স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আশুলিয়ার চার গ্রামের মানুষ- দূষণে বিপর্যস্ত জনপদ by পার্থ শঙ্কর সাহা
ঘরের চাল ও বেড়ার টিন, কোমরবন্ধনীর
(বেল্ট) স্টিলের অংশ, মুঠোফোনের চার্জারের পিন, বাইসাইকেল—সবকিছুতেই মরচে
ধরছে। বছর না ঘুরতেই ঝাঁজরা হয়ে যাচ্ছে ঘরের টিন। মানুষের তাহলে কী হাল?
খোসপাঁচড়ায় শারীরিক স্বস্তি উধাও। মানুষের চামড়াও ঝাঁজরা হওয়ার জোগাড়!
শিল্পবর্জ্যের দূষণে শুধু মানুষেরই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে তা নয়, ঘরের টিনসহ লোহাজাতীয় সামগ্রীতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আশুলিয়ার কাইচাবাড়ী গ্রামের অনেক ঘরের টিনেই মরচে ধরেছে। ডিইপিজেড-সংলগ্ন গ্রাম থেকে সম্প্রতি ছবিটি তুলেছেন হাসান রাজা
এই চিত্র
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার কাইচাবাড়ী গ্রামের। ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ
অঞ্চলের (ডিইপিজেড) পেছনে গ্রামটির অবস্থান। কাছের নলাম, ডগরতলী ও নতুনপাড়া
গ্রামেরও একই অবস্থা। সেখানকার মানুষের ধারণা, গ্রামের পাশের খাল দিয়ে বয়ে
যাওয়া তরল শিল্পবর্জ্যের প্রভাবেই তাদের এই দুঃসহ অবস্থা।
ইপিজেডের পেছনের এই খালটি গিয়ে মিশেছে কন্ডা বিলে। খাল থেকে কন্ডা বিল প্রায় ৮০০ গজ। ইপিজেডসহ আশপাশের বেশ কিছু শিল্পকারখানার বর্জ্য গিয়ে পড়ছে এই খালে। সেখান থেকে কন্ডা বিল। এই কন্ডা বিলের পানি গিয়ে মিশেছে বংশী নদীতে। খাল ও কন্ডা বিল ঘিরে এই চার গ্রাম। অধিবাসী প্রায় ২০ হাজার। অধিকাংশই আশপাশের কারখানার শ্রমিক।
গ্রামের মানুষের কথার সূত্র ধরে খালের পানি সংগ্রহ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে পরীক্ষা করায় প্রথম আলো। সেই পরীক্ষায় জানা যায়, শিল্পবর্জ্যের কারণে খালের পানির দূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে। পানিতে মিশে থাকা সালফায়েড বাষ্পীয় রূপ নিয়ে টিন বা লোহাজাতীয় সামগ্রীতে মরচে ধরাচ্ছে।
আর মানুষের কী ক্ষতি হচ্ছে? গ্রামগুলোর অবস্থা ও পানি পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঔষধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের কাছে এর প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, পুরো এলাকার মানুষকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দূষণের যে ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে এলাকার মানুষের যকৃৎ ও কিডনি আক্রান্ত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, ফসল ও খাওয়ার পানিও এখানে নিরাপদ থাকার কথা নয়।
শিল্পবর্জ্যমিশ্রিত খালটির পানি যেখানে গিয়ে কন্ডা বিলে পড়েছে, সেখান থেকে গত বছরের ২৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় নমুনা সংগ্রহ করে প্রথম আলো। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটায় বুয়েটের পরিবেশ প্রকৌশল পরীক্ষাগারে তা জমা দেওয়া হয়। পরীক্ষার ফল পাওয়া যায় গত ৩০ নভেম্বর।
পানির গুণগত মান কেমন, তা জানা যায় (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) বিওডি ও (কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) সিওডি থেকে। এর পরিমাণ যত বেশি, পানির মান তত খারাপ বলে বিবেচিত হয়। পরীক্ষিত পানির প্রতি লিটারে বিওডি পাওয়া গেছে ৬০০ মিলিগ্রাম।
ইপিজেডের পেছনের এই খালটি গিয়ে মিশেছে কন্ডা বিলে। খাল থেকে কন্ডা বিল প্রায় ৮০০ গজ। ইপিজেডসহ আশপাশের বেশ কিছু শিল্পকারখানার বর্জ্য গিয়ে পড়ছে এই খালে। সেখান থেকে কন্ডা বিল। এই কন্ডা বিলের পানি গিয়ে মিশেছে বংশী নদীতে। খাল ও কন্ডা বিল ঘিরে এই চার গ্রাম। অধিবাসী প্রায় ২০ হাজার। অধিকাংশই আশপাশের কারখানার শ্রমিক।
গ্রামের মানুষের কথার সূত্র ধরে খালের পানি সংগ্রহ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে পরীক্ষা করায় প্রথম আলো। সেই পরীক্ষায় জানা যায়, শিল্পবর্জ্যের কারণে খালের পানির দূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে। পানিতে মিশে থাকা সালফায়েড বাষ্পীয় রূপ নিয়ে টিন বা লোহাজাতীয় সামগ্রীতে মরচে ধরাচ্ছে।
আর মানুষের কী ক্ষতি হচ্ছে? গ্রামগুলোর অবস্থা ও পানি পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঔষধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের কাছে এর প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, পুরো এলাকার মানুষকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দূষণের যে ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে এলাকার মানুষের যকৃৎ ও কিডনি আক্রান্ত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, ফসল ও খাওয়ার পানিও এখানে নিরাপদ থাকার কথা নয়।
শিল্পবর্জ্যমিশ্রিত খালটির পানি যেখানে গিয়ে কন্ডা বিলে পড়েছে, সেখান থেকে গত বছরের ২৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় নমুনা সংগ্রহ করে প্রথম আলো। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটায় বুয়েটের পরিবেশ প্রকৌশল পরীক্ষাগারে তা জমা দেওয়া হয়। পরীক্ষার ফল পাওয়া যায় গত ৩০ নভেম্বর।
পানির গুণগত মান কেমন, তা জানা যায় (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) বিওডি ও (কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) সিওডি থেকে। এর পরিমাণ যত বেশি, পানির মান তত খারাপ বলে বিবেচিত হয়। পরীক্ষিত পানির প্রতি লিটারে বিওডি পাওয়া গেছে ৬০০ মিলিগ্রাম।
কারখানার তরল বর্জ্য খাল বেয়ে যাচ্ছে কন্ডা বিলে। ছবিটি আশুলিয়ার কাইচাবাড়ি গ্রাম থেকে তোলা
পরিবেশ
সংরক্ষণ আইন অনুসারে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য বহন করা পানিতে বিওডির
সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মিলিগ্রাম। সিওডির সহনীয় মাত্রা ১৫০
মিলিগ্রাম। কিন্তু পরীক্ষা করা পানিতে সিওডি পাওয়া গেছে ৯৯৪ মিলিগ্রাম। এ
ছাড়া পানিতে সালফায়েডের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪৫ মিলিগ্রাম। সহনীয় মাত্রা যেখানে ১
মিলিগ্রাম।
এর ব্যাখ্যায় বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পানিবিশেষজ্ঞ মুজিবুর রহমান বলেন, পানিতে সালফায়েডের অস্বাভাবিক উপস্থিতিই লোহাজাতীয় সামগ্রীতে দ্রুত মরচে ধরে যাওয়ার কারণ। তিনি মনে করেন, পানিতে মিশে থাকা সালফায়েড বাষ্পীয় রূপ নিয়ে মরচে ধরায়।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পানির মান বলছে, ইপিজেডসহ শিল্পকারখানাগুলোতে পানি পরিশোধনের কাজটি করা হয় না। টিন ফুটো হয়ে যাওয়া দৃশ্যমান। কিন্তু মানুষের শরীরে কী হচ্ছে, তো দেখা যায় না। আসলে শরীরে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, যার পরিমাপ করা যায় না।
সব শিল্পকারখানায় বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কারখানায় ইটিপি চালু না থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানাও করছে। কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি দৃশ্যমান নয়।
জানতে চাইলে ইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) গাজী শহীদুল আনোয়ার প্রথম আলোর কাছে বুয়েটের এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইপিজেডে ইটিপি চালু রাখা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘সব সময় চালু রাখা হয়। আমাদের কেন্দ্রীয় ইটিপি আছে।’ পানির দূষণের জন্য ইপিজেডের বাইরের শিল্পকারখানাগুলো দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিইপিজেড ও আশপাশের কারখানার মধ্যে বেশির ভাগই বস্ত্র কারখানা (ডায়িং)। কাপড়ে রং মেশানোর এই কারখানা থেকেই বেশি তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইপিজেড কর্তৃপক্ষের মতো আমি কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। সব প্রতিষ্ঠান বর্জ্য শোধনাগার করেনি, এটা সত্য। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’ শিল্প উন্নয়নে দূষণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডিইপিজেডের পেছনের কাইচাবাড়ী গ্রামের মমতা বেগম (৫৩) বলেন, ছয় মাস পার হয়নি, ঘরের রঙিন টিনে মরচে ধরে গেছে। তিনি এখানে থাকছেন চার বছর ধরে। প্রতিবছর একই অভিজ্ঞতা তাঁর।
মমতা বেগম আরও বলেন, ‘দুই মাস যায় না, মুবাইলের (মুঠোফোন) চার্জারের পিন নষ্ট হয়্যা যায়। চার্জার কিনতে গেলে দোয়ানদার কয়, পিন কি পচা পানিতে ডুবায়া রাহেন নাহি?’
