল্পনা বলতে পারেন। তবে দেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমি আমার উদ্ভাবনটা তুলে ধরলাম। এখন যার যা খুশি বলুন। আমি সবই হজমের জন্য প্রস্তুত।
লেখক: ছড়াকার, সাংবাদিক,,স্টাফ রিপোর্টার:দৈনিক কালেরকণ্ঠ মৌলভীবাজার জেলা।
No comments