বিএনপির সঙ্গে লড়ছে বিএনপি by সেলিম জাহিদ ও রিয়াদুল করিম
আবদুস সালাম আজাদ ও তাইফুল ইসলাম (টিপু) ১৯ মে বিএনপিতে সম্পাদকীয় পদ পান। ২৫ দিনের মাথায় দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরেই মারধরে রক্তাক্ত হন সালাম। আতঙ্কে তাইফুল দপ্তর এড়িয়ে চলেন প্রায় এক মাস। এটি বিএনপিতে অন্তর্ঘাতের একটি খণ্ডচিত্র।
একইভাবে দলের প্রধান তিন অঙ্গসংগঠনেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ আছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ, ককটেল হামলা, ভাঙচুর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া হয়েছে প্রায় এক মাস। অন্তর্দ্বন্দ্বে যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কথা বন্ধ দুই বছর। শ্রমিক দলের বিরোধ এখন শ্রম আদালতে বিচারাধীন। আর বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে দলের নীতি-কৌশল নিয়ে মতবিরোধ ও অসন্তোষ অনেকটা প্রকাশ্য। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া তিন নেতার ফোনালাপে এর প্রকাশ পেয়েছে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, সরকারের দমন-পীড়নের মুখে তাঁরা মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। এ অবস্থায় দলের উচ্চপর্যায় থেকে মাঠ পর্যন্ত চেপে বসা দ্বন্দ্ব, অন্তর্ঘাত ও অবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। সম্প্রতি দল পুনর্গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা-ও বিফল হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া আবদুস সালাম আজাদ গত ১৪ জুন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারধর ও ছুরিকাঘাতে আহত হন। ঘটনা অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যুবদলের ভেতর থেকেই এ অন্তর্ঘাত হয়। নতুন পদ প্রাপ্তির আগে থেকেই সালাম যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি পদে আছেন। আর তাইফুল ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, পরে যুবদলের সদস্য। অনেকটা চমক দিয়ে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদকের পদ পান। একই পদে আরও তিনজন কাজ করছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের অনেকে নানা চেষ্টা-তদবির করেও বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনে পদ পাননি। সেখানে আনকোরা এক নেতাকে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে নিযুক্তি এবং আরেক নেতাকে দুই পদের দায়িত্ব দেওয়া পদবঞ্চিতদের ক্ষুব্ধ করে।
দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যতটা না সক্রিয়, তার চেয়ে বেশি তৎপর নিজেদের মধ্যে অন্তর্ঘাত ও রেষারেষিতে।
স্থায়ী কমিটিতে বিরোধ-অবিশ্বাস: দলটির নেতারা বলছেন, বার্ধক্য ও অসুস্থতার পাশাপাশি সরকারের কঠোর অবস্থানে ১৯ সদস্যের বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এটাকে পুরোদমে সক্রিয় করাটাই এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে মতবিরোধ ও আস্থাহীনতা স্থায়ী কমিটিকে আরও নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। যদিও নিষ্ক্রিয় হওয়ার জন্য দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত না করাকে একটি বড় কারণ বলে জানান নেতারা।
এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়কার একটি ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য খালেদা জিয়াকে মোদির সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করেন। কিন্তু চেয়ারপারসন তাঁকে বৈঠকে রাখেননি। পরে ওই নেতা সহকর্মীদের কাছে মনোবেদনা প্রকাশ করেন। এরপর চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন দলের এমন একজন নেতাকে বাদ দিয়ে চীনে বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়। এর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে নেতাদের মুঠোফোন নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন এখন আর সেভাবে তাঁদের সঙ্গে কোনো কিছু আলোচনা করেন না। হয়তো তিনি সবার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার দ্বন্দ্ব; চট্টগ্রামে আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শাহাদাত হোসেনের ত্রিমাত্রিক বিরোধ; কেরানীগঞ্জে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানের মধ্যে পুরোনো বিরোধ তো রয়েছেই।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার দাবি করেন, ‘টপ লিডারশিপ, বিশেষ করে দলের স্থায়ী কমিটি বা নির্বাহী কমিটিতে কোনো কোন্দল বা অবিশ্বাস নেই। চেয়ারপারসন স্থায়ী কমিটি বা নির্বাহী কমিটিতে যাঁদের আনবেন, তাঁদের নিয়েও কোনো কোন্দল হবে বলে মনে করি না।’
গুলশানের ‘বলয়’: বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, তাঁরা চাইলেই দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। কারণ, খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়কেন্দ্রিক একটি ‘বলয়’ বন্দী করে রেখেছে।