ইপিজেড থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ডগরতলী গ্রাম। এ গ্রামের মুদি দোকানি ও বাড়িওয়ালা ওহাব খান বাড়ির টিন দেখিয়ে বলছিলেন, ‘দুই বছর পরপর টিন পাল্টানো লাগে। গরিব মানুষ, কেমন কইর্যা পারি?’
কেবল ঘরের সামগ্রীতে নয়, অনেকের শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। গ্রামগুলোর বেশির ভাগ অধিবাসী আশপাশের কারখানার শ্রমিক।
নতুন গ্রামের সুবর্ণা বেগমের দুই বছরের ছেলে সালেহর সারা গায়ে ঘা। সুবর্ণা বললেন, ‘জন্মের পর থিকা একটা দিনও অসুখ সারে নাই। ওষুধ খাওয়ালে ঘা সারে, আবার হয়। ভালোভাবে খাইতেও পারে না।’
কাইচাবাড়ীর ফজল মিয়ার কথা, ‘গ্রামে এমন ঘর পাইবেন না, যেহানে অসুখ লাইগ্যা নাই।’ স্থানীয় দুটি ওষুধের দোকানে গিয়ে জানতে চাইলে জানা যায়, এখানে চুলকানির ওষুধই বেশি বিক্রি হয়। জেএন ফার্মেসির রিটন বড়ুয়া বলেন, শুকনো মৌসুমে চুলকানি ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের চাহিদা বেশি থাকে।
ঘর রক্ষার আশু সমাধান হিসেবে মরিচার হাত থেকে বাঁচতে টিনে রং করছেন অনেকে। সামর্থ্য থাকলে রঙিন টিনও উঠছে চালে। কিন্তু শরীরের ক্ষতির কী হবে—এ উদ্বেগ ভুক্তভোগীদের মনেও।
ইপিজেডের পাশের গ্রামগুলোর এই দূষণ নিয়ে কোনো তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে নেই বলে স্বীকার করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর। এসব গ্রামে কোনো পরিদর্শক দল যায়নি বলেও জানান তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইপিজেডে কেন্দ্রীয় ইটিপি চালু আছে। অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইটিপি ঠিকমতো চালু থাকে কি না, সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করি।’ তবে তা ঠিকমতো হয় না স্বীকার করে তিনি এর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলের সংকটকে দায়ী করেন।
এর ব্যাখ্যায় বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পানিবিশেষজ্ঞ মুজিবুর রহমান বলেন, পানিতে সালফায়েডের অস্বাভাবিক উপস্থিতিই লোহাজাতীয় সামগ্রীতে দ্রুত মরচে ধরে যাওয়ার কারণ। তিনি মনে করেন, পানিতে মিশে থাকা সালফায়েড বাষ্পীয় রূপ নিয়ে মরচে ধরায়।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পানির মান বলছে, ইপিজেডসহ শিল্পকারখানাগুলোতে পানি পরিশোধনের কাজটি করা হয় না। টিন ফুটো হয়ে যাওয়া দৃশ্যমান। কিন্তু মানুষের শরীরে কী হচ্ছে, তো দেখা যায় না। আসলে শরীরে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, যার পরিমাপ করা যায় না।
সব শিল্পকারখানায় বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কারখানায় ইটিপি চালু না থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানাও করছে। কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি দৃশ্যমান নয়।
