কোচিংনির্ভর শিক্ষা আর কত দিন? by ফজলুল হক
যে কয়টি কারণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা অবনতির মুখে পড়েছে, কোচিং-বাণিজ্য এর মধ্যে অন্যতম। এই বাণিজ্যে যাঁরা জড়িত, তাঁদের অনেকেই পেশায় শিক্ষক; আবার কেউ অন্য কোনোখানে চাকরি না পেয়ে এতে নেমেছেন। একেবারেই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট না হয়েও কেউ কেউ চালাচ্ছেন অপ্রতিরোধ্য শিক্ষা-বাণিজ্য। বাণিজ্য চলছে তিনভাবে—ভর্তি কোচিং, একাডেমিক কোচিং ও বিসিএস কোচিং নামে। ভর্তি কোচিং চালু রয়েছে শিশুশ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত, একাডেমিক কোচিং চলে শ্রেণীকক্ষের পাঠ ও পরীক্ষার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা—সব পর্যায়েই আর পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি লাভের প্রস্তুতির জন্য চলছে বিসিএস কোচিং।
ভর্তি কোচিং শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার জন্য বাড়তি ব্যয়, টেনশন, আর প্রচুর ঝামেলা বহন করে চলেছে। অঞ্চলভেদে জনসংখ্যা অনুযায়ী স্কুল প্রতিষ্ঠা আর সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অভিন্ন পাঠব্যবস্থা ও অবকাঠামোয় দাঁড় করাতে পারলে অবুঝ শিশু এবং তাদের অসহায় অভিভাবককে ভীষণ পীড়া থেকে মুক্তি দেওয়া যায়। প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষালাভের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের; তাকে কেন জীবনের শুরুতেই নামতে হবে প্রতিযোগিতা নামক মহাসমুদ্রে! পৃথিবীর নানা দেশে যখন মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র পালন করছে প্রধান ভূমিকা, সেখানে আমরা ডুবে আছি অনগ্রগতির অতল অন্ধকারে। যে রাষ্ট্র এখনো দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে না; যেখানে এখনো বিদ্যুতের উৎপাদন আর চাহিদার বিরাট ফারাক; শিক্ষা যেখানে এখনো পণ্য; নারী যখন ভয়াবহ অবহেলা আর নির্যাতনের শিকার, সেই রাষ্ট্রে তো শিশুকে প্রবল প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে জীবনযুদ্ধে! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নামক প্রহসনের আড়ালেও লুকিয়ে আছে শত অপরাধের চালচিত্র। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অর্জিত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন-অনুপাতে ভর্তি নীতিমালা তৈরি করা গেলে এই যন্ত্রণা থেকে জাতিকে রেহাই দেওয়া যায়। তা পারলে শহরমুখী মানুষের চাপ আর ভর্তি-বাণিজ্য এড়িয়ে চলা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় করে গড়ে উঠছে শিক্ষা-প্রতিকূল মানসিকতা; নষ্ট হচ্ছে শিক্ষকের নৈতিকতা; শিক্ষার্থীরা হারাচ্ছে আস্থা ও আশা।
নামকরা স্কুল-কলেজকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে কোচিং-বাণিজ্যের মহোৎসব; সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাই কোচিংয়ের মালিক। অধিকাংশ শিক্ষকের বাড়িই এখন একেকটি কোচিং সেন্টার, যেন বাড়িতেই বসে গেছে স্কুল। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে চালু হয়েছে এসি-ননএসির ব্যবস্থা; এসি রুমে পড়লে বেশি ফি দিতে হয়। চিকিৎসককে যেমন তাঁর মূল কর্মস্থলে পাওয়া দুষ্কর, তেমনি ভালো স্কুলের শিক্ষককেও বেশির ভাগ সময়ই পাওয়া যায় প্রাইভেট পড়ানোর টেবিলে। মেডিকেল কলেজ বা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কিংবা স্কুল তাদের প্রয়োজনে পায় না চিকিৎসক বা শিক্ষককে। প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া প্যাথলজি থেকে টেস্ট না করালে কিংবা পছন্দের দোকান থেকে ও পছন্দের কোম্পানির ওষুধ না কিনলে যেমন খুশি হন না চিকিৎসক, তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওই সব সেন্টারে না পড়লে আম-ছালা দুটোই হারাতে হয়।
