মরা ম্যাচ থেকে দর্শকও মুখ ফিরিয়ে
অনেক ক্রিকেট মাঠই কোনো রেকর্ড বা নির্দিষ্ট কোনো কীর্তির সমার্থক হয়ে যায়। লন্ডনের ওভাল মানেই যেমন লেন হাটনের ৩৬৪, অ্যান্টিগার রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ড মানেই ব্রায়ান লারার ৩৭৫ ও ৪০০, ওয়েলসের সোয়ানসি মানেই গ্যারি সোবার্সের ছয় বলে ছক্কা...
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তিন বছর বয়সী সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কও তেমনি ‘গিবস পার্ক’! গত বিশ্বকাপে গিবস-সৃষ্ট ওয়ানডেতে ছয় বলে ছয় ছক্কার একমাত্র কীর্তিটি এ মাঠেই। ৩৪তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর প্রথম দুই বলেই ছক্কা মেরে ড্যারেন স্যামি আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিলেন সেটিকে।
মাহমুদউল্লাহরও তা মনে পড়ে গেল কি না কে জানে, পরের বলটা করলেন লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। উইকেটকিপার ঠিকমতো ধরতে না পারায় ওই ওয়াইড থেকে বাড়তি আরেকটা রান হলো। ছয় বলে ছয় ছক্কা নিয়ে আলোচনারও ওখানেই সমাপ্তি।
তৃতীয় বলটা ওয়াইড বলে ওভারে ছয় ছক্কা তখনো সম্ভব ছিল। কিন্তু মারবেন কে—ফ্লয়েড রেইফার? তাহলেই হয়েছে! স্বপ্নেও যা ভাবেননি, হঠাৎকরেই সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কত্ব পেয়ে গিয়ে রেইফার আনন্দ করবেন কি, বেচারার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা! এই ম্যাচের আগে দুই টেস্ট আর দুই ওয়ানডের ছয় ইনিংসে মোট রান ৫৮। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ২৫ ও ১৯ রান করার পর পরের চার ইনিংসে দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। সেই রেইফার কাল রান পেলেন। সেঞ্চুরিও নয়, হাফ সেঞ্চুরিও নয়, কিন্তু আগের ৬ ইনিংসে যার ৫৮ রান, তাঁর কাছে ৪০ রানই তো সেঞ্চুরির আনন্দ হয়ে আসে। বিশেষ করে কালও শুরুতে তাঁর ব্যাটিং দেখে এই গেলেন-এই গেলেন মনে হচ্ছিল!
শুরুতে আন্দ্রে ফ্লেচারের ঝোড়ো ব্যাটিং, রেইফারের রান পাওয়ার বাইরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের প্রথমার্ধে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বলতে হবে তামিম ইকবালের নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচটাকে। ব্যাটসম্যানের নাম কেমার রোচ বলে উইকেটটা তেমন দামি নয়, তবে ক্যাচটার মহিমা তাতে একটুও কমে না। ডিপ মিড উইকেট থেকে অনেকটা দৌড়ে সামনে ডাইভ দিয়ে মাঠের ইঞ্চিখানেক ওপর থেকে তামিম হাতে জমিয়েছেন বল।
