নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিতর্ক আর কতদিন? by ইকতেদার আহমেদ

বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী বিগত ৪২ বছরে ৯টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবং ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ৮ম সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ ৫টি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা দু-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে একটি সরকারের মেয়াদ অবসান-পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি মীমাংসিত বিষয়। আমাদের দেশে মীমাংসিত হওয়ার প্রয়াস নেয়া হলেও মীমাংসিত হল না কেন এর উত্তর খুঁজতে গেলে যে চিত্র পাওয়া যায় তা হল- ১৯৯১ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৫ম সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭ম ও ৮ম সংসদ নির্বাচন এবং ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৯ম সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিজিত দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
মূলত ৮ম জাতীয় সংসদের মেয়াদ অবসান-পরবর্তী ২০০৬ সালের শেষদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর পেছনে ছিল সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী। এ সংশোধনীর মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়স না বাড়ানো হলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ অনেক সীমিত হয়ে আসত।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদালতের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির তীব্র আন্দোলনের ফলে বিএনপি নিয়ন্ত্রণাধীন ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হলে রাজনৈতিক বিষয় আদালতে মীমাংসিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়। এর আগে ১৯৭৪ সালে সংবিধানের ৩য় সংশোধনীর মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর করার জন্য সংবিধান সংশোধন করা হলে সে সংশোধনী বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা দায়ের করা হয়। ৭২’র সংবিধানের ৪৪নং অনুচ্ছেদে সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলো বলবৎ করার জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের কাছে মামলা রুজু করার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত সম্পাদিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি আদালতে নিয়ে আসা হলে তা বঙ্গবন্ধু সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি করে একং তা অনুধাবন করেই সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী প্রণয়নকালে বঙ্গবন্ধু সংবিধানের তৃতীয় ভাগে প্রদত্ত অধিকারগুলো বলবৎ করার জন্য ৪৪নং অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনপূর্বক সুপ্রিমকোর্টে মামলা দায়েরের অধিকার ক্ষুণ্ন করে সাংবিধানিক আদালত, ট্রাইব্যুনাল অথবা কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা সে বিধানটি রহিত করে এ বিষয়ে ৭২’র সংবিধানে বর্ণিত ৪৪নং অনুচ্ছেদের বিধান পুনঃপ্রবর্তিত হলেও পরবর্তীকালে এ বিষয়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত রায়ে কোনো ধরনের আলোকপাত করা হয়নি। সংবিধানে যদিও বলা হয়েছে, সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল হবে, কিন্তু কোন আদালত কী পদ্ধতিতে সে আইন বাতিল করবে সে বিষয়ে সংবিধান নিশ্চুপ। তাছাড়া সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত একজন ব্যক্তির আইন দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কার্যের প্রতিকার চাওয়ার যে অধিকার দেয়া হয়েছে, তা সংসদ প্রণীত আইনকে একজন ব্যক্তির কার্য হিসেবে আকৃষ্ট করে কি-না, ভেবে দেখা প্রয়োজন।
সংবিধানে সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপনের অধিকার দেয়া হয়নি। সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন সংসদের কার্যধারার মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পায়। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা সম্পর্কিত আদালতে উত্থাপিত প্রশ্ন সংসদের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না? এর পাশাপাশি যে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন তা হল, উচ্চ আদালতের একজন বিচারক বিচারকের সাংবিধানিক পদে নিয়োগ লাভ পরবর্তী শপথবাক্য উচ্চারণপূর্বক ঘোষণা করেন যে, তিনি বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবেন। তাই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, উচ্চ আদালতের একজন বিচারক শপথ গ্রহণ করাকালীন সংবিধান ও দেশের প্রচলিত যে কোনো আইন যে অবস্থায় ছিল, তিনি তা থেকে ভিন্নধর্মী কোনো অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন কি-না বা সংবিধানের কোনো অংশ বা কোনো আইন বাতিল করতে পারেন কি-না?