কী পাঠ দেওয়া হয় কোচিং সেন্টারে? কেন এত অপবাদ সত্ত্বেও ছাত্র ও অভিভাবকদের এমন নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের দিকে আকর্ষণ? কারণ আর কিছু নয়, শুধু শিক্ষার্থীকে ‘দরকারি’, ‘অতিদরকারি’, ‘বিশেষ দরকারি’ নামে আখ্যায়িত করে পাঠ্যবিষয় চিহ্নিত করে দেওয়া; ওই বিষয়গুলোর রেডিমেড নোট দেওয়া। তারপর সেগুলো কণ্ঠস্থ করে হুবহু পরীক্ষার খাতায় উগড়ে আসার ব্যবস্থা করা। কেবল নোট আর পরীক্ষা। শিক্ষার্থীর সুবিধা হলো—পুরো বই পড়ার দরকার হয় না; নিজের নোট করার শ্রম লাগে না; পরীক্ষার জন্য বাছাইকৃত প্রশ্ন বা বিষয় ছাড়া বাড়তি কিছু পড়ার পরিশ্রম থাকে না। অর্থাৎ এসব সেন্টারের লক্ষ্য হচ্ছে বেশি নম্বর পাইয়ে ফলাফলে চমক দেখানো। পাঠে অনুশীলন, চিন্তা-চেতনার পরিশীলন, শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিক জ্ঞানচর্চার তৃষ্ণা সৃষ্টি করা নয়; স্রেফ পরীক্ষা আর অতি ভালো নম্বর লাভ করে কৃতিত্ব প্রদর্শন করা।
এমনিতেই অবজেকটিভ পড়াশোনার নামে আমরা জলাঞ্জলি দিয়েছি নিবিড় পাঠ; চারটির মধ্যে আন্দাজে একটিতে টিক দিলেও চলে; টেক্সট পড়ার আনন্দ থেকে দূরে সরে পড়েছে শিক্ষার্থী সমাজ। প্রকৃত জ্ঞানার্জনে সন্তানকে ব্রতী করার ব্যাপারে আমরা বুঝি বিভ্রান্ত। আমরা তার পরীক্ষার ফলাফলের চমকেই মোহিত ও তৃপ্ত। হু-হু করে বেড়ে চলেছে মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কৃতীর ভাগীদার (!) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জৌলুশও বাড়তে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারগুলোর বিজ্ঞাপনের ভাষা অধিকতর সমৃদ্ধ করার মওকা বাড়ে; সে সঙ্গে ব্যবসাও ওঠে ফুলে-ফেঁপে।
শিক্ষকের সৃজনশীলতা, শিক্ষার্থীর উপস্থাপন দক্ষতা আর প্রতিষ্ঠানে ও রাষ্ট্রে শিক্ষাব্যবস্থাপনা বর্তমান সময়ের চিন্তাধারায় অত্যন্ত কার্যকরী। শিক্ষক কিংবা পাঠ-নির্দেশক হয়তো গাইডলাইন দিতে পারেন, কিছুতেই গাইডবই-নির্ভরতার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেন না। বিস্ময়ের ব্যাপার, গাইডবই প্রকাশনার সঙ্গে অনেক শিক্ষকেরই নাম জড়িয়ে রয়েছে। মূল বই আর সহায়ক বইয়ের পার্থক্যের জটিলতা মুছে ফেলে কেবল নোট-গাইড জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ভাবনার ভুবনটি।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি ও মননশীলতা বিকাশে সৃজনশীল রচনা লিখন ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের পাঠব্যবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক কিংবা সৃজনমুখী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি ভেবে দেখা যায়। শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আর চিন্তার জগৎটিকে শাণিত করার জন্য, সক্রিয় রাখার জন্য বিনোদনমূলক পরিসর স্থাপনের কথাও ভাবতে হবে। শিশুকে জোর করে ভাত খাওয়ানোর মতো করে যেন সৃজনশীলতা নামক ট্যাবলেট গিলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি না হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। আর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর দায় শিক্ষকের। উভয় পক্ষের জবাবদিহিও নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকাঠামোর ব্যবস্থাপনায়।
