বিগ বস-এর নেপথ্যে…. ?
বিগ বসে কেবল টাকা, কাজ করলে বুঝবে
কাকা-মুখে না বললেও, মনে মনে বাংলা ‘বিগ বস’-এর বাঙালি ক্রিউ মেম্বাররা
এটাই বলছেন৷ অ্যাদ্দিন যা টেলিভিশনে দেখলেন, সে তো সেলিব্রিটিদের লড়াই৷
কিন্ত্ত তার নেপথ্যের লড়াইটা কেমন?
বাড়ি ফেরার পর সেই সব
ক্রিউ মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলে সেটাই জানলেন ভাস্বতী ঘোষ।কারও ঠাঁই
স্বর্গে তো কারও ঠাঁই নরকে৷ মর্জি যমরাজের৷ মনোপোলি চলছিল তাঁর৷ বাধ সাধল
টেলিভিশন রিয়্যালিটি শো৷ এখন সেই শো-ই ঠিক করছে কোন মানুষের স্থান স্বর্গে
আর কার নরকে! তবে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে আর নতুন করে পাবলিসিটি কুড়োনোর কিছু নেই
এই শো-এর৷ শো-এর নাম যে ‘বিগ বস’৷এবার সিজন সেভেন৷ মঞ্চে হাজির সলমন খান৷
‘বিগ বস’-এর বাড়ি ভেঙে দু’ টুকরো৷ একটি অংশে স্বর্গ তো একটি অংশে নরক৷
স্বর্গে আয়োজন এলাহী, নরকে প্রাণটুকু যেতে বাকি৷যে রোববার সন্ধেবেলা হিন্দি
মঞ্চে এলেন সলমন, তার ঠিক আগের সন্ধেবেলা বাংলা মঞ্চে গ্র্যান্ড ফিনালে
হোস্ট করলেন মিঠুন চক্রবর্তী৷ জায়গা কিন্ত্ত একই৷ লোনাভলা৷ সেখানেই একদিকে
হিন্দি ‘বিগ বস’-এর সেট৷ একটু দূরেই বাংলা ‘বিগ বস’-এর৷ যা শেষ হয়েছে সদ্য৷
আর এই মুহূর্তে দুই শো-এর মধ্যে অমিল খুঁজলে একটা কথাই জোর গলায় বলা যায়৷
হিন্দি ‘বিগ বস’-এ ঘোষিত স্বর্গ আর নরক আছে৷ যা বাংলা ‘বিগ বস’-এ দেখতে
পাওয়া যায়নি৷ কিন্ত্ত ছিল না কি?
উত্তর: ‘বিগ বস’-এ নরক বলতে যা বোঝায় - অর্থাত্ তুমুল কষ্ট করে যাও, লড়ে যাও, তারপর কেষ্টর দেখা মিলবে, তেমনটা ছিল বৈকি! সলমনের ‘বিগ বস’-এর নরকে এই মুহূর্তে যেমন আছেন অপূর্ব অগ্নিহোত্রী থেকে রতন রাজপুত, তেমনই বাংলা ‘বিগ বস’-এ সেখানে ছিলেন এ শহর থেকে লোনাভলায় উড়ে যাওয়া বাঙালি ক্রিউ৷ কেমন ছিলেন এই বাঙালিরা শেষ তিন মাসেরও বেশি সময়, যাঁদের দেখা গেল না ছোটপর্দায়? গপ্পোটায় টক, ঝাল, মিষ্টি আছে৷ মানে স্পাইস৷ যা ছাড়া ‘বিগ বস’ হয় না৷
ভাত, ডাল, ডিমসেদ্ধ: ৮০০ টাকা ‘বিগ বস’ মানেই তো লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স৷ সে আপনি ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে থাকা সেলিব্রিটি হোন বা ক্যামেরার পিছনে সেলিব্রিটিদের দিকে চোখ রেখে বসে থাকুন৷ ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে ঢুকে অধিকাংশ সেলিব্রটি সপ্তাহ দু’য়েকের মাথায় বলেন এবার বাড়ি ছেড়ে বেরোতে পারলে বাঁচি৷ কিন্ত্ত কষ্ট করে চার সপ্তাহ থেকে গেলে জেতার নেশা গ্রাস করতে থাকে৷ ‘বিগ বস’ বাংলায় ক্রিউ-এর