সন্ত্রাসী-রাজনীতির মরণ ছোবল হাসিনা সরকার কী করবেন? by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
বিএনপি
ও জামায়াতের এখন ডেসপারেট অবস্থা মনে হয়। ১৮ দলীয় জোটের নামে তারা আবার
হরতালের ডাক দিয়েছে। তিন দিনের হরতাল। আজ ৪ নভেম্বর থেকে বুধবার ৬ নভেম্বর।
বাংলাদেশের মাটিতে সদ্য সমাপ্ত হরতালের রক্ত না শুকাতেই আবার হরতালের ডাক
দেয়া হল। এই হরতাল ভারতের গান্ধী যুগের জনসমর্থিত এবং জনগণের অংশ নেয়া
হরতাল নয়। এই হরতাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালের হরতালে সারাদেশ
স্বতঃস্ফূর্তভাবে অচল হয়ে যাওয়া নয়। শান্তিপূর্ণ অথচ অপ্রতিরোধ্য
জনসমাবেশের বিশাল তরঙ্গ নয়। বিএনপি-জামায়াতের এই হরতাল জনগণকে ভয় দেখিয়ে
ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা, গাড়ি-বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, নিরীহ পথচারী হত্যার
হরতাল। এটা আন্দোলন নয়, সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাসের বলি সাধারণ মানুষ। এই
হরতালের ডাক দেয়ার আগেই বিএনপিকে জানানো হয়েছিল, তাদের হরতালের সময়সীমার
মধ্যে ২০ লাখের মতো স্কুল ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা। হরতালের ফলে এই বিশাল
শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পারলে তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হবে। বিএনপি
নেতারা তার তোয়াক্কা করেননি। বলেছেন, পরীক্ষা হরতালের আওতামুক্ত রাখা হল।
এটা দেশের ২০ লাখ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে নিষ্ঠুর প্রতারণা। পরীক্ষার হল না হয়
হরতালের আওতামুক্ত রাখা হল কিন্তু পরীক্ষার হলে যাওয়া-আসার পথ?
শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে যাওয়া-আসার পথে আক্রান্ত হবে না, গুণ্ডাদের
বোমাবাজির শিকার হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
যত বড় কারণেই হরতাল ডাকা হোক না কেন, অ্যাম্বুলেন্স, মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি, ডাক্তার ও সাংবাদিকদের গাড়ি ইত্যাদি হরতালের আওতা থেকে মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতালে সভ্য জগতের এসব চিরাচরিত নিয়মকানুন কোনোটাই পালন করা হয় না, মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে হাসপাতালে, সেটিকে গতিরোধ করা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানো যায়নি। বস্তির কিশোরী মজুর বাপের জন্য ভাতের থালা হাতে তার কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। হরতালকারীদের বোমায় তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, একটা হাত জখম হয়েছে। বাসের নিরীহ কন্ডাক্টর থামানো বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অটোরিকশাচালক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মরেছে। টেলিভিশনের সংবাদকর্মীর পা বোমায় উড়ে গেছে। এসব আমার বানানো কথা নয়। বিএনপির ডাকা বিভিন্ন হরতালের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা। সবই মিডিয়ায় এসেছে। এসব বীভৎস ঘটনারই পুনরাবৃত্তি যে আজ সোমবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত ঘটানো হবে তাতে সন্দেহ নেই। হয়তো গতকাল থেকেই তা শুরু হয়ে গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের তো এখন নিয়ম হচ্ছে, হরতাল ডাকবে যেদিন থেকে তার আগের দিন থেকে গাড়ি-বাড়ি ভাঙতে শুরু করে অপ্রস্তুত সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। এ ধরনের বর্বরতা সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে বিরল।
আমি সত্তরের দশকের গোড়ায় কলকাতায় নকশাল সন্ত্রাসের মধ্যে বাস করেছি। আবার একই দশকের মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনে এসে বেশ কয়েক বছর আইআর বা আইরিশ সন্ত্রাসের মধ্যে বাস করেছি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যা ঘটছে এমন বর্বরতা ও অমানবিকতা দেখিনি। আবার এসব ঘটানো হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনীতির নামে। কলকাতায় চোখের সামনে নকশাল ও পুলিশের যুদ্ধ দেখেছি। এই যুদ্ধের ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে ট্রাম থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে পালিয়েছি। কিন্তু নকশালরা যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রামে আগুন দেয়নি। প্রাইভেট কারে হামলা চালায়নি। যুদ্ধ চলেছে পুলিশ ও নকশালের মধ্যে।
