রাহুলের জয়, ভারতেরও by আশিস আচার্য
দলের ভেতরে-বাইরে নানামুখী চাপের জেরে শেষ
পর্যন্ত বিতর্কিত অধ্যাদেশটি তুলে নিচ্ছে ভারত সরকার। সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের
বাঁচানোর কায়দা বলে অধ্যাদেশের ভিতটি এমনিতেই ছিল দুর্বল। রাহুল গান্ধীর
মতো প্রভাবশালী নেতার ধাক্কায় তা হুড়মুড় করে পড়ে গেল।
‘এই অধ্যাদেশ অর্থহীন, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা ছিঁড়ে ফেলে ছুড়ে মারা উচিত,’ নয়াদিল্লি প্রেসক্লাবে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধীর এ মন্তব্য দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তার রেশ গিয়ে পৌঁছেছিল সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে মার্কিন মুলুকেও। জাতিসংঘে ভাষণ আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তখন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রকাশ্যে রাহুলের এই ক্ষোভ প্রকাশ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল খুবই বিব্রতকর। কিছুদিন ধরেই দল ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে (যার অন্তর্ভুক্ত রাহুলের মা সোনিয়া গান্ধীও) এ অধ্যাদেশ অনুমোদিত হয়েছিল। রাহুলের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মনমোহন ভালোভাবে নেননি। দেশে ফিরেই এ নিয়ে দুজনে কথা বলেছেন। রাহুলের দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাপ্তি ঘটেছে। তবে এ আলাপচারিতায় নিজের বক্তব্যের মূল বিষয়ে অটল ছিলেন রাহুল। এ অধ্যাদেশটি যে দেশবাসী ভালোভাবে নেবে না তা আবারও জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন।
রাহুলের ‘বিদ্রোহে’
বেশ চাপের মুখে পড়ে গিয়েছিলেন বর্ষীয়ান নেতা মনমোহন সিং। কেউ কেউ বলেছেন,
নবীন রাহুলের কাছ থেকে রাজনীতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটিই পেয়েছেন ভারতের
অর্থনৈতিক সংস্কারের জনক। গান্ধী পরিবারের সঙ্গে বিরোধের জেরে দেশে ফিরেই
তিনি পদত্যাগ করে বসতে পারেন বলে গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে।
রাহুলের ওই বক্তব্য মনমোহনের সমালোচনার
সুযোগ
করে দেয় বিরোধীদের। প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা
অরুণ জেটলি বলেন, ‘রাহুল যদি প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে অপমান করেন, তাঁকে
ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যেতে হবে। তাই আত্মসম্মান থাকলে মনমোহনের এখনই
পদত্যাগ করা উচিত।’
ভারতের প্রভাবশালী
দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমস ঘটনার পরদিন তাদের শীর্ষ শিরোনামে লিখেছিল,
‘প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের ওপর বোমা ফাটিয়েছেন রাহুল।’ ওই প্রতিবেদনে
বলা হয়, মনমোহনের জন্য এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বাজে সময়।
বিষয়টি যে দল ও ক্ষমতাসীন জোটের জন্য ভালো
হচ্ছে না, রাহুল গান্ধী তা বোঝেননি তা নয়। মনমোহন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই
পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হন তিনি। মনমোহনকে চিঠি লিখে নিজের অবস্থান
স্পষ্ট করেন। এতে রাহুল লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর ‘গভীর শ্রদ্ধা’
রয়েছে। তিনি যে কঠিন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু
অধ্যাদেশের ব্যাপারে তাঁর (রাহুল) মতামত কতটা দৃঢ়, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই
সেটা বুঝবেন।
কংগ্রেসের অনেক
নেতা-কর্মীই, বিশেষ করে তরুণেরা রাহুল গান্ধীর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, এই অধ্যাদেশ বহালরেখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়া যায়না।
অধ্যাদেশটি প্রত্যাহার করে নেওয়াকে একদিক থেকে মনমোহন সিংয়ের একটি ব্যক্তিগত পরাজয় হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বলা হয়, তিনিই বিতর্কিত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নের উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন। এর পক্ষে সরকারের যুক্তি ছিল সর্বোচ্চ আদালতের এ-সংক্রান্ত রুলিং পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ, রাজনীতিকেরা অনেক সময় ‘তুচ্ছ অভিযোগের’ ভিত্তিতেও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধ্যাদেশটি এখন অতীত হওয়ার পথে। আর কোনো সরকার অদূর ভবিষ্যতে এ রকম কিছু করার উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না।
১৯৯০-এর দশকে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে অবদান রেখে জীবদ্দশায়ই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেন মনমোহন। আজীবন গান্ধী পরিবারের বিশ্বস্ত এই ৮১ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তির’ জন্যও সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দুটি মেয়াদের পর সেই ভাবমূর্তি আর অটুট নেই। সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অনেকের নামে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, প্রকট ধনবৈষম্য ও অনেক সামাজিক সমস্যা এ সরকারের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির ব্যাপারে মনমোহন চোখ বন্ধ করে থেকেছেন বলেঅভিযোগ উঠেছে।