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল-পরবর্তী সংবিধানের বর্তমান যে অবস্থান তাতে প্রতীয়মান হয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা তাদের উত্তরাধিকারীরা কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন। তাছাড়া বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সংসদ সদস্যদের অব্যবহিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী বা অপর কোনো মন্ত্রী নিয়োগের প্রশ্ন দেখা দিলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার অব্যবহিত আগে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ে মন্ত্রিসভা অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে স্বল্পসংখ্যক সদস্য নিয়ে শুধু সরকারের দৈনন্দিন কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে এবং কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। আমাদের সংবিধানে একজন প্রধানমন্ত্রী যে ক্ষমতা ভোগ করেন, তা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার একজন রাষ্ট্রপতির সমরূপ। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে দলীয় ও সরকারপ্রধান হওয়ার কারণে তার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির চেয়ে অধিক। তাছাড়া একাদিক্রমে হোক বা না হোক, দু’মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি সাংবিধানিকভাবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না, যদিও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় দলীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা নিজ নিজ পদে বহাল থাকায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এ ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হচ্ছে, তাদের অধীনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি কর্পোরেশনসহ অন্য সংসদ সদস্যদের উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো নিরপেক্ষ হয়েছে, তাই তাদের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে না- কিন্তু এ বিষয়ে দেশবাসীর প্রশ্ন, দলীয় সরকারের অধীনে বর্ণিত নির্বাচনগুলোর জয়-পরাজয়ের সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের প্রশ্ন জড়িত ছিল না, যা জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রবলভাবে জড়িত। এ বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বলতে গেলে একেবারে অনড়। অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচিত অনুষ্ঠানে অনড়।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল-পরবর্তী যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর অবস্থান দুটি ভিন্ন মেরুতে। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের যে রূপরেখা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, ১১ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজেই থাকবেন এবং মন্ত্রিসভার ১০ জন সদস্যের পাঁচজন সরকারি দলের এবং অপর পাঁচজন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী নেয়া হবে। অপরদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী যে রূপরেখা দিয়েছেন তাতে তিনি বলেছেন, দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত ব্যক্তি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন এবং ১০ জন উপদেষ্টা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে নেয়া হবে, যার পাঁচজন সরকারি দল এবং অপর পাঁচজন বিরোধী দলের সুপারিশে নিয়োগ লাভ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত রূপরেখা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, সমরূপ রূপরেখা ১৯৯৫ সালে সাবেক কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল স্যার নিনিয়ান এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তখন তা তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে পারেন, যে রূপরেখা আপনার কাছে ১৯৯৫ সালে গ্রহণযোগ্য হয়নি, সে রূপরেখা এখন কী করে একই প্রশ্নে বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? এ রূপরেখাটির বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর যে অবস্থান তা হল- পরিস্থিতি অনুকূলে থাকাবস্থায় গ্রহণযোগ্য আর প্রতিকূলে থাকাবস্থায় অগ্রহণযোগ্য।
প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান রূপরেখা ১৯৯৬ সালে কার্যকর না হওয়ার কারণেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্ম। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর জাতির সামনে বর্তমানে সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দল উত্থাপিত যে দুটি রূপরেখা রয়েছে, উভয়ের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন যে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না, সে বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে তা আলোচনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এর সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নের স্থায়ী সমাধান আবশ্যক। উভয় রূপরেখা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, মধ্যবর্তী যে কোনো অবস্থায় উপনীত হতে হলে সংবিধান সংশোধনীর আবশ্যকতা দেখা দেবে। কিন্তু সে সংশোধন অবশ্যই একটি নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নয়। এটা অনস্বীকার্য যে, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দৃঢ়, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে সে নির্বাচন কমিশন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, তাকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর জোটভুক্ত দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি এরই মধ্যে মেরুদণ্ডহীন, আজ্ঞাবহ, অথর্ব ও অনভিজ্ঞ আখ্যা দিয়েছে। এ বিষয়ে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর অভিমত বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমরূপ। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে অক্ষম, সে প্রশ্নে বিতর্কের সুযোগ খুব কম।
আমরা নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে প্রতিটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হবে, যা গণতান্ত্রিক পথচলার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দু’নেত্রীসহ দুটি দলের অন্য নেতারা এবং অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতাদের দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এমন একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে উপনীত হতে হবে, যা নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়ী সমাধানের পথ নিশ্চিত করবে। সে সমাধান বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে সংবিধান সংশোধন ছাড়া সম্ভব নয়। তবে এর জন্য চাই সংকীর্ণ দলীয় মনোবৃত্তি হতে উত্তরণ। একমাত্র এটিই বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারে।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.