গুলিতে স্বামীর মৃত্যু, আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে অসহায় স্ত্রী by ফাহিমা আক্তার সুমি
সুজনের বড় ভাই রফিকুল মানবজমিনকে বলেন, আমরা দুই ভাই পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে ভাড়া বাসায় থাকতাম। ছোটবেলা থেকে ঢাকাতে বড় হয়েছি। আমি ভ্যানে করে আখের রস বিক্রি করি। ২০শে জুলাই রাতে একজন অপরিচিত ব্যক্তি ফোনে আমাকে ঘটনাটি জানায়। ওইদিন রাস্তায় ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছাতে আমার প্রায় দুইঘণ্টা লেগেছে। চারিদিকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ভাই আর বেঁচে নেই। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় সুজনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি ভোলাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এম্বুলেন্স ভাড়া করা কঠিন ছিল। কোথাও কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। কেউ কেউ যেতে রাজি হলেও অতিরিক্ত ভাড়া চাইলো। পরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে একটি এম্বুলেন্স মেলে।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর সুজনের স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। সুজন ছিল আমাদের ৮ ভাই-বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। তানিয়াদের পরিবারও অভাবগ্রস্ত। আমার ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানকে আমরাই দেখাশোনা করবো। গত ২২শে আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেছি। সুজনের মৃত্যুর পর তার ছোট্ট শিশুটি তেমন কিছু বুঝতে না পারলেও বাবাকে খুঁজতে থাকে। শুভ বড় হয়ে তার বাবার কথা জানতে চাইবে। এই অবুঝ শিশুটিকে আমরা কি জবাব দিবো? ভোলাতে বসবাস করেন নিহত সুজনের আরেক ভাই সুমন। তিনি সেখানে ট্রাকে মালামাল বহন করেন। সুমন বলেন, আমার ভাই সুজনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও সন্তান গ্রামে চলে আসে। আমরা সবাই একসঙ্গে বসবাস করি। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। সুজনের অবুঝ ছেলেটি বুঝতে না পারলেও ওর বাবাকে খোঁজে। সারাদিন বাবা বাবা করে। কেউ বাবার কথা জানতে চাইলে বলে, ‘বাবা গাড়িতে আছে।’ কাজ শেষে আমি ঘরে আসলে আমাকে বাবা বলে ডাক দেয়। বাবাকে ভুলিয়ে রাখতে মাঝে মাঝে বাজারে নিয়ে যাই। তিনি বলেন, সুজন না থাকলেও আমরা চেষ্টা করছি তার স্ত্রী সন্তানকে ভালো রাখার। সুজনের স্ত্রীর বয়স খুব একটা বেশি না। তার বাবা মকবুল অসুস্থ। মায়েরও বয়স হয়েছে। অবুঝ সন্তানটির মুখের দিকে তাকালে আমার ভাইয়ের চেহারা মনে পড়ে। ছোট ছেলেটির তার বাবার জন্য মন খারাপ হয় বুঝতে পারি। এই অবুঝ শিশুটিকে শান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই।
No comments