‘আমি কেন্দ্রীয় কারাগারের লোক’ by শাহনেওয়াজ বাবলু
‘একদিন
আমার মোবাইলফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসে। রিসিভ করার পর ওই প্রান্ত থেকে
বলা হয়, আমি কেন্দ্রীয় কারাগারের লোক। জানতে চান অভি আমার কি হয়? আমি বললাম
আমার বোনের ছেলে। ও প্রান্ত থেকে বলেন, আপনার ভাগিনা জেলে মারামারি করেছে।
তার অবস্থা বেশি ভালো না। আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে
যাবো। এখন আমার এই নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। আমি বললাম একটু পরে
জানাচ্ছি।
পরে তাকে আর ফোন দেয়া হয়নি, রাতের বেলায় ওই নাম্বার থেকে আবার কল আসে। আমি ওনাকে টাকা না দিয়ে, কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলি।
কিন্তু পরে ভাগিনার সঙ্গে দেখা করে জানতে পারি কারাগারে তার সঙ্গে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। কারাগারে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও টাকা দিতে হয়। ফ্রি টিকিটের মাধ্যমে দেখার করার খুব কম সুযোগই মেলে। এর আগে আমি দুই বার ফ্রি টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েও ভাগিনার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এরপর থেকে আমি টাকা দিয়েই ভাগিনার সঙ্গে দেখা করতে যাই।’ রাজধানীর খিলগাঁও থেকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ভাগিনা অভির সঙ্গে দেখা করতে এসে এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কলেজ শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন।
টাঙ্গাইল থেকে স্বামীকে দেখতে কেরানীগঞ্জ কারাগারে এসেছেন রাশেদা বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছে। একদিন কারাগারের একলোক আমাকে ফোন দিয়ে বলেন প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা করে দিলে আমার স্বামীকে ভালোভাবে থাকতে দেয়া হবে। যখন আমি রাজি হই, তখন ওইলোক অ্যাডভান্স টাকা চান। আমি তার হাতে প্রতি মাসের ২৭ তারিখে টাকা দিতাম। পরে আমার স্বামী বলল, এই টাকা থেকে দালাল পাঁচ হাজার টাকা খেয়ে ফেলে, এ জন্য তারে ভালো বিছানা দেয় না। এখন আমিই কাঠি (তার) দিয়া টাকা দিই। এইখানে হাজার টাকার ওষুধ পাঠাইলে কমিশন দিতে হয়। খাবার পাঠাইলেও টাকা দিতে হয়, আবার কিনতেও হয় দ্বিগুণ দামে। টাকা ছাড়া কোনো কথা নেই।
কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে সরজমিনে গিয়ে, অন্তত ২০ জন বন্দিকে দেখতে আসা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রায় সবার কাছ থেকে কমবেশি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারাগারের মূল ফটক থেকে শুরু করে ভেতরে, মাঠে, আড়ালে লোকজনের সঙ্গে কারারক্ষীদের কথা বলতে দেখা গেছে। মাঠে একটি বেঞ্চে বসে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নাম-ঠিকানা লিখতে হয়। মূলত সেখান থেকেই বাণিজ্য শুরু। ধীর গতিতে নাম লেখানো চলে, পাশাপাশি চলতে থাকে দালালদের দেনদরবার।
টাকা দিয়ে কেন এ সুযোগ নেন? এ প্রশ্নে হাজতি ও কয়েদিদের স্বজনরা বলেন, স্বজনকে একটু দেখলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। টিকিট কেটে দূর থেকে ছায়াও দেখা যায় না, কথাও বলা যায় না।
এক কারারক্ষী জানান, কারাগারের মূল ফটক থেকে ভেতরে সব মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্য হয়। বেশি হয় সকাল আটটার আগে এবং বিকেল পাঁচটার পরে। বন্দির সঙ্গে সাক্ষাৎ, হাসপাতালে থাকা, আসামির জামিন, বন্দি রোগী বাইরের হাসপাতালে পাঠানো, পুনরায় গ্রেপ্তার, খাবার বা টাকা পাঠানো, মালামাল তল্লাশি করাসহ সবক্ষেত্রেই বাণিজ্য হয় কারাগারে। তিনি বলেন, সাক্ষাৎকার কক্ষটি পাঁচজন কারারক্ষীর কাছে এক মাসের জন্য ৬০-৭০ হাজার টাকায় ‘বিক্রি’ করা হয়। এরপর যা বাণিজ্য হয় তা ভাগ করে নেন কারারক্ষীরা।
