'ত্যাগের' মূল্যায়ন ও মুক্তকণ্ঠ তারুণ্য by অজয় দাশগুপ্ত
আমাদের রাজনীতিবিদরা বইয়ের মনোযোগী পাঠক নন বলেই জানি। তবে অনেকেই সংবাদপত্রের নির্বাচিত অংশ নিয়মিত পাঠ করেন। দেশের হাল-হকিকত বুঝতে তাদের ভরসা সংবাদপত্র। তবে তরুণ প্রজন্ম কী ভাবছে সেটা বোঝার জন্য তাদের বিভিন্ন সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ এবং বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুকের কমিউনিটি পেজ ভিজিট করার অনুরোধ করতে চাই। সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের বিভিন্ন সংবাদ ও কলামের ওপর পাঠকদের প্রচুর মন্তব্য থাকে। ব্লগে থাকে অনেকের নানা কারেন্ট ইস্যুতে ভাবনা। এসব পাঠ করলে তাদের ভাবনা-চিন্তাগুলো জানা যাবে সহজেই, যা সাধারণত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে থাকে না বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে অনেক অনেক নেতা ও কর্মী থাকেন। তাদের সবাই মন্ত্রী-সাংসদ হন না।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও অনেকের স্থান হয় না। এসব দলের মধ্যে একটি সাধারণ ক্ষোভ থাকে_ ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয় না। বড় দলগুলো নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠান করে না। মন্ত্রী-এমপি তো হয় অল্প কিছুসংখ্যক। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেমন_ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনেও পদের সংখ্যা সীমাহীন নয়। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে দাঁড়ালেই তো জয়ের নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায়ই শক্ত হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জয়ের পাল্লা প্রায় সমান সমান। এতে স্পষ্ট যে, সরকারি দলে থাকলেই স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ নিশ্চিত নয়। দলের মধ্যে নেতৃত্বের পদও কিন্তু নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগের কথাই ধরুন। তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা কিশোরগঞ্জ। এ জেলা থেকে রয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী (যিনি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক)। জেলা কমিটির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এক যুগের বেশি হয়ে গেল। তাহলে নতুনদের সুযোগ কোথায়? শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, আরও অন্তত ডজনখানেক জেলা কমিটি রয়েছে ছয় দশকের পুরনো পোড় খাওয়া এ রাজনৈতিক দলটিতে, যারা এখন মহাসমারোহে 'সর্বশেষ সম্মেলনের যুগপূর্তি উৎসব' পালন করতে পারে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও অনেকের স্থান হয় না। এসব দলের মধ্যে একটি সাধারণ ক্ষোভ থাকে_ ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয় না। বড় দলগুলো নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠান করে না। মন্ত্রী-এমপি তো হয় অল্প কিছুসংখ্যক। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেমন_ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনেও পদের সংখ্যা সীমাহীন নয়। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে দাঁড়ালেই তো জয়ের নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায়ই শক্ত হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জয়ের পাল্লা প্রায় সমান সমান। এতে স্পষ্ট যে, সরকারি দলে থাকলেই স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ নিশ্চিত নয়। দলের মধ্যে নেতৃত্বের পদও কিন্তু নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগের কথাই ধরুন। তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা কিশোরগঞ্জ। এ জেলা থেকে রয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী (যিনি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক)। জেলা কমিটির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এক যুগের বেশি হয়ে গেল। তাহলে নতুনদের সুযোগ কোথায়? শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, আরও অন্তত ডজনখানেক জেলা কমিটি রয়েছে ছয় দশকের পুরনো পোড় খাওয়া এ রাজনৈতিক দলটিতে, যারা এখন মহাসমারোহে 'সর্বশেষ সম্মেলনের যুগপূর্তি উৎসব' পালন করতে পারে।
প্রথম আলো ২৩ জুলাই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে এক প্রতিবেদনে লিখেছে : 'ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশির ভাগ নেতার বয়স ৪০ থেকে ৪৮ বছরের মধ্যে। ...নতুন যারা নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করছেন তাদের বয়সও ৪০-এর ঊধর্ে্ব, তারাও এখন আর ছাত্র নন। ...নতুন কমিটির জন্য অবিবাহিত ছাত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।'
রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন থাকবে, এটা দেশ মেনে নিয়েছে। কিন্তু এসব সংগঠনের কাজ কী হবে? বর্তমানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার নেই। ছাত্রলীগ ও পুলিশ মিলে এ বাধার প্রাচীর তৈরি করছে। একই কাজ ছাত্রদল করেছিল বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়। তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসের ধারে-কাছে আসতে দেয়নি। মন্দ কাজের অনুকরণে আমাদের রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের অনুসারীদের জুড়ি নেই! কিন্তু যে 'ছাত্র সংগঠনের' সব নেতাই অছাত্র তাদের মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার কী প্রয়োজন? এতে শিক্ষা কার্যক্রমের কোনো কল্যাণ হবে কি? এ সংগঠনেও 'সেশনজট'। চলি্লশ-ঊর্ধ্বরা পদ না ছাড়লে 'অপেক্ষমাণ চলি্লশ-ঊর্ধ্বরা' যে দেশ ও জাতির কল্যাণে সাহসী ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না!
