জিরো লাইনে দুর্দশায় রোহিঙ্গারা by দীন ইসলাম
বাংলাদেশ-মিয়ানমার
সীমান্তে শূন্য রেখায় (জিরো লাইন) বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের
অধিবাসীদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখলো উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
জিরো লাইনের রোহিঙ্গাদের খাবারসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান। মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ
থেকে জিরো লাইনে অবস্থানরতদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। দুই দেশের উচ্চ
পর্যায়ের প্রতিনিধি দল শূন্য রেখায় যাওয়ার সময় দেখেছে, যাত্রাপথের উভয়পাশে
অনেকগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর। এনিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কোনো
বক্তব্য নেই। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে
১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এমন চিত্র দেখে আসে। দুই দেশের
কর্মকর্তাদের মধ্যে যৌথ আলোচনা বিষয়ক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ
ও মিয়ানমার জিরো লাইনে ছয় হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। ওই সব মিয়ানমার
অধিবাসীদের নিজ নিজ আবাসস্থলে ফিরে যেতে উৎসাহ দিতে গত মাসের প্রথমদিকে দুই
দেশ আলাদা আলাদা প্রতিনিধি দল তৈরি করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয়
কমিশনারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিল ১৪ জন ও মিয়ানমার প্রতিনিধি
দলে ছিল ১২ জন। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ঘুমঘুমস্থ মৈত্রী সেতুর
কাছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যায়। মিয়ানমারের মংডুর ডিস্ট্রিক্ট কমিশনারের
নেতৃত্বে ১২ সদস্যের দল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানায়। এরপর এ দুই
প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে টং পিউ
লেটউই-এর সরকারি অফিসে আলোচনায় মিলিত হন। আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল
পাঁচটি বিষয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলাদেশি
প্রতিনিধি দল মিয়ানমারকে জানায়, কোনাপাড়া সংলগ্ন শূন্য রেখায় অবস্থানরত
মিয়ানমার অধিবাসীরা মিয়ানমার অংশে অবস্থান করছে এবং বাংলাদেশ সীমান্ত
অতিক্রম করেনি। অনেক দিন ধরে তারা জিরো লাইনে অবস্থান করায় আঞ্চলিক ও
আন্তর্জাতিক মিডিয়ার অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। তারা প্রায়ই এসব স্থান পরিদর্শন করছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জিরো লাইনে অবস্থানরতদের
নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হলে তা বাংলাদেশের
অভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে
ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের বক্তব্যের বিপরীতে
মিয়ানমার প্রতিনিধি দল জানায়, গেল বছরের ২৩শে নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তির
আলোকে মংডুর টং পিয়ো লেটওই এবং নাগা খু ইয়া নামক স্থানে দুইটি রিসেপশন
সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া একটি বড় ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে।
ট্রানজিট ক্যাম্পে ৩০ হাজার লোককে সাময়িকভাবে রাখা যাবে। বাংলাদেশে
আশ্রয়গ্রহণকারী আট হাজার ৩২ জন মিয়ানমার অধিবাসীর তালিকা হস্তান্তর করা
হয়েছে। এতে জিরো লাইনে বসবাসকারীদের নামও রয়েছে। বৈঠকে মংডু জেলার
ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার বলেন, জিরো লাইনে বসবাসকারীদের বাংলাদেশ থেকে খাবার
সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কারণে জিরো লাইনে অবস্থানরতরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে
নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তাই তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তারা সাড়া
দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার
প্রতিনিধি দলের এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জিরো লাইনে অবস্থানরতদের সঙ্গে
যৌথভাবে কথা বলার সিদ্ধান্ত হয়। এর ভিত্তিতে দুপুর পৌনে একটায় জিরো লাইনে
যায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। যাত্রাপথে অনেকগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত
বাড়িঘর দেখে বাংলাদেশ প্রতিনিধি। এ সময় তারা আরিফ ও দিল মোহাম্মদসহ কয়েক
জনের সঙ্গে আলাপ করেন। আলাপকালে তারা তাদের ওপর সংঘটিত অত্যাচারের বর্ণনা
দিয়ে বলেন, বংশানুক্রমিকভাবে আমরা মিয়ানমারের অধিবাসী। তাই আমাদের
বসতবাড়িতে মান-সম্মান নিয়ে থাকতে চাই। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায়। এরপর বাংলাদেশ
প্রতিনিধি দলটি মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে ফিরে আসে।
No comments