ভিয়েনা চুক্তি: খেপেছে ইসরায়েল ও সৌদি আরব by রবার্ট ফিস্ক
ভিয়েনা
চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও উপসাগরীয়
সুলতানরা যতই ক্ষিপ্ত হোন না কেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান গোষ্ঠীগত যুদ্ধে
আমেরিকানরা যে শিয়া মুসলমানদের পক্ষ নিল—এই সত্য নিয়ে আরবদের সন্দেহ থাকবে।
অবশ্য মহান ও ভালো মানুষেরা বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করেননি। খবরের শিরোনামগুলো ছিল খুবই সাদামাটা। শিরোনামের ধরন ছিল এ রকম: ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হলো, সেন্ট্রিফিউজগুলো কয়েক দশকের জন্য শিকেয় তুলে রেখে তারা ইউরেনিয়ামের মজুত কমাবে। আর এসবের বিনিময়ে তুলে নেওয়া হবে নানা ধরনের অবরোধ, যেগুলো ৩৬ বছর আগে রুহুল্লা খোমেনির প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের ওপর আরোপ করেছে ওয়াশিংটন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থার (আইএইএ) অনেক গবেষকই এখন থেকে ইরানের পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রগুলোর ভেতরে হুটহাট ঢুকে পড়তে পারবে, সে জন্য ইরানি কর্তৃপক্ষকে আগেই জানাতে হবে কি হবে না, এটা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। কিন্তু আমাদের সময়ে শান্তি ছিল। ওবামার উত্তরাধিকার বা ৮০ পাতার চুক্তিটির (ফারসিতে ১০০ পাতা) প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যাই হোক না কেন, ইরান এখন মরহুম শাহের আলখাল্লা গায়ে দিয়ে পারস্য উপসাগরে মাতব্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকম্প বিশারদদের নড়েচড়ে বসা উচিত।
রুজভেল্ট ও বুশের উত্তরসূরি ওবামা হোয়াইট হাউসে বজ্রকণ্ঠে বলেছেন, ‘আরও আশাবাদী পৃথিবী...অন্যদিকে মোড় নেওয়ার সুযোগ।’ আর কংগ্রেসের সদস্যরা যদি এটা বানচালের ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে ওবামা তাঁর ভেটো প্রয়োগ করে তা রহিত করবেন, খুব ছিমছামভাবে তিনি এ কথা বলেছেন। আর ইরানের পড়ুয়া প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর অভিভাষণে বলেছেন, ‘গঠনমূলক চুক্তিতে কাজ হয়।’
এর মাধ্যমে সুন্নি মুসলমান জাতিগুলোর ব্যাপক প্রভাবের অবসান ঘটবে, যারা নিজেদের সন্তানদের ৯/১১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধে উৎসর্গ করেছিল। যার কারণে পৃথিবীতে ওসামা বিন লাদেনের উত্থান হয়েছিল, যে তালেবান, ইরাক ও সিরিয়ার সুন্নি ইসলামপন্থীদের সমর্থন করেছিল। আর যে আমির ও রাজপুত্ররা আইসিসকে সমর্থন দিয়েছিলেন, শেষমেশ তাদেরও বিদায়। ওয়াশিংটন উপসাগরীয় জরাগ্রস্ত রাজপুত্রদের ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, বিরক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের নীতিবাগীশ বক্তৃতা, একঘেয়ে সম্পদ (যদি না সেটা মার্কিন অস্ত্র কেনায় ব্যয় হয়), আর ইয়েমেনে তাদের অপ্রীতিকর যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শিয়া ইরান তো ভালো ছেলে।
নিশ্চিতভাবেই বাহ্যিক চেহারা কখনো প্রতারণামূলক হতে পারে। এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা ও মার্কিন কংগ্রেসের অযৌক্তিক মানুষেরা এটা নস্যাৎ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আরেকটি কথা বলতে হয়। জন কেরি—সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মেধাবী পররাষ্ট্রমন্ত্রী—ইরানের সঙ্গে এই চুক্তির জন্য ভিয়েনায় ১৮ দিন ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক কাজে এক জায়গায় এত বেশি সময় কাটাননি। আমি ধারণা করি, বেচারা এডওয়ার্ড স্টেটিনিয়াসকে জাতিসংঘের সনদ প্রস্তুত করতে সানফ্রান্সিসকো কনফারেন্সে প্রায় দুই মাস থাকতে হয়েছিল। ইয়ালতা ও পটসডামের চুক্তি যথাক্রমে ৮ ও ১৭ দিন স্থায়ী হয়েছিল। ফলে নেতানিয়াহুর মাথায় যে খুন চড়ে যাবে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু অন্যান্য কথাও চালু আছে। সিরিয়া ও বাশারের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা আলোচনা করতে পারে, তাদের মধ্যে ইরানই এখন সবচেয়ে অগ্রগণ্য। আর সেই যে তা করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশটির গার্ড বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহ সহযোগীরা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে একদম সামনের কাতারে রয়েছে। সে সম্ভবত ওবামা প্রশাসনকে বাশারকে সমর্থনের ব্যাপারে রাজি করানোর ব্যাপারে নীরবে চেষ্টা করবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মতো সুন্নি ওয়াহাবি আইসিসকে/ ধ্বংস করতে চায়। আরবের সূত্রগুলো বলেছে, কেরি ও জারিফ ভিয়েনাতে এ বিষয়ে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলেছেন, এই সূত্রগুলোর তো সেটা জানার কথা। সম্ভবত সে কারণেই আলোচনা এত দীর্ঘ হয়েছে। আমরা কি দামেস্কে শ্যাম্পেন গ্লাসের টুং টাং শব্দ শুনছি?
