জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন কি জীবিত না মৃত?by প্যাট্রিক সিল
এ মাসেই শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত হয়েছে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ঘোষণা করেছেন, আন্দোলন এখনো ‘জীবিত এবং ভালো আছে’। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সন্দেহ নেই, ১১৮টি দেশের সরকারপ্রধানেরা মিসরের লোহিত সাগর উপলক্ষে একটি স্বীকৃত ছুটি কাটিয়েছেন। কিন্তু এ থেকে সত্যিকার অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো অর্জন আছে কি?
আমি ধরে নিলাম, কারও এতটা সমালোচক হওয়া উচিত নয়। শীর্ষ সম্মেলনের অর্জনগুলো হচ্ছে: ফিলিস্তিন ও ডমিনিকান রিপাবলিকের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, আলজেরিয়ার কাছে ইয়েমেনের পাওনা নয় কোটি ডলার ঋণ বাতিল হয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য একটি ন্যাম ইনস্টিটিউট স্থাপনে মিসর রাজি হয়েছে। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ, জাতিসংঘের সংস্কার, আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার পুনর্গঠন, কিউবার ওপর থেকে আমেরিকার ৫০ বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ আহ্বান কতটুকু গুরুত্ব বহন করে?
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন, যদি তাঁরা সত্যিকার অর্থেই তেমন কিছু চাইতেন, তাহলে সেটা তো মিসরে না এসেও করতে পারতেন? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে ভারতের প্রচারমাধ্যমে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা গেছে।
ফলে যে কেউ এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে যে উন্নয়নশীল বিশ্ব এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সেখানে যৌথ শক্তি, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। মীমাংসায় অক্ষম অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এটি এক ধরনের পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। সোমালিয়ার যুদ্ধের বিষবাষ্প আফ্রিকা ছাড়িয়ে আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ছে, দারফুরে হত্যাকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সুদান ও শাদের সম্পর্ক খুবই খারাপ, ফিলিস্তিনের বিবদমান উপদলগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকাঠামোর চমত্কার সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না, এমনি অনেক কিছু।
১৯৫৫ সালে বান্দুংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীনযুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার ঠান্ডাযুদ্ধের আবহ থেকে নিজেদের রক্ষা করা। এই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা নেতাদের মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু (যিনি জোটনিরপেক্ষ নামটির প্রস্তাব করেছিলেন), মিসরের নাসের, যুগোস্লাভিয়ার টিটো, ঘানার নক্রুমা ও ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ন।
আন্দোলনের লক্ষ্যসমূহ (১৯৭৯ সালের হাভানা ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত) ছিল: ‘সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদের আগ্রাসন, বর্ণবাদ এবং সব ধরনের বিদেশি আগ্রাসন, দখলদারি, প্রভুত্ব, হস্তক্ষেপের পাশাপাশি বড় শক্তি ও ব্লক রাজনীতির বিরুদ্ধে’ ‘জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা। এসব মহান লক্ষ্যের খুব সামান্যই অর্জিত হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি আগের শীর্ষ সম্মেলনগুলোর মতোই শারম আল-শেখেও মৌখিক সমর্থন জানানো হয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বর্ণবাদী, নব্য উপনিবেশবাদী দখলদারির অবসান করতে পারে এমন একটি কথাও উচ্চারিত হয়নি।
