চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে
ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে বিভিন্ন
গবেষণায় দেখা গেছে। শহরের ধুলোময় পরিবেশ, পর্যাপ্ত সবুজ গাছপালা না থাকা,
অপরিশোধিত পানি ও কল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়াসহ নানা কারণে মানুষের
দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে শিশু-কিশোর ও যুবকদের
কম্পিউটার, মোবাইলে ইন্টারনেটসহ ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহারের আসক্তি,
খোলা পরিবেশ না থাকায় এ সমস্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, এই
হারে চোখের সমস্যা বাড়তে থাকলে শিগগিরই দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে কৃত্রিম
উপায়ে দেখতে হবে। চোখের রোগীর সংখ্যা বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বলা
হচ্ছে, জন্মগতভাবে চোখে সমস্যা, ফরমালিনযুক্ত খাবার, খোলা পরিবেশ ও সবুজ
প্রকৃতির অভাব এবং শিশু-কিশোর ও যুবকদের অধিক সময় আকাশ সংস্কৃতি বা ফেসবুক
ব্যবহার। পাশাপাশি জন্মের পর বিভিন্ন রোগ যেমন চোখে পর্দা পড়া, ছানি পড়া,
চোখ ট্যারা এবং অ্যালার্জির কারণে অনেক মানুষ ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভোগেন।
বিভিন্ন মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও স্বীকার করেছেন, অধিকাংশ সময়
বাসাবাড়ি বা অফিসের বদ্ধ পরিবেশে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হচ্ছে বলে
উন্মুক্ত সবুজায়ন দেখার সুযোগ মিলছে না। ফলে চোখের নানা জটিলতায় চশমা
ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্রামের শিশুদের তুলনায় শহরের শিশুরা ক্ষীণদৃষ্টি রোগে
বেশি ভুগছে। এ মুহূর্তে শিশুদের এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে রঙিন শাকসবজি ও
ছোট মাছ খাওয়ানো দরকার বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা চোখে কম দেখেন তাদের চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চশমা পড়ার প্রবণতা খুবই কম। প্রয়োজন হলে চশমা নেয়া উচিত। বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে ফেসবুক, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে আসক্তির কারণে সব শিশুর চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে। সময়ের আগেই তাদের চোখে তাই ‘মাইনাস পাওয়ারের’ চশমা উঠছে। দেশের প্রথিতযশা এ চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেন, লেখার বোর্ড না দেখলে শিশুরা লেখায় মনোযোগী হবে না। ফলে মেধায় পিছিয়ে পড়বে। তাই বাবা-মার উচিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে আসক্তি থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা।
চিকিৎসাবিদরা বলছেন, চক্ষুরোগীর বেশিরভাগই বর্তমানের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার। কারণ, ঢাকা শহর ছাড়াও অন্য শহরগুলোতে বিনোদনের জায়গার অভাব থাকায় ইন্টারনেট, ফেসবুক বা ভিডিও গেমে দীর্ঘ সময় দৃষ্টি রাখছে। এমন অসচেতনতা, ঘরমুখী জীবন ব্যবস্থা এবং পড়াশোনাসহ নানা মানসিক চাপে থাকার কারণেও চোখের সমস্যা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ভিশন সিপ্রং’ ও বেসরকারি এনজিও ‘ব্র্যাক’ ২০০৬ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্পে এ নিয়ে কাজ করছে। সংস্থা দুটির প্রতিবেদন মতে, দীর্ঘ ১০ বছরে (২০১৬ পর্যন্ত) তারা দেশের ৬১ জেলায় ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৯ জনকে চক্ষু রোগবিষয়ক চিকিৎসা দেয়। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮০ জনই ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন রোগী, যা সেবাগ্রহীতাদের শতকরা ৬৬ ভাগ। প্রকল্পটি ৬১টি জেলার ৪৫৬টি উপজেলায় কার্যক্রম চালায়। চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে। বিষয়টি মানুষের জন্য খুবই নেতিবাচক দিক। এখন থেকে যদি সচেতন না হওয়া যায় তবে একটা সময় এটি দেশের মানুষের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ দৃষ্টিহীন, এর মধ্যে ৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষই যথাসময়ে চোখের ছানি অপারেশন না হওয়ায় অন্ধত্ব বরণ করেন। প্রতি বছর দুই লাখ রোগীর ছানি অপারেশন হলেও এক লাখ ৩০ হাজার লোক চিকিৎসার অভাবে ছানির কারণে অন্ধত্ব বরণ করছেন। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ রোগীর মধ্যে চোখের ছানির অপারেশন হয় মাত্র এক হাজার ৩০০ জন রোগীর। চক্ষু চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, সাইট সেভার এবং ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি, বিএনএসবিসহ বিভিন্ন সংস্থাসমূহের মতে, দেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু দৃষ্টিহীনতার শিকার। মোট জনসংখ্যার আড়াই কোটি নিয়মিত চোখের দৃষ্টিশক্তি সমস্যায় ভুগছেন। আবার বয়স্কদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লাখের মতো ছানি রোগী আছেন, যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব।
চিকিৎসকরা বলেন, অব্যাহত নগরায়ন, পরিবর্তিত জীবনযাপন, মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার ও আঘাতের কারণে চোখের রোগী বাড়ছে। এ ছাড়া জন্মগত চোখ বাঁকা, আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে, গর্ভবতী মায়ের ভগ্নস্বাস্থ্য এবং অপরিণত বয়সে সন্তান প্রসব, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত হয়। জন্মের সময় অনেক প্রিম্যাচিউর বেবির ক্ষেত্রে ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়। আর ফুসফুসের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাচ্চার চোখের ক্ষতি হয়।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটেই প্রতিদিন গড়ে ২৫০ শিশু চোখের সমস্যা নিয়ে আসে। এদের মধ্যে আবার শতকরা ৪০ জনেরই অপারেশন লাগে। চিকিৎসকরা জানান, ২০১০ সালে শিশুদের মধ্যেই চোখের রোগীর হার ছিল ৩৫ শতাংশ, যা বর্তমানে বেড়ে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এখানে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার সম্ভব কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে একই চিকিৎসা ব্যয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
চিকিৎসকরা জানান, সাধারণত বয়স বাড়া, ডায়াবেটিস রোগ, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহারে চোখের সমস্যা হতে পারে। দেশের কিছু জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে চক্ষু বিভাগ থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত জনবল, উন্নত যন্ত্রপাতি, বাজেট ও অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। অনেক চিকিৎসকের মাইক্রো সার্জারি প্রশিক্ষণ নেই বলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা যথাযথ এবং মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার প্রাইভেট মেডিকেলে চিকিৎসা ব্যয় বেশি বলে অনেকেই সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখছেন না।
৯০-দশকে শিশুরা টিভির প্রতি আসক্ত ছিল। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার, ট্যাব ও মোবাইল ফোন। চোখের চিকিৎসায় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা বলছেন- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে আসক্তি শিশুর চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। সময়ের আগেই তাদের চোখে তাই ‘মাইনাস পাওয়ারের’ চশমা উঠছে। দেশের প্রথিতযশা চক্ষু বিশেষজ্ঞরা শিশুদের চোখে সমস্যার তিনটি কারণের কথা বলেছেন। কোনো কোনো শিশু চোখে সমস্যা নিয়েই জন্মায়। ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত কারণে শিশু রাতকানা রোগে ভুগতে পারে, এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে। স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুরা চশমা ছাড়া দূরের জিনিস দেখতে পায় না।