আগের ম্যাচে ২৭৪ তাড়া করে ফেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৮ রান করে ফেলার পরও মাঠ ছাড়ার সময় পরিতৃপ্ত দেখাল বাংলাদেশকে। তা দেখানোর আরেকটা কারণ বোধ হয় ওয়ার্নার পার্কের উইকেট উইন্ডসর পার্কের উইকেটের চেয়ে অনেক বেশি ব্যাটিং-বান্ধব, যাকে বলে ব্যাটিং-স্বর্গ। তাতেও অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের দায়ভার একটুও কমে না। ব্যাটিং-স্বর্গ হলে ব্যাটসম্যান মারবে ঠিক আছে, কিন্তু এত ওয়াইড হবে কেন? চার স্পিনার নিয়ে খেলেও ওয়াইড ১৬টি! স্পিনাররা যে ওয়াইড করায় পেসারদেরও ছাড়িয়ে গেলেন। ৫টি ওয়াইড করে রাজ্জাক মাহবুবুলের সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রথম, ৪টি করে দ্বিতীয় নাঈম। বাংলাদেশের ছয় বোলারের মধ্যে একমাত্র সাকিবই মুক্ত এই দায় থেকে। উইকেট না পেলেও ৯.৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলারও অধিনায়ক।
রাজ্জাকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রথম ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৫৮ রান। কাল দিলেন ৬৩। ৮৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বেশি রান দিয়েছেন মাত্র পাঁচবার—এই তথ্যটা তাঁর দুই উইকেট পাওয়ার আনন্দকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মরা ম্যাচ বলে বাইরে বসে থাকা দুই পেসার মাহবুবুল ও নাজমুল সুযোগ পেয়েছেন। কালকের ম্যাচে মাহবুবুলের শুরু আর কিয়েরেন পাওয়েলের শুরুতে মিল থাকল। পার্থক্য হলো, ব্যাটসম্যানের জন্য একটা ভুলই সব শেষ করে দিতে পারে বলে সেই ভুলের মূল্য দিতে হলো শুধু পাওয়েলকেই। মাহবুবুলের প্রথম বলটি ওয়াইড, কিন্তু বোলারের তো ফিরে আসার সুযোগ আছে। দ্বিতীয় বলেই পাওয়েলকে এলবিডব্লু করে মাহবুবুল ফিরেও এলেন। বেচারা পাওয়েল! মাত্র ১৯ বছর বয়স, সেন্ট কিটসের ভগ্নি-দ্বীপ নেভিসে বাড়ি বলে ওয়ানডে অভিষেকটা ছিল হোমগ্রাউন্ডে। এক বলেই সেটি পরিণত দুঃস্বপ্নে!
তবে সেটি দেখার জন্য মাঠে কতজন ছিলেন, তা হাতে গুনেই বলে দেওয়া যেত। পরে সংখ্যাটা একটু বাড়লেও ওভারে ছয় ছক্কার রেকর্ডের মাঠে আরেকটা রেকর্ডও বোধ হয় হয়ে গেল। ওয়ানডে ম্যাচে সবচেয়ে কম দর্শকের রেকর্ড!
আন্দ্রে ফ্লেচারের দুর্দান্ত ইনিংসটারও তাই খুব কমই প্রত্যক্ষদর্শী থাকল। ৪২ বলে ৫২ রানের ৫০-ই চার আর ছয় মেরে (৮টি চার ও ৩টি ছয়)। পঞ্চম ওভারে মাহবুবুলের তিন বলে মেরেছেন দুই ছয়, তাঁরই পরের ওভারে এক পায়ে পুলে পর পর দুই চার মেরে মনে করিয়ে দিয়েছেন গর্ডন গ্রিনিজকে।
এই দলের অন্য অনেকের মতো হঠাৎসুযোগ পাননি। মূল দলেও হয়তো থাকতেন ফ্লেচার, যাকে বলা যেতে পারে টি-টোয়েন্টির উত্পাদিত ব্যাটসম্যান। ২০০৬ সালে অ্যালান স্টানফোর্ডের টোয়েন্টি-টোয়েন্টিই গ্রেনেডার অখ্যাত এই ব্যাটসম্যানের মার মার-কাট কাট ব্যাটিং প্রথম সবার নজরে আনে। স্টানফোর্ডের ওই মিলিয়ন ডলারের ম্যাচেও খেলেছেন। এক মিলিয়ন ডলার জিতে স্টানফোর্ডের লোকজনের পরামর্শমতো তা বিনিয়োগ করে অনেক টাকাও খুইয়েছেন। স্টানফোর্ড জালিয়াত বলে প্রমাণিত হওয়ার পরও ফ্লেচার অবশ্য বিতর্কিত আমেরিকান সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বলতে রাজি নন। বরং সব ঝামেলা-টামেলা মিটিয়ে স্টানফোর্ড কবে আবার তাঁর টুর্নামেন্টটা শুরু করবেন, এর অপেক্ষায় আছেন তিনি।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল একটাই প্রাপ্তি—টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইট ওয়াশ করা। বাংলাদেশের ইনিংসের দশম ওভারে এই লেখা শেষ করার সময় সেই সম্ভাবনাকে উজ্জ্বলই লাগছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তিন বছর বয়সী সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কও তেমনি ‘গিবস পার্ক’! গত বিশ্বকাপে গিবস-সৃষ্ট ওয়ানডেতে ছয় বলে ছয় ছক্কার একমাত্র কীর্তিটি এ মাঠেই। ৩৪তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর প্রথম দুই বলেই ছক্কা মেরে ড্যারেন স্যামি আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিলেন সেটিকে।
মাহমুদউল্লাহরও তা মনে পড়ে গেল কি না কে জানে, পরের বলটা করলেন লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। উইকেটকিপার ঠিকমতো ধরতে না পারায় ওই ওয়াইড থেকে বাড়তি আরেকটা রান হলো। ছয় বলে ছয় ছক্কা নিয়ে আলোচনারও ওখানেই সমাপ্তি।
তৃতীয় বলটা ওয়াইড বলে ওভারে ছয় ছক্কা তখনো সম্ভব ছিল। কিন্তু মারবেন কে—ফ্লয়েড রেইফার? তাহলেই হয়েছে! স্বপ্নেও যা ভাবেননি, হঠাৎকরেই সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কত্ব পেয়ে গিয়ে রেইফার আনন্দ করবেন কি, বেচারার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা! এই ম্যাচের আগে দুই টেস্ট আর দুই ওয়ানডের ছয় ইনিংসে মোট রান ৫৮। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ২৫ ও ১৯ রান করার পর পরের চার ইনিংসে দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। সেই রেইফার কাল রান পেলেন। সেঞ্চুরিও নয়, হাফ সেঞ্চুরিও নয়, কিন্তু আগের ৬ ইনিংসে যার ৫৮ রান, তাঁর কাছে ৪০ রানই তো সেঞ্চুরির আনন্দ হয়ে আসে। বিশেষ করে কালও শুরুতে তাঁর ব্যাটিং দেখে এই গেলেন-এই গেলেন মনে হচ্ছিল!
শুরুতে আন্দ্রে ফ্লেচারের ঝোড়ো ব্যাটিং, রেইফারের রান পাওয়ার বাইরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের প্রথমার্ধে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বলতে হবে তামিম ইকবালের নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচটাকে। ব্যাটসম্যানের নাম কেমার রোচ বলে উইকেটটা তেমন দামি নয়, তবে ক্যাচটার মহিমা তাতে একটুও কমে না। ডিপ মিড উইকেট থেকে অনেকটা দৌড়ে সামনে ডাইভ দিয়ে মাঠের ইঞ্চিখানেক ওপর থেকে তামিম হাতে জমিয়েছেন বল।
আগের ম্যাচে ২৭৪ তাড়া করে ফেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৮ রান করে ফেলার পরও মাঠ ছাড়ার সময় পরিতৃপ্ত দেখাল বাংলাদেশকে। তা দেখানোর আরেকটা কারণ বোধ হয় ওয়ার্নার পার্কের উইকেট উইন্ডসর পার্কের উইকেটের চেয়ে অনেক বেশি ব্যাটিং-বান্ধব, যাকে বলে ব্যাটিং-স্বর্গ। তাতেও অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের দায়ভার একটুও কমে না। ব্যাটিং-স্বর্গ হলে ব্যাটসম্যান মারবে ঠিক আছে, কিন্তু এত ওয়াইড হবে কেন? চার স্পিনার নিয়ে খেলেও ওয়াইড ১৬টি! স্পিনাররা যে ওয়াইড করায় পেসারদেরও ছাড়িয়ে গেলেন। ৫টি ওয়াইড করে রাজ্জাক মাহবুবুলের সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রথম, ৪টি করে দ্বিতীয় নাঈম। বাংলাদেশের ছয় বোলারের মধ্যে একমাত্র সাকিবই মুক্ত এই দায় থেকে। উইকেট না পেলেও ৯.৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলারও অধিনায়ক।
রাজ্জাকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রথম ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৫৮ রান। কাল দিলেন ৬৩। ৮৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বেশি রান দিয়েছেন মাত্র পাঁচবার—এই তথ্যটা তাঁর দুই উইকেট পাওয়ার আনন্দকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মরা ম্যাচ বলে বাইরে বসে থাকা দুই পেসার মাহবুবুল ও নাজমুল সুযোগ পেয়েছেন। কালকের ম্যাচে মাহবুবুলের শুরু আর কিয়েরেন পাওয়েলের শুরুতে মিল থাকল। পার্থক্য হলো, ব্যাটসম্যানের জন্য একটা ভুলই সব শেষ করে দিতে পারে বলে সেই ভুলের মূল্য দিতে হলো শুধু পাওয়েলকেই। মাহবুবুলের প্রথম বলটি ওয়াইড, কিন্তু বোলারের তো ফিরে আসার সুযোগ আছে। দ্বিতীয় বলেই পাওয়েলকে এলবিডব্লু করে মাহবুবুল ফিরেও এলেন। বেচারা পাওয়েল! মাত্র ১৯ বছর বয়স, সেন্ট কিটসের ভগ্নি-দ্বীপ নেভিসে বাড়ি বলে ওয়ানডে অভিষেকটা ছিল হোমগ্রাউন্ডে। এক বলেই সেটি পরিণত দুঃস্বপ্নে!
তবে সেটি দেখার জন্য মাঠে কতজন ছিলেন, তা হাতে গুনেই বলে দেওয়া যেত। পরে সংখ্যাটা একটু বাড়লেও ওভারে ছয় ছক্কার রেকর্ডের মাঠে আরেকটা রেকর্ডও বোধ হয় হয়ে গেল। ওয়ানডে ম্যাচে সবচেয়ে কম দর্শকের রেকর্ড!
আন্দ্রে ফ্লেচারের দুর্দান্ত ইনিংসটারও তাই খুব কমই প্রত্যক্ষদর্শী থাকল। ৪২ বলে ৫২ রানের ৫০-ই চার আর ছয় মেরে (৮টি চার ও ৩টি ছয়)। পঞ্চম ওভারে মাহবুবুলের তিন বলে মেরেছেন দুই ছয়, তাঁরই পরের ওভারে এক পায়ে পুলে পর পর দুই চার মেরে মনে করিয়ে দিয়েছেন গর্ডন গ্রিনিজকে।
এই দলের অন্য অনেকের মতো হঠাৎসুযোগ পাননি। মূল দলেও হয়তো থাকতেন ফ্লেচার, যাকে বলা যেতে পারে টি-টোয়েন্টির উত্পাদিত ব্যাটসম্যান। ২০০৬ সালে অ্যালান স্টানফোর্ডের টোয়েন্টি-টোয়েন্টিই গ্রেনেডার অখ্যাত এই ব্যাটসম্যানের মার মার-কাট কাট ব্যাটিং প্রথম সবার নজরে আনে। স্টানফোর্ডের ওই মিলিয়ন ডলারের ম্যাচেও খেলেছেন। এক মিলিয়ন ডলার জিতে স্টানফোর্ডের লোকজনের পরামর্শমতো তা বিনিয়োগ করে অনেক টাকাও খুইয়েছেন। স্টানফোর্ড জালিয়াত বলে প্রমাণিত হওয়ার পরও ফ্লেচার অবশ্য বিতর্কিত আমেরিকান সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বলতে রাজি নন। বরং সব ঝামেলা-টামেলা মিটিয়ে স্টানফোর্ড কবে আবার তাঁর টুর্নামেন্টটা শুরু করবেন, এর অপেক্ষায় আছেন তিনি।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল একটাই প্রাপ্তি—টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইট ওয়াশ করা। বাংলাদেশের ইনিংসের দশম ওভারে এই লেখা শেষ করার সময় সেই সম্ভাবনাকে উজ্জ্বলই লাগছিল।
No comments