ভয়াল, রক্তপিপাসু মানুষ ও মহাপ্রলয়তুল্য সুন্নি মুসলিম সংগঠন আইসিস ইরানের এই চুক্তিতে নেতানিয়াহুর মতো বিতৃষ্ণ হবে। এরা ইরানকে সব সময়ই খারেজি ও স্বধর্ম ত্যাগকারী রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। আর ইরানের রক্তপিপাসু আগ্রাসনের নিন্দাও তারা সব সময়ই করেছে। আর নেতানিয়াহু আমাদের কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, ইরান এখন তার ‘রক্তপিপাসু আগ্রাসন’ চালাতে পারবে। বা! খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও একই চুক্তিতে বেনিয়ামিন ও আইসিসকে পাওয়া তো অসামান্য ব্যাপার। আর যেহেতু সৌদি আরবও ইরান সম্বন্ধে একই দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে, সেহেতু আমরা পরবর্তীকালে নানা ঘটনা ঘটতে দেখব, অন্য কিছু না হলেও। আর একজন সৌদি রাজবংশীয় মানুষ তো ইরানকে নির্দয়ভাবে ‘সাপের মাথা’ আখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু ইরানের নতুন মর্যাদার ব্যাপারে অন্যথা হওয়ার জো নেই। সিগনোরা ফেদেরিকা মগেরিনি ভিয়েনায় বেশ সূক্ষ্মভাবে বলেছেন, ইরানের সামনে এখন ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে, তারা এখন মধ্যপ্রাচ্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনে আগ্রহ...দেখাতে পারে। ইরান এ অঞ্চলেই দ্বন্দ্ব-বিবাদ মীমাংসা করার লক্ষ্যে তার প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। সিরিয়া, তিনি শুধু এই একটা শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন। আর ভিয়েনা চুক্তি যদি ‘ঐতিহাসিক মাত্রার বাজে ভুল হয়’ (আবারও বেনিয়ামিন), তাহলে এই শব্দগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে, ইসরায়েল কেন ইরানের সুন্নি জঙ্গিদের চিকিৎসার জন্য সিরিয়ার গোলান পাড়ি দিয়ে কিছুদিন পরপর ইসরায়েলে ঢুকতে দিচ্ছে।
এটা নিশ্চিত থাকুন, ওবামার পক্ষ থেকে উপসাগরীয় রাজাদের কক্ষে অনেক কোমল কণ্ঠের ফোন আসবে। তিনি হয়তো বলবেন, কোনো চিন্তা নেই, সবকিছু ভালোর জন্যই, আমাদের বিশ্বাস করুন প্রভৃতি, ঠিক যেমন ক্লিনটন উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বাস করেছিলেন, যখন দেশটি তার কিছুদিন আগেই একই রকম আওয়াজ তুলেছিল। কিন্তু বেনিয়ামিনসহ সবাই মনে রাখবে, ধ্বংস দেখেও উদ্ধারকারীদের না ডেকে হেঁটে চলে যাওয়ার অভ্যাস ওবামার আছে।
জন কেরি কি কয়েক মাস আগে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের প্রাচীন দ্বন্দ্ব মীমাংসা করার চেষ্টা করেননি? আর যে মুহূর্তে সন্ত বারাক বুঝতে পারলেন, এই নৈরাশ্যজনক উদ্দেশ্য সাধন তাঁর অমর ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে না, তিনি তখন স্রেফ হেঁটে চলে গেলেন। এমনকি তিনি উদ্ধারকারীদেরও ডাকেননি, মেসার্স ব্লেয়ার অ্যান্ড কোং।
আর যে শব্দটি ভিয়েনায় গত আড়াই সপ্তাহে উচ্চারণই করা হয়নি, সেটা হলো ‘ফিলিস্তিন’।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া।
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি
অবশ্য মহান ও ভালো মানুষেরা বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করেননি। খবরের শিরোনামগুলো ছিল খুবই সাদামাটা। শিরোনামের ধরন ছিল এ রকম: ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হলো, সেন্ট্রিফিউজগুলো কয়েক দশকের জন্য শিকেয় তুলে রেখে তারা ইউরেনিয়ামের মজুত কমাবে। আর এসবের বিনিময়ে তুলে নেওয়া হবে নানা ধরনের অবরোধ, যেগুলো ৩৬ বছর আগে রুহুল্লা খোমেনির প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের ওপর আরোপ করেছে ওয়াশিংটন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থার (আইএইএ) অনেক গবেষকই এখন থেকে ইরানের পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রগুলোর ভেতরে হুটহাট ঢুকে পড়তে পারবে, সে জন্য ইরানি কর্তৃপক্ষকে আগেই জানাতে হবে কি হবে না, এটা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। কিন্তু আমাদের সময়ে শান্তি ছিল। ওবামার উত্তরাধিকার বা ৮০ পাতার চুক্তিটির (ফারসিতে ১০০ পাতা) প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যাই হোক না কেন, ইরান এখন মরহুম শাহের আলখাল্লা গায়ে দিয়ে পারস্য উপসাগরে মাতব্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকম্প বিশারদদের নড়েচড়ে বসা উচিত।
