অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করুন by হাসান কামরুল
প্রাকৃতিক
গ্যাস নিয়ে চক্রান্তে মেতে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকার কিছুতেই
তাদের বাগে আনতে পারছে না। বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা গাজীপুর,
নারায়ণগঞ্জকে ঘিরে চক্রটি মরিয়া হয়ে উঠেছে। চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। আর অবৈধ
সংযোগ দেয়ার নামে সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের
টাকা। প্রতিটি সংযোগের জন্য ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে ২৫ হাজার অবৈধ সংযোগ দেয়ার জন্য আড়াই
ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গ্যাস পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০ হাজারের বেশি
বাসাবাড়িতে গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের আগে বাড়ি বাড়ি
গ্যাস সরবরাহের কথা থাকলেও এখনও অধিকাংশ বাড়িতে গ্যাস সাপ্লাই দেয়া হয়নি। এ
নিয়ে গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী
সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রোষানলের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও শিগগির এ
নিয়ে জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, বাপেক্স, সিলেট গ্যাসফিল্ডের অনেক কর্মকর্তাই এ অবৈধ সংযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। যার কারণে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকেও তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি মাসে পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ২ হাজার ৩১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও শিল্প-কারখানায় কৃত্রিম গ্যাস সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনেক কারখানা গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। কারখানার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো কারখানা তাদের উৎপাদন টার্গেট ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। এ অবস্থায় শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ হওয়া তো দূরে থাক, চলমান কারখানাগুলোই আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। অনেক বিদেশী ক্রেতা ঠিক সময়ে ডেলিভারি না পাওয়ায় সাপ্লাই অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, বর্তমানে ২৩টি গ্যাসক্ষেত্রের ৮৪টি কূপ থেকে প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৩১০ মিলিয়ন ঘনফুট। শিল্প কারখানার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৫০০ ফুট। উৎপাদন ও চাহিদার বিপরীতে শর্টেজ মাত্র ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, দেশব্যাপী গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার কারণ কী? শিল্প-কারখানার পাশাপাশি গ্যাসের চাপ কমে গেছে গৃহস্থালী রান্নার চুলা ও সিএনজি স্টেশনে। ফলে সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যায় দিনভর।
তিতাসে রয়েছে শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের এত ক্ষমতা যে, তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে পারে। তিতাসের এ সিন্ডিকেটের কাছে সরকারও যেন অসহায়। বিভিন্ন সময়ে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি। তিতাসের একজন মিটার রিডারের ঢাকায় সাতটি বাড়ির গল্পও সবার জানা। ১/১১-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেকে ট্রুথ কমিশনে গিয়ে স্বীকারোক্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত দৃশ্যত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ সরকার আসার পর জুন ২০১০ থেকে জুন ২০১৩ পর্যন্ত নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতেই এ নিষেধাজ্ঞা। তিন বছর পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে বাসাবাড়িতে নতুন সংযোগ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অফিসিয়ালি নিষেধাজ্ঞা পিরিয়ডে চলে অবৈধ সংযোগ। পেট্রোবাংলার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে ভয়ংকর এক রাজনৈতিক প্রভাবশালী বলয়ের অস্তিত্ব। যাদের নেতৃত্বে এমবারগো পিরিয়ডে প্রায় ৮৭ হাজার অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ অবৈধ গ্যাস দিয়ে প্রভাবশালী মহলটি পকেটস্থ করে কয়েক হাজার কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার তদন্তে তিতাসের সাবেক এমডি ও একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের নাম উঠে এসেছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ায় সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেনি। যদিও তিতাসের এমডিকে চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। যতটুকু জানা গেছে, দুদকের টেবিলে এ মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে তার ক্ষোভের কথা জানালেও তিতাসের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেননি। এখনও অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা ব্যবসা চলমান। সর্বশেষ এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ঢাকার আশপাশে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের নামে অবৈধ অর্থ কামানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই মহলটি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের নামে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। তিতাসের দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতায় শিল্প-কারখানাগুলোতে ছোট ছোট কমপ্রেসার বসিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস টেনে নিয়ে নিচ্ছে। অনুমতি না থাকার পরও সিএনজি স্টেশনগুলো যানবাহন ছাড়াও বোতলজাত করে গ্যাস বিক্রি করছে।
কিন্তু তিতাস বরাবরের মতো এবারও নীরব ভূমিকা পালন করছে। তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে যে তুলকালাম চলছে, তা বর্তমান এমডির কাছে জানতে চাইলে তিনি অপারগতার কথা জানান। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল ও ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
তবে গ্যাস সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের রয়েছে ভিন্নমত। তাদের মতে, হঠাৎ করে দেখা দেয়া এ সংকট কৃত্রিম। এটা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার যেখানে বাসাবাড়িতে সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে গ্যাসের সংকট নিছকই ষড়যন্ত্র। বর্তমান সরকারের আমলে এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ কোটি ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস উৎপাদন হয়েছে। পাইপলাইনে আরও বিপুলসংখ্যক গ্যাসের জোগান রয়েছে। তাহলে গ্যাসের চাপ কমবে কেন?
শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ না থাকায় তারা কারখানার জেনারেটর চালাতে পারছেন না। যেখানে মেইন লাইনে ১৫০ থেকে ২৫০ পিএসআই পর্যন্ত চাপ থাকে, সেখানে মাঝে মাঝে মাত্র ৮ থেকে ১০ পিএসআই চাপ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বহাল থাকে। ফলে কারখানার প্রডাকশন মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহক হয়রানির আশংকাকে অমূলক বলে অভিহিত করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের মতে, এখন এ সংযোগ অবৈধ হলেও একবার বাসাবাড়িতে গ্যাস পৌঁছে গেলে তা বন্ধ করার সুযোগ থাকবে না। তখন হয়তো গ্রাহকদের অবৈধ সংযোগ বৈধ করার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। তবে তাদের এ কথার সত্যতা পাওয়া গেছে ৮৭ হাজার অবৈধ সংযোগের ঘটনায়। কারণ ৮৭ হাজার অবৈধ সংযোগকে বৈধ করার জন্য সরকার জরিমানা আদায়সহ নির্দিষ্ট টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছিল এবং অনেকেই অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধে অবৈধ সংযোগকে বৈধ করে নিয়েছে।
দেশের অর্থনীতি গ্যাসনির্ভর। অর্থনীতির চাকা ঠিক রাখতে হলে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। অবৈধ সংযোগ পুরো গ্যাস সেক্টরকে ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কঠিন নজরদারি ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই পারে অবৈধ সংযোগ প্রতিরোধ করতে। নইলে এ সেক্টর নিয়ে জনমনে নানা সংশয় দেখা দেবে।
হাসান কামরুল : জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, বাপেক্স, সিলেট গ্যাসফিল্ডের অনেক কর্মকর্তাই এ অবৈধ সংযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। যার কারণে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকেও তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি মাসে পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ২ হাজার ৩১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও শিল্প-কারখানায় কৃত্রিম গ্যাস সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনেক কারখানা গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। কারখানার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো কারখানা তাদের উৎপাদন টার্গেট ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। এ অবস্থায় শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ হওয়া তো দূরে থাক, চলমান কারখানাগুলোই আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। অনেক বিদেশী ক্রেতা ঠিক সময়ে ডেলিভারি না পাওয়ায় সাপ্লাই অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, বর্তমানে ২৩টি গ্যাসক্ষেত্রের ৮৪টি কূপ থেকে প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৩১০ মিলিয়ন ঘনফুট। শিল্প কারখানার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৫০০ ফুট। উৎপাদন ও চাহিদার বিপরীতে শর্টেজ মাত্র ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, দেশব্যাপী গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার কারণ কী? শিল্প-কারখানার পাশাপাশি গ্যাসের চাপ কমে গেছে গৃহস্থালী রান্নার চুলা ও সিএনজি স্টেশনে। ফলে সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যায় দিনভর।
তিতাসে রয়েছে শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের এত ক্ষমতা যে, তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে পারে। তিতাসের এ সিন্ডিকেটের কাছে সরকারও যেন অসহায়। বিভিন্ন সময়ে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি। তিতাসের একজন মিটার রিডারের ঢাকায় সাতটি বাড়ির গল্পও সবার জানা। ১/১১-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেকে ট্রুথ কমিশনে গিয়ে স্বীকারোক্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত দৃশ্যত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ সরকার আসার পর জুন ২০১০ থেকে জুন ২০১৩ পর্যন্ত নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতেই এ নিষেধাজ্ঞা। তিন বছর পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে বাসাবাড়িতে নতুন সংযোগ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অফিসিয়ালি নিষেধাজ্ঞা পিরিয়ডে চলে অবৈধ সংযোগ। পেট্রোবাংলার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে ভয়ংকর এক রাজনৈতিক প্রভাবশালী বলয়ের অস্তিত্ব। যাদের নেতৃত্বে এমবারগো পিরিয়ডে প্রায় ৮৭ হাজার অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ অবৈধ গ্যাস দিয়ে প্রভাবশালী মহলটি পকেটস্থ করে কয়েক হাজার কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার তদন্তে তিতাসের সাবেক এমডি ও একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের নাম উঠে এসেছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ায় সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেনি। যদিও তিতাসের এমডিকে চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। যতটুকু জানা গেছে, দুদকের টেবিলে এ মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে তার ক্ষোভের কথা জানালেও তিতাসের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেননি। এখনও অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা ব্যবসা চলমান। সর্বশেষ এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ঢাকার আশপাশে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের নামে অবৈধ অর্থ কামানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই মহলটি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের নামে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। তিতাসের দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতায় শিল্প-কারখানাগুলোতে ছোট ছোট কমপ্রেসার বসিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস টেনে নিয়ে নিচ্ছে। অনুমতি না থাকার পরও সিএনজি স্টেশনগুলো যানবাহন ছাড়াও বোতলজাত করে গ্যাস বিক্রি করছে।
কিন্তু তিতাস বরাবরের মতো এবারও নীরব ভূমিকা পালন করছে। তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে যে তুলকালাম চলছে, তা বর্তমান এমডির কাছে জানতে চাইলে তিনি অপারগতার কথা জানান। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল ও ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
তবে গ্যাস সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের রয়েছে ভিন্নমত। তাদের মতে, হঠাৎ করে দেখা দেয়া এ সংকট কৃত্রিম। এটা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার যেখানে বাসাবাড়িতে সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে গ্যাসের সংকট নিছকই ষড়যন্ত্র। বর্তমান সরকারের আমলে এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ কোটি ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস উৎপাদন হয়েছে। পাইপলাইনে আরও বিপুলসংখ্যক গ্যাসের জোগান রয়েছে। তাহলে গ্যাসের চাপ কমবে কেন?
শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ না থাকায় তারা কারখানার জেনারেটর চালাতে পারছেন না। যেখানে মেইন লাইনে ১৫০ থেকে ২৫০ পিএসআই পর্যন্ত চাপ থাকে, সেখানে মাঝে মাঝে মাত্র ৮ থেকে ১০ পিএসআই চাপ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বহাল থাকে। ফলে কারখানার প্রডাকশন মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহক হয়রানির আশংকাকে অমূলক বলে অভিহিত করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের মতে, এখন এ সংযোগ অবৈধ হলেও একবার বাসাবাড়িতে গ্যাস পৌঁছে গেলে তা বন্ধ করার সুযোগ থাকবে না। তখন হয়তো গ্রাহকদের অবৈধ সংযোগ বৈধ করার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। তবে তাদের এ কথার সত্যতা পাওয়া গেছে ৮৭ হাজার অবৈধ সংযোগের ঘটনায়। কারণ ৮৭ হাজার অবৈধ সংযোগকে বৈধ করার জন্য সরকার জরিমানা আদায়সহ নির্দিষ্ট টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছিল এবং অনেকেই অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধে অবৈধ সংযোগকে বৈধ করে নিয়েছে।
দেশের অর্থনীতি গ্যাসনির্ভর। অর্থনীতির চাকা ঠিক রাখতে হলে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। অবৈধ সংযোগ পুরো গ্যাস সেক্টরকে ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কঠিন নজরদারি ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই পারে অবৈধ সংযোগ প্রতিরোধ করতে। নইলে এ সেক্টর নিয়ে জনমনে নানা সংশয় দেখা দেবে।
হাসান কামরুল : জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
No comments