গত ১৫ জুন ময়মনসিংহ জেলার আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম মাসুদুল আলম খান বলেন, ‘ম্যাডাম, আমি যখন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের জিএস ছিলাম, তখন আপনার সঙ্গে ফোনে কথা হতো। কিন্তু এখন আপনার সঙ্গে দেখাও হয় না, আপনার গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে পারি না। আর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে কমিটি বিক্রি হয়।’
তারও আগে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের কনভেনশনে হেলেন জেরিন খান বলেন, তিন বছরেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। অথচ প্রায় ৫০ জনের মতো লোক প্রতিনিয়ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আলাপকালে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাঁরা এ-ও বলেন, চেয়ারপারসন না ডাকলে তাঁরা গুলশান কার্যালয়ে যান না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, বিশেষ সহকারী, প্রেস সচিব ও মিডিয়া উইংয়ের সদস্যদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব আছে। সেখান থেকে তথ্য ফাঁস হওয়া বা খালেদা জিয়ার কক্ষ থেকে কথা রেকর্ড করার যন্ত্র উদ্ধার হওয়ার ঘটনা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আছে।
যুবদলের সভাপতি-সম্পাদকের কথা বলা বন্ধ: বিএনপির যুব সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এমন পর্যায়ে গেছে যে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল) ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলমের (নীরব) মধ্যে প্রায় দুই বছর কথা বলা বন্ধ, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় সংগঠনের সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ পরস্পর বৈরি দুই নেতার মধ্যে কথা চালাচালি করে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
অবশ্য আলাল দাবি করেন, ‘একদম যে কথা হয় না, তা ঠিক না। ঈদের দিনও কথাবার্তা হয়েছে। দরকার হলে দায়িত্বশীলদের মাধ্যমেও যোগাযোগ হয়।’
নেতা-কর্মীরা জানান, শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধে বিগত আন্দোলনে যুবদল এতটাই নিষ্ক্রিয় ছিল যে সংগঠনটির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল বিএনপিতে। এ অবস্থায় যুবদলের পুনর্গঠন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম সভাপতি হতে চান। বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির (খোকন), শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানি), কামরুজ্জামান রতন, সুলতান সালাহউদ্দিনকে (টুকু) যুবদলের নেতৃত্বে আনতে ঢাকায় ও লন্ডনে চেষ্টা-তদবির করছেন। আবার দলের আরেকটি অংশ ছাত্রদলের সাবেক নেতা সানাউল হককে (নীরু) ফিরিয়ে এনে যুবদল সংগঠিত করতে আগ্রহী। কিন্তু নীরুর আসা ঠেকাতে এককাট্টা হয়ে নেমেছেন নীরুর সময়কার ছাত্রদল নেতাদের কয়েকজন।
এ অবস্থায় এ সপ্তাহ, ওই সপ্তাহ, এ মাস, পরের মাস বলেও যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা যায়নি। অবশ্য আলাল এ প্রতিবেদককে জানান, বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
ছাত্রদল আছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে: মাইদুল হাসানকে (হিরু) সভাপতি ও মাসুদ পারভেজকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি দিয়েছিল ছাত্রদল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিরোধে এ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজই করতে পারেনি। কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, মাইদুল হাসান ও মাসুদ পারভেজকে ব্যর্থ করতে তখন মরিয়া হয়ে নামেন ছাত্রদলের ওই সময়কার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও তাঁর অনুগতরা। এখন আকরামুল হাসানদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ওই অংশটি।
মাইদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই কমিটি দাঁড় করিয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রদলের তৎকালীন (জুয়েল-হাবিব) কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেয়নি। তারা চেয়েছে আমরা যেন ব্যর্থ হই।’
ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষোভ, ককটেল হামলা, ভাঙচুর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া হয়েছে প্রায় এক মাস। অন্তর্দ্বন্দ্বে যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কথা বন্ধ দুই বছর, শ্রমিক দলের বিরোধ এখন শ্রম আদালতে বিচারাধীন
