সাক্ষাৎকার-ঢাকায় মূকাভিনয় একাডেমী স্থাপন করতে চাই by পার্থ প্রতিম মজুমদার
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অজয় দাশগুপ্ত নিঃশব্দ কবিতার কবি পার্থ প্রতিম মজুমদারের জন্ম পাবনায়, ১৯৫৪ সালে। কলকাতায় যোগেশ দত্ত মাইম একাডেমীতে মাইম মূকাভিনয় শেখার পর ১৯৮২ সালে প্যারিসের মার্সেল মার্সেইয়ের মাইম স্কুলে ভর্তি হন। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত অনুষ্ঠান পরিবেশন
করছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ মূকাভিনেতা একুশে পদক এবং ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক খেতাব নাইট-এ ভূষিত হয়েছেন। মঞ্চের অস্কার হিসেবে খ্যাত ফ্রান্সের মলিয়্যের পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে। সমকালের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন মূকাভিনয় প্রসারে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের একাডেমী স্থাপনের পরিকল্পনা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে
সমকাল : প্যারিসেই স্থায়ী বসবাস, মাঝে মধ্যে জন্মভূমিতে আসেন। কেমন অনুভূতি এখানে?
পার্থ প্রতিম :আমি যখন ফ্রান্সে থাকি, নিজেকে মনে হয় সুন্দর ও সমৃদ্ধ ওই দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আর 'আমার সোনার বাংলায়' যখন আসি তখন কখনও কখনও নিজেকে ফ্রান্সের প্রতিনিধি যে মনে হয় না, সেটা বলব না। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে গর্ব_ এখানেই যে আমার শিকড়। ফরাসি সরকার যখন তাদের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক খেতাব 'নাইট' প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়_ আমি তাদের অনুরোধ করেছি, এটা যেন আমার প্রিয় স্বদেশভূমিতে আমাকে দেওয়া হয়। তারা আমার অনুরোধ রক্ষা করে ঢাকায় আসার ব্যবস্থা করেছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞ।
সমকাল :এবারে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা গিয়েছিলেন...
পার্থ প্রতিম : সিরাজগঞ্জের একটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের সামনে অনুষ্ঠান করেছি। দর্শকদের বেশিরভাগ গ্রামের কৃষক ও দিনমজুর_ জীবন কাটে অনেক কষ্টে। কিন্তু নিঃশব্দ কবিতার ভাষা তারাও বুঝতে পারে। টাঙ্গাইলের আনন্দপাঠ নামে একটি স্কুলে অনুষ্ঠান করেও তৃপ্তি পেয়েছি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী এলেন মলি্লক এবং তার স্ত্রী এ স্কুলটি পরিচালনা করেন। সেখানে আমি মূকাভিনয় বিষয়ে ওয়ার্কশপ করেছি এবং শিশুরাও তাতে অংশ নিয়েছে। গ্রামে এবং মফস্বল হিসেবে পরিচিত শহরগুলোতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে নিবেদিতপ্রাণ নারী-পুরুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই।
সমকাল : মুক্তিযুদ্ধের চার দশকের স্মরণীয় সময়ে পেলেন বিশ্ব শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত দেশের সম্মান। প্রবাসে সম্মান পাচ্ছেন যথেষ্ট। কিন্তু দেশ নিয়ে কী ভাবছেন?
পার্থ প্রতিম :ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তে এই দেশ। আমার পদক তাদের উৎসর্গ করেছি। পদকটি হাতে পেয়ে আমি ছুটে গেছি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিচার শুরু হয়েছে। এটা আরও আগে কেন শুরু হয়নি, সে প্রশ্ন করাই যায়। কিন্তু এখন আমাদের সবার দায়_ বিচার কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হতে পারে সে জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সম্ভাব্য সবকিছু করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর সহযোগীদের এখনও বিচার হচ্ছে। এমনকি হিটলারের বন্দিশালার দারোয়ানরা কিংবা সাধারণ সৈনিকরাও রেহাই পাচ্ছে না। আর বাংলাদেশে গণহত্যায় শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা নয়, সরাসরি অংশ নিয়েও অনেকে চলেছে বুক ফুলিয়ে। যে দেশে ঘৃণ্য অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব হয়, সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।
সমকাল : আপনি ঢাকায় একটি মাইম একাডেমী স্থাপন করতে চাইছেন। এ কাজে কতটা অগ্রগতি হয়েছে?
