বোরো ধান
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ—এ নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু যে কৃষক
ফসল ফলিয়ে দেশকে এই জায়গায় নিয়ে গেছেন, তাঁদের স্বার্থরক্ষা আমরা কতটা
ঠিকভাবে করতে পারছি? অনেক স্থানে এখন বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে, ধান
বিক্রি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। কৃষকেরা এভাবে
লোকসান গুনতে থাকলে ভবিষ্যতে তাঁরা ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
বগুড়া ও গাইবান্ধার অভিজ্ঞতা বলছে, কৃষকেরা তাঁদের ধান বিক্রি করার জন্য
ক্রেতা পাচ্ছেন না। মাঠপর্যায়ে সরকারের সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি। এ
অবস্থায় কৃষকেরা চাতালমালিকদের কাছে ধান বিক্রি করতে গিয়ে যথাযথ দাম
পাচ্ছেন না। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ যেখানে
৬০০ টাকা, সেখানে কৃষককে তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫০ টাকা বা এর চেয়েও কম
দামে। এটা ঠিক যে বোরো ধান এখনো পুরোপুরি উঠতে শুরু করেনি। আমরা এ ব্যাপারে
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগাম প্রস্তুতি প্রত্যাশা করছি। কৃষক যাতে
তাঁদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পান, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে
দেখা গেছে, চাতালমালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নানা কারসাজির মাধ্যমে এমন
পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন, যাতে কৃষক কম দামে তাঁদের কাছে ধান বিক্রি করতে
বাধ্য হন। ধান উঠতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক যাতে তা বিক্রি করতে
পারেন, তা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ, কৃষকের পক্ষে নিজ উদ্যোগে ধান মজুত করে
রাখা সম্ভব হয় না। আর অর্থের প্রয়োজনে কৃষকও ধান বিক্রি করতে মরিয়া
হয়ে ওঠেন। এই পরিস্থিতিরই সুযোগ নিয়ে থাকেন বিভিন্ন ধানকল ও
চাতালমালিকেরা। কারও কারসাজিতে কৃষক যেন তাঁর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে
ধান বিক্রি করতে বাধ্য না হন, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করব,
বোরো ধান ওঠার এই মৌসুমে সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে এবং কৃষকের
ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
No comments