মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়ক: শুধু প্রতিশ্রুতিতেই পার ৪৭ বছর by মাহবুব খান বাবুল
চরম
দুর্ভোগের আরেক নাম সরাইল উপজেলার মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়ক। সামান্য বৃষ্টি
হলেই পুরো সড়ক পরিণত হয় হাঁটু সমান কাদায়। ঠেলা ধাক্কায় পার করতে হয়
সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আর শুষ্ক আবহাওয়ায় থাকে ধূলার রাজত্ব। ৩০ সহস্রাধিক
লোকের অবর্ণনীয় কষ্ট এখন নিত্যদিনের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি-মন্ত্রীরা
সড়কটি নির্মাণে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই পার করে দিয়েছেন ৪৭ বছর। তাই কষ্টের
করুণ স্বরে ষাটোর্ধ্ব জনৈক ব্যক্তি বলেন, ‘কত মন্ত্রী-এমপি আইল গেল। আমডার
ঘাড়ের গামছা ঘুছল না।’ তবে বর্তমান এমপি জিয়াউল হক মৃধার প্রতিশ্রুতি ও
ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকনের প্রচেষ্টা চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে
সড়কের কাজ শুরু হবে এমন আশার বাণীও শোনাচ্ছেন তারা।
সরজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হাওরের মাঝখানের তিনটি গ্রাম শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাওরিয়া। এরপরই একদিকে চান্দুরা আরেক দিকে নাসিরনগরের সীমানা শুরু। ৩ গ্রামের ১৬ হাজারের অধিক লোকের মধ্যে রয়েছে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। সেখানে রয়েছে গৃহস্থ ও মৎস্যজীবী পরিবার। জীবন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে প্রতিদিনই তারা উপজেলা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছেন। তারপর রয়েছে রোগী ও শিক্ষার্থীরা। সকলের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হলো মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়ক। উপজেলা সদর থেকে মলাইশ গ্রামের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক। মলাইশ ব্রিজ থেকে শাহজাদাপুর চকবাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার। মাঝখানে শাহজাদাপুর গ্রামের প্রবেশ মুখে খোয়ালিয়ার পাড় (খোয়াইল্লার পার) খাল। খালটির ওপর ব্রিজ নেই যুগ যুগ ধরে। ফলে শুষ্ক মৌসুমেও লোকজনকে গামছা পরে এ খাল পার হতে হয়। এভাবেই চলে গেছে ৪ যুগ। সেখান থেকে মলাইশ ব্রিজ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এখন গোটা ইউনিয়নের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির সময় সড়কটি দ্রুত পানির নিচে তলিয়ে যায়। ৩ গ্রামের একমাত্র ভরসা তখন নৌকা। আর বাকি সময় পায়ে হাঁটা ও সম্প্রতি অটোরিকশা। হাওরের মাঝের এ সড়কটি নিচু হওয়ায় বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় থাকে কর্দমাক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই লেগে যায় হাঁটু সমান কাদা। আটকে যায় অটোরিকশাসহ অন্যান্য যান। থমকে যায় জনজীবন। বৃদ্ধ ও রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র মানুষকে কাঁদায়। এমনই কষ্টের চাকায় শতাধিক বছর ধরে ঘুরছে ভৌগোলিকভাবে ৩ গ্রামের অধিবাসীরা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে তারা শিক্ষা চিকিৎসাসহ নানান দিকে পিছিয়ে পড়ছেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের এ সমস্যান কোন সমাধান হচ্ছে না। তারা শুধু প্রতিশ্রুতির মহাসাগরে ভাসছেন। নির্বাচন এলেই এমপি প্রার্থীরা ব্রিজ ও সড়কটি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মূল্যবান ভোট নিয়ে যান। বৈতরণী পার হয়ে বেমালুম সবকিছু ভুলে যান। ৪৭ বছরের মধ্যে শুধু শাহজাদাপুর গ্রামেরই ৭ জন ব্যক্তি ২৫ বছরেরও অধিক সময় ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। নিজেদের গ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি তারা করতে পারেননি কেন? এমন সব প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোটের রাজনীতি, নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ও লোকজনকে নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ রাখার কৌশল হিসেবেই শাহজাদাপুর গ্রামের অতীতের জনপ্রতিনিধিরা সড়কটির নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ইতোমধ্যে শাহজাদাপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে হাসপাতাল, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতাল, একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল। কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও প্রসূতি মহিলাদের জন্য এ সড়ক মরণ ফাঁদ। অনেক সময় এ সড়কে মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সড়কটির পাশের বিস্তীর্ণ ভূমির ফসল তুলতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকেও হচ্ছে বঞ্চিত। সরকারের ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে মাত্র ২ কিলোমিটার সড়কের জন্য জনদুর্ভোগ কোনোভাবেই মানতে নারাজ ভুক্তভোগীরা। শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য মো. আজহার মিয়া বলেন, আমরা বড়ই দুর্ভাগা। সমগ্র দেশে যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ আমাদের মাত্র ২ কিলোমিটার সড়ক অর্ধশতাধিক বছর ধরে বেহাল। আমরা কি অপরাধে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত? শাহজাদাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা, তদবির অব্যাহত আছে। সম্প্রতি রাস্তাটিতে মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছে। কিছু দিন আগে সরকারের লোকজন রাস্তাটি পরিদর্শন করে গেছেন। আমার সময়ের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে খুবই আশাবাদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, রাস্তাটি নির্মাণ করতে আমার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। রাস্তাটি নির্মাণে সরকারি অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। ইনশাআল্লাহ আমার চলমান মেয়াদকালেই রাস্তাটি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারব।
সরজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হাওরের মাঝখানের তিনটি গ্রাম শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাওরিয়া। এরপরই একদিকে চান্দুরা আরেক দিকে নাসিরনগরের সীমানা শুরু। ৩ গ্রামের ১৬ হাজারের অধিক লোকের মধ্যে রয়েছে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। সেখানে রয়েছে গৃহস্থ ও মৎস্যজীবী পরিবার। জীবন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে প্রতিদিনই তারা উপজেলা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছেন। তারপর রয়েছে রোগী ও শিক্ষার্থীরা। সকলের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হলো মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়ক। উপজেলা সদর থেকে মলাইশ গ্রামের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক। মলাইশ ব্রিজ থেকে শাহজাদাপুর চকবাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার। মাঝখানে শাহজাদাপুর গ্রামের প্রবেশ মুখে খোয়ালিয়ার পাড় (খোয়াইল্লার পার) খাল। খালটির ওপর ব্রিজ নেই যুগ যুগ ধরে। ফলে শুষ্ক মৌসুমেও লোকজনকে গামছা পরে এ খাল পার হতে হয়। এভাবেই চলে গেছে ৪ যুগ। সেখান থেকে মলাইশ ব্রিজ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এখন গোটা ইউনিয়নের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির সময় সড়কটি দ্রুত পানির নিচে তলিয়ে যায়। ৩ গ্রামের একমাত্র ভরসা তখন নৌকা। আর বাকি সময় পায়ে হাঁটা ও সম্প্রতি অটোরিকশা। হাওরের মাঝের এ সড়কটি নিচু হওয়ায় বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় থাকে কর্দমাক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই লেগে যায় হাঁটু সমান কাদা। আটকে যায় অটোরিকশাসহ অন্যান্য যান। থমকে যায় জনজীবন। বৃদ্ধ ও রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র মানুষকে কাঁদায়। এমনই কষ্টের চাকায় শতাধিক বছর ধরে ঘুরছে ভৌগোলিকভাবে ৩ গ্রামের অধিবাসীরা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে তারা শিক্ষা চিকিৎসাসহ নানান দিকে পিছিয়ে পড়ছেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের এ সমস্যান কোন সমাধান হচ্ছে না। তারা শুধু প্রতিশ্রুতির মহাসাগরে ভাসছেন। নির্বাচন এলেই এমপি প্রার্থীরা ব্রিজ ও সড়কটি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মূল্যবান ভোট নিয়ে যান। বৈতরণী পার হয়ে বেমালুম সবকিছু ভুলে যান। ৪৭ বছরের মধ্যে শুধু শাহজাদাপুর গ্রামেরই ৭ জন ব্যক্তি ২৫ বছরেরও অধিক সময় ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। নিজেদের গ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি তারা করতে পারেননি কেন? এমন সব প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোটের রাজনীতি, নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ও লোকজনকে নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ রাখার কৌশল হিসেবেই শাহজাদাপুর গ্রামের অতীতের জনপ্রতিনিধিরা সড়কটির নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ইতোমধ্যে শাহজাদাপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে হাসপাতাল, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতাল, একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল। কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও প্রসূতি মহিলাদের জন্য এ সড়ক মরণ ফাঁদ। অনেক সময় এ সড়কে মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সড়কটির পাশের বিস্তীর্ণ ভূমির ফসল তুলতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকেও হচ্ছে বঞ্চিত। সরকারের ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে মাত্র ২ কিলোমিটার সড়কের জন্য জনদুর্ভোগ কোনোভাবেই মানতে নারাজ ভুক্তভোগীরা। শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য মো. আজহার মিয়া বলেন, আমরা বড়ই দুর্ভাগা। সমগ্র দেশে যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ আমাদের মাত্র ২ কিলোমিটার সড়ক অর্ধশতাধিক বছর ধরে বেহাল। আমরা কি অপরাধে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত? শাহজাদাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা, তদবির অব্যাহত আছে। সম্প্রতি রাস্তাটিতে মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছে। কিছু দিন আগে সরকারের লোকজন রাস্তাটি পরিদর্শন করে গেছেন। আমার সময়ের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে খুবই আশাবাদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, রাস্তাটি নির্মাণ করতে আমার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। রাস্তাটি নির্মাণে সরকারি অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। ইনশাআল্লাহ আমার চলমান মেয়াদকালেই রাস্তাটি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারব।
No comments