বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৫৩ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ শাফী ইমাম রুমী, বীর বিক্রম শত্রুসেনার নির্যাতনে শহীদ হন তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডিতে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা ঢাকার ধানমন্ডিতে দুর্ধর্ষ এক গেরিলা অপারেশন চালান।
এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন শাফী ইমাম রুমী। তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন কাজী কামালউদ্দীন (বীর বিক্রম), শহীদ মো. বদিউল আলম (বীর বিক্রম), কামরুল হক স্বপন (বীর বিক্রম) ও হাবিবুল আলম (বীর বিক্রম) প্রমুখ। এ অপারেশনের চার দিন পর শাফী ইমাম রুমীসহ তাঁর আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে অমানুষিক নির্যাতনে শহীদ হন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আটক করেছিল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য আবুল বারক আলভীকেও (শিল্পী)। তিনি বেঁচে যান। নির্যাতনের বর্ণনা আছে তাঁর লেখায়। তিনি লিখেছেন: ‘৩০ আগস্ট ভোরবেলা দেশবরেণ্য সুরকার আলতাফ মাহমুদের বাসা পাক সেনারা ঘিরে ফেলে। আমি রাতে ওই বাসায় ছিলাম। আলতাফ মাহমুদ ও অন্যান্যদের সঙ্গে আমাকেও ধরে নিয়ে যায়। ওখানে দেখলাম আমাদের অনেকেই ধরা পড়েছে। সেই পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে ছিল রুমী, জুয়েল, বদি, হাফিজ, চুন্নু ভাই, বেলায়েত ভাই (ফতেহ আলীর দুলাভাই), উলফাতের বাবা, আলমের ফুফা আরো অনেকে।
‘রুমীকে শুধু একদিনই দেখেছি। রুমীকে বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল প্রচণ্ড টর্চার করা হয়েছে। দুপুরের পর ওকে নিয়ে গেল। তারপর আর দেখা হয় নাই। আমাকেও আমার সহযোদ্ধা অন্যান্য গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কথা বের করার জন্য অনেক টর্চার করা হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে দেহ, আঙুলগুলো ভেঙে গেছে। হাত-পিঠ ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। থেঁতলে দিয়েছে সারা শরীর। অতএব আমিও জানি, রুমীর কাছ থেকেও কথা বের করতে এই নির্দয় পাক সেনারা কি কি করতে পারে।’
হাবিবুল আলম লিখেছেন: ‘রুমী খুব বেশি দিন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা কতগুলো অ্যাকশন করেছে, সেটা বড় কথা নয়। যদি একটা অ্যাকশনে সে সাহস ও বীরত্ব দিয়ে সফল হতে পারে, সেটাই বড় কথা। রুমী ঢাকার অপারেশনে অনেক বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। আর এ রকমই একটি সাহসিকতাপূর্ণ অপারেশন ছিল ২৫ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখ।
‘এই অ্যাকশনে যাওয়ার আগে আমরা কণিকায় (রুমীদের বাড়ি) গিয়েছিলাম। বেলা ১১-১২টার দিকে। কাজী, বদি, স্বপন, চুন্নু, শাহাদত চৌধুরী, জুয়েল এরা সবাই এল। আমরা খাওয়াদাওয়া সেরে রুমীকে বিকেলে ২৮ নম্বরে আসতে বলে চলে এলাম। রুমীকে অপারেশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে বললাম।’
শাফী ইমাম রুমী ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ক্লাস শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইলিনয় স্টেটের ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেখানে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। জুনের মাঝামাঝি মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ শাফী ইমাম রুমীকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৪৭। গেজেটে তাঁর নাম মোহাম্মদ রুমী।
শহীদ শাফী ইমাম রুমীর বাবার নাম শরীফুল আলম ইমাম। মা জাহানারা ইমাম। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে রুমী ছিলেন বড়। শাফী ইমাম রুমীর পৈতৃক আদি বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার খাটুরিয়া গ্রামে। রুমীর বাবা শরীফুল আলম ইমাম বসবাস করতেন ঢাকার ৩৫৫ শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণিতে (পুরনো এলিফ্যান্ট রোড)। বর্তমানে বাড়িটি শহীদজননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর।
সূত্র: শহীদ শাফী ইমাম রুমী স্মারকগ্রন্থ।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আটক করেছিল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য আবুল বারক আলভীকেও (শিল্পী)। তিনি বেঁচে যান। নির্যাতনের বর্ণনা আছে তাঁর লেখায়। তিনি লিখেছেন: ‘৩০ আগস্ট ভোরবেলা দেশবরেণ্য সুরকার আলতাফ মাহমুদের বাসা পাক সেনারা ঘিরে ফেলে। আমি রাতে ওই বাসায় ছিলাম। আলতাফ মাহমুদ ও অন্যান্যদের সঙ্গে আমাকেও ধরে নিয়ে যায়। ওখানে দেখলাম আমাদের অনেকেই ধরা পড়েছে। সেই পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে ছিল রুমী, জুয়েল, বদি, হাফিজ, চুন্নু ভাই, বেলায়েত ভাই (ফতেহ আলীর দুলাভাই), উলফাতের বাবা, আলমের ফুফা আরো অনেকে।
‘রুমীকে শুধু একদিনই দেখেছি। রুমীকে বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল প্রচণ্ড টর্চার করা হয়েছে। দুপুরের পর ওকে নিয়ে গেল। তারপর আর দেখা হয় নাই। আমাকেও আমার সহযোদ্ধা অন্যান্য গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কথা বের করার জন্য অনেক টর্চার করা হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে দেহ, আঙুলগুলো ভেঙে গেছে। হাত-পিঠ ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। থেঁতলে দিয়েছে সারা শরীর। অতএব আমিও জানি, রুমীর কাছ থেকেও কথা বের করতে এই নির্দয় পাক সেনারা কি কি করতে পারে।’
হাবিবুল আলম লিখেছেন: ‘রুমী খুব বেশি দিন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা কতগুলো অ্যাকশন করেছে, সেটা বড় কথা নয়। যদি একটা অ্যাকশনে সে সাহস ও বীরত্ব দিয়ে সফল হতে পারে, সেটাই বড় কথা। রুমী ঢাকার অপারেশনে অনেক বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। আর এ রকমই একটি সাহসিকতাপূর্ণ অপারেশন ছিল ২৫ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখ।
‘এই অ্যাকশনে যাওয়ার আগে আমরা কণিকায় (রুমীদের বাড়ি) গিয়েছিলাম। বেলা ১১-১২টার দিকে। কাজী, বদি, স্বপন, চুন্নু, শাহাদত চৌধুরী, জুয়েল এরা সবাই এল। আমরা খাওয়াদাওয়া সেরে রুমীকে বিকেলে ২৮ নম্বরে আসতে বলে চলে এলাম। রুমীকে অপারেশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে বললাম।’
শাফী ইমাম রুমী ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ক্লাস শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইলিনয় স্টেটের ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেখানে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। জুনের মাঝামাঝি মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ শাফী ইমাম রুমীকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৪৭। গেজেটে তাঁর নাম মোহাম্মদ রুমী।
শহীদ শাফী ইমাম রুমীর বাবার নাম শরীফুল আলম ইমাম। মা জাহানারা ইমাম। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে রুমী ছিলেন বড়। শাফী ইমাম রুমীর পৈতৃক আদি বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার খাটুরিয়া গ্রামে। রুমীর বাবা শরীফুল আলম ইমাম বসবাস করতেন ঢাকার ৩৫৫ শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণিতে (পুরনো এলিফ্যান্ট রোড)। বর্তমানে বাড়িটি শহীদজননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর।
সূত্র: শহীদ শাফী ইমাম রুমী স্মারকগ্রন্থ।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments