পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন করেছে ইরান: প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে আমেরিকা
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক
বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত ৮মে ট্রাম্পের এ ঘোষণায় পরমাণু সমঝোতার ভবিষ্যত
অনিশ্চিত হয়ে পড়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের নিরাপত্তা ও
স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তার কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেছেন, এ সমঝোতা নাকি আমেরিকার স্বার্থ বিরোধী। অথচ ইরান যে পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে সে বিষয়ে ট্রাম্প তার বক্তব্যে কিছুই উল্লেখ করেননি। এ থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন ভালো করেই জানে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পালন করেছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো অজুহাত আমেরিকার হাতে নেই। কার্ণেগির গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক রিচার্ড সোকোলেস্কু বলেছেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুজাতিক পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে যে পন্থা অবলম্বন করেছেন তা থেকে তার অদূরদর্শিতাই ফুটে উঠেছে।" ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা এটি বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা সৃষ্টি করেছে এবং এমনকি বহু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা থেকেও দেশটি বিরত ছিল কিংবা চুক্তির নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা ফের বলবত করেছে এবং আরো নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে কাণ্ডজ্ঞানহীন ও বড় ধরণের ভুল বলে অভিহিত করেছেন। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএও ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে অনেক বড় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছে।
দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে কঠিন ও শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনার পর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ভিয়েনায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সই হয় এবং পরের বছর জানুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ'র ওপর। এ সংস্থা পরমাণু বাস্তবায়ন শুরুর পর মোট ১০বার স্বীকার করেছে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে। আইএইএ'র প্রধান ইউকিয়া আমানোও বহুবার বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা অনেক বড় একটি সাফল্য এবং ইরানের পরমাণু তৎপরতার ওপর আইএইএ'র পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ইরান পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন করছে কিনা তার ওপর আন্তর্জাতিক কঠোর নজরদারি থাকার কারণে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির আর কোনো অজুহাত পায়নি আমেরিকা। এ কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মার্কিন কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতা এবং দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মতো অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে অজুহাত করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অথচ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, "আমিরা নিশ্চিত যে ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে।"
পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর আইএইএ এই সংস্থার নির্বাহী বোর্ড ও নিরাপত্তা পরিষদে চারটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে বলা হয় ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ৯মে আইএইএ আবারো জানিয়েছে ইরান তার ওয়াদা ভঙ্গ করেনি। আইএইএ'র প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেছেন, "ইরানের পরমাণু সংক্রান্ত প্রতিটি কার্যক্রমের ওপর তার সংস্থা নজর রেখেছে অথচ আমেরিকা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের ওপর আইএইএ'র নজরদারিকে যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেছে।" তিনি আরো বলেছেন, "ইরান প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি আরাক হেভিওয়াটার প্রকল্পের কাঠামোয় পরিবর্তন এনেছে এবং সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ অন্য দেশে স্থানান্তর করেছে।"
ছয় জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম শরীক হিসেবে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে আমেরিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া সত্বেও তারা তা মানেনি। বাস্তবায়ন শুরুর পর গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমেরিকা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, নানা গড়িমসি ও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে এই চুক্তিকে বানচাল করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে, মার্কিন কংগ্রেসে 'ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা আইন' নবায়ন, ইরান সফরকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় ভিসা না দেয়া, নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়া, আমেরিকা অন্য দেশের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত করারও চেষ্টা করেছে যাতে পরমাণু সমঝোতার ফলে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা ইরান পেতে না পারে। আমেরিকা ইরানের কাছে যাত্রীবাহী বিমান বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়াও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন অর্থবিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্যান্য দেশ ইরানের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারছে না এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব আচরণ পরমাণু সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
আমেরিকার পক্ষ থেকে পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনের আরো কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, বেআইনিভাবে তারা পরমাণু সমঝোতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছিল। এর অন্যথায় পরমাণু সমঝোতা প্রত্যয়ন করবে না বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ দেশটির অন্যান্য কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েছেন যা ছিল পরমাণু সমঝোতার নীতিমালার লঙ্ঘন। এ ছাড়া, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েও আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে যাতে পরমাণু সমঝোতার কোনো ধরণের সুফল ইরান পেতে না পারে। ইউরোপ পরমাণু সমঝোতাকে যৌক্তিক অভিহিত করলেও আমেরিকা এ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় এখন এ চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, "এটি দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি নয় যে একতরফাভাবে এ থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাবে।" তিনি বলেন, "এ সমঝোতার প্রতি জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন রয়েছে।"
আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের তিনটি দেশ একদিকে এবং আমেরিকা একা একদিকে রয়েছে। ইউরোপীয়রা পরমাণু সমঝোতাকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারির জন্য ভালো সুযোগ বলে মনে করে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি শুধু পরমাণু সমঝোতার ওপর নজরদারি করলেই চলবে না ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতার বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে হবে এবং তেহরানকে আমেরিকার দাবি মানতে হবে। কিন্তু ইরানের কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিরাপত্তা প্রশ্নে কোনো আপোষ করা হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তার কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেছেন, এ সমঝোতা নাকি আমেরিকার স্বার্থ বিরোধী। অথচ ইরান যে পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে সে বিষয়ে ট্রাম্প তার বক্তব্যে কিছুই উল্লেখ করেননি। এ থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন ভালো করেই জানে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পালন করেছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো অজুহাত আমেরিকার হাতে নেই। কার্ণেগির গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক রিচার্ড সোকোলেস্কু বলেছেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুজাতিক পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে যে পন্থা অবলম্বন করেছেন তা থেকে তার অদূরদর্শিতাই ফুটে উঠেছে।" ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা এটি বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা সৃষ্টি করেছে এবং এমনকি বহু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা থেকেও দেশটি বিরত ছিল কিংবা চুক্তির নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা ফের বলবত করেছে এবং আরো নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে কাণ্ডজ্ঞানহীন ও বড় ধরণের ভুল বলে অভিহিত করেছেন। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএও ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে অনেক বড় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছে।
দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে কঠিন ও শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনার পর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ভিয়েনায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সই হয় এবং পরের বছর জানুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ'র ওপর। এ সংস্থা পরমাণু বাস্তবায়ন শুরুর পর মোট ১০বার স্বীকার করেছে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে। আইএইএ'র প্রধান ইউকিয়া আমানোও বহুবার বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা অনেক বড় একটি সাফল্য এবং ইরানের পরমাণু তৎপরতার ওপর আইএইএ'র পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ইরান পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন করছে কিনা তার ওপর আন্তর্জাতিক কঠোর নজরদারি থাকার কারণে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির আর কোনো অজুহাত পায়নি আমেরিকা। এ কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মার্কিন কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতা এবং দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মতো অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে অজুহাত করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অথচ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, "আমিরা নিশ্চিত যে ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে।"
পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর আইএইএ এই সংস্থার নির্বাহী বোর্ড ও নিরাপত্তা পরিষদে চারটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে বলা হয় ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ৯মে আইএইএ আবারো জানিয়েছে ইরান তার ওয়াদা ভঙ্গ করেনি। আইএইএ'র প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেছেন, "ইরানের পরমাণু সংক্রান্ত প্রতিটি কার্যক্রমের ওপর তার সংস্থা নজর রেখেছে অথচ আমেরিকা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের ওপর আইএইএ'র নজরদারিকে যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেছে।" তিনি আরো বলেছেন, "ইরান প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি আরাক হেভিওয়াটার প্রকল্পের কাঠামোয় পরিবর্তন এনেছে এবং সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ অন্য দেশে স্থানান্তর করেছে।"
ছয় জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম শরীক হিসেবে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে আমেরিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া সত্বেও তারা তা মানেনি। বাস্তবায়ন শুরুর পর গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমেরিকা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, নানা গড়িমসি ও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে এই চুক্তিকে বানচাল করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে, মার্কিন কংগ্রেসে 'ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা আইন' নবায়ন, ইরান সফরকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় ভিসা না দেয়া, নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়া, আমেরিকা অন্য দেশের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত করারও চেষ্টা করেছে যাতে পরমাণু সমঝোতার ফলে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা ইরান পেতে না পারে। আমেরিকা ইরানের কাছে যাত্রীবাহী বিমান বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়াও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন অর্থবিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্যান্য দেশ ইরানের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারছে না এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব আচরণ পরমাণু সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
আমেরিকার পক্ষ থেকে পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনের আরো কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, বেআইনিভাবে তারা পরমাণু সমঝোতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছিল। এর অন্যথায় পরমাণু সমঝোতা প্রত্যয়ন করবে না বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ দেশটির অন্যান্য কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েছেন যা ছিল পরমাণু সমঝোতার নীতিমালার লঙ্ঘন। এ ছাড়া, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েও আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে যাতে পরমাণু সমঝোতার কোনো ধরণের সুফল ইরান পেতে না পারে। ইউরোপ পরমাণু সমঝোতাকে যৌক্তিক অভিহিত করলেও আমেরিকা এ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় এখন এ চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, "এটি দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি নয় যে একতরফাভাবে এ থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাবে।" তিনি বলেন, "এ সমঝোতার প্রতি জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন রয়েছে।"
আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের তিনটি দেশ একদিকে এবং আমেরিকা একা একদিকে রয়েছে। ইউরোপীয়রা পরমাণু সমঝোতাকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারির জন্য ভালো সুযোগ বলে মনে করে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি শুধু পরমাণু সমঝোতার ওপর নজরদারি করলেই চলবে না ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতার বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে হবে এবং তেহরানকে আমেরিকার দাবি মানতে হবে। কিন্তু ইরানের কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিরাপত্তা প্রশ্নে কোনো আপোষ করা হবে না।
No comments