‘অত্যাচারী ঝুমুর’ ও একটি ছাত্রীনিবাসের গল্প by উদিসা ইসলাম
বরিশাল
সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাস। সেখানে
ফারজানা আক্তার ঝুমুর নামের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক
অভিযোগ। কখনও খিস্তিখেউর, কখনও মারধর। প্রশাসনকে বলেও যখন উপায় খুঁজে পাননি
তখন অত্যাচারের শিকার ৬ ছাত্রী একত্রিত হয়ে মারধর করেন ঝুমুরকে, পুড়িয়ে
দেন তার কিছু জিনিসপত্র। এবার নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্ত কমিটি হয়। হল
প্রশাসন নির্দেশ জারি করে ঝুমুর ও সেই ছয় ছাত্রীকে হলের বাইরে থাকতে হবে
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
ঝুমুরের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ৬ ছাত্রী এখন শহরে মেসে থাকছেন। হল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনও জিনিসপত্র নিতে দেননি বলে অভিযোগ করে এক শিক্ষার্থী জানান, অভিভাবকের মাধ্যমে পোশাক ও বইপত্র নিতে হবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।
ঝুমুরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা শিক্ষার্থীরা হলেন বিএম কলেজের জান্নাতুল ফেরদৌসি, রহিমা আফরোজ ইভা, ফাতিমা শিমু, শাকিলা, তানজিলা আক্তার মিষ্টি ও শারমিন আক্তার।
কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য এই ঘটনায় জড়িতদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাইনি কোনও শিক্ষার্থীকে বাইরে থাকতে হোক। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত করতে এর বাইরে কোনও অপশন ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঝুমুরের বিরুদ্ধে এটা প্রথম অভিযোগ, এমন নয়; এর আগেও তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।’
আবারও ঝুমুরের ফিরে আসা বিষয়ে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ঝুমুর রাজনীতি করে, তার সঙ্গে নেতাদের ওঠাবসা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে হল কর্তৃপক্ষও খুব একটা আমলে নেয় না কখনও। দুপক্ষকে ডেকে মাফ চাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। তারপর নানাভাবে সিস্টেম করে সে আবারও আগের মতোই আচরণ শুরু করে।সে ভীষণ অত্যাচারী।’
কারও সাতেপাঁচে না থাকার পরও ভুল করে হলের বাইরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তানজিলা আক্তার মিষ্টি বলেন, ‘আজ কয়দিন কী অবস্থায় আছি, তা বলে বোঝানো সম্ভব না। বন্ধু-বান্ধবের বাসায় আর কয়দিন থাকা যায়! আমার নামটি ভুল করে এসেছে, আমি ঘটনার সঙ্গে ছিলাম না।’
ঘটনার সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ছয়জন ও ঝুমুরকে সাময়িক হলের বাইরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি আজকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। যার যার কথা আলাদাভাবে বলে এসেছি। কাপড়চোপড় নিতেও ভেতরে আমাদের ঢুকতে দেবে না। অভিভাবকদের মাধ্যমে ফেরত নিতে হবে। এখন আমরা মেসে আছি।’
ঝুমুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ না থাকলে সাতজন মিলে তাকে মারতে যাবো কেন? সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা অত্যাচার দেখতে দেখতে ক্লান্ত। এর বিপরীতে তাকে মারা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু অনেকদিনের ক্ষোভ জমা হয়ে এই পরিণতি হয়েছে।’ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও রাজনীতি করিনি। আমাদের সঙ্গে একজন কেবল ডিগ্রি লেবেলের ছিল, তিনি ঝুমুরের বন্ধু। বাকিরা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী।’
কী ঘটেছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে ঐষী নামের একজনকে মেরেছে একদম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে। ঘুমন্ত অবস্থায়। এরপর শারমিনকে মেরেছে। আগেও একাধিকজনকে গালাগালি-খিস্তির ঘটনা ঘটেছে। স্যারদের জানানো হয়েছে। পদক্ষেপ নেননি। এলাকার নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা, সে সবকিছু সামলে নেয়। এর আগে তাকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছিল। সে সবাইকে ধরে আবার ফিরেছে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েরা অভিযোগ করে। কিন্তু কী পদক্ষেপ নেয়? দুজনকে ডেকে মাফ চাওয়া-চাওয়ি। তারপর সব আবার আগের মতো।’
ওই ছাত্রী বলেন,‘আমরা সেদিন স্যারদের কাছে অভিযোগ করে স্মারকলিপি দিয়েছি শুনে ঝুমুর আমাদের পথ আটকে জিজ্ঞেস করেছিল। এরপর কথা কাটাকাটিরএকপর্যায়ে আমরা তাকে মেরেছি। কী করবো, ভালোভাবে অভিযোগ করলে স্যারদের কানে তো কিছু পৌঁছায় না। আমরা সবাই সমবয়সী, গালাগালি কেন করবে? মারবে কেন? গত চারদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের সবার জন্য ওই একই শাস্তির ব্যবস্থা হলো।’
তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, ‘ঝুমুর এবং জান্নাতুলের বিরুদ্ধে এরকম নানা অভিযোগের কথা কানে এসেছে। কিন্তু এটি যখন মারামারি পর্যায়ে চলে গেছে তখন আমরা বাধ্য হয়েছি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে। ঝুমুরকে আগেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। জান্নাতুল পাস কোর্সের শিক্ষার্থী, তার সিট পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঝুমুর এবং হল সুপার নূর মোহাম্মদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা আক্তার ঝুমুরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের নির্যাতন, অনৈতিক কাজে বাধ্য করা ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে সাধারণ ছাত্রীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি দেন। অভিযোগ দেওয়ার পর ঝুমুর গত ২২ এপ্রিল ছাত্রীদের নানাভাবে শাসানোর একপর্যায়ে কয়েকজনকে মারধরও করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ ছাত্রীদের কয়েকজন ঝুমুরকে মারধর করে তার রুমের আসবাবপত্র সড়কে এনে পুড়িয়ে দেন।