এসব বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই কথা বলতে রাজি হননি। আর প্রধান জেল সপুার দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানান তারা। কারা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই থেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ১০ হাজারের মতো বন্দি রয়েছে। সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে এক হাজারের বেশি সাক্ষাৎপ্রার্থী যান কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে।
পরে তাকে আর ফোন দেয়া হয়নি, রাতের বেলায় ওই নাম্বার থেকে আবার কল আসে। আমি ওনাকে টাকা না দিয়ে, কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলি।
কিন্তু পরে ভাগিনার সঙ্গে দেখা করে জানতে পারি কারাগারে তার সঙ্গে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। কারাগারে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও টাকা দিতে হয়। ফ্রি টিকিটের মাধ্যমে দেখার করার খুব কম সুযোগই মেলে। এর আগে আমি দুই বার ফ্রি টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েও ভাগিনার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এরপর থেকে আমি টাকা দিয়েই ভাগিনার সঙ্গে দেখা করতে যাই।’ রাজধানীর খিলগাঁও থেকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ভাগিনা অভির সঙ্গে দেখা করতে এসে এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কলেজ শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন।
টাঙ্গাইল থেকে স্বামীকে দেখতে কেরানীগঞ্জ কারাগারে এসেছেন রাশেদা বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছে। একদিন কারাগারের একলোক আমাকে ফোন দিয়ে বলেন প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা করে দিলে আমার স্বামীকে ভালোভাবে থাকতে দেয়া হবে। যখন আমি রাজি হই, তখন ওইলোক অ্যাডভান্স টাকা চান। আমি তার হাতে প্রতি মাসের ২৭ তারিখে টাকা দিতাম। পরে আমার স্বামী বলল, এই টাকা থেকে দালাল পাঁচ হাজার টাকা খেয়ে ফেলে, এ জন্য তারে ভালো বিছানা দেয় না। এখন আমিই কাঠি (তার) দিয়া টাকা দিই। এইখানে হাজার টাকার ওষুধ পাঠাইলে কমিশন দিতে হয়। খাবার পাঠাইলেও টাকা দিতে হয়, আবার কিনতেও হয় দ্বিগুণ দামে। টাকা ছাড়া কোনো কথা নেই।
কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে সরজমিনে গিয়ে, অন্তত ২০ জন বন্দিকে দেখতে আসা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রায় সবার কাছ থেকে কমবেশি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারাগারের মূল ফটক থেকে শুরু করে ভেতরে, মাঠে, আড়ালে লোকজনের সঙ্গে কারারক্ষীদের কথা বলতে দেখা গেছে। মাঠে একটি বেঞ্চে বসে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নাম-ঠিকানা লিখতে হয়। মূলত সেখান থেকেই বাণিজ্য শুরু। ধীর গতিতে নাম লেখানো চলে, পাশাপাশি চলতে থাকে দালালদের দেনদরবার।
টাকা দিয়ে কেন এ সুযোগ নেন? এ প্রশ্নে হাজতি ও কয়েদিদের স্বজনরা বলেন, স্বজনকে একটু দেখলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। টিকিট কেটে দূর থেকে ছায়াও দেখা যায় না, কথাও বলা যায় না।
এক কারারক্ষী জানান, কারাগারের মূল ফটক থেকে ভেতরে সব মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্য হয়। বেশি হয় সকাল আটটার আগে এবং বিকেল পাঁচটার পরে। বন্দির সঙ্গে সাক্ষাৎ, হাসপাতালে থাকা, আসামির জামিন, বন্দি রোগী বাইরের হাসপাতালে পাঠানো, পুনরায় গ্রেপ্তার, খাবার বা টাকা পাঠানো, মালামাল তল্লাশি করাসহ সবক্ষেত্রেই বাণিজ্য হয় কারাগারে। তিনি বলেন, সাক্ষাৎকার কক্ষটি পাঁচজন কারারক্ষীর কাছে এক মাসের জন্য ৬০-৭০ হাজার টাকায় ‘বিক্রি’ করা হয়। এরপর যা বাণিজ্য হয় তা ভাগ করে নেন কারারক্ষীরা।
এসব বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই কথা বলতে রাজি হননি। আর প্রধান জেল সপুার দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানান তারা। কারা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই থেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ১০ হাজারের মতো বন্দি রয়েছে। সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে এক হাজারের বেশি সাক্ষাৎপ্রার্থী যান কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে।
No comments