চিকিৎসকরা বলেন, চোখ শুকিয়ে যাওয়ার পেছনেও অন্যতম কারণ কম্পিউটার, ট্যাব, মোবাইল ফোন ও টেলিভিশনে আটকে থাকা। শিশুরা যখন কাছ থেকে এই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে থাকে, মোবাইল ফোনে একমনে খেলতে থাকে, তখন চোখের মণি এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। শিশুরা চোখের পাতা ফেলে না। পাতা ফেললে চোখের ভেতরের পানি চোখের মণিকে আর্দ্র করে। পাতা না ফেললে কর্নিয়ার যে পানি, তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আস্তে আস্তে চোখ শুকিয়ে যায়। শুষ্ক অনুভব করে বলে শিশু অনবরত চোখ পিটপিট করে। শিশুদের কম্পিউটার-ট্যাব-মোবাইল ফোন, স্কুল-কোচিং-বাসায় পড়া, অনেক রাতে ঘুমাতে যাওয়া, খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা- এই চক্র থেকে বের করে আনার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার জন্য শিশুর ওপর বাড়তি পড়ার চাপও চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করতে পারে। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা যদি সূর্যের আলোয় কিছু সময় কাটায়, তাহলে তার অনেকটা রোগমুক্ত থাকতে পারে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা চোখে কম দেখেন তাদের চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চশমা পড়ার প্রবণতা খুবই কম। প্রয়োজন হলে চশমা নেয়া উচিত। বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে ফেসবুক, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে আসক্তির কারণে সব শিশুর চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে। সময়ের আগেই তাদের চোখে তাই ‘মাইনাস পাওয়ারের’ চশমা উঠছে। দেশের প্রথিতযশা এ চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেন, লেখার বোর্ড না দেখলে শিশুরা লেখায় মনোযোগী হবে না। ফলে মেধায় পিছিয়ে পড়বে। তাই বাবা-মার উচিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে আসক্তি থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা।
চিকিৎসাবিদরা বলছেন, চক্ষুরোগীর বেশিরভাগই বর্তমানের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার। কারণ, ঢাকা শহর ছাড়াও অন্য শহরগুলোতে বিনোদনের জায়গার অভাব থাকায় ইন্টারনেট, ফেসবুক বা ভিডিও গেমে দীর্ঘ সময় দৃষ্টি রাখছে। এমন অসচেতনতা, ঘরমুখী জীবন ব্যবস্থা এবং পড়াশোনাসহ নানা মানসিক চাপে থাকার কারণেও চোখের সমস্যা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ভিশন সিপ্রং’ ও বেসরকারি এনজিও ‘ব্র্যাক’ ২০০৬ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্পে এ নিয়ে কাজ করছে। সংস্থা দুটির প্রতিবেদন মতে, দীর্ঘ ১০ বছরে (২০১৬ পর্যন্ত) তারা দেশের ৬১ জেলায় ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৯ জনকে চক্ষু রোগবিষয়ক চিকিৎসা দেয়। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮০ জনই ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন রোগী, যা সেবাগ্রহীতাদের শতকরা ৬৬ ভাগ। প্রকল্পটি ৬১টি জেলার ৪৫৬টি উপজেলায় কার্যক্রম চালায়। চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে। বিষয়টি মানুষের জন্য খুবই নেতিবাচক দিক। এখন থেকে যদি সচেতন না হওয়া যায় তবে একটা সময় এটি দেশের মানুষের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ দৃষ্টিহীন, এর মধ্যে ৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষই যথাসময়ে চোখের ছানি অপারেশন না হওয়ায় অন্ধত্ব বরণ করেন। প্রতি বছর দুই লাখ রোগীর ছানি অপারেশন হলেও এক লাখ ৩০ হাজার লোক চিকিৎসার অভাবে ছানির কারণে অন্ধত্ব বরণ করছেন। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ রোগীর মধ্যে চোখের ছানির অপারেশন হয় মাত্র এক হাজার ৩০০ জন রোগীর। চক্ষু চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, সাইট সেভার এবং ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি, বিএনএসবিসহ বিভিন্ন সংস্থাসমূহের মতে, দেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু দৃষ্টিহীনতার শিকার। মোট জনসংখ্যার আড়াই কোটি নিয়মিত চোখের দৃষ্টিশক্তি সমস্যায় ভুগছেন। আবার বয়স্কদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লাখের মতো ছানি রোগী আছেন, যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব।
