নির্বাচন নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ

এবারের পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই প্রথম স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হতে যাচ্ছে। ফলে এই নির্বাচন যে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করবে—সেটাও অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে যেভাবে সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। সংঘাতের নানা ধরন ও মাত্রা এরই মধ্যে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। একই দলের মনোনয়ন পাওয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে যেমন সংঘর্ষ ঘটছে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় প্রার্থীদের মধ্যেও ঘটছে। আমরা দেখলাম, জামালপুরে বিএনপি-মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কুমিল্লায় হয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। পটুয়াখালীতে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। সাভারে বিএনপির প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরেও নাটোর, গোপালপুর পৌরসভা, যশোর, হাজীগঞ্জ, ভোলা, রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সংঘাত ও সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। গুলিবর্ষণ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজটি যথাযথভাবে হয়নি। এ ধরনের সংঘাত ও সহিংসতা অনেক ক্ষেত্রে সংক্রামকের মতো কাজ করে। শুরুতেই এসবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে অঘটন আরও বাড়তে পারে, যা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশের অন্তরায়। যেকোনো নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ব্যাপারে আইনগত বাধা নেই। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের কাজকর্মে একধরনের ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দলের মধ্যে উত্তেজনাও তত বাড়বে। অতএব, নির্বাচন কমিশনকে তার দায়িত্ব পালনে আরও সক্রিয় ও সজাগ হতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.