আমার জানা মতে, ইরাক ও আফগানিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে খুব সামান্যই আলোচনা হয়েছে, যদিও প্রথমোক্ত দেশটি একটি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে উঠে আসার চেষ্টা করছে। অপরদিকে আফগানিস্তানের তালেবানবিরোধী যুদ্ধ এখন পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ছে এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনগণের জন্য এক ভয়াবহ পরিণতি বয়ে এনেছে।
যদিও অনেক আগেই ঠান্ডাযুদ্ধের অবসান হয়েছে, তবুও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের একটি শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে জাতিসংঘের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এবং পৃথিবীর ৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী। কিন্তু এটি এখনো তাদের উদ্দেশ্য পুনরাবিষ্কার করতে পারে না। এটি এখন একটি কথার দোকান, বিশ্বমঞ্চে কোনো দক্ষ অভিনেতা নয়।
সত্যি কথা বলতে কি, যে দুটি পরাশক্তি একসময় বিশ্বকে শাসন করত, তারা এখন নিজেরাই গুরুতর সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আমেরিকা ইরাকে এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, যাতে জয়লাভ করা সম্ভব ছিল না। অথচ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যাংকিং-ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বুশ-যুগের সেই ভয়াবহ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন রীতিমতো মল্লযুদ্ধ করতে হচ্ছে। যদিও সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য বারাক ওবামা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তবু এখনো তিনি এমন কোনো ঘাত সৃষ্টি করতে পারেননি, যাতে আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য বা আদর্শিক কর্তৃত্ব ফিরে আসতে পারে।
অন্যদিকে রাশিয়া আগের সোভিয়েত ইউনিয়নের ছায়া ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও দেশটি ককেশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় আবার প্রভাব বিস্তার করতে খুবই আগ্রহী, তবু তা করতে পারার মতো কোনো যুক্তিসংগত হাতিয়ার তাঁর কাছে নেই। নির্ভরযোগ্য ফরাসি দৈনিক লে মদ-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার জনসংখ্যা ক্রমেই কমছে। ১৯৯৩ সালে এর লোকসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৮৯ লাখ, আজ তা ১৪ কোটি ১৯ লাখ। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে জনবসতি এত কম যে চীনের বহু মানুষ সেখানে এসে কৃষিকাজ শুরু করেছে।
অত্যধিক তামাক ও মদ্যপান এবং নিম্ন মানের খাদ্যের কারণে রাশিয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। ২০০৭ সালে মহিলাপ্রতি সন্তানের সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৪টি। পুরুষের গড় আয়ু নেমে এসেছে ৬১ দশমিক ৪ বছরে, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের চেয়েও কম। প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন মারা যায় ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে।
পরাশক্তিগুলো যদি এমন অনর্থ কাজ করে, তাহলে ‘তৃতীয় বিশ্বের’ কাছ থেকে ভালো কিছু করবে, এমন প্রত্যাশা করা যায় কি? সম্ভবত গোটা গ্রহেরই প্রয়োজন যুক্তিগ্রাহ্য কর্মকাণ্ডে ফিরে আসা।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
প্যাট্রিক সিল: মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ লেখক।
আমি ধরে নিলাম, কারও এতটা সমালোচক হওয়া উচিত নয়। শীর্ষ সম্মেলনের অর্জনগুলো হচ্ছে: ফিলিস্তিন ও ডমিনিকান রিপাবলিকের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, আলজেরিয়ার কাছে ইয়েমেনের পাওনা নয় কোটি ডলার ঋণ বাতিল হয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য একটি ন্যাম ইনস্টিটিউট স্থাপনে মিসর রাজি হয়েছে। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ, জাতিসংঘের সংস্কার, আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার পুনর্গঠন, কিউবার ওপর থেকে আমেরিকার ৫০ বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ আহ্বান কতটুকু গুরুত্ব বহন করে?