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি করতে গিয়ে ছাত্রদলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চরমে উঠেছে। এ জন্য নেতারা দলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহসম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিনকে দুষছেন।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। গত ১০ মাসেও তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। এই কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিতরা বিদ্রোহ করেন। তাঁরা একজোট হয়ে কমিটির বিরুদ্ধে লাগাতার বিক্ষোভ করেন। পরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আশ্বাসে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ থামান। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিতরা এখনো কমিটির বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
শ্রমিক দল শ্রম আদালতে: গত বছরের মে মাসে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া কমিটির অনুমোদন দেন। কিন্তু শ্রমিক দলের একটি অংশ কমিটি মানেনি। তারা পাল্টা কমিটি দেয় এবং কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে।
বিদ্রোহী অংশের নেতারা জানান, মামলায় শ্রম পরিচালক ও কমিটি গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির তিন নেতা নজরুল ইসলাম খান, জাফরুল হাসান ও আবদুল্লাহ আল নোমানকেও বিবাদী করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিক দলের আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন এমন সক্রিয় নেতাদেরও কমিটিতে রাখা হয়নি।
আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা বলেন, ‘আমি শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলাম। আমার অপরাধ হলো কেন নির্বাচন চাইলাম। সে জন্য কমিটিতেই রাখা হয়নি। অথচ গত ১০ বছরে শ্রমিক দলের কার্যক্রমে সক্রিয়দের মধ্যে আমি অন্যতম।’
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারের মধ্যেও সম্প্রীতি নেই। নারী নেত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে বিভক্তি আছে।
মাঠপর্যায়ের রাজনীতির ওপর জেলাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে প্রথম আলো। এ পর্যন্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অধিকাংশ জেলায় দলীয় বিরোধ চরম পর্যায়ে। কমিটি নিয়ে রেষারেষিতে একাধিক জেলায় আলাদা কার্যালয় খোলা হয়েছে, দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় পৃথকভাবে। সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের বিষয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতেও এই কোন্দলের কথা উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বড় দলে কোন্দল থাকবে। ম্যাচিউরড নেতৃত্ব অথবা সমান যোগ্যতার একাধিক নেতা থাকলে সেখানে প্রতিযোগিতা বা কোন্দল থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে নির্বাচনের সময় এর প্রভাব পড়ে না, নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন।
একইভাবে দলের প্রধান তিন অঙ্গসংগঠনেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ আছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ, ককটেল হামলা, ভাঙচুর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া হয়েছে প্রায় এক মাস। অন্তর্দ্বন্দ্বে যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কথা বন্ধ দুই বছর। শ্রমিক দলের বিরোধ এখন শ্রম আদালতে বিচারাধীন। আর বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে দলের নীতি-কৌশল নিয়ে মতবিরোধ ও অসন্তোষ অনেকটা প্রকাশ্য। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া তিন নেতার ফোনালাপে এর প্রকাশ পেয়েছে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, সরকারের দমন-পীড়নের মুখে তাঁরা মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। এ অবস্থায় দলের উচ্চপর্যায় থেকে মাঠ পর্যন্ত চেপে বসা দ্বন্দ্ব, অন্তর্ঘাত ও অবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। সম্প্রতি দল পুনর্গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা-ও বিফল হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া আবদুস সালাম আজাদ গত ১৪ জুন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারধর ও ছুরিকাঘাতে আহত হন। ঘটনা অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যুবদলের ভেতর থেকেই এ অন্তর্ঘাত হয়। নতুন পদ প্রাপ্তির আগে থেকেই সালাম যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি পদে আছেন। আর তাইফুল ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, পরে যুবদলের সদস্য। অনেকটা চমক দিয়ে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদকের পদ পান। একই পদে আরও তিনজন কাজ করছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের অনেকে নানা চেষ্টা-তদবির করেও বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনে পদ পাননি। সেখানে আনকোরা এক নেতাকে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে নিযুক্তি এবং আরেক নেতাকে দুই পদের দায়িত্ব দেওয়া পদবঞ্চিতদের ক্ষুব্ধ করে।
দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যতটা না সক্রিয়, তার চেয়ে বেশি তৎপর নিজেদের মধ্যে অন্তর্ঘাত ও রেষারেষিতে।