একবার কলকাতার মানিকতলায় বাড়ির ছাদের ওপর দাঁড়ানো নকশালদের কাটা রাইফেল হাতে নিচে স্টেনগানধারী সিআরপির (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ) যুদ্ধ দেখেছি। দু’একজন পথচারী তাতে আহত হয়নি তা নয়। কিন্তু পথচারীদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি। লন্ডনে আইআরএ সন্ত্রাসীরা তো যুদ্ধের নিয়মকানুন মানত। রাস্তায় ট্রেনে বা শপিংমলে বোমা রাখলে সঙ্গে সঙ্গে তারা তা টেলিফোনে কোনো সংবাদপত্র অফিসকে জানিয়ে দিত। সংবাদপত্র অফিস জানাত পুলিশকে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থল থেকে লোকাপসরণ শুরু করত। বোমা ফেটে দোকানপাটের ক্ষতি হতো। কোনো প্রাণহানি ঘটত না।
বাংলাদেশে জামায়াতি রাজনীতিতে মানবতা, শিশু ও নারীর প্রতি দায়িত্ববোধ, মসজিদ-মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা, ধর্র্মীয় সহিষ্ণুতা ও নৈতিকতা ইত্যাদির কোনো বালাই আছে বলে মনে হয় না। জামায়াতের সঙ্গে মিতালি হওয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতেও এসব নীতি-নৈতিকতা এখন অনুপস্থিত। আন্দোলনের নামে তাদের যৌথ সন্ত্রাসে বাংলাদেশে মানবতা এখন আর্ত। প্রতিপক্ষের রগকাটা, শিরকাটা ইত্যাদি নানা বর্বরতা এখন যুক্ত হয়েছে রাজনীতিতে। চলছে অবাধে নারী ও সংখ্যালঘু নিগ্রহ। ভাঙা হচ্ছে হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধবিহার। মসজিদও অবমাননার হাত থেকে বাঁচছে না। অনেক মসজিদকেই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ট্রেনিং কেন্দ্র বানানো হয়েছে। পীর-আউলিয়ার মাজারে (যেমন সিলেটের হজরত শাহজালালের মাজার) বোমা ফেলা হয়েছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলেও যা হয়নি। পবিত্র রমজান মাসেও হরতাল ডাকা হয়েছে। ঈদের নামাজে বোমা ফাটানো হয়েছে। নামাজি হত্যা করা হয়েছে। গত মে মাসে হেফাজতি তাণ্ডবের সময় তো ঢাকার বায়তুল মোকাররমে দোকান পোড়াতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানো হয়েছে। এটা গণআন্দোলন নয়, জনগণের অধিকার আদায়েরও যুদ্ধ নয়। এটা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যদি বিচার ও দণ্ড হতে পারে, তাহলে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য বর্তমান বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদেরও বিচার ও দণ্ড হওয়া উচিত। জওয়াহের লাল নেহেরুকে বলা হয় গণতান্ত্রিক ভারতের নির্মাতা। তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকেও টিকে থাকার জন্য কখনও কখনও যুদ্ধের পোশাক পরা দরকার, নইলে গণতন্ত্র কখনও কতগুলো নীতিবাক্য দ্বারা বাঁচতে পারে না।’
এ জন্যই নেহেরু উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনুসারী হয়েও ভারতে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি যখন ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হায়’ স্লোগান দিয়ে দেশটিতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সশস্ত্র পন্থায় সরকার উচ্ছেদের জন্য ভয়াবহ সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, তখন তিনি বিনাদ্বিধায় কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন এবং ব্যাপক ধরপাকড় দ্বারা শীর্ষ কমিউনিস্ট নেতাদের জেলে পুরেছিলেন।
এই নেহেরুই আবার কমিউনিস্ট পার্টি যখন ‘সশস্ত্র শ্রেণী সংগ্রামের’ নামে সন্ত্রাসের পথ অনুসরণের বদলে গণতান্ত্রিক পন্থায় (এমনকি সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে) রাজনীতি করার ঘোষণা দেয়, তখন তিনি শুধু কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেননি, বরং কমিউনিস্টদের নির্বাচনে জিতে কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় সরকার গঠন করতে দিয়েছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসে একটি ধনতান্ত্রিক কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় বসতে দেয়া এই প্রথম। এর কোনো দ্বিতীয় উদাহরণ নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে যা চলছে তা জনগণের দাবি-দাওয়া আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের বাহানায় সরকার উচ্ছেদের সশস্ত্র প্রচেষ্টা। এখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে হিন্দুদের দুর্গাদেবীর মতো কল্যাণমূর্তির সঙ্গে অসুরনাশিনী মূর্তিও ধারণ করতে হবে। হাসিনা সরকার আর কত গণতান্ত্রিক সংযম ও ধৈর্যের পরীক্ষা দেবে? জনগণকে আর কত অসুরদের হাতে নিত্য নির্যাতিত ও বধ হতে দেবে? জনগণের ধন-প্রাণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারলে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার ও প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠবে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলকে, এমনকি জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করার ঘোর বিরুদ্ধবাদী। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে হলেও (অন্তত ১০ বছরের জন্য) জামায়াতকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তাদের সব সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ হবে না। হবে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ। অতীত ভারতে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে নেহেরু দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখাননি। বর্তমান বাংলাদেশে হাসিনা যেন এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব না দেখান। পঁচাত্তরের ট্রাজেডি থেকে তিনি শিক্ষা নিন।
এর পর জামায়াত যদি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং নেপালের মাওবাদীদের মতো প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে, সংসদীয় রাজনীতিতে আস্থা প্রকাশ করে সংসদীয় পদ্ধতিতে দেশে তাদের ইসলামের শাসন প্রবর্তন করতে চায় এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে অবশ্যই তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের এমনকি ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিতে হবে। তবে হিংসাত্মক পন্থা ত্যাগ করার আগে নয়।
খালেদা জিয়ার বিএনপিকেও সরকারের কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দেয়া উচিত। জামায়াতকে বেআইনি ঘোষণার পরপরই বিএনপিকে এই বলে সতর্ক করে দেয়া উচিত যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সঙ্গে যদি তারা কোনো ধরনের সংস্রব রাখেন এবং তাদের অনুসৃত পন্থায় হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির চর্চা করতে চান, তাহলে তাদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকারকে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
সরকার অবিলম্বে এ ব্যাপারে সজাগ ও সক্রিয় হোন এবং জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত জানমাল ধ্বংসকারী এই দস্যুবৃত্তি বন্ধ করার পন্থা উদ্ভাবনের জন্য সব দলমতের, পেশার মানুষ এবং তাদের শীর্ষনেতাদের নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে বসুন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন ও সর্বদলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন দলের নেতাদের ডেকে বৈঠক করছেন। তা তিনি করুন। কিন্তু নানা বাহানায় নিত্যনিয়ত নিরীহ জনজীবনে যে ‘বর্গির হামলা’ চালানো হচ্ছে, তা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য সব দল ও সব পেশায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসুন।
এই বৈঠকে সুশীল সমাজ, মিডিয়াসহ সব পেশার শীর্ষনেতা এবং শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক নেতাদেরও ডাকুন। এমনকি ড. কামাল হোসেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রমুখকেও। তাদের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি দাবি আদায়ের পথ তো গণতান্ত্রিক আন্দোলন, টেরোরিজম নয়। এই টেরোরিজমের আসল উদ্দেশ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির গণতান্ত্রিক খোলসের আড়ালে সশস্ত্র সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার উচ্ছেদ। এই সরকার উচ্ছেদেরও আসল লক্ষ্য ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড বানচাল করা। দেশের সুশীল সমাজ, গণসমাজ কি চায়, দাবি আদায়ের আন্দোলনের খোলসের আড়ালে গণশত্র“রা সেই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণে সফল হোক?