অবস্থাটাও ছিল সেরকম৷ আর সেটা এক দু’ জন নয়৷ ক্রিউ-এর এক স্টোরি এডিটর হিসেবে ছিলেন সুদীপ্তা সেনগুপ্ত, কলকাতার মেয়ে৷ বলছেন, ‘আমরা বাঙালি সব মিলিয়ে জনা চল্লিশেক তো হবই৷ সপ্তাহ দু’য়েকের মাথায় মনে হল, টানতে পারব না বুঝি৷ কিন্ত্ত এই যে এখন ‘বিগ বস’ শেষ করে ফিরছি, অদ্ভুত আনন্দ, লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স, সেটা চ্যানেল আর প্রোডাকশন হাউজের সার্পোট ছাড়া সম্ভব ছিল না৷’
শুরুর দিকে এই যে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা, তেমনটা হল কেন? লোনাভলা-র এই শ্যুটিং চত্বরে খোঁজ নিলে বোঝা যায়, সমস্যার মূলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান৷ ক্রিউ-এর এক সদস্য বলছেন, ‘দেখুন নামটা লিখবেন না, বাকিটা বলছি শুনুন৷ চাপটা কী হল জানেন? সাড়ে তিন মাস৷ এসেছি ৩০ মে৷ শেষ হল ১৫ সেপ্টেম্বর৷ বাঙালি পেট সাড়ে তিন মাসের জন্য লোনাভলায়৷ মাঝেসাঝে আসছে আতপ চালের ভাত৷ ডাল মানে বাঙালি বাড়ির ডাল তো দূরে থাক, প্রায় কালি ডালের কাছাকাছি৷ এখানে সব রান্নায় কোকাম পাউডার দেয়৷ তাতে কমলা রঙের চিকেনের ঝোল হত৷ আর ১৫ দিনে একটু মাছ৷ শুধু আলুসেদ্ধ চাইলেও সেটা রসুন দিয়ে মেখে দিল৷ এবার বুঝছেন তো বাঙালি পেটের কী হাল হতে পারে!’
সুদীপ্তা বলছেন, ‘প্রথম প্রথম কর্তৃপক্ষ তো বুঝতেই পারছিল না বাঙালিরা কী খায়৷ কী করে জানবে, জানার তো কথাই নয়৷ আমরা বুঝিয়ে বললাম৷ তারপর শেষদিকে আলুসেদ্ধ, খিচুড়ি বানিয়ে দিত৷’ আর বস্ত্রের সমস্যা? সে তো নাকি ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছিল? শুনেই হাসছেন সুদীপ্তা৷ বলছেন, ”বিগ বস’ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন আমরা আসার পর গোটা দু’ মাস সমানে বৃষ্টি পড়ে গেল৷ জামা আর শুকোতেই চায় না৷ মুম্বইতে তো থাকতে আসিনি৷ কত আর জামাকাপড় সঙ্গে আনব বলুন?’ অনেকের সঙ্গেই কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, প্রথম মাসে বাঙালি টিমের নিত্য স্টমাক আপসেট৷ জ্বরেও পড়তেন কেউ কেউ৷ তবে তাঁদের সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষই৷
আর বাসস্থান বলতে তো হোটেল৷ ‘মাউন্ট ভিউ’ নামে এক হোটেলে থাকছিলেন অনেকে৷ তাঁদের একজন বলছেন, ‘হোটেল তো যথেষ্ট এক্সপেনসিভ৷ ভাত, ডাল, ডিমসেদ্ধ অর্ডার করলে প্রায় ৮০০ টাকা৷ তাই প্রোডাকশনের খাবার খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ ছিল৷ আর সত্যি বলতে কী, বাঙালিরা মাসের পর মাস নিজের বাড়ি ছেড়ে থাকতে গেলে কাঁদুনি গাইবেই৷ আমাদের নিজেদের মধ্যেও সেটা চলত৷’