পার্থ প্রতিম : এখনও বলতে পারেন দৌড়ঝাঁপ পর্বে রয়েছি। কখনও মনে হয় যে অনেক এগিয়েছি। আবার কখনও হতাশা গ্রাস করে ফেলে। বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের পুত্র ইশতিয়াক হোসেন আমার উদ্যোগের কথা জেনে নিজের বাড়ির একটি ফ্লোর এ কাজে ছেড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে যখনই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি, তখন মনে হয় কোনো বাধাই অসাধ্য নয়। আশা করব যে বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে এ উদ্যোগে সহায়তা মিলবে। মূকাভিনয় শুধু বিনোদনমাধ্যম নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এ অনন্য শিল্পের ব্যবহার রয়েছে। আপনি একটি অফিসে কাজ করছেন_ কীভাবে ঘরে প্রবেশ করবেন সবার সামনে, অভ্যাগতকে কীভাবে স্বাগত জানাতে হয়, অতিথি আপ্যায়নের পরিবেশনের সুন্দর-শোভন রীতি কী, এসবের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক দেহভঙ্গি। মূকাভিনয় শিক্ষার স্কুল আপনাকে এ ধরনের আরও নানা বিষয়ে শেখাতে পারে। মূকাভিনয় হচ্ছে আদিম শিল্প_ মানুষ যখন কথা বলতে পারত না, তখন অঙ্গভঙ্গি ছিল প্রকাশের মাধ্যম। নাটক, গান, নাচ, যাত্রা সবকিছুতেই প্রকাশের দেহভঙ্গি চাই। মডেলিংয়ের জন্যও তা অপরিহার্য। অনেক শিশু এখন খেলার মাঠ পায় না। তারা নিজেদের শরীরটা সুন্দর করতে পারে। যেখানে পড়বে কিংবা পরবর্তী জীবনে কাজ করবে সেখানে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করবে। তাদের জন্য আসুন, সবাই মিলে কিছু করি। বয়স্কদের জন্যও এর প্রয়োজন রয়েছে। আমার জীবনে মোটামুটি সচ্ছলতা রয়েছে। নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যই এমন একটি প্রতিষ্ঠান আমি গড়ে তুলতে চাই। শুধু মূকাভিনয় নয়, সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই পৃষ্ঠপোষকতার দরকার রয়েছে। বাঙালি জাতি সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এবং এ জন্য সুনামও রয়েছে। তবে সময়ের দাবি তো এখন অনেক। বিশ্বায়নের এ যুগে সর্বত্র নিজেদের তুলে ধরার জন্য অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী করতে পারে, তেমনি সংস্কৃতিও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
সমকাল : আপনি বিজ্ঞাপন চিত্রেও কাজ করছেন...
পার্থ প্রতিম : সম্প্রতি এইডস বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে একটি কাজ করেছি। এতে মূকাভিনয়ের মাধ্যমেই বিপদের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণফোন ও ব্রিটিশ টেলিকমের হয়েও কাজ করছি।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
পার্থ প্রতিম : সমকাল পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ।
সমকাল : প্যারিসেই স্থায়ী বসবাস, মাঝে মধ্যে জন্মভূমিতে আসেন। কেমন অনুভূতি এখানে?
পার্থ প্রতিম :আমি যখন ফ্রান্সে থাকি, নিজেকে মনে হয় সুন্দর ও সমৃদ্ধ ওই দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আর 'আমার সোনার বাংলায়' যখন আসি তখন কখনও কখনও নিজেকে ফ্রান্সের প্রতিনিধি যে মনে হয় না, সেটা বলব না। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে গর্ব_ এখানেই যে আমার শিকড়। ফরাসি সরকার যখন তাদের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক খেতাব 'নাইট' প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়_ আমি তাদের অনুরোধ করেছি, এটা যেন আমার প্রিয় স্বদেশভূমিতে আমাকে দেওয়া হয়। তারা আমার অনুরোধ রক্ষা করে ঢাকায় আসার ব্যবস্থা করেছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞ।
সমকাল :এবারে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা গিয়েছিলেন...
পার্থ প্রতিম : সিরাজগঞ্জের একটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের সামনে অনুষ্ঠান করেছি। দর্শকদের বেশিরভাগ গ্রামের কৃষক ও দিনমজুর_ জীবন কাটে অনেক কষ্টে। কিন্তু নিঃশব্দ কবিতার ভাষা তারাও বুঝতে পারে। টাঙ্গাইলের আনন্দপাঠ নামে একটি স্কুলে অনুষ্ঠান করেও তৃপ্তি পেয়েছি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী এলেন মলি্লক এবং তার স্ত্রী এ স্কুলটি পরিচালনা করেন। সেখানে আমি মূকাভিনয় বিষয়ে ওয়ার্কশপ করেছি এবং শিশুরাও তাতে অংশ নিয়েছে। গ্রামে এবং মফস্বল হিসেবে পরিচিত শহরগুলোতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে নিবেদিতপ্রাণ নারী-পুরুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই।
সমকাল : মুক্তিযুদ্ধের চার দশকের স্মরণীয় সময়ে পেলেন বিশ্ব শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত দেশের সম্মান। প্রবাসে সম্মান পাচ্ছেন যথেষ্ট। কিন্তু দেশ নিয়ে কী ভাবছেন?
