নেপালের আগুন ভারতে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
নেপালের
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি বিশ্লেষণ
প্রকাশিত হয়েছে। অগ্নি রায়ের বিশ্লেষণটি এখানে তুলে ধরা হলো।
পাঁচ
মাস আগে নেপালে ভূকম্পের সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ভারত। চিনের সঙ্গে পাল্লা
কষে ত্রাণকার্যে নেতৃত্ব দিয়েছিল। প্রশংসা কুড়িয়েছিল কাঠমান্ডু-সহ গোটা
বিশ্বের।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবেশী-নীতিতে নেপালকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু ঘোষণাই নয়, আই কে গুজরালের পর তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি কাঠমান্ডু সফরে যান। সেটিই ছিল তাঁর দ্বিতীয় বিদেশ সফর (ভুটানের পর)। নতুন বিদেশসচিব হওয়ার পর এস জয়শঙ্করও দফায় দফায় কাঠমান্ডু গিয়েছেন। নতুন সংবিধান রচনার দু’দিন আগেও কার্যত হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন কাঠমান্ডুতে।
এই প্রবল কূটনৈতিক সক্রিয়তা সত্ত্বেও নেপাল নীতিতে শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত ব্যর্থ হল সাউথ ব্লক। ভারতের উপর্যুপরি অনুরোধের মুখে কার্যত ঝামা ঘষে নেপালের দক্ষিণ প্রান্তের থারু ও মদেশীয় জাতিগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করা হল নতুন সংবিধানে। যার জেরে মদেশীয়দের আন্দোলনে নেপাল বিশেষত তরাই অঞ্চল যখন অশান্ত, সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে আতঙ্কিত বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আর কিছু করণীয় থাকছে না ভারতের। সামনেই নেপাল-সীমান্তবর্তী রাজ্য বিহারের নির্বাচন। আশঙ্কা, এই গোলমালের রেশ এসে পড়তে পারে নির্বাচনের মুখে দাঁড়ানো বিহারের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও। এই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে নেপালের নতুন সংবিধানকে জোর গলায় স্বাগত জানিয়েছে বেজিং এবং ইসলামাবাদ। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘নেপালের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমরা বার বার সতর্ক করেছি ওই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে আজ এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতো না।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘বার বার বলা হয়েছে, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নেপালের সর্বস্তরের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা প্রয়োজন। বল প্রয়োগ করে এর সমাধান করা যাবে না।’’
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, চিনের ক্ষেত্রে যেমন তিব্বতিরা, তেমনই নেপালে এই ভারতীয়-বংশোদ্ভূত মদেশীয় জাতিগোষ্ঠীর উপর ভারতীয় প্রভাব যথেষ্ট। অনেক সঙ্কটের সময়ে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রশ্নে সুকৌশলে ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী এই জনগোষ্ঠীকে কাজেও লাগিয়েছে। অতীতে নেপাল থেকে ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসা মানুষ অনেক সময়েই ভারতীয় মহিলাদের বিয়ে করে সংসার পাততেন। তাঁদের সন্তানেরা বিভিন্ন সময়ে ফিরে গিয়েছেন নেপালে। বসবাস করেছেন সীমান্তের কাছের তরাই অঞ্চলে। এই গোষ্ঠী থেকেই মদেশীয় সম্প্রদায়ের জন্ম।
নেপালের নয়া সংবিধান তৈরির সময়ে কিছু নির্দিষ্ট দাবি তুলেছিলেন মদেশীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা চাইছিলেন, মদেশীয় সম্প্রদায়ের জন্য আটটি জেলা নির্দিষ্ট করা হোক। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি সংবিধানে। শুধু বলা হয়েছে একটি কমিশন গঠন করে পরে এই বিষয়ে মীমাংসা করা হবে। নেপালের পার্লামেন্টে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত আসনের শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও একটি বিষয়ে পদক্ষেপ করেছে নেপালের গণ পরিষদ। নয়া সংবিধান অনুযায়ী, কোনও নেপালি নারী বিদেশি পুরুষকে বিয়ে করলে সন্তানকে নতুন সংবিধান অনুযায়ী নেপালের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না সেই ভিনদেশি পুরুষটি নেপালের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন। মদেশীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের মতে, যেহেতু তারা সীমান্ত অঞ্চলে বসবাস করেন, তাঁদের ভারতীয়দের সঙ্গে প্রণয়বদ্ধ হওয়ার ঘটনাও আকছারই ঘটে। সেক্ষেত্রে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে নেপালের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে প্রান্তিক করে দেয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে নতুন সংবিধানে।
নেপালের নতুন সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়া যখন প্রায় চূড়ান্ত সে সময় (গত সপ্তাহেই) জয়শঙ্কর উপস্থিত ছিলেন কাঠমান্ডুতে। প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদবের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি। দরবার করেন মদেশীয় ও থারু সম্প্রদায়ের দাবি নিয়ে। দিল্লি ফিরে বিদেশসচিব বেশ ইতিবাচক ঢংয়েই বলেছিলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নেপালের রাজনৈতিক নেতারা পরিণতমনস্ক হওয়ার পরিচয় দেবেন। আমরা চাই এমন একটি সংবিধান সে দেশে রচিত হোক যা সব জনজাতির মান্যতা পায়।’’
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, মদেশীয় বা থারুদের দাবি মানা তো হয়ইনি, বরঞ্চ তাদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ফলে, এখন আগুন জ্বলছে নেপালে। যার আঁচ ভারতে পড়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লিও।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবেশী-নীতিতে নেপালকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু ঘোষণাই নয়, আই কে গুজরালের পর তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি কাঠমান্ডু সফরে যান। সেটিই ছিল তাঁর দ্বিতীয় বিদেশ সফর (ভুটানের পর)। নতুন বিদেশসচিব হওয়ার পর এস জয়শঙ্করও দফায় দফায় কাঠমান্ডু গিয়েছেন। নতুন সংবিধান রচনার দু’দিন আগেও কার্যত হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন কাঠমান্ডুতে।
এই প্রবল কূটনৈতিক সক্রিয়তা সত্ত্বেও নেপাল নীতিতে শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত ব্যর্থ হল সাউথ ব্লক। ভারতের উপর্যুপরি অনুরোধের মুখে কার্যত ঝামা ঘষে নেপালের দক্ষিণ প্রান্তের থারু ও মদেশীয় জাতিগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করা হল নতুন সংবিধানে। যার জেরে মদেশীয়দের আন্দোলনে নেপাল বিশেষত তরাই অঞ্চল যখন অশান্ত, সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে আতঙ্কিত বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আর কিছু করণীয় থাকছে না ভারতের। সামনেই নেপাল-সীমান্তবর্তী রাজ্য বিহারের নির্বাচন। আশঙ্কা, এই গোলমালের রেশ এসে পড়তে পারে নির্বাচনের মুখে দাঁড়ানো বিহারের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও। এই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে নেপালের নতুন সংবিধানকে জোর গলায় স্বাগত জানিয়েছে বেজিং এবং ইসলামাবাদ। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘নেপালের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমরা বার বার সতর্ক করেছি ওই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে আজ এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতো না।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘বার বার বলা হয়েছে, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নেপালের সর্বস্তরের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা প্রয়োজন। বল প্রয়োগ করে এর সমাধান করা যাবে না।’’
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, চিনের ক্ষেত্রে যেমন তিব্বতিরা, তেমনই নেপালে এই ভারতীয়-বংশোদ্ভূত মদেশীয় জাতিগোষ্ঠীর উপর ভারতীয় প্রভাব যথেষ্ট। অনেক সঙ্কটের সময়ে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রশ্নে সুকৌশলে ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী এই জনগোষ্ঠীকে কাজেও লাগিয়েছে। অতীতে নেপাল থেকে ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসা মানুষ অনেক সময়েই ভারতীয় মহিলাদের বিয়ে করে সংসার পাততেন। তাঁদের সন্তানেরা বিভিন্ন সময়ে ফিরে গিয়েছেন নেপালে। বসবাস করেছেন সীমান্তের কাছের তরাই অঞ্চলে। এই গোষ্ঠী থেকেই মদেশীয় সম্প্রদায়ের জন্ম।
নেপালের নয়া সংবিধান তৈরির সময়ে কিছু নির্দিষ্ট দাবি তুলেছিলেন মদেশীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা চাইছিলেন, মদেশীয় সম্প্রদায়ের জন্য আটটি জেলা নির্দিষ্ট করা হোক। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি সংবিধানে। শুধু বলা হয়েছে একটি কমিশন গঠন করে পরে এই বিষয়ে মীমাংসা করা হবে। নেপালের পার্লামেন্টে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত আসনের শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও একটি বিষয়ে পদক্ষেপ করেছে নেপালের গণ পরিষদ। নয়া সংবিধান অনুযায়ী, কোনও নেপালি নারী বিদেশি পুরুষকে বিয়ে করলে সন্তানকে নতুন সংবিধান অনুযায়ী নেপালের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না সেই ভিনদেশি পুরুষটি নেপালের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন। মদেশীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের মতে, যেহেতু তারা সীমান্ত অঞ্চলে বসবাস করেন, তাঁদের ভারতীয়দের সঙ্গে প্রণয়বদ্ধ হওয়ার ঘটনাও আকছারই ঘটে। সেক্ষেত্রে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে নেপালের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে প্রান্তিক করে দেয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে নতুন সংবিধানে।
নেপালের নতুন সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়া যখন প্রায় চূড়ান্ত সে সময় (গত সপ্তাহেই) জয়শঙ্কর উপস্থিত ছিলেন কাঠমান্ডুতে। প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদবের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি। দরবার করেন মদেশীয় ও থারু সম্প্রদায়ের দাবি নিয়ে। দিল্লি ফিরে বিদেশসচিব বেশ ইতিবাচক ঢংয়েই বলেছিলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নেপালের রাজনৈতিক নেতারা পরিণতমনস্ক হওয়ার পরিচয় দেবেন। আমরা চাই এমন একটি সংবিধান সে দেশে রচিত হোক যা সব জনজাতির মান্যতা পায়।’’
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, মদেশীয় বা থারুদের দাবি মানা তো হয়ইনি, বরঞ্চ তাদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ফলে, এখন আগুন জ্বলছে নেপালে। যার আঁচ ভারতে পড়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লিও।
No comments