দেশে মানবাধিকার বলে কিছু নেইঃ খালেদা জিয়া
দেশে মানবাধিকার নেই বলে অভিযোগ
করেছেন ১৯ দলীয় জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বলেছেন,
সারাদেশে প্রতিনিয়ত মানুষ খুন-গুম হচ্ছে। জোর করে ক্ষমতায় বসে সরকার
সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিচ্ছে আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে পুরছে। আমাদের
প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ৫০-৬০টি মামলা। অথচ এ সরকার ৩০ জন
ফাঁসির আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে।
দেশে এখন খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসের কারণে মানুষ টিকতে পারছে না। কোন সন্ত্রাসীকে ধরা হচ্ছে না। অবৈধ সরকার মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করছে। সারা দুনিয়া বলছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। আমাদের কাছে প্রতিটি গুম-খুনের হিসাব আছে। একদিন জবাব দিতে হবে। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত ঢাকা বারের নবনির্বাচিত কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়। বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। তারা স্বাধীনভাবে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। সরকার থেকে তাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সরকারের সময়ে আমরা কখনও বিচার বিভাগকে নির্দেশ দেয়নি। আজকে বিচার বিভাগ আওয়ামী লীগের হাতে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত। দলীয়করণের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। প্রশাসন বলতে কিছু নেই। কে কতটা আওয়ামী লীগ তা দেখেই জনপ্রশাসনে পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত ও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। র্যাব-পুলিশকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার বিরোধী দলের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীর মতো ব্যবহারের পরিণতি ভাল হবে না। যতই জুলুম চালাবে মানুষ ততই বিপক্ষে যাবে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার বলে- আমরা ট্রেন মিস করেছি। আমরা তো বলি- সেদিন কোন ভোটই হয়নি। আমাদের আহ্বানে জনগণ ভোটকেন্দ্রেই যায়নি। জনগণ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। এ সময় তিনি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ছবি দেখিয়ে বলেন, সেদিন জনগণ নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। ভোট কেন্দ্রে মানুষের বদলে গেছে একটি কুকুর। সরকারের উচিত সে কুকুরকে খুঁজে বের করে পুরস্কার দেয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তাই এ সরকার অবৈধ। এ সংসদও অবৈধ। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই একটি জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না। যে নির্বাচনে ৫৭টি কেন্দ্রে কোন ভোটই পড়েনি। বিদেশীরাও ঘুরে ঘুরে দেখেছে, দেশে কোথাও নির্বাচন হয়নি। তাহলে তারা কিভাবে নিজেদের নির্বাচিত দাবি করে? প্রতিদ্বন্দ্বীই পেলো না নির্বাচন কোথায় হলো? ভোটকেন্দ্রে কোন ভোট পড়েনি। ১৯-দলীয় জোটের মানুষ ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেই ভোটকেন্দ্রে মানুষ যাননি। এটা হলো নীরব প্রত্যাখ্যান। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নির্বাচনে না গিয়ে সঠিক কাজটি করেছি। আওয়ামী লীগের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না- তা দেশবাসী ৫ই জানুয়ারি দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা নির্বাচনের ট্রেন বিএনপি মিস করেনি। আওয়ামী লীগ ভুল ট্রেনে উঠেছে। তাই ট্রেন লাইন থেকে পড়ে গেছে। এখন সেই ট্রেনকে ক্রেন দিয়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারা বলেন- গোপালিরা নাকি কপালি হয়। হায়রে কপালি। গোপালিকে এখন ক্রেন দিয়ে টেনে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সংসদে প্রকৃত বিরোধী দল নেই, আছে গৃহপালিত বিরোধী দল। বিরোধী দল থেকে আবার মন্ত্রীও হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের করের টাকায় অনির্বাচিত লোকজন সংসদে বসে আজেবাজে কথা বলছে। এটা চলতে পারে না। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার এখন একঘরে হয়ে পড়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গায়ের জোরে সরকার গঠন করে কারও কাছে বৈধতা পায়নি এ সরকার। দেশের জনগণ তো বটেই কোন দেশই এ অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়নি। আমরা বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছি না। বৈধতার জন্য এখন প্রতিদিন বিদেশে দূত পাঠাচ্ছে সরকার। কিন্তু বিদেশীরা বলছে, বাংলাদেশে তো কোন নির্বাচনই হয়নি। তোমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। আমরা তোমাদের বৈধতা দেবো না। যত দ্রুত সম্ভব তোমাদের দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করো। তিনি বলেন, দেরি হলে এ সরকারকে বেশি মাশুল দিতে হবে। কারণ জনগণ এখন নির্বাচনে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সারাদেশে যত নির্বাচন হচ্ছে সবখানে বিএনপি সমর্থিতরা বিজয়ী হচ্ছেন। এ বিজয়ের কারণ আমাদের