ঝুমুরের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ৬ ছাত্রী এখন শহরে মেসে থাকছেন। হল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনও জিনিসপত্র নিতে দেননি বলে অভিযোগ করে এক শিক্ষার্থী জানান, অভিভাবকের মাধ্যমে পোশাক ও বইপত্র নিতে হবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।
ঝুমুরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা শিক্ষার্থীরা হলেন বিএম কলেজের জান্নাতুল ফেরদৌসি, রহিমা আফরোজ ইভা, ফাতিমা শিমু, শাকিলা, তানজিলা আক্তার মিষ্টি ও শারমিন আক্তার।
কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য এই ঘটনায় জড়িতদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাইনি কোনও শিক্ষার্থীকে বাইরে থাকতে হোক। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত করতে এর বাইরে কোনও অপশন ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঝুমুরের বিরুদ্ধে এটা প্রথম অভিযোগ, এমন নয়; এর আগেও তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।’
আবারও ঝুমুরের ফিরে আসা বিষয়ে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ঝুমুর রাজনীতি করে, তার সঙ্গে নেতাদের ওঠাবসা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে হল কর্তৃপক্ষও খুব একটা আমলে নেয় না কখনও। দুপক্ষকে ডেকে মাফ চাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। তারপর নানাভাবে সিস্টেম করে সে আবারও আগের মতোই আচরণ শুরু করে।সে ভীষণ অত্যাচারী।’
কারও সাতেপাঁচে না থাকার পরও ভুল করে হলের বাইরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তানজিলা আক্তার মিষ্টি বলেন, ‘আজ কয়দিন কী অবস্থায় আছি, তা বলে বোঝানো সম্ভব না। বন্ধু-বান্ধবের বাসায় আর কয়দিন থাকা যায়! আমার নামটি ভুল করে এসেছে, আমি ঘটনার সঙ্গে ছিলাম না।’
ঘটনার সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ছয়জন ও ঝুমুরকে সাময়িক হলের বাইরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি আজকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। যার যার কথা আলাদাভাবে বলে এসেছি। কাপড়চোপড় নিতেও ভেতরে আমাদের ঢুকতে দেবে না। অভিভাবকদের মাধ্যমে ফেরত নিতে হবে। এখন আমরা মেসে আছি।’
ঝুমুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ না থাকলে সাতজন মিলে তাকে মারতে যাবো কেন? সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা অত্যাচার দেখতে দেখতে ক্লান্ত। এর বিপরীতে তাকে মারা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু অনেকদিনের ক্ষোভ জমা হয়ে এই পরিণতি হয়েছে।’ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও রাজনীতি করিনি। আমাদের সঙ্গে একজন কেবল ডিগ্রি লেবেলের ছিল, তিনি ঝুমুরের বন্ধু। বাকিরা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী।’
কী ঘটেছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে ঐষী নামের একজনকে মেরেছে একদম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে। ঘুমন্ত অবস্থায়। এরপর শারমিনকে মেরেছে। আগেও একাধিকজনকে গালাগালি-খিস্তির ঘটনা ঘটেছে। স্যারদের জানানো হয়েছে। পদক্ষেপ নেননি। এলাকার নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা, সে সবকিছু সামলে নেয়। এর আগে তাকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছিল। সে সবাইকে ধরে আবার ফিরেছে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েরা অভিযোগ করে। কিন্তু কী পদক্ষেপ নেয়? দুজনকে ডেকে মাফ চাওয়া-চাওয়ি। তারপর সব আবার আগের মতো।’
ওই ছাত্রী বলেন,‘আমরা সেদিন স্যারদের কাছে অভিযোগ করে স্মারকলিপি দিয়েছি শুনে ঝুমুর আমাদের পথ আটকে জিজ্ঞেস করেছিল। এরপর কথা কাটাকাটিরএকপর্যায়ে আমরা তাকে মেরেছি। কী করবো, ভালোভাবে অভিযোগ করলে স্যারদের কানে তো কিছু পৌঁছায় না। আমরা সবাই সমবয়সী, গালাগালি কেন করবে? মারবে কেন? গত চারদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের সবার জন্য ওই একই শাস্তির ব্যবস্থা হলো।’
তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, ‘ঝুমুর এবং জান্নাতুলের বিরুদ্ধে এরকম নানা অভিযোগের কথা কানে এসেছে। কিন্তু এটি যখন মারামারি পর্যায়ে চলে গেছে তখন আমরা বাধ্য হয়েছি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে। ঝুমুরকে আগেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। জান্নাতুল পাস কোর্সের শিক্ষার্থী, তার সিট পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঝুমুর এবং হল সুপার নূর মোহাম্মদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা আক্তার ঝুমুরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের নির্যাতন, অনৈতিক কাজে বাধ্য করা ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে সাধারণ ছাত্রীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি দেন। অভিযোগ দেওয়ার পর ঝুমুর গত ২২ এপ্রিল ছাত্রীদের নানাভাবে শাসানোর একপর্যায়ে কয়েকজনকে মারধরও করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ ছাত্রীদের কয়েকজন ঝুমুরকে মারধর করে তার রুমের আসবাবপত্র সড়কে এনে পুড়িয়ে দেন।
No comments