হাসিনা সরকার কঠোর হোন। তোয়াজের রাজনীতি (চড়ষরপু ড়ভ ধঢ়ঢ়বধংবসবহঃ) ত্যাগ করুন। হেফাজতিদের তোয়াজ করে কি লাভ হয়েছে, তা তো চোখের সামনে প্রত্যক্ষ। আগেই বলেছি, বিএনপি-জামায়াত জোট এখন ডেসপারেট। বারবার হুমকি দিয়ে, চক্রান্ত চালিয়ে, আলটিমেটাম দিয়ে, টেরর ট্যাকটিস গ্রহণ করে তারা সফল হয়নি। বারবার পরাজিত হতে হয়েছে। সুতরাং শেষবারের মতো তাদের এই মরণ ছোবল। চার থেকে ছয় নভেম্বর পর্যন্ত হরতাল ডেকে নাগরিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি ছাড়া তারা যে অশ্বডিম্ব পাবেন, তা নিজেরাও জানেন। তারপর?
তারপর তারা দেশে অবরোধের ডাক দেবেন, অসহযোগ আন্দোলনে নামবেন এসব হুমকিও দিচ্ছেন। সরকারের তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিএনপি-জামায়াতের ডাকে দেশে অসহযোগ হবে, এ কথা পাগলে শুনলেও হাসবে। বিএনপি-জামায়াত নেতারাও এ কথা জানেন। তাই আলোচনার ডাক শুনেও তারা বেসামাল কথা বলেন। আবার কঠোর কর্মসূচির ডাক আসলে চূড়ান্ত পরাজয়ের আগে তাদের মরণ ছোবল। মনে ক্ষীণ আশা, যদি এই শেষ আঘাত দিয়ে ব্যর্থতা ও পরাজয় এড়ানো যায়। প্রাণী জগতেও দেখা যায়, কোনো হিংস্র প্রাণীও শিকারির হাতে বধ হওয়ার আগে আহত শরীর নিয়েও শিকারির ওপর শেষ মরণ আঘাত হানে।
সবশেষে একটি কথা আমার সহৃদয় পাঠকদের নিবেদন করছি। ‘নিরপেক্ষ’ তওবা সম্পাদকের পর নাকি তার দোসর তারকা সম্পাদক তার কাগজে জনমত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে দেখিয়েছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঠেকায় কে? আমার কথা, আগে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের ‘আন্দোলনে’ জয়ী হয়ে দেখাক! তারপরে তো নির্বাচনে জয়!
