মার্কিনদের যা জানতে হবে by রবার্ট ফিস্ক
ওবামার
কয়েক ডজন সাহসী আত্মত্যাগী মানুষের সিরিয়ার কুর্দি অধিকৃত মাটিতে পা
দেওয়ার আগে আইএস সম্পর্কে সিরিয়ার এক ইতিহাসবিদের লেখা থেকে তাঁদের কিছু
জানা উচিত। যেখানে তাঁরা নামবেন, সেটি কাশিমলি থেকে তেমন একটা দূরে নয়।
বইটি পড়লে তাঁরা জানতে পারবেন, আইএসের ‘খলিফা’ আবু বকর আল-বাগদাদি শুধু
একজন উৎসাহী ফুটবল দর্শকই নন, তিনি যুবক বয়সে নিয়মিত মসজিদগামী তরুণদের
নিয়ে ফুটবল দল গড়ে তুলেছিলেন। এমনকি রসিকতা করে তিনি নিজেকে ইরাকের
ম্যারাডোনা হিসেবে আখ্যা দিতেন।
তাঁরা আবিষ্কার করবেন, তিনি মুঠোফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও স্কাইপে এসএমএস চালাচালি করে দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কথা বলেন ইংরেজিতে। এমনকি তাঁর চাহিদা হচ্ছে, খবরের কাগজে ছাপা হওয়া সব গোয়েন্দা প্রতিবেদন যেন একটি এ৪ কাগজে ছাপিয়ে তাঁকে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলও তাঁর আমলাদের কাছে একই দাবি করতেন। এমনকি বাগদাদি চান যে তাঁর খিলাফতের নাগরিকেরা যেন সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে। আইএসের রাজধানী রাকায় একটি ডাকব্যবস্থা আছে। আর আপনি যদি বাগদাদির (ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আল-বদরি) কাছে চিঠি লিখতে চান, তাহলে আপনাকে ঠিকানার জায়গায় লিখতে হবে: আল-খলিফা ইব্রাহিম, রাকা। ‘নিশ্চিত থাকুন, এটা জায়গামতো পৌঁছাবে’—কালো পতাকার অধীনে যে লেখকেরা আছেন, তাঁদের জানানো হয়েছে।
তাঁর নাম সামি মুবায়েদ, তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও বৈরুতের কার্নেগি সেন্টারের পণ্ডিত। তিনি দামেস্কে থাকেন, একজন সাহসী মানুষ হিসেবে তিনি এটা জানেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই বই আমার জন্য খুবই বিপজ্জনক। এর জন্য আমাকে জীবন দিতে হতে পারে। আমি অতীতে যা লিখেছি, সেগুলো থেকে এটা একদম ভিন্ন। এটা এক ভিন্ন সিরিয়ার গল্প, যা লেখাও আমার জন্য খুব বেদনাদায়ক ছিল। আপনাকে এই কট্টরদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, কিন্তু এদের ওপর বোমা বর্ষণ করাটা জবাব হতে পারে না।’
মুবায়েদ তাঁর বইয়ে আরও বলেছেন, ‘১৯৫০-এর দশকের বাথ-পূর্ব সিরিয়া কখনোই ফিরে আসবে না, আবার ১৯৬৩-২০১১ পর্যায়ের বাথরাও ফিরে আসবে না...ইসলামপন্থী ও ক্ষমতালোভী সেনাদের প্রতি আমার কোনো সহমর্মিতা নেই। আজ সিরিয়ায় যা ঘটছে, তা দেশটির ইতিহাসে একদমই নতুন ব্যাপার। এটা এক নোংরা অধ্যায়, কিন্তু আমাদের অনেকের আকাঙ্ক্ষার চেয়ে এটা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে।’ তিনি কি একজন হতাশাবাদী? নিশ্চিতভাবেই বাথপন্থীদের নয়, মুবায়েদের সতর্ক থাকা উচিত।
আল-বাগদাদি যে রাকাকে রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেটা বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। তিনি সিরিয়ার শহরগুলোর তিনটি ইতিহাস পাঠ করেছেন, তিনি আইএসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে দলটির পটু যোগাযোগকর্মীরাও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির স্নাতক ২৫ বছর বয়সী আবু আল-নাদা আল-ফরাজ, তিনি আইএসকে স্রেফ ‘আরেকটি ভালো বেতন দেওয়া চাকরিদাতা মনে করেন।’ এই ব্যক্তি আইএসের বিতৃষ্ণাকর ম্যাগাজিন দাবিক-এর জন্য অনুবাদ করেন। এই ম্যাগাজিনের সব কর্মীই ইউরোপীয় মুসলমান, এঁরা গুগলে আসক্ত। তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা পড়ে থাকেন। এ তালিকায় রয়েছে দ্য ইনডিপেনডেন্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফরেন পলিসি ও সিরিয়ার সরকারের সংবাদ এজেন্সি সানা।
রাকার করব্যবস্থা খুবই কার্যকর, সেখানকার স্কুলগুলো আবার খুলেছে। তবে সেখানে ধর্মের ওপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বৈপরীত্যমূলক ব্যাপার হচ্ছে, এসব স্কুলের পরীক্ষার খাতা সিরিয়ার সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। আইএস সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারা অতটা শক্তিশালী নয়।
মুবায়েদের নতুন বইটির পর্যালোচনা হয়নি বললেই চলে, ব্যাপারটা খুবই খারাপ হয়েছে। বইটিতে মুবায়েদ আইএসের নৃশংস, অমানবিক শাস্তি ও হত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলো যুদ্ধাপরাধের পর্যায়েই পড়ে। কিন্তু তিনি সেটার ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতও খুঁজতে চান। সুন্নিরা বিশ্বাস করে, খলিফাকে মক্কার কুরায়েশ গোত্রের মানুষ হতে হবে। সে কারণে আল-বাগদাদি নিজের নামের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি নাম লাগাতে চান, ‘আল-কুরায়শি’ ও ‘আল-হাসানি’ (নবীর বংশধর)। আইএস সব সময় তাঁকে এই তিনটি নামে ডেকে থাকে।
১৪ শতকে ইসলামি চিন্তাবিদ ইবনে তাইমিয়া নৈতিক অধঃপতনের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ ইসলাম পুনঃপ্রবর্তনের জন্য জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের ডাক দিয়েছিলেন। তারপর ১৮ শতকে মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব ও মোহাম্মদ ইবনে সৌদ আরব ভূমিতে নিজেদের বিশুদ্ধ শাসন বিস্তৃত করার অভিপ্রায়ে ময়দানে নেমেছিলেন।
হ্যাঁ, আল-বাগদাদি যে রাকাকে রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেটা বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। তিনি সিরিয়ার শহরগুলোর তিনটি ইতিহাস পাঠ করেছেন। কারণ, আব্বাসীয় রাজত্বের একদম মধ্যগগনে এই একই শহর থেকে একটি মুসলিম সাম্রাজ্য পরিচালিত হয়েছে, যেটা উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ফলে সিরিয়ায় আসার আগে মার্কিন সেনাদের এসব জানতে হবে।
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি।
তাঁরা আবিষ্কার করবেন, তিনি মুঠোফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও স্কাইপে এসএমএস চালাচালি করে দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কথা বলেন ইংরেজিতে। এমনকি তাঁর চাহিদা হচ্ছে, খবরের কাগজে ছাপা হওয়া সব গোয়েন্দা প্রতিবেদন যেন একটি এ৪ কাগজে ছাপিয়ে তাঁকে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলও তাঁর আমলাদের কাছে একই দাবি করতেন। এমনকি বাগদাদি চান যে তাঁর খিলাফতের নাগরিকেরা যেন সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে। আইএসের রাজধানী রাকায় একটি ডাকব্যবস্থা আছে। আর আপনি যদি বাগদাদির (ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আল-বদরি) কাছে চিঠি লিখতে চান, তাহলে আপনাকে ঠিকানার জায়গায় লিখতে হবে: আল-খলিফা ইব্রাহিম, রাকা। ‘নিশ্চিত থাকুন, এটা জায়গামতো পৌঁছাবে’—কালো পতাকার অধীনে যে লেখকেরা আছেন, তাঁদের জানানো হয়েছে।
তাঁর নাম সামি মুবায়েদ, তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও বৈরুতের কার্নেগি সেন্টারের পণ্ডিত। তিনি দামেস্কে থাকেন, একজন সাহসী মানুষ হিসেবে তিনি এটা জানেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই বই আমার জন্য খুবই বিপজ্জনক। এর জন্য আমাকে জীবন দিতে হতে পারে। আমি অতীতে যা লিখেছি, সেগুলো থেকে এটা একদম ভিন্ন। এটা এক ভিন্ন সিরিয়ার গল্প, যা লেখাও আমার জন্য খুব বেদনাদায়ক ছিল। আপনাকে এই কট্টরদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, কিন্তু এদের ওপর বোমা বর্ষণ করাটা জবাব হতে পারে না।’
মুবায়েদ তাঁর বইয়ে আরও বলেছেন, ‘১৯৫০-এর দশকের বাথ-পূর্ব সিরিয়া কখনোই ফিরে আসবে না, আবার ১৯৬৩-২০১১ পর্যায়ের বাথরাও ফিরে আসবে না...ইসলামপন্থী ও ক্ষমতালোভী সেনাদের প্রতি আমার কোনো সহমর্মিতা নেই। আজ সিরিয়ায় যা ঘটছে, তা দেশটির ইতিহাসে একদমই নতুন ব্যাপার। এটা এক নোংরা অধ্যায়, কিন্তু আমাদের অনেকের আকাঙ্ক্ষার চেয়ে এটা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে।’ তিনি কি একজন হতাশাবাদী? নিশ্চিতভাবেই বাথপন্থীদের নয়, মুবায়েদের সতর্ক থাকা উচিত।
আল-বাগদাদি যে রাকাকে রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেটা বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। তিনি সিরিয়ার শহরগুলোর তিনটি ইতিহাস পাঠ করেছেন, তিনি আইএসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে দলটির পটু যোগাযোগকর্মীরাও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির স্নাতক ২৫ বছর বয়সী আবু আল-নাদা আল-ফরাজ, তিনি আইএসকে স্রেফ ‘আরেকটি ভালো বেতন দেওয়া চাকরিদাতা মনে করেন।’ এই ব্যক্তি আইএসের বিতৃষ্ণাকর ম্যাগাজিন দাবিক-এর জন্য অনুবাদ করেন। এই ম্যাগাজিনের সব কর্মীই ইউরোপীয় মুসলমান, এঁরা গুগলে আসক্ত। তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা পড়ে থাকেন। এ তালিকায় রয়েছে দ্য ইনডিপেনডেন্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফরেন পলিসি ও সিরিয়ার সরকারের সংবাদ এজেন্সি সানা।
রাকার করব্যবস্থা খুবই কার্যকর, সেখানকার স্কুলগুলো আবার খুলেছে। তবে সেখানে ধর্মের ওপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বৈপরীত্যমূলক ব্যাপার হচ্ছে, এসব স্কুলের পরীক্ষার খাতা সিরিয়ার সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। আইএস সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারা অতটা শক্তিশালী নয়।
মুবায়েদের নতুন বইটির পর্যালোচনা হয়নি বললেই চলে, ব্যাপারটা খুবই খারাপ হয়েছে। বইটিতে মুবায়েদ আইএসের নৃশংস, অমানবিক শাস্তি ও হত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলো যুদ্ধাপরাধের পর্যায়েই পড়ে। কিন্তু তিনি সেটার ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতও খুঁজতে চান। সুন্নিরা বিশ্বাস করে, খলিফাকে মক্কার কুরায়েশ গোত্রের মানুষ হতে হবে। সে কারণে আল-বাগদাদি নিজের নামের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি নাম লাগাতে চান, ‘আল-কুরায়শি’ ও ‘আল-হাসানি’ (নবীর বংশধর)। আইএস সব সময় তাঁকে এই তিনটি নামে ডেকে থাকে।
১৪ শতকে ইসলামি চিন্তাবিদ ইবনে তাইমিয়া নৈতিক অধঃপতনের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ ইসলাম পুনঃপ্রবর্তনের জন্য জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের ডাক দিয়েছিলেন। তারপর ১৮ শতকে মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব ও মোহাম্মদ ইবনে সৌদ আরব ভূমিতে নিজেদের বিশুদ্ধ শাসন বিস্তৃত করার অভিপ্রায়ে ময়দানে নেমেছিলেন।
হ্যাঁ, আল-বাগদাদি যে রাকাকে রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেটা বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। তিনি সিরিয়ার শহরগুলোর তিনটি ইতিহাস পাঠ করেছেন। কারণ, আব্বাসীয় রাজত্বের একদম মধ্যগগনে এই একই শহর থেকে একটি মুসলিম সাম্রাজ্য পরিচালিত হয়েছে, যেটা উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ফলে সিরিয়ায় আসার আগে মার্কিন সেনাদের এসব জানতে হবে।
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি।
No comments