জানতে চাইলে ইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) গাজী শহীদুল আনোয়ার প্রথম আলোর কাছে বুয়েটের এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইপিজেডে ইটিপি চালু রাখা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘সব সময় চালু রাখা হয়। আমাদের কেন্দ্রীয় ইটিপি আছে।’ পানির দূষণের জন্য ইপিজেডের বাইরের শিল্পকারখানাগুলো দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিইপিজেড ও আশপাশের কারখানার মধ্যে বেশির ভাগই বস্ত্র কারখানা (ডায়িং)। কাপড়ে রং মেশানোর এই কারখানা থেকেই বেশি তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইপিজেড কর্তৃপক্ষের মতো আমি কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। সব প্রতিষ্ঠান বর্জ্য শোধনাগার করেনি, এটা সত্য। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’ শিল্প উন্নয়নে দূষণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডিইপিজেডের পেছনের কাইচাবাড়ী গ্রামের মমতা বেগম (৫৩) বলেন, ছয় মাস পার হয়নি, ঘরের রঙিন টিনে মরচে ধরে গেছে। তিনি এখানে থাকছেন চার বছর ধরে। প্রতিবছর একই অভিজ্ঞতা তাঁর।
মমতা বেগম আরও বলেন, ‘দুই মাস যায় না, মুবাইলের (মুঠোফোন) চার্জারের পিন নষ্ট হয়্যা যায়। চার্জার কিনতে গেলে দোয়ানদার কয়, পিন কি পচা পানিতে ডুবায়া রাহেন নাহি?’
ইপিজেড থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ডগরতলী গ্রাম। এ গ্রামের মুদি দোকানি ও বাড়িওয়ালা ওহাব খান বাড়ির টিন দেখিয়ে বলছিলেন, ‘দুই বছর পরপর টিন পাল্টানো লাগে। গরিব মানুষ, কেমন কইর্যা পারি?’
কেবল ঘরের সামগ্রীতে নয়, অনেকের শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। গ্রামগুলোর বেশির ভাগ অধিবাসী আশপাশের কারখানার শ্রমিক।
নতুন গ্রামের সুবর্ণা বেগমের দুই বছরের ছেলে সালেহর সারা গায়ে ঘা। সুবর্ণা বললেন, ‘জন্মের পর থিকা একটা দিনও অসুখ সারে নাই। ওষুধ খাওয়ালে ঘা সারে, আবার হয়। ভালোভাবে খাইতেও পারে না।’
কাইচাবাড়ীর ফজল মিয়ার কথা, ‘গ্রামে এমন ঘর পাইবেন না, যেহানে অসুখ লাইগ্যা নাই।’ স্থানীয় দুটি ওষুধের দোকানে গিয়ে জানতে চাইলে জানা যায়, এখানে চুলকানির ওষুধই বেশি বিক্রি হয়। জেএন ফার্মেসির রিটন বড়ুয়া বলেন, শুকনো মৌসুমে চুলকানি ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের চাহিদা বেশি থাকে।
ঘর রক্ষার আশু সমাধান হিসেবে মরিচার হাত থেকে বাঁচতে টিনে রং করছেন অনেকে। সামর্থ্য থাকলে রঙিন টিনও উঠছে চালে। কিন্তু শরীরের ক্ষতির কী হবে—এ উদ্বেগ ভুক্তভোগীদের মনেও।
ইপিজেডের পাশের গ্রামগুলোর এই দূষণ নিয়ে কোনো তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে নেই বলে স্বীকার করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর। এসব গ্রামে কোনো পরিদর্শক দল যায়নি বলেও জানান তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইপিজেডে কেন্দ্রীয় ইটিপি চালু আছে। অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইটিপি ঠিকমতো চালু থাকে কি না, সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করি।’ তবে তা ঠিকমতো হয় না স্বীকার করে তিনি এর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলের সংকটকে দায়ী করেন।
No comments