রুজভেল্ট ও বুশের উত্তরসূরি ওবামা হোয়াইট হাউসে বজ্রকণ্ঠে বলেছেন, ‘আরও আশাবাদী পৃথিবী...অন্যদিকে মোড় নেওয়ার সুযোগ।’ আর কংগ্রেসের সদস্যরা যদি এটা বানচালের ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে ওবামা তাঁর ভেটো প্রয়োগ করে তা রহিত করবেন, খুব ছিমছামভাবে তিনি এ কথা বলেছেন। আর ইরানের পড়ুয়া প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর অভিভাষণে বলেছেন, ‘গঠনমূলক চুক্তিতে কাজ হয়।’
এর মাধ্যমে সুন্নি মুসলমান জাতিগুলোর ব্যাপক প্রভাবের অবসান ঘটবে, যারা নিজেদের সন্তানদের ৯/১১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধে উৎসর্গ করেছিল। যার কারণে পৃথিবীতে ওসামা বিন লাদেনের উত্থান হয়েছিল, যে তালেবান, ইরাক ও সিরিয়ার সুন্নি ইসলামপন্থীদের সমর্থন করেছিল। আর যে আমির ও রাজপুত্ররা আইসিসকে সমর্থন দিয়েছিলেন, শেষমেশ তাদেরও বিদায়। ওয়াশিংটন উপসাগরীয় জরাগ্রস্ত রাজপুত্রদের ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, বিরক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের নীতিবাগীশ বক্তৃতা, একঘেয়ে সম্পদ (যদি না সেটা মার্কিন অস্ত্র কেনায় ব্যয় হয়), আর ইয়েমেনে তাদের অপ্রীতিকর যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শিয়া ইরান তো ভালো ছেলে।
নিশ্চিতভাবেই বাহ্যিক চেহারা কখনো প্রতারণামূলক হতে পারে। এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা ও মার্কিন কংগ্রেসের অযৌক্তিক মানুষেরা এটা নস্যাৎ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আরেকটি কথা বলতে হয়। জন কেরি—সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মেধাবী পররাষ্ট্রমন্ত্রী—ইরানের সঙ্গে এই চুক্তির জন্য ভিয়েনায় ১৮ দিন ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক কাজে এক জায়গায় এত বেশি সময় কাটাননি। আমি ধারণা করি, বেচারা এডওয়ার্ড স্টেটিনিয়াসকে জাতিসংঘের সনদ প্রস্তুত করতে সানফ্রান্সিসকো কনফারেন্সে প্রায় দুই মাস থাকতে হয়েছিল। ইয়ালতা ও পটসডামের চুক্তি যথাক্রমে ৮ ও ১৭ দিন স্থায়ী হয়েছিল। ফলে নেতানিয়াহুর মাথায় যে খুন চড়ে যাবে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু অন্যান্য কথাও চালু আছে। সিরিয়া ও বাশারের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা আলোচনা করতে পারে, তাদের মধ্যে ইরানই এখন সবচেয়ে অগ্রগণ্য। আর সেই যে তা করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশটির গার্ড বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহ সহযোগীরা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে একদম সামনের কাতারে রয়েছে। সে সম্ভবত ওবামা প্রশাসনকে বাশারকে সমর্থনের ব্যাপারে রাজি করানোর ব্যাপারে নীরবে চেষ্টা করবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মতো সুন্নি ওয়াহাবি আইসিসকে/ ধ্বংস করতে চায়। আরবের সূত্রগুলো বলেছে, কেরি ও জারিফ ভিয়েনাতে এ বিষয়ে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলেছেন, এই সূত্রগুলোর তো সেটা জানার কথা। সম্ভবত সে কারণেই আলোচনা এত দীর্ঘ হয়েছে। আমরা কি দামেস্কে শ্যাম্পেন গ্লাসের টুং টাং শব্দ শুনছি?