ঐক্য। সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের লোকজনের তাণ্ডবের পরও বেশির ভাগ জায়গায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হচ্ছে। নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কেউ ভোট দিতে যাচ্ছে না। এ জন্য কেন্দ্র দখল করে পোলিং এজেন্ট, পোলিং অফিসার মিলে সিল মারছে। সিল মেরে ভোটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। তারপরও জনগণ সুযোগ যেখানে পেয়েছে সেখানে প্রতিবাদ করেছে। তিনি বলেন, সঠিকভাবে উপজেলা নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ গুটি কয়েকটি উপজেলায়ও জয় পেতো না। গতকাল এক ছবিতে দেখা গেছে, র্যাব আওয়ামী লীগেরই এক বিদ্রোহী প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। বিদ্রোহী হলেও তারও কিন্তু নির্বাচনের অধিকার আছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনেও এ ঐক্য ধরে রেখে বিজয়ী হতে হবে। এর মাধ্যমে হাইকোর্টে হামলার জবাব দিতে হবে। ঢাকা বারের নির্বাচনে জিতিয়ে দেখিয়ে দেবেন, শিক্ষিত সমাজ আমাদের সঙ্গেই আছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতই নির্যাতন করবেন ততই জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন। জনগণের কাছে ততই একের পর এক শাস্তি পেতে থাকবেন। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি দুর্বল হয়নি। বিএনপি শক্তিশালী হয়েছে। সারা দেশে বেশির ভাগ জেলা বারের নির্বাচনে আমরা জিতেছি। ঢাকায় বিএনপি সমর্থিতরা এত বেশি পদে আগে আর কখনও জিতেনি। বিএনপি শক্তিশালী আছে, আরও শক্তিশালী হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। দেশের মানুষ গ্যাস, বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, আবার দাম বাড়ানো হচ্ছে। কার স্বার্থে এ দাম বৃদ্ধি। দলীয় লোকজনকে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দেয়া হয়েছে, তাদের ভর্তুকি দেয়ার জন্য জনগণের ঘাড়ে মুল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপানো হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির ভাগ পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারাও। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব পণ্যের দাম বাড়বে। সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি জনগণের স্বার্থে বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া বলেন, সমপ্রতি মিয়ানমারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন- তিস্তার পানি দিতে পারবে না। তিস্তা চুক্তি হবে না। তিনি বলেন, দেশে সীমান্ত হত্যা অবাধে চলছে। কিন্তু সরকার কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না। জনবিচ্ছিন্ন দুর্বল সরকার প্রতিবাদ করবেই বা কি করে? তিনি বলেন, চুক্তি করে করিডোর দেয়া হচ্ছে কিন্তু ভারত থেকে আমরা কি পেয়েছি? আওয়ামী লীগকে সমর্থন ছাড়া ভারত আমাদের আর কিছুই দেয়নি। তিনি বলেন, তিস্তার পানি পাবো না, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না আমরা কিছুই পাবো না। পানি না পেলে করিডোর চুক্তি হতে পারে না। আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের আরও প্রতিবাদ করতে হবে। যারা দেশপ্রেমিক কিন্তু আওয়ামী লীগ করেন তাদেরও নানাভাবে দেশরক্ষায় প্রতিবাদ করতে হবে। দেশরক্ষার আন্দোলন করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন করতে হবে। বিরোধী জোটের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, সরকার এত ভয় পায়! আমরা কোন কর্মসূচি দিলেই পালন করতে দেয় না। এমনকি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলা দলকে র্যালি করতে দেয়নি। বর্তমান সরকারকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত অবৈধ সরকার আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাংক লুট করেছে। দলীয় লোকদের একের পর এক নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। তারা ঋণ করে ব্যাংক খুলছে। তিনি বলেন, কথাগুলো পুরনো। কিন্তু বারবার এসব কথা বলতে হবে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিতে দেশ ভরে গেছে। তারা হল-মার্ক, বিছমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনিসহ বড় বড় দুর্নীতি করেছে। পদ্মা সেতু দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ বছরে দেশে কোন বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি। তারা গর্ব করে বলে রিজার্ভ বেড়েছে। বিনিয়োগ না হলে টাকা তো অলস পড়ে থাকবেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে এখন বিদেশী শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বলে দিয়েছে তারা বাংলাদেশ থেকে কোন শ্রমিক নেবে না। মালয়েশিয়াও তাই বলেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে দেশে কোন উন্নতি হবে না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মিয়ার পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, লুৎফে আলম, ফজলুর রহমান খান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, বোরহান উদ্দিন, আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান, গোলাম মোস্তফা খান, ইকবাল হোসেন, আরফান উদ্দিন খান, খন্দকার দিদারুল ইসলাম, কামাল উদ্দিন, শামীমা আখতার শাম্মী ও আব্বাস উদ্দিন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকাল সোয়া চারটায় খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মোহসিন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেউদ্দিন জসীমসহ সমিতির নেতারা শুভেচ্ছা জানান।