স্থায়ী কমিটিতে বিরোধ-অবিশ্বাস: দলটির নেতারা বলছেন, বার্ধক্য ও অসুস্থতার পাশাপাশি সরকারের কঠোর অবস্থানে ১৯ সদস্যের বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এটাকে পুরোদমে সক্রিয় করাটাই এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে মতবিরোধ ও আস্থাহীনতা স্থায়ী কমিটিকে আরও নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। যদিও নিষ্ক্রিয় হওয়ার জন্য দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত না করাকে একটি বড় কারণ বলে জানান নেতারা।
এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়কার একটি ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য খালেদা জিয়াকে মোদির সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করেন। কিন্তু চেয়ারপারসন তাঁকে বৈঠকে রাখেননি। পরে ওই নেতা সহকর্মীদের কাছে মনোবেদনা প্রকাশ করেন। এরপর চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন দলের এমন একজন নেতাকে বাদ দিয়ে চীনে বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়। এর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে নেতাদের মুঠোফোন নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন এখন আর সেভাবে তাঁদের সঙ্গে কোনো কিছু আলোচনা করেন না। হয়তো তিনি সবার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার দ্বন্দ্ব; চট্টগ্রামে আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শাহাদাত হোসেনের ত্রিমাত্রিক বিরোধ; কেরানীগঞ্জে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানের মধ্যে পুরোনো বিরোধ তো রয়েছেই।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার দাবি করেন, ‘টপ লিডারশিপ, বিশেষ করে দলের স্থায়ী কমিটি বা নির্বাহী কমিটিতে কোনো কোন্দল বা অবিশ্বাস নেই। চেয়ারপারসন স্থায়ী কমিটি বা নির্বাহী কমিটিতে যাঁদের আনবেন, তাঁদের নিয়েও কোনো কোন্দল হবে বলে মনে করি না।’
গুলশানের ‘বলয়’: বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, তাঁরা চাইলেই দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। কারণ, খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়কেন্দ্রিক একটি ‘বলয়’ বন্দী করে রেখেছে।
গত ১৫ জুন ময়মনসিংহ জেলার আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম মাসুদুল আলম খান বলেন, ‘ম্যাডাম, আমি যখন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের জিএস ছিলাম, তখন আপনার সঙ্গে ফোনে কথা হতো। কিন্তু এখন আপনার সঙ্গে দেখাও হয় না, আপনার গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে পারি না। আর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে কমিটি বিক্রি হয়।’
তারও আগে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের কনভেনশনে হেলেন জেরিন খান বলেন, তিন বছরেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। অথচ প্রায় ৫০ জনের মতো লোক প্রতিনিয়ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আলাপকালে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাঁরা এ-ও বলেন, চেয়ারপারসন না ডাকলে তাঁরা গুলশান কার্যালয়ে যান না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, বিশেষ সহকারী, প্রেস সচিব ও মিডিয়া উইংয়ের সদস্যদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব আছে। সেখান থেকে তথ্য ফাঁস হওয়া বা খালেদা জিয়ার কক্ষ থেকে কথা রেকর্ড করার যন্ত্র উদ্ধার হওয়ার ঘটনা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আছে।
যুবদলের সভাপতি-সম্পাদকের কথা বলা বন্ধ: বিএনপির যুব সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এমন পর্যায়ে গেছে যে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল) ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলমের (নীরব) মধ্যে প্রায় দুই বছর কথা বলা বন্ধ, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় সংগঠনের সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ পরস্পর বৈরি দুই নেতার মধ্যে কথা চালাচালি করে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
অবশ্য আলাল দাবি করেন, ‘একদম যে কথা হয় না, তা ঠিক না। ঈদের দিনও কথাবার্তা হয়েছে। দরকার হলে দায়িত্বশীলদের মাধ্যমেও যোগাযোগ হয়।’
নেতা-কর্মীরা জানান, শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধে বিগত আন্দোলনে যুবদল এতটাই নিষ্ক্রিয় ছিল যে সংগঠনটির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল বিএনপিতে। এ অবস্থায় যুবদলের পুনর্গঠন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম সভাপতি হতে চান। বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির (খোকন), শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানি), কামরুজ্জামান রতন, সুলতান সালাহউদ্দিনকে (টুকু) যুবদলের নেতৃত্বে আনতে ঢাকায় ও লন্ডনে চেষ্টা-তদবির করছেন। আবার দলের আরেকটি অংশ ছাত্রদলের সাবেক নেতা সানাউল হককে (নীরু) ফিরিয়ে এনে যুবদল সংগঠিত করতে আগ্রহী। কিন্তু নীরুর আসা ঠেকাতে এককাট্টা হয়ে নেমেছেন নীরুর সময়কার ছাত্রদল নেতাদের কয়েকজন।