চিকিৎসকরা বলেন, অব্যাহত নগরায়ন, পরিবর্তিত জীবনযাপন, মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার ও আঘাতের কারণে চোখের রোগী বাড়ছে। এ ছাড়া জন্মগত চোখ বাঁকা, আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে, গর্ভবতী মায়ের ভগ্নস্বাস্থ্য এবং অপরিণত বয়সে সন্তান প্রসব, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত হয়। জন্মের সময় অনেক প্রিম্যাচিউর বেবির ক্ষেত্রে ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়। আর ফুসফুসের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাচ্চার চোখের ক্ষতি হয়।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটেই প্রতিদিন গড়ে ২৫০ শিশু চোখের সমস্যা নিয়ে আসে। এদের মধ্যে আবার শতকরা ৪০ জনেরই অপারেশন লাগে। চিকিৎসকরা জানান, ২০১০ সালে শিশুদের মধ্যেই চোখের রোগীর হার ছিল ৩৫ শতাংশ, যা বর্তমানে বেড়ে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এখানে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার সম্ভব কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে একই চিকিৎসা ব্যয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
চিকিৎসকরা জানান, সাধারণত বয়স বাড়া, ডায়াবেটিস রোগ, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহারে চোখের সমস্যা হতে পারে। দেশের কিছু জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে চক্ষু বিভাগ থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত জনবল, উন্নত যন্ত্রপাতি, বাজেট ও অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। অনেক চিকিৎসকের মাইক্রো সার্জারি প্রশিক্ষণ নেই বলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা যথাযথ এবং মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার প্রাইভেট মেডিকেলে চিকিৎসা ব্যয় বেশি বলে অনেকেই সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখছেন না।
৯০-দশকে শিশুরা টিভির প্রতি আসক্ত ছিল। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার, ট্যাব ও মোবাইল ফোন। চোখের চিকিৎসায় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা বলছেন- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে আসক্তি শিশুর চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। সময়ের আগেই তাদের চোখে তাই ‘মাইনাস পাওয়ারের’ চশমা উঠছে। দেশের প্রথিতযশা চক্ষু বিশেষজ্ঞরা শিশুদের চোখে সমস্যার তিনটি কারণের কথা বলেছেন। কোনো কোনো শিশু চোখে সমস্যা নিয়েই জন্মায়। ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত কারণে শিশু রাতকানা রোগে ভুগতে পারে, এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে। স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুরা চশমা ছাড়া দূরের জিনিস দেখতে পায় না।
চিকিৎসকরা বলেন, চোখ শুকিয়ে যাওয়ার পেছনেও অন্যতম কারণ কম্পিউটার, ট্যাব, মোবাইল ফোন ও টেলিভিশনে আটকে থাকা। শিশুরা যখন কাছ থেকে এই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে থাকে, মোবাইল ফোনে একমনে খেলতে থাকে, তখন চোখের মণি এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। শিশুরা চোখের পাতা ফেলে না। পাতা ফেললে চোখের ভেতরের পানি চোখের মণিকে আর্দ্র করে। পাতা না ফেললে কর্নিয়ার যে পানি, তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আস্তে আস্তে চোখ শুকিয়ে যায়। শুষ্ক অনুভব করে বলে শিশু অনবরত চোখ পিটপিট করে। শিশুদের কম্পিউটার-ট্যাব-মোবাইল ফোন, স্কুল-কোচিং-বাসায় পড়া, অনেক রাতে ঘুমাতে যাওয়া, খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা- এই চক্র থেকে বের করে আনার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার জন্য শিশুর ওপর বাড়তি পড়ার চাপও চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করতে পারে। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা যদি সূর্যের আলোয় কিছু সময় কাটায়, তাহলে তার অনেকটা রোগমুক্ত থাকতে পারে।
No comments