ভয়াল, রক্তপিপাসু মানুষ ও মহাপ্রলয়তুল্য সুন্নি মুসলিম সংগঠন আইসিস ইরানের এই চুক্তিতে নেতানিয়াহুর মতো বিতৃষ্ণ হবে। এরা ইরানকে সব সময়ই খারেজি ও স্বধর্ম ত্যাগকারী রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। আর ইরানের রক্তপিপাসু আগ্রাসনের নিন্দাও তারা সব সময়ই করেছে। আর নেতানিয়াহু আমাদের কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, ইরান এখন তার ‘রক্তপিপাসু আগ্রাসন’ চালাতে পারবে। বা! খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও একই চুক্তিতে বেনিয়ামিন ও আইসিসকে পাওয়া তো অসামান্য ব্যাপার। আর যেহেতু সৌদি আরবও ইরান সম্বন্ধে একই দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে, সেহেতু আমরা পরবর্তীকালে নানা ঘটনা ঘটতে দেখব, অন্য কিছু না হলেও। আর একজন সৌদি রাজবংশীয় মানুষ তো ইরানকে নির্দয়ভাবে ‘সাপের মাথা’ আখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু ইরানের নতুন মর্যাদার ব্যাপারে অন্যথা হওয়ার জো নেই। সিগনোরা ফেদেরিকা মগেরিনি ভিয়েনায় বেশ সূক্ষ্মভাবে বলেছেন, ইরানের সামনে এখন ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে, তারা এখন মধ্যপ্রাচ্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনে আগ্রহ...দেখাতে পারে। ইরান এ অঞ্চলেই দ্বন্দ্ব-বিবাদ মীমাংসা করার লক্ষ্যে তার প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। সিরিয়া, তিনি শুধু এই একটা শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন। আর ভিয়েনা চুক্তি যদি ‘ঐতিহাসিক মাত্রার বাজে ভুল হয়’ (আবারও বেনিয়ামিন), তাহলে এই শব্দগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে, ইসরায়েল কেন ইরানের সুন্নি জঙ্গিদের চিকিৎসার জন্য সিরিয়ার গোলান পাড়ি দিয়ে কিছুদিন পরপর ইসরায়েলে ঢুকতে দিচ্ছে।
এটা নিশ্চিত থাকুন, ওবামার পক্ষ থেকে উপসাগরীয় রাজাদের কক্ষে অনেক কোমল কণ্ঠের ফোন আসবে। তিনি হয়তো বলবেন, কোনো চিন্তা নেই, সবকিছু ভালোর জন্যই, আমাদের বিশ্বাস করুন প্রভৃতি, ঠিক যেমন ক্লিনটন উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বাস করেছিলেন, যখন দেশটি তার কিছুদিন আগেই একই রকম আওয়াজ তুলেছিল। কিন্তু বেনিয়ামিনসহ সবাই মনে রাখবে, ধ্বংস দেখেও উদ্ধারকারীদের না ডেকে হেঁটে চলে যাওয়ার অভ্যাস ওবামার আছে।
জন কেরি কি কয়েক মাস আগে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের প্রাচীন দ্বন্দ্ব মীমাংসা করার চেষ্টা করেননি? আর যে মুহূর্তে সন্ত বারাক বুঝতে পারলেন, এই নৈরাশ্যজনক উদ্দেশ্য সাধন তাঁর অমর ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে না, তিনি তখন স্রেফ হেঁটে চলে গেলেন। এমনকি তিনি উদ্ধারকারীদেরও ডাকেননি, মেসার্স ব্লেয়ার অ্যান্ড কোং।
আর যে শব্দটি ভিয়েনায় গত আড়াই সপ্তাহে উচ্চারণই করা হয়নি, সেটা হলো ‘ফিলিস্তিন’।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া।
রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি
No comments