‘স্বজনদের ফিরিয়ে দাও’
‘আমার
বাবা মারুফ জামানের নিখোঁজের ৯ মাস হয়েছে। প্রতিদিন সকালে আমি আমার বাবার
রুমে যাই। বাবা সকালে উঠেই এক কাপ চা পান করতেন।সেই চায়ের কাপটি সেখানেই
রয়েছে। পাঁচ বছর আগে আমার মা মারা যান। বাবা না থাকায় আমরা ভাইবোন সবাই
ভেঙে পড়েছি। এভাবে একটি মানুষ নিখোঁজ থাকবে সেটি কীভাবে মেনে নেয়া যায়। আর
কত অপেক্ষা করবো? দয়া করে আমার বাবাকে আপনারা আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।
কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের মেয়ে সামিহা
জামান। তার কান্নায় সভাস্থলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
গতকাল সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘মায়ের ডাক’ প্রতিবাদী সমাবেশ গুম ও জোর করে অন্তর্ধানের শিকার এমন ৪০টি পরিবার উপস্থিত হন। অনেকেই নিখোঁজ হওয়া পরিবারের সদস্যদের ছবি নিয়ে এসেছিলেন। তাদের কান্না আর আকুতিতে এক বেদনাঘন আবহ তৈরি হয়। নিখোঁজ হওয়াদের মা, ভাইবোন আর স্ত্রী সন্তানের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।
অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ বার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এই পরিবারের সদস্যরা কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ করতেন চাকরি। বাড়ি, কর্মস্থল অথবা রাস্তা থেকে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ। বছরের পর বছর তাদের অপেক্ষায় স্বজনরা। অপেক্ষার যেন শেষ নেই। নিদারুণ কষ্ট নিয়ে পার হচ্ছে এই পরিবারগুলোর প্রতিটি দিন, মুহূর্ত। সভা থেকে জানানো হয়, গত ৫ বছরে গুমের শিকার হয়েছেন ৭২৭ জন। গুমের পর কেউ কেউ ফিরে এলেও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে আমার ভাইকে বাসা থেকে র্যাব তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার কোনো খোঁজ নেই। প্রেস ক্লাবের বারান্দায় আমরা ২৫ বার এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করি এটা ভাবতে অবাক লাগে। একটি মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ মেলে না। তিনি আরও বলেন, আপনারা বলতে পারেন? আর কত অপেক্ষা করবো। সেদিনের অবুঝ শিশুরা এখন বুঝতে শিখেছে, তাদের বোঝাতে পারি না তাদের বাবা কোথায় কীভাবে আছে?
নিখোঁজ হওয়া পিন্টুর বোন রেহানা খানম মুন্নি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০১৪ সালে আমার ভাই পিন্টুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র্যাবের কাছে ধর্না দিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একটা লোক হারিয়ে যাবে, তার দায় কী সরকারের নেই? কার কাছে বিচার দেবো? ছেলের আশায় থেকে আমার মা পাগল হয়ে গেছেন।
নিখোঁজ মোয়াজ্জেম হোসেনের মা সালেহা বেগম জানান, আমার ছেলে নির্দোষ ছিল। আইন অনুযায়ী যদি সে ভুল করে তাহলে তার বিচার করেন। কিন্তু, এটা কোন নিয়ম চালু করেছেন যে, মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে না।
নিখোঁজ মাসুমের বোন ফাওজিয়া ইসলাম বলেন, তার ভাইকে ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর উত্তরার একটি প্রাইভেট কোচিং থেকে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশের নাম করে। মাসুম সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সক্রিয় কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রতিবারই একই কথা শুনি। পাঁচ বছর ধরে একটা মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের প্রশ্ন রয়েছে যে, এদের কান্না কী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের কানে যায় না? তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে আপনাদের কান্নার পাত্তা এই সরকার দেবে না। নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসবে নাকি পুরনো বোতলে নতুন মদ আসবে- এ কথা কেউ জানে না।
তিনি আরও বলেন, বুঝে-শুনে গুম করা হয়েছে। এসব গুম মূলত রাজনৈতিক। যারা গুম হয়েছে তারা হয় বিএনপি করে আর না হয় অন্য দল করে। রাজনীতিতে ভয়ের ত্রাস কায়েম করে রাখার জন্য গুমকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। এই অন্যায় অত্যাচারের প্রতিকার আছে। প্রতিজ্ঞা করুন যারা আমার সন্তানকে নিয়ে গেছে তাদের কাউকে ভোট দেবেন না।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, সভ্য দেশে গুম মেনে নেয়া যায় না। এতে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হয়। অনেকেই গুমের শিকার হয়ে ফিরে এসেছেন। কারও লাশও পাওয়া গেছে ডোবাতে, নালাতে। এখন তাও পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় দেশের প্রত্যেক বিবেকবান নাগরিককে আমাদের সজাগ হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, প্রেস ক্লাবে যারা পরিবারের নিখোঁজদের সন্ধানের দাবি করছেন তাদের এটি যৌক্তিক দাবি। এই দাবি রাষ্ট্রকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী।
গতকাল সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘মায়ের ডাক’ প্রতিবাদী সমাবেশ গুম ও জোর করে অন্তর্ধানের শিকার এমন ৪০টি পরিবার উপস্থিত হন। অনেকেই নিখোঁজ হওয়া পরিবারের সদস্যদের ছবি নিয়ে এসেছিলেন। তাদের কান্না আর আকুতিতে এক বেদনাঘন আবহ তৈরি হয়। নিখোঁজ হওয়াদের মা, ভাইবোন আর স্ত্রী সন্তানের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।
অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ বার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এই পরিবারের সদস্যরা কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ করতেন চাকরি। বাড়ি, কর্মস্থল অথবা রাস্তা থেকে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ। বছরের পর বছর তাদের অপেক্ষায় স্বজনরা। অপেক্ষার যেন শেষ নেই। নিদারুণ কষ্ট নিয়ে পার হচ্ছে এই পরিবারগুলোর প্রতিটি দিন, মুহূর্ত। সভা থেকে জানানো হয়, গত ৫ বছরে গুমের শিকার হয়েছেন ৭২৭ জন। গুমের পর কেউ কেউ ফিরে এলেও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে আমার ভাইকে বাসা থেকে র্যাব তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার কোনো খোঁজ নেই। প্রেস ক্লাবের বারান্দায় আমরা ২৫ বার এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করি এটা ভাবতে অবাক লাগে। একটি মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ মেলে না। তিনি আরও বলেন, আপনারা বলতে পারেন? আর কত অপেক্ষা করবো। সেদিনের অবুঝ শিশুরা এখন বুঝতে শিখেছে, তাদের বোঝাতে পারি না তাদের বাবা কোথায় কীভাবে আছে?
নিখোঁজ হওয়া পিন্টুর বোন রেহানা খানম মুন্নি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০১৪ সালে আমার ভাই পিন্টুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র্যাবের কাছে ধর্না দিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একটা লোক হারিয়ে যাবে, তার দায় কী সরকারের নেই? কার কাছে বিচার দেবো? ছেলের আশায় থেকে আমার মা পাগল হয়ে গেছেন।
নিখোঁজ মোয়াজ্জেম হোসেনের মা সালেহা বেগম জানান, আমার ছেলে নির্দোষ ছিল। আইন অনুযায়ী যদি সে ভুল করে তাহলে তার বিচার করেন। কিন্তু, এটা কোন নিয়ম চালু করেছেন যে, মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে না।
নিখোঁজ মাসুমের বোন ফাওজিয়া ইসলাম বলেন, তার ভাইকে ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর উত্তরার একটি প্রাইভেট কোচিং থেকে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশের নাম করে। মাসুম সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সক্রিয় কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রতিবারই একই কথা শুনি। পাঁচ বছর ধরে একটা মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের প্রশ্ন রয়েছে যে, এদের কান্না কী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের কানে যায় না? তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে আপনাদের কান্নার পাত্তা এই সরকার দেবে না। নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসবে নাকি পুরনো বোতলে নতুন মদ আসবে- এ কথা কেউ জানে না।
তিনি আরও বলেন, বুঝে-শুনে গুম করা হয়েছে। এসব গুম মূলত রাজনৈতিক। যারা গুম হয়েছে তারা হয় বিএনপি করে আর না হয় অন্য দল করে। রাজনীতিতে ভয়ের ত্রাস কায়েম করে রাখার জন্য গুমকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। এই অন্যায় অত্যাচারের প্রতিকার আছে। প্রতিজ্ঞা করুন যারা আমার সন্তানকে নিয়ে গেছে তাদের কাউকে ভোট দেবেন না।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, সভ্য দেশে গুম মেনে নেয়া যায় না। এতে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হয়। অনেকেই গুমের শিকার হয়ে ফিরে এসেছেন। কারও লাশও পাওয়া গেছে ডোবাতে, নালাতে। এখন তাও পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় দেশের প্রত্যেক বিবেকবান নাগরিককে আমাদের সজাগ হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, প্রেস ক্লাবে যারা পরিবারের নিখোঁজদের সন্ধানের দাবি করছেন তাদের এটি যৌক্তিক দাবি। এই দাবি রাষ্ট্রকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী।
No comments