এ অবস্থায় এ সপ্তাহ, ওই সপ্তাহ, এ মাস, পরের মাস বলেও যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা যায়নি। অবশ্য আলাল এ প্রতিবেদককে জানান, বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
ছাত্রদল আছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে: মাইদুল হাসানকে (হিরু) সভাপতি ও মাসুদ পারভেজকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি দিয়েছিল ছাত্রদল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিরোধে এ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজই করতে পারেনি। কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, মাইদুল হাসান ও মাসুদ পারভেজকে ব্যর্থ করতে তখন মরিয়া হয়ে নামেন ছাত্রদলের ওই সময়কার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও তাঁর অনুগতরা। এখন আকরামুল হাসানদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ওই অংশটি।
মাইদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই কমিটি দাঁড় করিয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রদলের তৎকালীন (জুয়েল-হাবিব) কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেয়নি। তারা চেয়েছে আমরা যেন ব্যর্থ হই।’
ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষোভ, ককটেল হামলা, ভাঙচুর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া হয়েছে প্রায় এক মাস। অন্তর্দ্বন্দ্বে যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কথা বন্ধ দুই বছর, শ্রমিক দলের বিরোধ এখন শ্রম আদালতে বিচারাধীন
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি করতে গিয়ে ছাত্রদলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চরমে উঠেছে। এ জন্য নেতারা দলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহসম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিনকে দুষছেন।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। গত ১০ মাসেও তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। এই কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিতরা বিদ্রোহ করেন। তাঁরা একজোট হয়ে কমিটির বিরুদ্ধে লাগাতার বিক্ষোভ করেন। পরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আশ্বাসে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ থামান। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিতরা এখনো কমিটির বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
শ্রমিক দল শ্রম আদালতে: গত বছরের মে মাসে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া কমিটির অনুমোদন দেন। কিন্তু শ্রমিক দলের একটি অংশ কমিটি মানেনি। তারা পাল্টা কমিটি দেয় এবং কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে।
বিদ্রোহী অংশের নেতারা জানান, মামলায় শ্রম পরিচালক ও কমিটি গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির তিন নেতা নজরুল ইসলাম খান, জাফরুল হাসান ও আবদুল্লাহ আল নোমানকেও বিবাদী করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিক দলের আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন এমন সক্রিয় নেতাদেরও কমিটিতে রাখা হয়নি।
আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা বলেন, ‘আমি শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলাম। আমার অপরাধ হলো কেন নির্বাচন চাইলাম। সে জন্য কমিটিতেই রাখা হয়নি। অথচ গত ১০ বছরে শ্রমিক দলের কার্যক্রমে সক্রিয়দের মধ্যে আমি অন্যতম।’
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারের মধ্যেও সম্প্রীতি নেই। নারী নেত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে বিভক্তি আছে।
মাঠপর্যায়ের রাজনীতির ওপর জেলাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে প্রথম আলো। এ পর্যন্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অধিকাংশ জেলায় দলীয় বিরোধ চরম পর্যায়ে। কমিটি নিয়ে রেষারেষিতে একাধিক জেলায় আলাদা কার্যালয় খোলা হয়েছে, দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় পৃথকভাবে। সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের বিষয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতেও এই কোন্দলের কথা উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বড় দলে কোন্দল থাকবে। ম্যাচিউরড নেতৃত্ব অথবা সমান যোগ্যতার একাধিক নেতা থাকলে সেখানে প্রতিযোগিতা বা কোন্দল থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে নির্বাচনের সময় এর প্রভাব পড়ে না, নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন।
No comments