লাগাতার বৃষ্টি, নো ছুটি এ তো গেল থাকা খাওয়ার কথা৷ তারই সঙ্গে ছিল সাড়ে তিন মাস লাগাতার কাজ করে যাওয়া৷ খাতায় কলমে ছুটি থাকলেও ‘বিগ বস’ এমন এক শো যেখানে ঠিকভাবে কাজ করতে গেলে কখনও শো থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া যায় না৷ প্রত্যেকেই চূড়ান্ত মন দিয়ে কাজ করতেন এবং কাজ চলত একটানা ১৬-১৭ ঘণ্টা অনেকসময়ই৷ শো-এর এক ডেইলি প্রডিউসার বলছেন, ‘২৪ ঘণ্টায় কী হচ্ছে তার পুরোটা নজরে রেখে সেখান থেকে এপিসোড বানানো৷ প্রথমেই তো ২৪ ঘণ্টা কী হল, তা মাথায় রাখতেই হবে৷ বুঝতেই পারছেন কাজটা খুব কঠিন৷’ তাঁরা ছিলেন বলেই না পর্দায় জমে উঠল রুদ্র, কণীনিকা, অনীক, সুদীপ্তা-র এমন লড়াই৷
আপাতত লড়াইয়ের শেষ৷ দর্শকও শিফট করেছেন সলমনের ‘বিগ বস’-এ৷ সেখানেই স্বর্গ আর নরকের নতুন কনসেপ্ট৷ আর বাংলা ‘বিগ বস’-এর শেষে স্বর্গে ফিরছেন বাঙালি ক্রিউ-ও৷ অর্থাত্ নিজের শহর, নিজের বাড়ি৷ সাড়ে তিন মাসের লড়াই শেষ৷ সেলিব্রিটি নয় বলেই সেটা সামনে আসেনি৷ অথচ তাঁরা ছিলেন বলেই সেলিব্রিটির লড়াই সামনে এসেছে৷
কাস্ট আর ক্রিউ, দু’ পক্ষে যা তফাত ১৷ সেলিব্রিটি-রা ‘বিগ বস’ করলে এমন অঙ্কের টাকা পান যা তাঁরা শহরে থাকলে পেতেন না৷ তিন মাসে অন্তত তিন লাখ৷ আর সাড়ে তিন মাসে একজন বাঙালি ক্রিউ মেম্বারের উপার্জন মোটে এক লাখ৷ অনেকে সময় তারও কম৷ ২৷ সেলিব্রিটিরা উড়ে যান এবং উড়ে ফেরেন৷ ক্রিউ উড়ে যায়৷ কিন্ত্ত ফেরে ট্রেনে৷ ৩৷ সেলিব্রটিদের অধিকাংশই সাড়ে তিন মাস থাকেন না৷ কয়েক সপ্তাহে যাত্রা শেষ হয়৷ ক্রিউ-এর সদস্যরা একনাগাড়ে সাড়ে তিন মাস থাকেন৷ ৪৷ সেলিব্রিটিরা ঘরে যখন থাকেন কাজে ভুল করলেও বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷ কিন্ত্ত ক্রিউয়ের সকল সদস্যকে সতর্ক থাকতে হয় অনেক বেশি৷ টুকটাক ভুল এপিসোডের মান খারাপ করতে পারে৷ ৫৷ সেলিব্রিটিদের মাথায় থাকে নিজেকে জেতানোর চাপ৷ ক্রিউয়ের মাথায়ও চাপ কিছু কম নেই৷ টিভিআর-এর প্রেশার৷ (বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে)
শেষ দিন ক্রিউ-এর সঙ্গে পার্টিতে গেলাম৷ দেখলাম একেবারে ফ্রেশ ৩০ থেকে ৪০টা বাঙালি ছেলে-মেয়ে৷ সকলেই যে কলকাতার তা নয়৷ আমার ওরা বলল, যে হোটেলে ফিরেও ওরা আমাদের কথাই ভাবত৷ এতটাই মন দিয়ে শো-টা করত৷ আমরা তো তাও বাড়ির ভেতর আলুসেদ্ধ, ভাত পেতাম, ওরা বোধহয় নারকেল তেলে রান্না, মারাঠি খাবার খেয়েও আমাদের এরকম ভালোবাসত৷ আমি কীভাবে চুলে কার্ল করব বা মল্লিকা কীভাবে আই মেক-আপ করবে সব মুখস্থ৷ ‘বিগ বস’-টা কিন্ত্ত নেপথ্যে থাকা এই ক্রিউয়ের জন্যও একটা জার্নি যেমন আমার জন্য৷ আমার মনে হল, আরও কিছুটা সময় ওদের সঙ্গে কাটালে বেশ লাগত৷ সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অন্যতম সেলিব্রিটি প্রতিযোগী।
উত্তর: ‘বিগ বস’-এ নরক বলতে যা বোঝায় - অর্থাত্ তুমুল কষ্ট করে যাও, লড়ে যাও, তারপর কেষ্টর দেখা মিলবে, তেমনটা ছিল বৈকি! সলমনের ‘বিগ বস’-এর নরকে এই মুহূর্তে যেমন আছেন অপূর্ব অগ্নিহোত্রী থেকে রতন রাজপুত, তেমনই বাংলা ‘বিগ বস’-এ সেখানে ছিলেন এ শহর থেকে লোনাভলায় উড়ে যাওয়া বাঙালি ক্রিউ৷ কেমন ছিলেন এই বাঙালিরা শেষ তিন মাসেরও বেশি সময়, যাঁদের দেখা গেল না ছোটপর্দায়? গপ্পোটায় টক, ঝাল, মিষ্টি আছে৷ মানে স্পাইস৷ যা ছাড়া ‘বিগ বস’ হয় না৷
ভাত, ডাল, ডিমসেদ্ধ: ৮০০ টাকা ‘বিগ বস’ মানেই তো লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স৷ সে আপনি ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে থাকা সেলিব্রিটি হোন বা ক্যামেরার পিছনে সেলিব্রিটিদের দিকে চোখ রেখে বসে থাকুন৷ ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে ঢুকে অধিকাংশ সেলিব্রটি সপ্তাহ দু’য়েকের মাথায় বলেন এবার বাড়ি ছেড়ে বেরোতে পারলে বাঁচি৷ কিন্ত্ত কষ্ট করে চার সপ্তাহ থেকে গেলে জেতার নেশা গ্রাস করতে থাকে৷ ‘বিগ বস’ বাংলায় ক্রিউ-এর অবস্থাটাও ছিল সেরকম৷ আর সেটা এক দু’ জন নয়৷ ক্রিউ-এর এক স্টোরি এডিটর হিসেবে ছিলেন সুদীপ্তা সেনগুপ্ত, কলকাতার মেয়ে৷ বলছেন, ‘আমরা বাঙালি সব মিলিয়ে জনা চল্লিশেক তো হবই৷ সপ্তাহ দু’য়েকের মাথায় মনে হল, টানতে পারব না বুঝি৷ কিন্ত্ত এই যে এখন ‘বিগ বস’ শেষ করে ফিরছি, অদ্ভুত আনন্দ, লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স, সেটা চ্যানেল আর প্রোডাকশন হাউজের সার্পোট ছাড়া সম্ভব ছিল না৷’
শুরুর দিকে এই যে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা, তেমনটা হল কেন? লোনাভলা-র এই শ্যুটিং চত্বরে খোঁজ নিলে বোঝা যায়, সমস্যার মূলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান৷ ক্রিউ-এর এক সদস্য বলছেন, ‘দেখুন নামটা লিখবেন না, বাকিটা বলছি শুনুন৷ চাপটা কী হল জানেন? সাড়ে তিন মাস৷ এসেছি ৩০ মে৷ শেষ হল ১৫ সেপ্টেম্বর৷ বাঙালি পেট সাড়ে তিন মাসের জন্য লোনাভলায়৷ মাঝেসাঝে আসছে আতপ চালের ভাত৷ ডাল মানে বাঙালি বাড়ির ডাল তো দূরে থাক, প্রায় কালি ডালের কাছাকাছি৷ এখানে সব রান্নায় কোকাম পাউডার দেয়৷ তাতে কমলা রঙের চিকেনের ঝোল হত৷ আর ১৫ দিনে একটু মাছ৷ শুধু আলুসেদ্ধ চাইলেও সেটা রসুন দিয়ে মেখে দিল৷ এবার বুঝছেন তো বাঙালি পেটের কী হাল হতে পারে!’
সুদীপ্তা বলছেন, ‘প্রথম প্রথম কর্তৃপক্ষ তো বুঝতেই পারছিল না বাঙালিরা কী খায়৷ কী করে জানবে, জানার তো কথাই নয়৷ আমরা বুঝিয়ে বললাম৷ তারপর শেষদিকে আলুসেদ্ধ, খিচুড়ি বানিয়ে দিত৷’ আর বস্ত্রের সমস্যা? সে তো নাকি ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছিল? শুনেই হাসছেন সুদীপ্তা৷ বলছেন, ”বিগ বস’ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন আমরা আসার পর গোটা দু’ মাস সমানে বৃষ্টি পড়ে গেল৷ জামা আর শুকোতেই চায় না৷ মুম্বইতে তো থাকতে আসিনি৷ কত আর জামাকাপড় সঙ্গে আনব বলুন?’ অনেকের সঙ্গেই কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, প্রথম মাসে বাঙালি টিমের নিত্য স্টমাক আপসেট৷ জ্বরেও পড়তেন কেউ কেউ৷ তবে তাঁদের সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষই৷
আর বাসস্থান বলতে তো হোটেল৷ ‘মাউন্ট ভিউ’ নামে এক হোটেলে থাকছিলেন অনেকে৷ তাঁদের একজন বলছেন, ‘হোটেল তো যথেষ্ট এক্সপেনসিভ৷ ভাত, ডাল, ডিমসেদ্ধ অর্ডার করলে প্রায় ৮০০ টাকা৷ তাই প্রোডাকশনের খাবার খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ ছিল৷ আর সত্যি বলতে কী, বাঙালিরা মাসের পর মাস নিজের বাড়ি ছেড়ে থাকতে গেলে কাঁদুনি গাইবেই৷ আমাদের নিজেদের মধ্যেও সেটা চলত৷’
লাগাতার বৃষ্টি, নো ছুটি এ তো গেল থাকা খাওয়ার কথা৷ তারই সঙ্গে ছিল সাড়ে তিন মাস লাগাতার কাজ করে যাওয়া৷ খাতায় কলমে ছুটি থাকলেও ‘বিগ বস’ এমন এক শো যেখানে ঠিকভাবে কাজ করতে গেলে কখনও শো থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া যায় না৷ প্রত্যেকেই চূড়ান্ত মন দিয়ে কাজ করতেন এবং কাজ চলত একটানা ১৬-১৭ ঘণ্টা অনেকসময়ই৷ শো-এর এক ডেইলি প্রডিউসার বলছেন, ‘২৪ ঘণ্টায় কী হচ্ছে তার পুরোটা নজরে রেখে সেখান থেকে এপিসোড বানানো৷ প্রথমেই তো ২৪ ঘণ্টা কী হল, তা মাথায় রাখতেই হবে৷ বুঝতেই পারছেন কাজটা খুব কঠিন৷’ তাঁরা ছিলেন বলেই না পর্দায় জমে উঠল রুদ্র, কণীনিকা, অনীক, সুদীপ্তা-র এমন লড়াই৷
আপাতত লড়াইয়ের শেষ৷ দর্শকও শিফট করেছেন সলমনের ‘বিগ বস’-এ৷ সেখানেই স্বর্গ আর নরকের নতুন কনসেপ্ট৷ আর বাংলা ‘বিগ বস’-এর শেষে স্বর্গে ফিরছেন বাঙালি ক্রিউ-ও৷ অর্থাত্ নিজের শহর, নিজের বাড়ি৷ সাড়ে তিন মাসের লড়াই শেষ৷ সেলিব্রিটি নয় বলেই সেটা সামনে আসেনি৷ অথচ তাঁরা ছিলেন বলেই সেলিব্রিটির লড়াই সামনে এসেছে৷
কাস্ট আর ক্রিউ, দু’ পক্ষে যা তফাত ১৷ সেলিব্রিটি-রা ‘বিগ বস’ করলে এমন অঙ্কের টাকা পান যা তাঁরা শহরে থাকলে পেতেন না৷ তিন মাসে অন্তত তিন লাখ৷ আর সাড়ে তিন মাসে একজন বাঙালি ক্রিউ মেম্বারের উপার্জন মোটে এক লাখ৷ অনেকে সময় তারও কম৷ ২৷ সেলিব্রিটিরা উড়ে যান এবং উড়ে ফেরেন৷ ক্রিউ উড়ে যায়৷ কিন্ত্ত ফেরে ট্রেনে৷ ৩৷ সেলিব্রটিদের অধিকাংশই সাড়ে তিন মাস থাকেন না৷ কয়েক সপ্তাহে যাত্রা শেষ হয়৷ ক্রিউ-এর সদস্যরা একনাগাড়ে সাড়ে তিন মাস থাকেন৷ ৪৷ সেলিব্রিটিরা ঘরে যখন থাকেন কাজে ভুল করলেও বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷ কিন্ত্ত ক্রিউয়ের সকল সদস্যকে সতর্ক থাকতে হয় অনেক বেশি৷ টুকটাক ভুল এপিসোডের মান খারাপ করতে পারে৷ ৫৷ সেলিব্রিটিদের মাথায় থাকে নিজেকে জেতানোর চাপ৷ ক্রিউয়ের মাথায়ও চাপ কিছু কম নেই৷ টিভিআর-এর প্রেশার৷ (বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে)
শেষ দিন ক্রিউ-এর সঙ্গে পার্টিতে গেলাম৷ দেখলাম একেবারে ফ্রেশ ৩০ থেকে ৪০টা বাঙালি ছেলে-মেয়ে৷ সকলেই যে কলকাতার তা নয়৷ আমার ওরা বলল, যে হোটেলে ফিরেও ওরা আমাদের কথাই ভাবত৷ এতটাই মন দিয়ে শো-টা করত৷ আমরা তো তাও বাড়ির ভেতর আলুসেদ্ধ, ভাত পেতাম, ওরা বোধহয় নারকেল তেলে রান্না, মারাঠি খাবার খেয়েও আমাদের এরকম ভালোবাসত৷ আমি কীভাবে চুলে কার্ল করব বা মল্লিকা কীভাবে আই মেক-আপ করবে সব মুখস্থ৷ ‘বিগ বস’-টা কিন্ত্ত নেপথ্যে থাকা এই ক্রিউয়ের জন্যও একটা জার্নি যেমন আমার জন্য৷ আমার মনে হল, আরও কিছুটা সময় ওদের সঙ্গে কাটালে বেশ লাগত৷ সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অন্যতম সেলিব্রিটি প্রতিযোগী।
No comments