‘ক-খ কইয়া আইয়া পড়ছি’ by সঞ্চিতা সীতু
শিশুটির
বয়স কতই আর হবে? এগারো-বারো। নাম জানতে চাইলে জানালো—মাহবুব। আগে-পরে আর
কিছুই নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছেই লেগুনার গ্যারেজ।
প্রতিদিন সকালে সেখানেই সে চলে আসে। ফেরে গভীর রাতে। এই শহরেই মাহবুবের
বাবা সিএনজি অটোরিকশা চালান। মা থাকেন টাঙ্গাইলের কালিহাতির নরদাই গ্রামে।
বছর দুই আগে কাজে যোগ দেওয়া মাহবুবের আয় এখন দৈনিক ৬৬ টাকা। মাস শেষে দুই
হাজার টাকায় দাঁড়ায়। লেখাপড়া কতটুকু করেছে, জানতে চাইলে ঝটপট সে জানায়,
‘হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। ক, খ কইয়া আইয়া পড়ছি।’
শুধু মাহবুব নয় রাজধানীর লেগুনাগুলোতে হেলপার তো বটেই চালকদের আসনেও বসছে তার বয়সী শিশুরা। শিশু অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, কম মজুরি পরিশোধ করতে হবে বলেই মালিকরা এই সুযোটি কাজে লাগাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
বারো বছরের শরীফ চার বছর আগে ঢাকায় এসেছিল। সেও লেগুনার হেলপার। প্রতিদিন সকালে উঠে ‘এই যাত্রাবাড়ী-যাত্রাবাড়ি, সদরঘাট-সদরঘাট বলে শুরু হয় তার হাঁকডাক। রাতে ঘরে ফেরার আগেও সেই একই বুলি আওড়ে বাড়ি ফেরে। কখনও ভাড়া তোলে, তখনও ড্রাইভারকে পথ চলতে সাহায্য করে। এই ছকেই কাটে মাসের ৩০ দিন। বাড়িতে বাবা-মা আছেন। ছোট শরীফের কাঁধে সংসারের ভার। নিজের আয় থেকে বাঁচিয়ে সংসার খরচের টাকা পাঠায়। ছোট হাতের বড় আয়ে বাবা-মায়ের সংসার চলে ফেনীর এক গ্রামে।
শুধু মাহবুব নয় রাজধানীর লেগুনাগুলোতে হেলপার তো বটেই চালকদের আসনেও বসছে তার বয়সী শিশুরা। শিশু অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, কম মজুরি পরিশোধ করতে হবে বলেই মালিকরা এই সুযোটি কাজে লাগাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
বারো বছরের শরীফ চার বছর আগে ঢাকায় এসেছিল। সেও লেগুনার হেলপার। প্রতিদিন সকালে উঠে ‘এই যাত্রাবাড়ী-যাত্রাবাড়ি, সদরঘাট-সদরঘাট বলে শুরু হয় তার হাঁকডাক। রাতে ঘরে ফেরার আগেও সেই একই বুলি আওড়ে বাড়ি ফেরে। কখনও ভাড়া তোলে, তখনও ড্রাইভারকে পথ চলতে সাহায্য করে। এই ছকেই কাটে মাসের ৩০ দিন। বাড়িতে বাবা-মা আছেন। ছোট শরীফের কাঁধে সংসারের ভার। নিজের আয় থেকে বাঁচিয়ে সংসার খরচের টাকা পাঠায়। ছোট হাতের বড় আয়ে বাবা-মায়ের সংসার চলে ফেনীর এক গ্রামে।
এই
প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর
আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের
অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে বৈষম্যহীন। বাংলাদেশও এই সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে।
এখানে রাষ্ট্রের একটি কাঠামো দরকার। আমাদের দেশে সুবিধাপ্রাপ্ত ও
সুবিধাবঞ্চিত সব শিশুকে সমান চোখে দেখার জন্য যে রাষ্ট্রীয় সামাজিক
কাঠামোটা দরকার, সেটি নেই। একেবারে ওপর থেকে বললে মহিলা ও শিশু বিষয়ক
মন্ত্রণালয় রয়েছে। কিন্তু শিশুদের আলাদা করে দেখভাল করার জন্য কোনও অধিদফতর
নেই। মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর রয়েছে। তার জেলা পর্যায়ে
কার্যালয় রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় রয়েছে। যেখান আমার বলছি যে, ৪০
থেকে ৪৫ ভাগ শিশু সেখানে তাদের জন্য আলাদা কোনও কার্যালয় নেই। শিশু
সুরক্ষার জন্য কিছু নেই। তিনি বলেন, বৈষম্যের ক্ষেত্রে আমরা যত কথাই বলি না
কেন, এখন পর্যন্ত নিজের সন্তান ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে সমান চোখে দেখি
না। আমাদের মানবিকতার, মূল্যবোধের আরও চর্চা করতে হবে। না হলে আমার শিশুর
স্কুল ব্যাগ বয়ে নিয়ে যাবে, তারই সমান বয়সের আরেক শিশু। এর চেয়ে
দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর হতে পারে না। পুরো বিষয়টি মানবিকতার। এক্ষেত্রে বড়
ধরনের সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।’
শিশুশ্রম সম্পর্কে শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহিদ মাহমুদ বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাভোগী শিশুরাও নানা সংকটে পড়ছে। সব ধরনের শিশুর সুবিধা দিতে, তাদের নিরাপত্তা দিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিক কারণে যদি কোনও শিশু পড়াশুনা না করে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, সেটি দেখাও সমাজের দায়িত্ব। সেও যেন পড়াশোনার সুযোগ পায়।’
শিশুশ্রম সম্পর্কে শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহিদ মাহমুদ বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাভোগী শিশুরাও নানা সংকটে পড়ছে। সব ধরনের শিশুর সুবিধা দিতে, তাদের নিরাপত্তা দিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিক কারণে যদি কোনও শিশু পড়াশুনা না করে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, সেটি দেখাও সমাজের দায়িত্ব। সেও যেন পড়াশোনার সুযোগ পায়।’
No comments