পার্থ প্রতিম :ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তে এই দেশ। আমার পদক তাদের উৎসর্গ করেছি। পদকটি হাতে পেয়ে আমি ছুটে গেছি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিচার শুরু হয়েছে। এটা আরও আগে কেন শুরু হয়নি, সে প্রশ্ন করাই যায়। কিন্তু এখন আমাদের সবার দায়_ বিচার কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হতে পারে সে জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সম্ভাব্য সবকিছু করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর সহযোগীদের এখনও বিচার হচ্ছে। এমনকি হিটলারের বন্দিশালার দারোয়ানরা কিংবা সাধারণ সৈনিকরাও রেহাই পাচ্ছে না। আর বাংলাদেশে গণহত্যায় শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা নয়, সরাসরি অংশ নিয়েও অনেকে চলেছে বুক ফুলিয়ে। যে দেশে ঘৃণ্য অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব হয়, সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।
সমকাল : আপনি ঢাকায় একটি মাইম একাডেমী স্থাপন করতে চাইছেন। এ কাজে কতটা অগ্রগতি হয়েছে?
পার্থ প্রতিম : এখনও বলতে পারেন দৌড়ঝাঁপ পর্বে রয়েছি। কখনও মনে হয় যে অনেক এগিয়েছি। আবার কখনও হতাশা গ্রাস করে ফেলে। বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের পুত্র ইশতিয়াক হোসেন আমার উদ্যোগের কথা জেনে নিজের বাড়ির একটি ফ্লোর এ কাজে ছেড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে যখনই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি, তখন মনে হয় কোনো বাধাই অসাধ্য নয়। আশা করব যে বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে এ উদ্যোগে সহায়তা মিলবে। মূকাভিনয় শুধু বিনোদনমাধ্যম নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এ অনন্য শিল্পের ব্যবহার রয়েছে। আপনি একটি অফিসে কাজ করছেন_ কীভাবে ঘরে প্রবেশ করবেন সবার সামনে, অভ্যাগতকে কীভাবে স্বাগত জানাতে হয়, অতিথি আপ্যায়নের পরিবেশনের সুন্দর-শোভন রীতি কী, এসবের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক দেহভঙ্গি। মূকাভিনয় শিক্ষার স্কুল আপনাকে এ ধরনের আরও নানা বিষয়ে শেখাতে পারে। মূকাভিনয় হচ্ছে আদিম শিল্প_ মানুষ যখন কথা বলতে পারত না, তখন অঙ্গভঙ্গি ছিল প্রকাশের মাধ্যম। নাটক, গান, নাচ, যাত্রা সবকিছুতেই প্রকাশের দেহভঙ্গি চাই। মডেলিংয়ের জন্যও তা অপরিহার্য। অনেক শিশু এখন খেলার মাঠ পায় না। তারা নিজেদের শরীরটা সুন্দর করতে পারে। যেখানে পড়বে কিংবা পরবর্তী জীবনে কাজ করবে সেখানে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করবে। তাদের জন্য আসুন, সবাই মিলে কিছু করি। বয়স্কদের জন্যও এর প্রয়োজন রয়েছে। আমার জীবনে মোটামুটি সচ্ছলতা রয়েছে। নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যই এমন একটি প্রতিষ্ঠান আমি গড়ে তুলতে চাই। শুধু মূকাভিনয় নয়, সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই পৃষ্ঠপোষকতার দরকার রয়েছে। বাঙালি জাতি সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এবং এ জন্য সুনামও রয়েছে। তবে সময়ের দাবি তো এখন অনেক। বিশ্বায়নের এ যুগে সর্বত্র নিজেদের তুলে ধরার জন্য অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী করতে পারে, তেমনি সংস্কৃতিও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
সমকাল : আপনি বিজ্ঞাপন চিত্রেও কাজ করছেন...
পার্থ প্রতিম : সম্প্রতি এইডস বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে একটি কাজ করেছি। এতে মূকাভিনয়ের মাধ্যমেই বিপদের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণফোন ও ব্রিটিশ টেলিকমের হয়েও কাজ করছি।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
পার্থ প্রতিম : সমকাল পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ।
No comments