দেশে এখন খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসের কারণে মানুষ টিকতে পারছে না। কোন সন্ত্রাসীকে ধরা হচ্ছে না। অবৈধ সরকার মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করছে। সারা দুনিয়া বলছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। আমাদের কাছে প্রতিটি গুম-খুনের হিসাব আছে। একদিন জবাব দিতে হবে। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত ঢাকা বারের নবনির্বাচিত কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়। বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। তারা স্বাধীনভাবে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। সরকার থেকে তাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সরকারের সময়ে আমরা কখনও বিচার বিভাগকে নির্দেশ দেয়নি। আজকে বিচার বিভাগ আওয়ামী লীগের হাতে নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত। দলীয়করণের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। প্রশাসন বলতে কিছু নেই। কে কতটা আওয়ামী লীগ তা দেখেই জনপ্রশাসনে পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত ও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। র্যাব-পুলিশকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার বিরোধী দলের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীর মতো ব্যবহারের পরিণতি ভাল হবে না। যতই জুলুম চালাবে মানুষ ততই বিপক্ষে যাবে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার বলে- আমরা ট্রেন মিস করেছি। আমরা তো বলি- সেদিন কোন ভোটই হয়নি। আমাদের আহ্বানে জনগণ ভোটকেন্দ্রেই যায়নি। জনগণ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। এ সময় তিনি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ছবি দেখিয়ে বলেন, সেদিন জনগণ নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। ভোট কেন্দ্রে মানুষের বদলে গেছে একটি কুকুর। সরকারের উচিত সে কুকুরকে খুঁজে বের করে পুরস্কার দেয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তাই এ সরকার অবৈধ। এ সংসদও অবৈধ। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই একটি জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না। যে নির্বাচনে ৫৭টি কেন্দ্রে কোন ভোটই পড়েনি। বিদেশীরাও ঘুরে ঘুরে দেখেছে, দেশে কোথাও নির্বাচন হয়নি। তাহলে তারা কিভাবে নিজেদের নির্বাচিত দাবি করে? প্রতিদ্বন্দ্বীই পেলো না নির্বাচন কোথায় হলো? ভোটকেন্দ্রে কোন ভোট পড়েনি। ১৯-দলীয় জোটের মানুষ ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেই ভোটকেন্দ্রে মানুষ যাননি। এটা হলো নীরব প্রত্যাখ্যান। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নির্বাচনে না গিয়ে সঠিক কাজটি করেছি। আওয়ামী লীগের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না- তা দেশবাসী ৫ই জানুয়ারি দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা নির্বাচনের ট্রেন বিএনপি মিস করেনি। আওয়ামী লীগ ভুল ট্রেনে উঠেছে। তাই ট্রেন লাইন থেকে পড়ে গেছে। এখন সেই ট্রেনকে ক্রেন দিয়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারা বলেন- গোপালিরা নাকি কপালি হয়। হায়রে কপালি। গোপালিকে এখন ক্রেন দিয়ে টেনে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সংসদে প্রকৃত বিরোধী দল নেই, আছে গৃহপালিত বিরোধী দল। বিরোধী দল থেকে আবার মন্ত্রীও হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের করের টাকায় অনির্বাচিত লোকজন সংসদে বসে আজেবাজে কথা বলছে। এটা চলতে পারে না। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার এখন একঘরে হয়ে পড়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গায়ের জোরে সরকার গঠন করে কারও কাছে বৈধতা পায়নি এ সরকার। দেশের জনগণ তো বটেই কোন দেশই এ অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়নি। আমরা বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছি না। বৈধতার জন্য এখন প্রতিদিন বিদেশে দূত পাঠাচ্ছে সরকার। কিন্তু বিদেশীরা বলছে, বাংলাদেশে তো কোন নির্বাচনই হয়নি। তোমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। আমরা তোমাদের বৈধতা দেবো না। যত দ্রুত সম্ভব তোমাদের দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করো। তিনি বলেন, দেরি হলে এ সরকারকে বেশি মাশুল দিতে হবে। কারণ জনগণ এখন নির্বাচনে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সারাদেশে যত নির্বাচন হচ্ছে সবখানে বিএনপি সমর্থিতরা বিজয়ী হচ্ছেন। এ বিজয়ের কারণ আমাদের ঐক্য। সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের লোকজনের তাণ্ডবের পরও বেশির ভাগ জায়গায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হচ্ছে। নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কেউ ভোট দিতে যাচ্ছে না। এ জন্য কেন্দ্র দখল করে পোলিং এজেন্ট, পোলিং অফিসার মিলে সিল মারছে। সিল মেরে ভোটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। তারপরও জনগণ সুযোগ যেখানে পেয়েছে সেখানে প্রতিবাদ করেছে। তিনি বলেন, সঠিকভাবে উপজেলা নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ গুটি কয়েকটি উপজেলায়ও জয় পেতো না। গতকাল এক ছবিতে দেখা গেছে, র্যাব আওয়ামী লীগেরই এক বিদ্রোহী প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। বিদ্রোহী হলেও তারও কিন্তু নির্বাচনের অধিকার আছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনেও এ ঐক্য ধরে রেখে বিজয়ী হতে হবে। এর মাধ্যমে হাইকোর্টে হামলার জবাব দিতে হবে। ঢাকা বারের নির্বাচনে জিতিয়ে দেখিয়ে দেবেন, শিক্ষিত সমাজ আমাদের সঙ্গেই আছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতই নির্যাতন করবেন ততই জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন। জনগণের কাছে ততই একের পর এক শাস্তি পেতে থাকবেন। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি দুর্বল হয়নি। বিএনপি শক্তিশালী হয়েছে। সারা দেশে বেশির ভাগ জেলা বারের নির্বাচনে আমরা জিতেছি। ঢাকায় বিএনপি সমর্থিতরা এত বেশি পদে আগে আর কখনও জিতেনি। বিএনপি শক্তিশালী আছে, আরও শক্তিশালী হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। দেশের মানুষ গ্যাস, বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, আবার দাম বাড়ানো হচ্ছে। কার স্বার্থে এ দাম বৃদ্ধি। দলীয় লোকজনকে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দেয়া হয়েছে, তাদের ভর্তুকি দেয়ার জন্য জনগণের ঘাড়ে মুল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপানো হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির ভাগ পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারাও। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব পণ্যের দাম বাড়বে। সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি জনগণের স্বার্থে বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া বলেন, সমপ্রতি মিয়ানমারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন- তিস্তার পানি দিতে পারবে না। তিস্তা চুক্তি হবে না। তিনি বলেন, দেশে সীমান্ত হত্যা অবাধে চলছে। কিন্তু সরকার কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না। জনবিচ্ছিন্ন দুর্বল সরকার প্রতিবাদ করবেই বা কি করে? তিনি বলেন, চুক্তি করে করিডোর দেয়া হচ্ছে কিন্তু ভারত থেকে আমরা কি পেয়েছি? আওয়ামী লীগকে সমর্থন ছাড়া ভারত আমাদের আর কিছুই দেয়নি। তিনি বলেন, তিস্তার পানি পাবো না, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না আমরা কিছুই পাবো না। পানি না পেলে করিডোর চুক্তি হতে পারে না। আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের আরও প্রতিবাদ করতে হবে। যারা দেশপ্রেমিক কিন্তু আওয়ামী লীগ করেন তাদেরও নানাভাবে দেশরক্ষায় প্রতিবাদ করতে হবে। দেশরক্ষার আন্দোলন করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন করতে হবে। বিরোধী জোটের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, সরকার এত ভয় পায়! আমরা কোন কর্মসূচি দিলেই পালন করতে দেয় না। এমনকি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলা দলকে র্যালি করতে দেয়নি। বর্তমান সরকারকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত অবৈধ সরকার আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাংক লুট করেছে। দলীয় লোকদের একের পর এক নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। তারা ঋণ করে ব্যাংক খুলছে। তিনি বলেন, কথাগুলো পুরনো। কিন্তু বারবার এসব কথা বলতে হবে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিতে দেশ ভরে গেছে। তারা হল-মার্ক, বিছমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনিসহ বড় বড় দুর্নীতি করেছে। পদ্মা সেতু দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ বছরে দেশে কোন বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি। তারা গর্ব করে বলে রিজার্ভ বেড়েছে। বিনিয়োগ না হলে টাকা তো অলস পড়ে থাকবেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে এখন বিদেশী শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বলে দিয়েছে তারা বাংলাদেশ থেকে কোন শ্রমিক নেবে না। মালয়েশিয়াও তাই বলেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে দেশে কোন উন্নতি হবে না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মিয়ার পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, লুৎফে আলম, ফজলুর রহমান খান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, বোরহান উদ্দিন, আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান, গোলাম মোস্তফা খান, ইকবাল হোসেন, আরফান উদ্দিন খান, খন্দকার দিদারুল ইসলাম, কামাল উদ্দিন, শামীমা আখতার শাম্মী ও আব্বাস উদ্দিন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকাল সোয়া চারটায় খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মোহসিন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেউদ্দিন জসীমসহ সমিতির নেতারা শুভেচ্ছা জানান।
No comments