জাতিসংঘের দলিল: হাসিনাকে আন্দোলন সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল, তিনি পাত্তা দেননি
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ব্যক্তিগতভাবে আহত হন ছাত্ররা। একই দিন সন্ধ্যায় বিপুল সংখ্যক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেন। তারা স্লোগান দেন- তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। এই স্লোগানে র্যালি থেকে যেন কান্না ভেসে আসতে থাকে। পরে তারা এই স্লোগানকে আরো পরিষ্কার করে। যুক্ত করে- কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্রী প্রতিবাদে যোগ দিতে রাতের নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করে বেরিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীদের রাজাকার স্লোগানের জবাবে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলতে থাকেন যে, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মেনে নেয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। ১৪ই জুলাই তখনকার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল চৌধুরী বলেন, এসব বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি সম্মান দেখানো রাষ্ট্রের পক্ষে আর সম্ভব নয়। এ সময় তিনি বিক্ষোভকারীদের এ যুগের রাজাকার আখ্যায়িত করেন। তখনকার তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত ঘোষণা দেন- যারা রাজাকার হতে চায়, তাদের কোনো দাবিই মেনে নেয়া হবে না। একইভাবে তখনকার সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী দিপু মনি ইঙ্গিত দেন যে, যারা নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিয়েছে তাদের মাথায় ওই (বাংলাদেশের) পতাকা বেঁধে মার্চ করার কোনো অধিকার নেই।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। ১৪ই জুলাই সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র কর্মকর্তারা মাঠে নেমে পড়েন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে পরবর্তী দুই দিন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর উস্কানি দেন। ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন। মাঝে মাঝে ছাত্রলীড়ের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরক্ষা গড়ে তোলেন। ওএইচসিএইচআর যেসব তথ্য পেয়েছে তাতে বলা হয়েছে, এসব পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। সাবেক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওএইচসিএইচআরকে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আমাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের আহ্বানের ভিত্তিতে আমাদের ছাত্ররা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়। যা ঘটেছে তা অপ্রত্যাশিত। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা লড়াই করেছে। ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ বিক্ষোভকে দমিয়ে রাখতে একা ছাত্রলীগের যথেষ্ট শক্তি ছিল না। ফলে পুলিশ অধিক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ও বাইরে পুলিশ কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। এর মধ্যে আছে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট। তবে তাদের কাছে প্রাণঘাতী ধাতব গুলি লোড করা শটান ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকরা পুলিশের সহায়তায় হামলা চালায়। শুধু ১৬ই জুলাই নিহত হন ৬ জন। তার মধ্যে অন্যতম রংপুরের আবু সাঈদ। তাকে হত্যার ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর আন্দোলন আরো ক্ষিপ্রতা পায়। যুক্ত হন বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।
No comments