কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দুই নেত্রী by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
অনিবার্য
বাস্তবতায় আশির দশকে রাজনীতিতে আগমন ঘটে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত দুই শীর্ষ
নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার। বহু চড়াই-উতরাই ও ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেও
দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ধরে দুই নেত্রী বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। জনগণের
কাছে তারা যে কত জনপ্রিয়, তা কিছুটা অনুধাবন করা গেছে ১/১১’র জরুরি শাসনের
সময়। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দুই নেত্রী বহুবার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন
এবং এ চ্যালেঞ্জ থেকে বেরিয়েও এসেছেন। নেতৃত্বের এ গোধূলি বেলায় এসেও
চ্যালেঞ্জ তাদের পিছু ছাড়ছে না। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক
সরকার বাতিলের পর সামনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে তারা এখন চ্যালেঞ্জের
মুখে দাঁড়িয়ে। সারা জাতি তাকিয়ে আছে দুই নেত্রীর দিকে; তারা আলোচনায় বসবেন
এবং একটি পক্ষপাতহীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বের করবেন, যা এ দেশের
প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষের দাবি। আশা করি, পরিপক্বতা ও বিচক্ষণতা দিয়ে এ
চ্যালেঞ্জ থেকেও তারা বেরিয়ে আসবেন এবং গণতন্ত্রের দীর্ঘ পথচলায় সৃষ্টি
করবেন ইতিহাস। দুই নেত্রীর শাসনের সবচেয়ে বড় দিক হল, বাংলাদেশের মানুষ
পৃথিবীর বুকে গর্ব করে বলতে পারে, আমরা চারটি নির্বাচিত সরকার পেয়েছি এবং
নির্বাচিত সরকার দ্বারাই আমরা শাসিত হচ্ছি। ১৯৯১ সালের পর জনগণের ভোটে
চারটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হয়েছে, যা তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে একটি অনন্য
রেকর্ড। এর ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত
হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৯১’র নির্বাচিত সরকার কৃষি ও শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ
গুরুত্ব দিয়েছে। ওই সময় জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া
হয়েছে। তাতে গ্রামে-গ্রামে কাঁচা স্কুল পাকা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা
বাধ্যতামূলক হয়; শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু হয়, চালু হয় মেয়েদের
অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি। ফলে নারী শিক্ষায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।
অন্যদিকে কৃষককে উৎপাদনে উৎসাহিত করতে আসল ও সুদসহ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত
কৃষি লোন মওকুফ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম কমানো হয়;
তাছাড়া বাজেটে ব্যাপকভাবে কমানো হয় কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর আমদানি শুল্ক। ফলে
কৃষি উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে এনজিও কর্মকাণ্ডকে
ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়। ফলে ক্ষুদ্রঋণ, স্বাস্থসেবা, সুপেয় পানি ও
স্যানিটেশনসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নতি হয়।
উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা পরবর্তী সব নির্বাচিত সরকার অব্যাহত রাখে। ফলে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যবস্থা বদলে গেছে, বদলে গেছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি উৎপাদনের চিত্র। নারী শিক্ষায় উপমহাদেশে বাংলাদেশ আজ উদাহরণ। উদাহরণ ক্ষুদ্রঋণ ও শিশুমৃত্যু হারের ক্ষেত্রেও। এটি শুধু কথার কথা নয়, নজর কেড়েছে বিশ্বের। এর কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে দুই নেত্রীর দুই যুগের গণতান্ত্রিক শাসন। এ ধারা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব দুই নেত্রীর; বস্তুত এখানেই তাদের রাজনৈতিক সাফল্য লুক্কায়িত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যা কেবল দলনিরপেক্ষ সরকারের দ্বারাই সম্ভব।
কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলে মানুষ মনে করে। শুধু তাই নয়, দেশ আজ চরম সংকটে দাঁড়িয়ে। এ সংকট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে; দেশে এক অস্থির, অশান্ত ও বেদনাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঝরছে রক্ত, মরছে মানুষ; ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, বিধ্বস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি ও শিক্ষাসহ জনজীবনের অন্যসব কর্মকাণ্ড। ২৫ অক্টোবরের পর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে! রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ; জনগণকে হত্যা করে কোনো নেতৃত্ব টিকে থাকতে পারে না। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দুই নেত্রী! এ খাদে পড়লে ওঠা অসম্ভব। সময় এখনও আছে- বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে ত্যাগ করতে হবে ক্ষমতা। পদ আঁকড়ে থাকার চেয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়া শ্রেয়। একতরফা কোনো নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হবে চরম আত্মঘাতী। জীবনে যা অর্জিত হয়েছে, সব যাবে। একজনের গেলে অন্যজনেরও যাবে স্বাভাবিক নিয়মে। কারণ যতই আদর্শগত পার্থক্য থাকুক, নেতৃত্ব একে অপরের পরিপূরক; একজনকে ছাড়া অন্যজনের জীবন অর্থহীন।
একতরফা কোনো নির্বাচনের পরিবেশ দেশে এখন আর নেই। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় দেশে অনেক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। মানুষ যার যার ভোট নিজে দিতে শিখেছে। প্রায় ৯ কোটি ভোটারের ছবিসহ পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে, যা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। এখন ইচ্ছা করলেও একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারেন না বা দেয়ার পরিবেশ নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যম বহুদূর এগিয়েছে। বলা যায়, একটি বিশ্বমানের গণমাধ্যম বাংলাদেশে কাজ করছে, যা মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট। একে ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির নেই।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যেই যে কোনো খবর সম্প্রচার হয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। তাই নির্বাচনে জালিয়াতি বা ভোট ডাকাতি করে কেউ পার পাবে না। ফুটেজ থেকে যাবে গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে; এ ভয়ে নির্বাচনে জালিয়াতি বা ভোট ডাকাতি করতে কেউ উৎসাহিত হবে না। সুতরাং একতরফা নির্বাচনের কোনো চিন্তা থাকলে তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন। ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, একজন সাধারণ মানুষ ভুল করলে এর খেসারত তিনি নিজে অথবা তার পরিবার দিয়ে থাকে। কিন্তু একজন রাজনীতিক যদি ভুল করেন বা ভুল সিদ্ধান্ত নেন, এর খেসারত দিতে হয় একটি জাতি অথবা রাষ্ট্রকে। তাই রাজনীতিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভেবেচিন্তে, ঠাণ্ডা মাথায়।
আগামী জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নির্ভরশীল। বাংলাদেশ বিশ্বে কোন মর্যাদায় আসীন হবে, তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। এ নির্বাচন একতরফা করার চিন্তা করা প্রকারান্তরে দেশের অসীম সম্ভাবনা ধ্বংস করার শামিল। দেশ ও জনগণের ভালো চাইলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা করতে হবে।
সংবিধানের দোহাই দেয়া কোনো নেতৃত্বের জন্য মানানসই নয়। কেননা সংবিধান মানুষের জন্য, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সংবিধান, আইন সব কিছুই পরিবর্তন সম্ভব হয়, যখন নেতৃত্ব এক হয়। মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা নেতৃত্বের কাজ নয়। এখন দুই নেত্রীর এক হওয়ার সময়, সময় দেশপ্রেম জাগ্রত করার; সময় বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার। বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছে, আমেরিকা এগিয়ে এসেছে; এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব বিশ্ব, চীন, ভারত, কানাডা ও অন্য সব রাষ্ট্র। এক কথায়, এসব দেশ বাংলাদেশের ভালো চায়; বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতি অব্যাহত রাখার স্বার্থেই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে এসব দেশ এগিয়ে এসেছে। এসব দেশের উপলব্ধিতে হয়তো এসেছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব দেশ একটি পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকদের পরামর্শ দিয়েছে। সুতরাং দুই নেত্রীর উচিত এসব দেশের আবেগের মূল্য দেয়া এবং দ্রুত সংলাপে বসে সংকটের সমাধান করা।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা পরবর্তী সব নির্বাচিত সরকার অব্যাহত রাখে। ফলে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যবস্থা বদলে গেছে, বদলে গেছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি উৎপাদনের চিত্র। নারী শিক্ষায় উপমহাদেশে বাংলাদেশ আজ উদাহরণ। উদাহরণ ক্ষুদ্রঋণ ও শিশুমৃত্যু হারের ক্ষেত্রেও। এটি শুধু কথার কথা নয়, নজর কেড়েছে বিশ্বের। এর কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে দুই নেত্রীর দুই যুগের গণতান্ত্রিক শাসন। এ ধারা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব দুই নেত্রীর; বস্তুত এখানেই তাদের রাজনৈতিক সাফল্য লুক্কায়িত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যা কেবল দলনিরপেক্ষ সরকারের দ্বারাই সম্ভব।
কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলে মানুষ মনে করে। শুধু তাই নয়, দেশ আজ চরম সংকটে দাঁড়িয়ে। এ সংকট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে; দেশে এক অস্থির, অশান্ত ও বেদনাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঝরছে রক্ত, মরছে মানুষ; ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, বিধ্বস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি ও শিক্ষাসহ জনজীবনের অন্যসব কর্মকাণ্ড। ২৫ অক্টোবরের পর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে! রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ; জনগণকে হত্যা করে কোনো নেতৃত্ব টিকে থাকতে পারে না। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দুই নেত্রী! এ খাদে পড়লে ওঠা অসম্ভব। সময় এখনও আছে- বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে ত্যাগ করতে হবে ক্ষমতা। পদ আঁকড়ে থাকার চেয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়া শ্রেয়। একতরফা কোনো নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হবে চরম আত্মঘাতী। জীবনে যা অর্জিত হয়েছে, সব যাবে। একজনের গেলে অন্যজনেরও যাবে স্বাভাবিক নিয়মে। কারণ যতই আদর্শগত পার্থক্য থাকুক, নেতৃত্ব একে অপরের পরিপূরক; একজনকে ছাড়া অন্যজনের জীবন অর্থহীন।
একতরফা কোনো নির্বাচনের পরিবেশ দেশে এখন আর নেই। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় দেশে অনেক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। মানুষ যার যার ভোট নিজে দিতে শিখেছে। প্রায় ৯ কোটি ভোটারের ছবিসহ পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে, যা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। এখন ইচ্ছা করলেও একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারেন না বা দেয়ার পরিবেশ নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যম বহুদূর এগিয়েছে। বলা যায়, একটি বিশ্বমানের গণমাধ্যম বাংলাদেশে কাজ করছে, যা মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট। একে ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির নেই।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যেই যে কোনো খবর সম্প্রচার হয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। তাই নির্বাচনে জালিয়াতি বা ভোট ডাকাতি করে কেউ পার পাবে না। ফুটেজ থেকে যাবে গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে; এ ভয়ে নির্বাচনে জালিয়াতি বা ভোট ডাকাতি করতে কেউ উৎসাহিত হবে না। সুতরাং একতরফা নির্বাচনের কোনো চিন্তা থাকলে তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন। ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, একজন সাধারণ মানুষ ভুল করলে এর খেসারত তিনি নিজে অথবা তার পরিবার দিয়ে থাকে। কিন্তু একজন রাজনীতিক যদি ভুল করেন বা ভুল সিদ্ধান্ত নেন, এর খেসারত দিতে হয় একটি জাতি অথবা রাষ্ট্রকে। তাই রাজনীতিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভেবেচিন্তে, ঠাণ্ডা মাথায়।
আগামী জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নির্ভরশীল। বাংলাদেশ বিশ্বে কোন মর্যাদায় আসীন হবে, তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। এ নির্বাচন একতরফা করার চিন্তা করা প্রকারান্তরে দেশের অসীম সম্ভাবনা ধ্বংস করার শামিল। দেশ ও জনগণের ভালো চাইলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা করতে হবে।
সংবিধানের দোহাই দেয়া কোনো নেতৃত্বের জন্য মানানসই নয়। কেননা সংবিধান মানুষের জন্য, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সংবিধান, আইন সব কিছুই পরিবর্তন সম্ভব হয়, যখন নেতৃত্ব এক হয়। মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা নেতৃত্বের কাজ নয়। এখন দুই নেত্রীর এক হওয়ার সময়, সময় দেশপ্রেম জাগ্রত করার; সময় বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার। বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছে, আমেরিকা এগিয়ে এসেছে; এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব বিশ্ব, চীন, ভারত, কানাডা ও অন্য সব রাষ্ট্র। এক কথায়, এসব দেশ বাংলাদেশের ভালো চায়; বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতি অব্যাহত রাখার স্বার্থেই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে এসব দেশ এগিয়ে এসেছে। এসব দেশের উপলব্ধিতে হয়তো এসেছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব দেশ একটি পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকদের পরামর্শ দিয়েছে। সুতরাং দুই নেত্রীর উচিত এসব দেশের আবেগের মূল্য দেয়া এবং দ্রুত সংলাপে বসে সংকটের সমাধান করা।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
No comments