তুরস্কে জেনারেলদের পদত্যাগ কেন? by গুল তায়িসুজ ও সাবরিনা তাভনিস
সামরিক বাহিনী ১৯৬০ সাল থেকে তুরস্কের চারটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। অতীতের মতো এখন আর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর অবস্থা নেই। এখন সেনা কর্মকর্তারা তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার শেষ চেষ্টা হিসেবে পদত্যাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তারা গত শুক্রবার একযোগে পদত্যাগ করেছেন। তুরস্কের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। বিশ্ল্নেষকদের ধারণা, সেনাবাহিনী তাদের ক্ষয়ে যাওয়া রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
কয়েক ডজন জেনারেলকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল আইজাক কোসনার; নৌ, সেনা ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ একযোগে পদত্যাগের পর এ অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক বলা হচ্ছে। তাদের পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তায়িপ এরডোগান তা গ্রহণ করে তার পছন্দের জেনারেলদের তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। শীর্ষ সিনিয়র সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পান জেনারেল নেকদেত ওজিল। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের রক্ষক বলে দীর্ঘকাল ধরে পরিচিত সেনাবাহিনীর ওপর বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্ব আরও শক্তিশালী হলো এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। তুরস্কের অনেকেই এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন এবং তারা তাদের দেশের সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব একেবারে শেষ হয়ে গেল কি-না ভাবছেন।
কয়েক ডজন জেনারেলকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল আইজাক কোসনার; নৌ, সেনা ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ একযোগে পদত্যাগের পর এ অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক বলা হচ্ছে। তাদের পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তায়িপ এরডোগান তা গ্রহণ করে তার পছন্দের জেনারেলদের তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। শীর্ষ সিনিয়র সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পান জেনারেল নেকদেত ওজিল। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের রক্ষক বলে দীর্ঘকাল ধরে পরিচিত সেনাবাহিনীর ওপর বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্ব আরও শক্তিশালী হলো এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। তুরস্কের অনেকেই এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন এবং তারা তাদের দেশের সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব একেবারে শেষ হয়ে গেল কি-না ভাবছেন।
তুরস্কের দৈনিক পত্রিকা মিলিয়াতের কলাম লেখক আমলি আয়িদিনতাসবাস মনে করেন, এ ঘটনা কার্যকরভাবেই দেশটির গণতন্ত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকার অবসান ঘটাবে। তার মতে, এটা একটা প্রতীকী মুহূর্ত যেখানে প্রথম তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটছে এবং তার স্থলে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের। এরডোগান ২০০২ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আইনি সংস্কারের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ওপর বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান এবং এ উদ্দেশ্যে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক ক্ষমতা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস করেন। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিনিয়র সামরিক কমান্ডার, সাংবাদিক ও অন্যদের বিরুদ্ধে এরডোগান সরকার উৎখাতের অভিযোগ এনে একের পর এক তদন্ত পরিচালনা ও বিচারকাজকে সামরিক বাহিনীর প্রভাবের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তাদের এ পদত্যাগকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে চরম হতাশার বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ এরডোগান সরকার ৪০ জনের মতো জেনারেলকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করলেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামরিক বাহিনী এর প্রতিকার করতে পারেনি। এর ওপর গত শুক্রবার দুই শীর্ষ সেনা কমান্ডারসহ আরও ২২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। প্রধান বিরোধী দলের সহ-সভাপতি গুরসাল তাকিন সমুদ্র উপকূলীয় শহর কানাকালিতে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ধরনের ঘটনা তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথম দেখা যাচ্ছে। তার মতে, পরিস্থিতি ভালো নয়। ঐতিহাসিকভাবে তুরস্কের সামরিক বাহিনী প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। আধুনিক তুরস্কের জন্ম দেন ১৯২৩ সালে জেনারেল মুস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে এবং দেশটিতে ১৯৫০-এর দিকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলেও সামরিক বাহিনী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে।
