কয়েক শ কোটি ইউরো সহায়তার আভাস
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা শরণার্থী সংকট নিয়ে গতকাল বুধবার ব্রাসেলসে জরুরি সম্মেলনে বসেছেন। সম্মেলনে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে কোটার ভিত্তিতে শরণার্থী নেওয়ার বিষয়টিই মূল আলোচ্য বিষয়। তবে ওই সম্মেলন থেকে সিরিয়ার শরণার্থীদের সহায়তার জন্য কয়েক শ কোটি ইউরোর প্রতিশ্রুতি আসতে পারে। খবর রয়টার্সের। ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে নির্দিষ্ট সংখ্যা বা কোটা অনুযায়ী আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে। যদিও বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গত মঙ্গলবার ইইউ দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাধ্যতামূলক কোটাপদ্ধতি অনুমোদন করেন। রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি এ ধরনের কোটা মানতে রাজি নয়। এর বিরুদ্ধে স্লোভাকিয়া আইনি ব্যবস্থা নেবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে নেতাদের মধ্যে বিতর্ক হলেও তাঁদের অনেকেই অচলাবস্থা কাটিয়ে সামনে এগোতে চান। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সিরীয় শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা বরাদ্দের বিষয়টি সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ওই শরণার্থীদের জন্য কয়েক শ কোটি ইউরো সহায়তার প্রতিশ্রুতি আসতে পারে ইইউ নেতাদের সম্মেলন থেকে। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন উপকূলে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার ওপরও জোর দিচ্ছেন ইইউ নেতারা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের ‘নৈতিক সাম্রাজ্যবাদ’ প্রত্যাখ্যান করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। তিনি গতকাল বলেন, শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় পুরো বিশ্বকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি বৈশ্বিক নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। তিনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেবেন।ক্রোয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ গতকাল বলেছে, দেশটিতে গত মঙ্গলবার নয় হাজার শরণার্থী প্রবেশ করেছে, যা দেশটিতে একদিনে শরণার্থী প্রবেশের রেকর্ড। এদিকে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে প্রায় ৪০টি ডিঙি নৌকায় চড়ে গতকাল সকালে অন্তত ২ হাজার ৫০০ শরণার্থী পৌঁছায়।
এদের অধিকাংশই আফগানিস্তানের নাগরিক। বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউরোপে শরণার্থীদের নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে জটিল সংকট মোকাবিলায় ইইউর নেতারা একটি কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আশ্রয় আইন অমান্য করার অভিযোগে ইইউর ১৯টি দেশকে ইউরোপীয় কমিশন গতকাল সতর্ক করে দিয়েছে। গতকালের জরুরি সম্মেলনের প্রাক্কালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ আলোচনায় মিলিত হন। সিরিয়া যুদ্ধের সমাধান খুঁজে বের করতে পারলে শরণার্থী সংকট সমাধানের কার্যকর উপায় বের হবে বলে তাঁরা একমত হন। ইইউর সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সহায়তা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো তাঁদের আলোচনায় গুরুত্ব পায়। সিরিয়া থেকে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী এসব দেশে আশ্রয় নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী কয়েক সপ্তাহ ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপীয় উপকূলে পৌঁছায়। এদের অনেকেই ইইউভুক্ত তুলনামূলক সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে যেতে আগ্রহী। দেশটির চ্যান্সেলর মেরকেল গত মাসে আরও বেশি সিরীয় শরণার্থীকে জায়গা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কয়েকটি ইইউ দেশের সমালোচনার মুখে পড়েন। জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিযোগ, মেরকেলের ওই ঘোষণার কারণেই বেশি বেশি শরণার্থী ওই অঞ্চলে যেতে শুরু করে। এদিকে ইইউর নির্বাহী কমিশন ইউরোপ মহাদেশের শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় অতিরিক্ত ১৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউর বাজেট কমিশনার ক্রিস্তালিনা জর্জিয়েভা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। ওই তহবিল ইইউর অভ্যন্তরে জরুরি ভিত্তিতে শরণার্থীদের জায়গা দেওয়া এবং বেশি শরণার্থীর চাপ রয়েছে—এমন দেশগুলোর সামর্থ্য বৃদ্ধির কাজে ব্যয় করা হবে।
No comments