মাটি-মানুষের কাছাকাছি যে জন by সৌমিত্র শেখর
মারো জোয়ান হেইয়ো মারো কষে টান/তালে তালে ফেল বৈঠা নদীতে উজান_ এ গানটি শোনেননি, অথচ গণআন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল এমন মানুষ এ দেশে খুব কমই পাওয়া যাবে। অন্যভাবে বললে, পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা বা কর্মীর কাছে যে নামটি শুধু শ্রদ্ধেয় বলেই বিবেচিত হতো না, তার কর্ম অনুসরণীয় বলেও মেনে নেওয়া হতো, তিনি ওই গানের রচয়িতা সত্যেন সেন।
সত্যেন সেনের পরিচয় বহুবিধ; তবে সবকিছুকে অতিক্রম করে তার যে পরিচয়টি প্রধান হয়ে ওঠে তা হলো তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন বিক্রমপুরের সোনারং গ্রামে সত্যেন সেনের জন্ম হয়। অকৃতদার এই মহান পুরুষ ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি শান্তিনিকেতনে দিদি প্রতিভা সেনের বাড়িতে লোকান্তরিত হন। তিনি শৈশবে বিক্রমপুরে সাংস্কৃতিকভাবে ঋদ্ধ একটি জনপদ ও পরিবারে বড় হন। গ্রামেই তিনি বিদ্যাচর্চা শুরু করেন। কিন্তু পরে কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন। এ সময় তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সশস্ত্রবাদী 'অনুশীলন' দলের সঙ্গে সংযুক্তির কারণে তাকে জেলেও যেতে হয়। ১৯৩৬-৩৭ সালে বহরামপুর জেলে বসেই তিনি বাংলায় এমএ পরীক্ষা দেন। এরপর জেল থেকে ছাড়া পেলে শান্তিনিকেতনে ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর গবেষণা করার জন্য তাকে বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তিনি তা নেননি। ততদিনে তার রাজনৈতিক দর্শনের পরিবর্তন ঘটেছে। সশস্ত্রপন্থা পরিত্যাগ করে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদে স্থিত হয়েছেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পার্টি তাকে কৃষক সমিতির দায়িত্ব দিয়েছিল। গ্রামে মাঠের পর মাঠ তিনি হেঁটে কৃষক সমিতি সংগঠিত করেন। এ কাজ করতে গিয়ে তার পা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনো ওষুধ নয়, আমগাছের আঠা দিয়ে তিনি পায়ের সেই ফাটা বন্ধ করার চেষ্টা করতেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে পাকিস্তানি শাসকরা কমিউনিস্ট ও হিন্দুদের ওপর যে বিদ্বেষমূলক নীতি নিয়েছিল, সেই রোষানল থেকে সত্যেন সেন রেহাই পাননি। এ সময় বিভিন্ন মেয়াদে ১৫ বছর তাকে জেলে রাখা হয়।
সত্যেন সেনের অমর কর্ম বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ১৯৬৪ সালে সৃজনী সাহিত্যিক ও শিল্পীগোষ্ঠী নামে একটি গণমুখী সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯ সালে আহমদ ছফার সঙ্গে মাসিক স্বদেশ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন।
সত্যেন সেন দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও সাংবাদিক-শ্রমিক স্বার্থরক্ষার আন্দোলন করেছেন তিনি। ১৯৭০ সালের ১৪ এপ্রিল দ্বিতীয় বেতন বোর্ড অনুসারে নতুন বেতন কাঠামোর দাবিতে যে সাংবাদিক ধর্মঘট হয়েছিল, তাতে সত্যেন সেনের উলেল্গখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি সাহিত্য রচয়িতা হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি লেখেন 'ভোরের বিহঙ্গী' নামের একটি উপন্যাস। তবে সেটা অনেক পরে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫৭ সালে সিপাহি বিপল্গবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে 'মহাবিদ্রোহের কাহিনী' নামে এক পরিচিতিমূলক অসাধারণ গ্রন্থ। জেলে থাকাকালে তিনি লেখেন_ 'রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ', 'আলবেরুনী', 'সেয়ানা', 'এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে' ইত্যাদি উপন্যাস। শ্রেণীসত্যের নিরিখে বাইবেল থেকে উপাদান নিয়ে রচনা করেন 'অভিশপ্ত নগরী ও পাপের সন্তান'। এই অভিশপ্ত নগরী যেন তৎকালীন অভিশপ্ত পাকিস্তান! তার উলেল্গখযোগ্য অন্যান্য গ্রন্থ : পাতাবাহার (শিশুতোষ), জীববিজ্ঞানের নানাকথা (বিজ্ঞান), ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা (ইতিহাস) ইত্যাদি।
১৯৭০ সালে উপন্যাস সাহিত্যে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে সাহিত্যে একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন। সত্যেন সেন আজীবন বাংলাদেশের মাটি, মানুষ ও সংস্কৃতির কাজ করে গেছেন। তার অবদান ও আত্মত্যাগের তুলনায় আমরা খুব কমই তাকে স্মরণ করি। সত্যেন সেনের জন্মদিনে তার মর্ম ও কর্মকে শরণ করে পরিচ্ছন্ন পরিপার্শ্ব নির্মাণে অগ্রবতী হওয়া যায়।
সত্যেন সেনের অমর কর্ম বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ১৯৬৪ সালে সৃজনী সাহিত্যিক ও শিল্পীগোষ্ঠী নামে একটি গণমুখী সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯ সালে আহমদ ছফার সঙ্গে মাসিক স্বদেশ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন।
সত্যেন সেন দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও সাংবাদিক-শ্রমিক স্বার্থরক্ষার আন্দোলন করেছেন তিনি। ১৯৭০ সালের ১৪ এপ্রিল দ্বিতীয় বেতন বোর্ড অনুসারে নতুন বেতন কাঠামোর দাবিতে যে সাংবাদিক ধর্মঘট হয়েছিল, তাতে সত্যেন সেনের উলেল্গখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি সাহিত্য রচয়িতা হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি লেখেন 'ভোরের বিহঙ্গী' নামের একটি উপন্যাস। তবে সেটা অনেক পরে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫৭ সালে সিপাহি বিপল্গবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে 'মহাবিদ্রোহের কাহিনী' নামে এক পরিচিতিমূলক অসাধারণ গ্রন্থ। জেলে থাকাকালে তিনি লেখেন_ 'রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ', 'আলবেরুনী', 'সেয়ানা', 'এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে' ইত্যাদি উপন্যাস। শ্রেণীসত্যের নিরিখে বাইবেল থেকে উপাদান নিয়ে রচনা করেন 'অভিশপ্ত নগরী ও পাপের সন্তান'। এই অভিশপ্ত নগরী যেন তৎকালীন অভিশপ্ত পাকিস্তান! তার উলেল্গখযোগ্য অন্যান্য গ্রন্থ : পাতাবাহার (শিশুতোষ), জীববিজ্ঞানের নানাকথা (বিজ্ঞান), ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা (ইতিহাস) ইত্যাদি।
১৯৭০ সালে উপন্যাস সাহিত্যে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে সাহিত্যে একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন। সত্যেন সেন আজীবন বাংলাদেশের মাটি, মানুষ ও সংস্কৃতির কাজ করে গেছেন। তার অবদান ও আত্মত্যাগের তুলনায় আমরা খুব কমই তাকে স্মরণ করি। সত্যেন সেনের জন্মদিনে তার মর্ম ও কর্মকে শরণ করে পরিচ্ছন্ন পরিপার্শ্ব নির্মাণে অগ্রবতী হওয়া যায়।
No comments