নোটবই-গাইডবই রচনা-প্রকাশ-প্রচার-বাজারজাতকরণ-প্রদর্শন ও পাঠ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। লোক দেখানো আর চোখ ধাঁধানো অভিযান-বক্তৃতা দিয়ে বেশি দিন জনতার দৃষ্টিতে ধুলা দেওয়া যায় না; সত্যটা একদিন বেরিয়ে পড়েই।
ফজলুল হক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।
ভর্তি কোচিং শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার জন্য বাড়তি ব্যয়, টেনশন, আর প্রচুর ঝামেলা বহন করে চলেছে। অঞ্চলভেদে জনসংখ্যা অনুযায়ী স্কুল প্রতিষ্ঠা আর সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অভিন্ন পাঠব্যবস্থা ও অবকাঠামোয় দাঁড় করাতে পারলে অবুঝ শিশু এবং তাদের অসহায় অভিভাবককে ভীষণ পীড়া থেকে মুক্তি দেওয়া যায়। প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষালাভের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের; তাকে কেন জীবনের শুরুতেই নামতে হবে প্রতিযোগিতা নামক মহাসমুদ্রে! পৃথিবীর নানা দেশে যখন মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র পালন করছে প্রধান ভূমিকা, সেখানে আমরা ডুবে আছি অনগ্রগতির অতল অন্ধকারে। যে রাষ্ট্র এখনো দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে না; যেখানে এখনো বিদ্যুতের উৎপাদন আর চাহিদার বিরাট ফারাক; শিক্ষা যেখানে এখনো পণ্য; নারী যখন ভয়াবহ অবহেলা আর নির্যাতনের শিকার, সেই রাষ্ট্রে তো শিশুকে প্রবল প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে জীবনযুদ্ধে! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নামক প্রহসনের আড়ালেও লুকিয়ে আছে শত অপরাধের চালচিত্র। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অর্জিত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন-অনুপাতে ভর্তি নীতিমালা তৈরি করা গেলে এই যন্ত্রণা থেকে জাতিকে রেহাই দেওয়া যায়। তা পারলে শহরমুখী মানুষের চাপ আর ভর্তি-বাণিজ্য এড়িয়ে চলা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় করে গড়ে উঠছে শিক্ষা-প্রতিকূল মানসিকতা; নষ্ট হচ্ছে শিক্ষকের নৈতিকতা; শিক্ষার্থীরা হারাচ্ছে আস্থা ও আশা।
নামকরা স্কুল-কলেজকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে কোচিং-বাণিজ্যের মহোৎসব; সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাই কোচিংয়ের মালিক। অধিকাংশ শিক্ষকের বাড়িই এখন একেকটি কোচিং সেন্টার, যেন বাড়িতেই বসে গেছে স্কুল। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে চালু হয়েছে এসি-ননএসির ব্যবস্থা; এসি রুমে পড়লে বেশি ফি দিতে হয়। চিকিৎসককে যেমন তাঁর মূল কর্মস্থলে পাওয়া দুষ্কর, তেমনি ভালো স্কুলের শিক্ষককেও বেশির ভাগ সময়ই পাওয়া যায় প্রাইভেট পড়ানোর টেবিলে। মেডিকেল কলেজ বা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কিংবা স্কুল তাদের প্রয়োজনে পায় না চিকিৎসক বা শিক্ষককে। প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া প্যাথলজি থেকে টেস্ট না করালে কিংবা পছন্দের দোকান থেকে ও পছন্দের কোম্পানির ওষুধ না কিনলে যেমন খুশি হন না চিকিৎসক, তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওই সব সেন্টারে না পড়লে আম-ছালা দুটোই হারাতে হয়।
কী পাঠ দেওয়া হয় কোচিং সেন্টারে? কেন এত অপবাদ সত্ত্বেও ছাত্র ও অভিভাবকদের এমন নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের দিকে আকর্ষণ? কারণ আর কিছু নয়, শুধু শিক্ষার্থীকে ‘দরকারি’, ‘অতিদরকারি’, ‘বিশেষ দরকারি’ নামে আখ্যায়িত করে পাঠ্যবিষয় চিহ্নিত করে দেওয়া; ওই বিষয়গুলোর রেডিমেড নোট দেওয়া। তারপর সেগুলো কণ্ঠস্থ করে হুবহু পরীক্ষার খাতায় উগড়ে আসার ব্যবস্থা করা। কেবল নোট আর পরীক্ষা। শিক্ষার্থীর সুবিধা হলো—পুরো বই পড়ার দরকার হয় না; নিজের নোট করার শ্রম লাগে না; পরীক্ষার জন্য বাছাইকৃত প্রশ্ন বা বিষয় ছাড়া বাড়তি কিছু পড়ার পরিশ্রম থাকে না। অর্থাৎ এসব সেন্টারের লক্ষ্য হচ্ছে বেশি নম্বর পাইয়ে ফলাফলে চমক দেখানো। পাঠে অনুশীলন, চিন্তা-চেতনার পরিশীলন, শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিক জ্ঞানচর্চার তৃষ্ণা সৃষ্টি করা নয়; স্রেফ পরীক্ষা আর অতি ভালো নম্বর লাভ করে কৃতিত্ব প্রদর্শন করা।
এমনিতেই অবজেকটিভ পড়াশোনার নামে আমরা জলাঞ্জলি দিয়েছি নিবিড় পাঠ; চারটির মধ্যে আন্দাজে একটিতে টিক দিলেও চলে; টেক্সট পড়ার আনন্দ থেকে দূরে সরে পড়েছে শিক্ষার্থী সমাজ। প্রকৃত জ্ঞানার্জনে সন্তানকে ব্রতী করার ব্যাপারে আমরা বুঝি বিভ্রান্ত। আমরা তার পরীক্ষার ফলাফলের চমকেই মোহিত ও তৃপ্ত। হু-হু করে বেড়ে চলেছে মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কৃতীর ভাগীদার (!) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জৌলুশও বাড়তে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারগুলোর বিজ্ঞাপনের ভাষা অধিকতর সমৃদ্ধ করার মওকা বাড়ে; সে সঙ্গে ব্যবসাও ওঠে ফুলে-ফেঁপে।
শিক্ষকের সৃজনশীলতা, শিক্ষার্থীর উপস্থাপন দক্ষতা আর প্রতিষ্ঠানে ও রাষ্ট্রে শিক্ষাব্যবস্থাপনা বর্তমান সময়ের চিন্তাধারায় অত্যন্ত কার্যকরী। শিক্ষক কিংবা পাঠ-নির্দেশক হয়তো গাইডলাইন দিতে পারেন, কিছুতেই গাইডবই-নির্ভরতার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেন না। বিস্ময়ের ব্যাপার, গাইডবই প্রকাশনার সঙ্গে অনেক শিক্ষকেরই নাম জড়িয়ে রয়েছে। মূল বই আর সহায়ক বইয়ের পার্থক্যের জটিলতা মুছে ফেলে কেবল নোট-গাইড জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ভাবনার ভুবনটি।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি ও মননশীলতা বিকাশে সৃজনশীল রচনা লিখন ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের পাঠব্যবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক কিংবা সৃজনমুখী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি ভেবে দেখা যায়। শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আর চিন্তার জগৎটিকে শাণিত করার জন্য, সক্রিয় রাখার জন্য বিনোদনমূলক পরিসর স্থাপনের কথাও ভাবতে হবে। শিশুকে জোর করে ভাত খাওয়ানোর মতো করে যেন সৃজনশীলতা নামক ট্যাবলেট গিলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি না হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। আর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর দায় শিক্ষকের। উভয় পক্ষের জবাবদিহিও নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকাঠামোর ব্যবস্থাপনায়।
নোটবই-গাইডবই রচনা-প্রকাশ-প্রচার-বাজারজাতকরণ-প্রদর্শন ও পাঠ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। লোক দেখানো আর চোখ ধাঁধানো অভিযান-বক্তৃতা দিয়ে বেশি দিন জনতার দৃষ্টিতে ধুলা দেওয়া যায় না; সত্যটা একদিন বেরিয়ে পড়েই।
ফজলুল হক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।
No comments