যত বড় কারণেই হরতাল ডাকা হোক না কেন, অ্যাম্বুলেন্স, মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি, ডাক্তার ও সাংবাদিকদের গাড়ি ইত্যাদি হরতালের আওতা থেকে মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতালে সভ্য জগতের এসব চিরাচরিত নিয়মকানুন কোনোটাই পালন করা হয় না, মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে হাসপাতালে, সেটিকে গতিরোধ করা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানো যায়নি। বস্তির কিশোরী মজুর বাপের জন্য ভাতের থালা হাতে তার কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। হরতালকারীদের বোমায় তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, একটা হাত জখম হয়েছে। বাসের নিরীহ কন্ডাক্টর থামানো বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অটোরিকশাচালক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মরেছে। টেলিভিশনের সংবাদকর্মীর পা বোমায় উড়ে গেছে। এসব আমার বানানো কথা নয়। বিএনপির ডাকা বিভিন্ন হরতালের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা। সবই মিডিয়ায় এসেছে। এসব বীভৎস ঘটনারই পুনরাবৃত্তি যে আজ সোমবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত ঘটানো হবে তাতে সন্দেহ নেই। হয়তো গতকাল থেকেই তা শুরু হয়ে গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের তো এখন নিয়ম হচ্ছে, হরতাল ডাকবে যেদিন থেকে তার আগের দিন থেকে গাড়ি-বাড়ি ভাঙতে শুরু করে অপ্রস্তুত সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। এ ধরনের বর্বরতা সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে বিরল।
আমি সত্তরের দশকের গোড়ায় কলকাতায় নকশাল সন্ত্রাসের মধ্যে বাস করেছি। আবার একই দশকের মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনে এসে বেশ কয়েক বছর আইআর বা আইরিশ সন্ত্রাসের মধ্যে বাস করেছি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যা ঘটছে এমন বর্বরতা ও অমানবিকতা দেখিনি। আবার এসব ঘটানো হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনীতির নামে। কলকাতায় চোখের সামনে নকশাল ও পুলিশের যুদ্ধ দেখেছি। এই যুদ্ধের ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে ট্রাম থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে পালিয়েছি। কিন্তু নকশালরা যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রামে আগুন দেয়নি। প্রাইভেট কারে হামলা চালায়নি। যুদ্ধ চলেছে পুলিশ ও নকশালের মধ্যে।
একবার কলকাতার মানিকতলায় বাড়ির ছাদের ওপর দাঁড়ানো নকশালদের কাটা রাইফেল হাতে নিচে স্টেনগানধারী সিআরপির (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ) যুদ্ধ দেখেছি। দু’একজন পথচারী তাতে আহত হয়নি তা নয়। কিন্তু পথচারীদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি। লন্ডনে আইআরএ সন্ত্রাসীরা তো যুদ্ধের নিয়মকানুন মানত। রাস্তায় ট্রেনে বা শপিংমলে বোমা রাখলে সঙ্গে সঙ্গে তারা তা টেলিফোনে কোনো সংবাদপত্র অফিসকে জানিয়ে দিত। সংবাদপত্র অফিস জানাত পুলিশকে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থল থেকে লোকাপসরণ শুরু করত। বোমা ফেটে দোকানপাটের ক্ষতি হতো। কোনো প্রাণহানি ঘটত না।
বাংলাদেশে জামায়াতি রাজনীতিতে মানবতা, শিশু ও নারীর প্রতি দায়িত্ববোধ, মসজিদ-মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা, ধর্র্মীয় সহিষ্ণুতা ও নৈতিকতা ইত্যাদির কোনো বালাই আছে বলে মনে হয় না। জামায়াতের সঙ্গে মিতালি হওয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতেও এসব নীতি-নৈতিকতা এখন অনুপস্থিত। আন্দোলনের নামে তাদের যৌথ সন্ত্রাসে বাংলাদেশে মানবতা এখন আর্ত। প্রতিপক্ষের রগকাটা, শিরকাটা ইত্যাদি নানা বর্বরতা এখন যুক্ত হয়েছে রাজনীতিতে। চলছে অবাধে নারী ও সংখ্যালঘু নিগ্রহ। ভাঙা হচ্ছে হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধবিহার। মসজিদও অবমাননার হাত থেকে বাঁচছে না। অনেক মসজিদকেই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ট্রেনিং কেন্দ্র বানানো হয়েছে। পীর-আউলিয়ার মাজারে (যেমন সিলেটের হজরত শাহজালালের মাজার) বোমা ফেলা হয়েছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলেও যা হয়নি। পবিত্র রমজান মাসেও হরতাল ডাকা হয়েছে। ঈদের নামাজে বোমা ফাটানো হয়েছে। নামাজি হত্যা করা হয়েছে। গত মে মাসে হেফাজতি তাণ্ডবের সময় তো ঢাকার বায়তুল মোকাররমে দোকান পোড়াতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানো হয়েছে। এটা গণআন্দোলন নয়, জনগণের অধিকার আদায়েরও যুদ্ধ নয়। এটা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যদি বিচার ও দণ্ড হতে পারে, তাহলে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য বর্তমান বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদেরও বিচার ও দণ্ড হওয়া উচিত। জওয়াহের লাল নেহেরুকে বলা হয় গণতান্ত্রিক ভারতের নির্মাতা। তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকেও টিকে থাকার জন্য কখনও কখনও যুদ্ধের পোশাক পরা দরকার, নইলে গণতন্ত্র কখনও কতগুলো নীতিবাক্য দ্বারা বাঁচতে পারে না।’
এ জন্যই নেহেরু উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনুসারী হয়েও ভারতে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি যখন ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হায়’ স্লোগান দিয়ে দেশটিতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সশস্ত্র পন্থায় সরকার উচ্ছেদের জন্য ভয়াবহ সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, তখন তিনি বিনাদ্বিধায় কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন এবং ব্যাপক ধরপাকড় দ্বারা শীর্ষ কমিউনিস্ট নেতাদের জেলে পুরেছিলেন।
এই নেহেরুই আবার কমিউনিস্ট পার্টি যখন ‘সশস্ত্র শ্রেণী সংগ্রামের’ নামে সন্ত্রাসের পথ অনুসরণের বদলে গণতান্ত্রিক পন্থায় (এমনকি সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে) রাজনীতি করার ঘোষণা দেয়, তখন তিনি শুধু কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেননি, বরং কমিউনিস্টদের নির্বাচনে জিতে কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় সরকার গঠন করতে দিয়েছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসে একটি ধনতান্ত্রিক কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় বসতে দেয়া এই প্রথম। এর কোনো দ্বিতীয় উদাহরণ নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে যা চলছে তা জনগণের দাবি-দাওয়া আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের বাহানায় সরকার উচ্ছেদের সশস্ত্র প্রচেষ্টা। এখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে হিন্দুদের দুর্গাদেবীর মতো কল্যাণমূর্তির সঙ্গে অসুরনাশিনী মূর্তিও ধারণ করতে হবে। হাসিনা সরকার আর কত গণতান্ত্রিক সংযম ও ধৈর্যের পরীক্ষা দেবে? জনগণকে আর কত অসুরদের হাতে নিত্য নির্যাতিত ও বধ হতে দেবে? জনগণের ধন-প্রাণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারলে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার ও প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠবে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলকে, এমনকি জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করার ঘোর বিরুদ্ধবাদী। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে হলেও (অন্তত ১০ বছরের জন্য) জামায়াতকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তাদের সব সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ হবে না। হবে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ। অতীত ভারতে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে নেহেরু দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখাননি। বর্তমান বাংলাদেশে হাসিনা যেন এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব না দেখান। পঁচাত্তরের ট্রাজেডি থেকে তিনি শিক্ষা নিন।
এর পর জামায়াত যদি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং নেপালের মাওবাদীদের মতো প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে, সংসদীয় রাজনীতিতে আস্থা প্রকাশ করে সংসদীয় পদ্ধতিতে দেশে তাদের ইসলামের শাসন প্রবর্তন করতে চায় এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে অবশ্যই তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের এমনকি ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিতে হবে। তবে হিংসাত্মক পন্থা ত্যাগ করার আগে নয়।
খালেদা জিয়ার বিএনপিকেও সরকারের কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দেয়া উচিত। জামায়াতকে বেআইনি ঘোষণার পরপরই বিএনপিকে এই বলে সতর্ক করে দেয়া উচিত যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সঙ্গে যদি তারা কোনো ধরনের সংস্রব রাখেন এবং তাদের অনুসৃত পন্থায় হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির চর্চা করতে চান, তাহলে তাদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকারকে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
সরকার অবিলম্বে এ ব্যাপারে সজাগ ও সক্রিয় হোন এবং জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত জানমাল ধ্বংসকারী এই দস্যুবৃত্তি বন্ধ করার পন্থা উদ্ভাবনের জন্য সব দলমতের, পেশার মানুষ এবং তাদের শীর্ষনেতাদের নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে বসুন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন ও সর্বদলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন দলের নেতাদের ডেকে বৈঠক করছেন। তা তিনি করুন। কিন্তু নানা বাহানায় নিত্যনিয়ত নিরীহ জনজীবনে যে ‘বর্গির হামলা’ চালানো হচ্ছে, তা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য সব দল ও সব পেশায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসুন।
এই বৈঠকে সুশীল সমাজ, মিডিয়াসহ সব পেশার শীর্ষনেতা এবং শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক নেতাদেরও ডাকুন। এমনকি ড. কামাল হোসেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রমুখকেও। তাদের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি দাবি আদায়ের পথ তো গণতান্ত্রিক আন্দোলন, টেরোরিজম নয়। এই টেরোরিজমের আসল উদ্দেশ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির গণতান্ত্রিক খোলসের আড়ালে সশস্ত্র সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার উচ্ছেদ। এই সরকার উচ্ছেদেরও আসল লক্ষ্য ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড বানচাল করা। দেশের সুশীল সমাজ, গণসমাজ কি চায়, দাবি আদায়ের আন্দোলনের খোলসের আড়ালে গণশত্র“রা সেই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণে সফল হোক?
হাসিনা সরকার কঠোর হোন। তোয়াজের রাজনীতি (চড়ষরপু ড়ভ ধঢ়ঢ়বধংবসবহঃ) ত্যাগ করুন। হেফাজতিদের তোয়াজ করে কি লাভ হয়েছে, তা তো চোখের সামনে প্রত্যক্ষ। আগেই বলেছি, বিএনপি-জামায়াত জোট এখন ডেসপারেট। বারবার হুমকি দিয়ে, চক্রান্ত চালিয়ে, আলটিমেটাম দিয়ে, টেরর ট্যাকটিস গ্রহণ করে তারা সফল হয়নি। বারবার পরাজিত হতে হয়েছে। সুতরাং শেষবারের মতো তাদের এই মরণ ছোবল। চার থেকে ছয় নভেম্বর পর্যন্ত হরতাল ডেকে নাগরিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি ছাড়া তারা যে অশ্বডিম্ব পাবেন, তা নিজেরাও জানেন। তারপর?
তারপর তারা দেশে অবরোধের ডাক দেবেন, অসহযোগ আন্দোলনে নামবেন এসব হুমকিও দিচ্ছেন। সরকারের তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিএনপি-জামায়াতের ডাকে দেশে অসহযোগ হবে, এ কথা পাগলে শুনলেও হাসবে। বিএনপি-জামায়াত নেতারাও এ কথা জানেন। তাই আলোচনার ডাক শুনেও তারা বেসামাল কথা বলেন। আবার কঠোর কর্মসূচির ডাক আসলে চূড়ান্ত পরাজয়ের আগে তাদের মরণ ছোবল। মনে ক্ষীণ আশা, যদি এই শেষ আঘাত দিয়ে ব্যর্থতা ও পরাজয় এড়ানো যায়। প্রাণী জগতেও দেখা যায়, কোনো হিংস্র প্রাণীও শিকারির হাতে বধ হওয়ার আগে আহত শরীর নিয়েও শিকারির ওপর শেষ মরণ আঘাত হানে।
সবশেষে একটি কথা আমার সহৃদয় পাঠকদের নিবেদন করছি। ‘নিরপেক্ষ’ তওবা সম্পাদকের পর নাকি তার দোসর তারকা সম্পাদক তার কাগজে জনমত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে দেখিয়েছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঠেকায় কে? আমার কথা, আগে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের ‘আন্দোলনে’ জয়ী হয়ে দেখাক! তারপরে তো নির্বাচনে জয়!
No comments