সামরিক বাহিনী ১৯৬০ সাল থেকে তুরস্কের চারটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। অতীতের মতো এখন আর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর অবস্থা নেই। এখন সেনা কর্মকর্তারা তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার শেষ চেষ্টা হিসেবে পদত্যাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। শুক্রবার কিছু লোকের মতামত নিয়ে দেখা গেছে, তুরস্কের গণতন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে পেঁৗছে গেছে। অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর আগেকার প্রভাবশালী অবস্থানও আর নেই। তাই সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনাও সুদূরপরাহত।
সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনের বিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তারা তাদের কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নম্নতি দিতে আগ্রহী। অথচ তাদের মধ্যে অনেকে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ। এ কারণে তাদের পদোন্নতি দিতে পারছে না তারা। জেনারেল কোসনার গত শুক্রবার তুরস্কের নিউজ মিডিয়াতে তার এ হতাশার কথা প্রকাশ করে বলেন, এসব সেনা কর্মকর্তা কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া সত্ত্বেও পদোন্নতির অধিকার বঞ্চিত হবেন। তার মতে, এ ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তুরস্কের সামরিক বাহিনীকে জনসমক্ষে একটি অপরাধী সংগঠন হিসেবে প্রতিপন্ন করা। শুক্রবার মধ্যরাতেই তুরস্কের সরকারি পত্রিকার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, জেনারেল কোসনারকে অবসর দেওয়া হয়েছে। প্রটোকল অনুযায়ী জেনারেল ওজিল নতুন সামরিক প্রধান হিসেবে কোসনারের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা।
জেনারেল ওজিল সেনাপ্রধানের পদের জন্য হঠাৎ মনোনীত হননি। সোমবারের বৈঠকে তাকে আগামী ২০১৩ সালে জেনারেল কোসনারের স্বাভাবিক অবসর গ্রহণের পর সেনাপ্রধান পদে মনোনয়ন নির্ধারণের কথা ছিল। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানত্রয়ের এমনিতেই আগামী মাসে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। অন্য অনেক সেনা কর্মকর্তার মতো ওজিল এরডোগানের মিত্র না হলেও শত্রু নন।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির তুরস্ক রিসার্চ প্রোগ্রামের পরিচালক সোনের মনে করেন, বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামরিক বাহিনীর মর্যাদা নেমে গেছে। অধিকাংশ জরিপের ফলেই দেখা গেছে, দেশটির মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষ এখন সামরিক বাহিনীর ওপর আস্থাশীল। অথচ ২০০২ সালে এরডোগান প্রথম ক্ষমতায় আসার প্রাক্কালেও সেনাবাহিনীর ওপর ৯০ শতাংশ মানুষ আস্থাশীল ছিল।
সোনের মনে করেন, সামরিক বাহিনী এখন পদত্যাগের মাধ্যমে বেসামরিক প্রশাসনকে বোঝাতে চাইছে, দেখি আমাদের বাদ দিয়ে তোমরা কাদের দিয়ে বাহিনী চালাও। তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ওলটপালট করে দিতে এখনও সক্ষম, এমন একটা ভাব সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু এর বিপরীত প্রতিক্রিয়াও তো আছে। এরডোগান পরবর্তী সেনাপ্রধান দ্রুতই নির্বাচন করেছেন।
গণপদত্যাগ সম্পর্কে সোনের বলেন, এটা তাদের শেষ অবলম্বন। এখন ক্যু করার কোনো পরিবেশ নেই বলে তাদের এটা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
============================
দৈনিক সমকাল এর সৌজন্যে
লেখকঃ গুল তায়িসুজ ও সাবরিনা তাভনিস
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
ছোট দলগুলো ফুরফুরে মেজাজে! কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষার বেহাল দশা গল্প- লঞ্চের আপার ক্লাসে বাচ্চা হাতি গুরুপল্লির আশ্রমে ভর্তি না হয়েই মুক্তিযুদ্ধের ১০ বই মগ্নচৈতন্যের বর্ণময় অভিঘাত গল্প- চিনেজোঁক পুস্তক প্রকাশনা ও বাংলা একাডেমীর বইমেলা শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব by শাহীন আখতার বাজে জসীমউদ্দীন নান্দনিক চৈতন্য গ্রামকে শহরে এনেছি গল্প- জলঝড় একাত্তরের অপ্রকাশিত দিনপঞ্জি রশীদ করীমে'র সাক্ষাৎকার- 'মনে পড়ে বন্ধুদের' প্রাচ্যের ছহি খাবনামা গল্প- এভাবেই ভুল হয় গল্প- মাঠরঙ্গ ফয়েজ আহমেদঃ স্মৃতিতে চিঠিতে অরুন্ধতী রায়ের সাক্ষাৎকারঃ উপন্যাসের জগতের জগতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই ইতিহাস ও জাতি দিয়ে ঘেরা গল্প- চাল ডাল লবণ ও তেল ক-য়ে ক্রিকেট খ-য়ে খেলা গল্পসল্প- ডাংগুলি হ্যারল্ড পিন্টারের শেষ সাক্ষাৎকারঃ আশৈশব ক্রিকেটের ঘোর সূচনার পিকাসো আর ভ্যান গঘ আল্লাহআকবরিজ সি সি গল্প- কবি কুদ্দুস ও কালনাগিনীর প্রেম গল্পসল্প- আমার বইমেলা বাংলাদেশ হতে পারে বহুত্ববাদের নির্মল উদাহরণ শিক্ষানীতি ২০১০, পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এবং জাতীয় স্বার্থ চীন-ভারত সম্পর্ক এবং এ অঞ্চলে তার প্রভাব নারী লাঞ্ছনার সর্বগ্রাস একজন এস এ জালাল ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভাণ্ডার গল্প- স্বপ্নের মধ্যে কারাগারে গল্পিতিহাস- কাঁথা সিলাই হইসে, নিশ্চিন্ত ‘এখন প্রাধান্য পাচ্ছে রম্যলেখা' অকথিত যোদ্ধা কানকুনের জলবায়ু সম্মেলন, বাংলাদেশের মমতাজ বেগম এবং আমার কিছু কথা নাপাম বোমা যা পারেনি, চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্স্ ট্যাংক কি তা পারবে? ঠাকুর ঘরে কে রে...! ষড়যন্ত্র নয়, ক্ষুধা ও বঞ্চনাই আন্দোলনের ইন্ধন বাহাত্তরের সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়? ড.ইউনূসের দুঃখবোধ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ গল্প- তেঁতুল
দৈনিক সমকাল এর সৌজন্যে
লেখকঃ গুল তায়িসুজ ও সাবরিনা তাভনিস
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments