শাহপরান (রহ.) মাজার পরিচালনা: ওয়াক্ফ’র নির্দেশনা পালন করেননি কেউ
একইসঙ্গে ওয়াক্ফ এস্টেটের এই সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে সিলেটের জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির রূপরেখার আদেশ দেয়া হয়। ওয়াক্ফ’র এই আদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. বদরুল ইসলাম হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন। প্রতিবেদনে মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, ওয়াক্ফ প্রশাসনের দেয়া পরিচালনা কমিটির ব্যাপারে পরবর্তীতে কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। ফলে কমিটির কার্যক্রম না থাকায় মাজারে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট ওয়াক্ফ এস্টেট প্রশাসনের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ওয়াক্ফ প্রশাসন দীর্ঘ শুনানি শেষে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেটি কার্যকর হয়নি। এ বিষয়টি তিনি প্রতিবেদনে তুলে এনেছেন। তিনি মনে করেন- ওয়াক্ফের আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান। অভিযোগকারী বদরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা ওয়াক্ফ প্রশাসনে যে অভিযোগ দিয়েছিলেন সেটি নিয়ে ২০১৩ সালে তদন্ত ও দীর্ঘ শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে যে আদেশ দেয়া হয়েছে সেটিতে মোতাওয়াল্লিকে স্বপদে রাখার বিষয়ে তাদের আপত্তি ছিল। তবে কমিটির রূপরেখার ব্যাপারে কোনো আপত্তি ছিল না। ওই সময় যদি ওয়াক্ফের নির্দেশনা মানা হতো তাহলে তারা উচ্চ আদালতে যেতেন না। কিন্তু তখনকার কিছু জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন মিলে ওই আদেশ কার্যকরের কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ইন্ধনে মাজার কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করেছে। মামলার পর মামলা দিয়ে কারাবরণ পর্যন্ত করিয়েছে। তিনি দাবি করেন, এবারের উচ্ছৃঙ্খল ঘটনায়ও মাজারের খাদেমদের উস্কানি ছিল। তারা ভণ্ডদের উস্কে দিয়ে ওদের এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে। বিষয়টি প্রশাসনসহ সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
এদিকে- আদেশের কপি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, এলাকার মানুষের পক্ষে মো. বদরুল ইসলাম ২০০৯ সালে ঢাকার ওয়াক্ফ প্রশাসক বরাবর মাজারের ভূমি দখল, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, টাকা-পয়সা আত্মসাৎসহ অসামাজিক কার্যকলাপ ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে বিষয়টির তদন্ত হয়। উভয়পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ করার পর দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শেষে ওয়াক্ফের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব একেএম ইয়াহিয়া চৌধুরী প্রস্তাবটি অনুমোদনও করেন। এতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজনকে সহ-সভাপতি, প্রকৃত খাদেম ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন, এস্টেট মসজিদের ইমাম, এস্টেট মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ওয়াক্ফ পরিদর্শককে সদস্য ও মোতাওয়াল্লিকে সদস্য সচিব করার প্রস্তাব ছিল।
সেদিন কী ঘটেছিল মাজারে: এবারের ওরসের আগে শাহপরান এলাকার আলেম-ওলামাসহ স্থানীয়রা মাজারের খাদেমদের নিয়ে ৫ই সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ওরসে সব ধরনের বেহায়াপনা ও গান-বাজনার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ওরসের আগে মাজার কর্তৃপক্ষও সেটি ভার্চ্যুয়াল বার্তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়েও দেয়। ওরস শুরুর প্রথম দিন মাজারে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন ৯ই সেপ্টেম্বর থেকে মাজারে মোমবাতি জ্বালিয়ে নারী-পুরুষকে একসঙ্গে আসন পেতে বসতে দেখা যায়। এ নিয়ে আলেম- ওলামারা আপত্তি তুললে উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়। কিন্তু ওরসের আখেরি মোনাজাতের কয়েক ঘণ্টা আগে আশেকান দাবিদার ভণ্ডরা পুকুরের পাড়ে দলবদ্ধ হয়ে পাহারায় নিয়োজিত থাকা মাদ্রাসার ছাত্রসহ এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে। আর এ ঘটনার খবর পেয়ে সিলেটে কয়েকটি মাদ্রাসা থেকে আলেম- ওলামারা মাজার এলাকায় ছুটে গিয়েছিলেন। এ সময় সংঘর্ষও হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহতও হন। পরদিন মাজারের প্রধান ফটক এলাকায় আলেম-ওলামারা বৈঠক করে এসব বেহায়াপনা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
No comments