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বের পদে আসীন হতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারিত হয়েছে ২৯ বছর। এখন যেভাবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার সাজানো হয়েছে তাতে এ বয়সেও ছাত্র থাকার সুযোগ নেই। ২৪-২৫ বছরেই এমএ-এমএসসি কিংবা প্রকৌশল বা এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও ছাত্রলীগের জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এ জন্য বিশেষ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার। এ সংগঠনেরও নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় না। ফলে শীর্ষ পদগুলোতে আসতে আগ্রহীদের ভিড় বাড়ে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রাক্কালে ২৯ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী কয়েকজন এবারের মতো বয়সসীমা শিথিল করার দাবি জানিয়েছিলেন এ যুক্তিতে যে, সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণেই তারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য পদে যোগ্য বিবেচিত হচ্ছেন না। আমাদের ছাত্র আন্দোলন মহৎ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে প্রধান অবদান তরুণ প্রজন্মের। স্বাধীন দেশে পাকিস্তান আমলের মতো সামরিক শাসন চাপিয়ে দেওয়া হলে এ ছাত্রসমাজই রুখে দাঁড়ায়। ভবিষ্যতেও দেশের প্রয়োজনে তারা এ দায়িত্ব পালন করবে, তাতে সন্দেহ পোষণ করা যায় না। ২০০৭ সালের আগস্টের ছাত্র আন্দোলন আমরা স্মরণ করতে পারি। তখন জরুরি আইন চলছিল এবং আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি করা হয়। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেনাবাহিনী ও পুলিশ নির্বিচারে মারধর করে, কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা নত হননি। তখনকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন যেসব শিক্ষার্থী দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাদের তেমন দেখা যায়নি। তারা বরং সামরিক বাহিনীর দমননীতিতে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন। এটাও সবার জানা যে, ওয়ান-ইলেভেনের পর সামরিক বাহিনীতে যাদের জিয়াউর রহমান এবং এইচএম এরশাদের মতো প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হওয়ার উচ্চাভিলাষ ছিল তারা ২০০৭ সালের আগস্টের আন্দোলন থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে মনোযোগী হয়। কিন্তু হায়! আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাত্রদের কাছ থেকে যে শিক্ষা নিতে চায় না। ভাষা আন্দোলনের সময়ে নেতৃত্বে নিয়মিত ছাত্রদের পাশাপাশি অছাত্ররাও ছিলেন। কিন্তু ১৪৪ ধারা যারা ভেঙে পুলিশের লাঠি-গুলির সামনে পড়েছেন তারা প্রায় সবাই নিয়মিত ছাত্রছাত্রী। ষাটের দশকে বটতলার মিছিল তখনই বিশাল হতো যখন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে দলে দলে ছাত্রছাত্রীরা এসে তাতে যোগ দিত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পগুলোতে তরুণদের ভিড় ছিল বিপুল। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে এবং জীবন দিয়েছেও। আশির দশকে এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনের সময়েও তরুণ-তরুণীরা সোচ্চার হয়েছিল। তাহলে কেন আদুভাইয়ের ওপর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নির্ভরতা? আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তরফে যুক্তি দেখানো হয় যে, একটু বেশি বয়সী না হলে এত বড় সংগঠন সামাল দেওয়া যায় না। আরেকটি যুক্তি : নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বেজায় চাপ থাকে। বড় ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হতে হয় হোলটাইমার। পেশিশক্তি প্রদর্শনেরও প্রয়োজন থাকে। এক্ষেত্রেও কিশোর-তরুণদের চেয়ে যুবক এবং প্রায় প্রবীণরা বেশি কার্যকর হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তারা নিজেরা তেমন মারধর-সন্ত্রাসে অংশ নেয় না, কিন্তু পেশিশক্তি সংগঠিত করায় সক্ষম।