অধ্যাদেশটি প্রত্যাহার করে নেওয়াকে একদিক থেকে মনমোহন সিংয়ের একটি ব্যক্তিগত পরাজয় হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বলা হয়, তিনিই বিতর্কিত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নের উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন। এর পক্ষে সরকারের যুক্তি ছিল সর্বোচ্চ আদালতের এ-সংক্রান্ত রুলিং পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ, রাজনীতিকেরা অনেক সময় ‘তুচ্ছ অভিযোগের’ ভিত্তিতেও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধ্যাদেশটি এখন অতীত হওয়ার পথে। আর কোনো সরকার অদূর ভবিষ্যতে এ রকম কিছু করার উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না।
১৯৯০-এর দশকে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে অবদান রেখে জীবদ্দশায়ই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেন মনমোহন। আজীবন গান্ধী পরিবারের বিশ্বস্ত এই ৮১ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তির’ জন্যও সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দুটি মেয়াদের পর সেই ভাবমূর্তি আর অটুট নেই। সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অনেকের নামে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, প্রকট ধনবৈষম্য ও অনেক সামাজিক সমস্যা এ সরকারের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির ব্যাপারে মনমোহন চোখ বন্ধ করে থেকেছেন বলেঅভিযোগ উঠেছে।
সমালোচকেরা বলছেন, কংগ্রেসের সহযোগীদের
রক্ষার স্বার্থেই সরকার এ ধরনের অধ্যাদেশের প্রস্তাব করেছিল। আগামী বছর
অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠনে ওই সহযোগীদের প্রয়োজন হবে।
বিরোধী দল এখন এই অধ্যাদেশের সমালোচনা করলেও প্রাথমিক পর্যায়ে এতে সব দলেরই
জোরালো সমর্থন ছিল।
অধ্যাদেশ বাতিল
হওয়াকে রাহুলের বিজয় হিসেবে দেখছেন অনেকে। কিন্তু যাঁরা সংকীর্ণ দলীয়
স্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে আরও বড় পরিসরে ভাবেন, তাঁরা মনে করেন এতে জয় হয়েছে
ভারতের। জয়ী হয়েছে আসলে ভারতের গণতন্ত্র।
অধ্যাদেশের
বিষয়টা কী?
গত জুলাই মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলার রায় দিয়ে জানান, ভারতীয় গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৪) ধারাটি অসাংবিধানিক। সেই ধারা সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেন। ওই ধারায় ছিল, কোনো এমপি, এমএলএ বা এমএলসির কোনো মামলায় দুই বছরের বেশি শাস্তি হলে উচ্চতর আদালতে আপিল সাপেক্ষে এবং সেই আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত তাঁরা সদস্যপদে বহাল থাকতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে, দুই বা তার বেশি বছরের সাজা হলে সাংসদ বা বিধায়কেরা সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের সদস্যপদ হারাবেন। এই রায়ের ফলে কংগ্রেসের সাংসদ রশিদ মাসুদ ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সভাপতি লোকসভার সদস্য লালু প্রসাদ তাঁদের সদস্যপদ হারাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের এ রায়কে পাশ কাটাতেই অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এর উদ্দেশ্য ছিল চূড়ান্ত আপিলে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এমপি, এমএলএ বা এমএলসিদের পদে বহাল রাখার সুযোগ দেওয়া। উল্লেখ্য, ভারতের ৫৪৩ আসনের লোকসভার অন্তত ১৫০ জন সাংসদের বিরুদ্ধেই অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা রয়েছে।
গত জুলাই মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলার রায় দিয়ে জানান, ভারতীয় গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৪) ধারাটি অসাংবিধানিক। সেই ধারা সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেন। ওই ধারায় ছিল, কোনো এমপি, এমএলএ বা এমএলসির কোনো মামলায় দুই বছরের বেশি শাস্তি হলে উচ্চতর আদালতে আপিল সাপেক্ষে এবং সেই আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত তাঁরা সদস্যপদে বহাল থাকতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে, দুই বা তার বেশি বছরের সাজা হলে সাংসদ বা বিধায়কেরা সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের সদস্যপদ হারাবেন। এই রায়ের ফলে কংগ্রেসের সাংসদ রশিদ মাসুদ ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সভাপতি লোকসভার সদস্য লালু প্রসাদ তাঁদের সদস্যপদ হারাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের এ রায়কে পাশ কাটাতেই অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এর উদ্দেশ্য ছিল চূড়ান্ত আপিলে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এমপি, এমএলএ বা এমএলসিদের পদে বহাল রাখার সুযোগ দেওয়া। উল্লেখ্য, ভারতের ৫৪৩ আসনের লোকসভার অন্তত ১৫০ জন সাংসদের বিরুদ্ধেই অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা রয়েছে।
No comments