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন, যদি তাঁরা সত্যিকার অর্থেই তেমন কিছু চাইতেন, তাহলে সেটা তো মিসরে না এসেও করতে পারতেন? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে ভারতের প্রচারমাধ্যমে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা গেছে।
ফলে যে কেউ এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে যে উন্নয়নশীল বিশ্ব এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সেখানে যৌথ শক্তি, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। মীমাংসায় অক্ষম অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এটি এক ধরনের পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। সোমালিয়ার যুদ্ধের বিষবাষ্প আফ্রিকা ছাড়িয়ে আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ছে, দারফুরে হত্যাকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সুদান ও শাদের সম্পর্ক খুবই খারাপ, ফিলিস্তিনের বিবদমান উপদলগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকাঠামোর চমত্কার সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না, এমনি অনেক কিছু।
১৯৫৫ সালে বান্দুংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীনযুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার ঠান্ডাযুদ্ধের আবহ থেকে নিজেদের রক্ষা করা। এই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা নেতাদের মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু (যিনি জোটনিরপেক্ষ নামটির প্রস্তাব করেছিলেন), মিসরের নাসের, যুগোস্লাভিয়ার টিটো, ঘানার নক্রুমা ও ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ন।
আন্দোলনের লক্ষ্যসমূহ (১৯৭৯ সালের হাভানা ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত) ছিল: ‘সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদের আগ্রাসন, বর্ণবাদ এবং সব ধরনের বিদেশি আগ্রাসন, দখলদারি, প্রভুত্ব, হস্তক্ষেপের পাশাপাশি বড় শক্তি ও ব্লক রাজনীতির বিরুদ্ধে’ ‘জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা। এসব মহান লক্ষ্যের খুব সামান্যই অর্জিত হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি আগের শীর্ষ সম্মেলনগুলোর মতোই শারম আল-শেখেও মৌখিক সমর্থন জানানো হয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বর্ণবাদী, নব্য উপনিবেশবাদী দখলদারির অবসান করতে পারে এমন একটি কথাও উচ্চারিত হয়নি।
আমার জানা মতে, ইরাক ও আফগানিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে খুব সামান্যই আলোচনা হয়েছে, যদিও প্রথমোক্ত দেশটি একটি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে উঠে আসার চেষ্টা করছে। অপরদিকে আফগানিস্তানের তালেবানবিরোধী যুদ্ধ এখন পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ছে এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনগণের জন্য এক ভয়াবহ পরিণতি বয়ে এনেছে।
যদিও অনেক আগেই ঠান্ডাযুদ্ধের অবসান হয়েছে, তবুও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের একটি শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে জাতিসংঘের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এবং পৃথিবীর ৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী। কিন্তু এটি এখনো তাদের উদ্দেশ্য পুনরাবিষ্কার করতে পারে না। এটি এখন একটি কথার দোকান, বিশ্বমঞ্চে কোনো দক্ষ অভিনেতা নয়।
সত্যি কথা বলতে কি, যে দুটি পরাশক্তি একসময় বিশ্বকে শাসন করত, তারা এখন নিজেরাই গুরুতর সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আমেরিকা ইরাকে এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, যাতে জয়লাভ করা সম্ভব ছিল না। অথচ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যাংকিং-ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বুশ-যুগের সেই ভয়াবহ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন রীতিমতো মল্লযুদ্ধ করতে হচ্ছে। যদিও সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য বারাক ওবামা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তবু এখনো তিনি এমন কোনো ঘাত সৃষ্টি করতে পারেননি, যাতে আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য বা আদর্শিক কর্তৃত্ব ফিরে আসতে পারে।
অন্যদিকে রাশিয়া আগের সোভিয়েত ইউনিয়নের ছায়া ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও দেশটি ককেশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় আবার প্রভাব বিস্তার করতে খুবই আগ্রহী, তবু তা করতে পারার মতো কোনো যুক্তিসংগত হাতিয়ার তাঁর কাছে নেই। নির্ভরযোগ্য ফরাসি দৈনিক লে মদ-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার জনসংখ্যা ক্রমেই কমছে। ১৯৯৩ সালে এর লোকসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৮৯ লাখ, আজ তা ১৪ কোটি ১৯ লাখ। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে জনবসতি এত কম যে চীনের বহু মানুষ সেখানে এসে কৃষিকাজ শুরু করেছে।
অত্যধিক তামাক ও মদ্যপান এবং নিম্ন মানের খাদ্যের কারণে রাশিয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। ২০০৭ সালে মহিলাপ্রতি সন্তানের সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৪টি। পুরুষের গড় আয়ু নেমে এসেছে ৬১ দশমিক ৪ বছরে, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের চেয়েও কম। প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন মারা যায় ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে।
পরাশক্তিগুলো যদি এমন অনর্থ কাজ করে, তাহলে ‘তৃতীয় বিশ্বের’ কাছ থেকে ভালো কিছু করবে, এমন প্রত্যাশা করা যায় কি? সম্ভবত গোটা গ্রহেরই প্রয়োজন যুক্তিগ্রাহ্য কর্মকাণ্ডে ফিরে আসা।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
প্যাট্রিক সিল: মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ লেখক।
No comments