আমাদের রাজনীতিবিদরা বইয়ের মনোযোগী পাঠক নন বলেই জানি। তবে অনেকেই সংবাদপত্রের নির্বাচিত অংশ নিয়মিত পাঠ করেন। দেশের হাল-হকিকত বুঝতে তাদের ভরসা সংবাদপত্র। তবে তরুণ প্রজন্ম কী ভাবছে সেটা বোঝার জন্য তাদের বিভিন্ন সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ এবং বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুকের কমিউনিটি পেজ ভিজিট করার অনুরোধ করতে চাই। সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের বিভিন্ন সংবাদ ও কলামের ওপর পাঠকদের প্রচুর মন্তব্য থাকে। ব্লগে থাকে অনেকের নানা কারেন্ট ইস্যুতে ভাবনা। এসব পাঠ করলে তাদের ভাবনা-চিন্তাগুলো জানা যাবে সহজেই, যা সাধারণত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে থাকে না। ছাত্রলীগের নামে যা চলছে সেটা তরুণ প্রজন্ম পছন্দ করে না। বিএনপির ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে অর্ধশতবর্ষীদের নয়, বরং তাদের সন্তানদের দেখতে চায়। এইচএম এরশাদ যখন বলেন যে, তার দলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ মূল্যায়ন করেননি, তখন তারা এ সাবেক সেনাশাসকের প্রতি বিন্দুমাত্র করুণা দেখান না, বরং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন। যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি সেখানেই তরুণ প্রজন্ম তার বিরুদ্ধে সোচ্চার। হতে পারে যে, তাদের ভাবনায় কিছু আবেগ-উচ্ছ্বাস থাকে। তারপরও বলব যে, এদের ভাষা বুঝতে না পারলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার করণীয় আপনারা কখনোই নির্ধারণ করতে পারবেন না। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান তুলেছিলেন। এর সঙ্গে তরুণদের ভাবনার চমৎকার মিল ছিল। নির্বাচনে তারা রাজাকার-আলবদর এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের যেমন পরাজিত করতে সক্রিয় হয়েছে, তেমনি চেয়েছে নতুন এক বাংলাদেশ। খালেদা জিয়া যখন বলেন যে, ফখরুদ্দীন-মইনের চক্রান্তেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তখন তিনি তরুণ প্রজন্মের এ মনোভাবকে অবজ্ঞা করেন।
লেখার শুরুতে বলেছি, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই সোচ্চার থাকেন এই বলে যে, 'ত্যাগের মূল্যায়ন' হয় না। এ মূল্যায়ন বলতে বোঝায় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করে কিছু লোকের ভাগ্যোন্নয়ন। সরকারি কাজের টেন্ডার যে অন্যায়ভাবে পায় তার মনে হয় 'ত্যাগের মূল্যায়ন' হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে এটা চলে আসছে এবং 'দিনবদলের' প্রত্যাশা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও তা বদলাতে পারেনি। এটা উপেক্ষা করার খেসারত কিন্তু দিতে হতে পারে আগামী নির্বাচনে। কিন্তু তারচেয়েও বেশি ক্ষতি হবে দেশের। দেশে অনেক অনিয়ম রয়েছে এবং তার পরিশোধন দরকার। যে লাখ লাখ সাধারণ শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করছে তারা কিন্তু নিজের উন্নয়ন নিজেই করতে চায়। রাষ্ট্রীয় বিশেষ আনুকূল্যে নয়, নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা নিজে হতে চায়। অনাবশ্যক পরনির্ভরতার মানসিকতায় তারা আক্রান্ত নয়। সরকারের কাছে তারা সেই সুবিধাই পেতে চায় যা সবাইকে দেওয়া হয়। সম্প্রতি শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন, নতুন প্রজন্মের যারা বড় আকারে শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছে তারা সরকারের ওপর কম নির্ভর করে। সরকারি বিদ্যুৎ পেলে তারা খুশি। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, তাই দিনে ৬-৭ ঘণ্টা কারখানা বন্ধ_ এটা তারা মেনে নিতে পারে না। দ্রুতই বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করে নেয়। বিভিন্ন দেশে বাজার অনুসন্ধানে তারা নিজেরাই তৎপর হয়। তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় যারা সক্রিয় তারাও কিন্তু নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করতে চায়। এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাদের ভাষা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে, সরকারি দলকে আরও বেশি করে বুঝতে হবে। আমাদের সরকারি সংবাদপত্র, বেতার এবং টেলিভিশন আছে। বেসরকারি খাতেও আছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ যেখানে, সেখানে কেবলই সরকারের জয়গান। বেসরকারি খাতের সংবাদপত্র ও বেতার-টিভিতেও কিন্তু প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে। বাধ্যবাধকতাও থাকে। এ কারণে তারা যা লেখে কিংবা বলে সেটাই জনমত নয়। এর বাইরেও রয়েছে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী-পুরুষ। বিশেষ করে বলতে চাই তরুণ প্রজন্মের কথা। তারা প্রাতিষ্ঠানিক গণমাধ্যমের বাইরে নিজেদের অভিমত প্রকাশের ব্যবস্থা করে নিয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তাদের সেন্সর করার কেউ নেই। তারা নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াও সরাসরি মতবিনিময় করে। সরকার কিংবা অন্য কারও পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাদের উপেক্ষা করতে চাইলে করতে পারেন, আবার তারা যেসব বিষয়ে সমালোচনামুখর তার প্রতি কর্ণপাত করতে পারেন এবং মনোযোগ দিয়ে পাঠ করতে পারেন তাদের গঠনমূলক বিভিন্ন প্রস্তাব ও অভিমত। এরা কিন্তু কেউই রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের ছাত্র-যুব সংগঠনের 'সম্মেলন-জ্যামে' আটকা নেই কিংবা ত্যাগের মূল্যায়নের জন্যও করে না হা-পিত্যেশ। তারা যা বলে তার মূল লক্ষ্য থাকে দেশ ও দশের কল্যাণ।
=============================
দৈনিক সমকাল এর সৌজন্যে
লেখকঃ অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
মূল সংবিধান সংরক্ষণে সরকারের ইউটার্ন তুরস্কে জেনারেলদের পদত্যাগ কেন? ছোট দলগুলো ফুরফুরে মেজাজে! কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষার বেহাল দশা গল্প- লঞ্চের আপার ক্লাসে বাচ্চা হাতি গুরুপল্লির আশ্রমে ভর্তি না হয়েই মুক্তিযুদ্ধের ১০ বই মগ্নচৈতন্যের বর্ণময় অভিঘাত গল্প- চিনেজোঁক পুস্তক প্রকাশনা ও বাংলা একাডেমীর বইমেলা শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব by শাহীন আখতার বাজে জসীমউদ্দীন নান্দনিক চৈতন্য গ্রামকে শহরে এনেছি গল্প- জলঝড় একাত্তরের অপ্রকাশিত দিনপঞ্জি রশীদ করীমে'র সাক্ষাৎকার- 'মনে পড়ে বন্ধুদের' প্রাচ্যের ছহি খাবনামা গল্প- এভাবেই ভুল হয় গল্প- মাঠরঙ্গ ফয়েজ আহমেদঃ স্মৃতিতে চিঠিতে অরুন্ধতী রায়ের সাক্ষাৎকারঃ উপন্যাসের জগতের জগতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই ইতিহাস ও জাতি দিয়ে ঘেরা গল্প- চাল ডাল লবণ ও তেল ক-য়ে ক্রিকেট খ-য়ে খেলা গল্পসল্প- ডাংগুলি হ্যারল্ড পিন্টারের শেষ সাক্ষাৎকারঃ আশৈশব ক্রিকেটের ঘোর সূচনার পিকাসো আর ভ্যান গঘ আল্লাহআকবরিজ সি সি গল্প- কবি কুদ্দুস ও কালনাগিনীর প্রেম গল্পসল্প- আমার বইমেলা বাংলাদেশ হতে পারে বহুত্ববাদের নির্মল উদাহরণ শিক্ষানীতি ২০১০, পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এবং জাতীয় স্বার্থ চীন-ভারত সম্পর্ক এবং এ অঞ্চলে তার প্রভাব নারী লাঞ্ছনার সর্বগ্রাস একজন এস এ জালাল ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভাণ্ডার গল্প- স্বপ্নের মধ্যে কারাগারে গল্পিতিহাস- কাঁথা সিলাই হইসে, নিশ্চিন্ত ‘এখন প্রাধান্য পাচ্ছে রম্যলেখা' অকথিত যোদ্ধা কানকুনের জলবায়ু সম্মেলন, বাংলাদেশের মমতাজ বেগম এবং আমার কিছু কথা নাপাম বোমা যা পারেনি, চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্স্ ট্যাংক কি তা পারবে? ঠাকুর ঘরে কে রে...! ষড়যন্ত্র নয়, ক্ষুধা ও বঞ্চনাই আন্দোলনের ইন্ধন বাহাত্তরের সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়? ড.ইউনূসের দুঃখবোধ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ
দৈনিক সমকাল এর সৌজন্যে
লেখকঃ অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments