২০০১-এর সব নির্বাচনোত্তর সহিংসতার বিচার চলুক-বিলম্বিত বিচার

বলা হয়ে থাকে, বিলম্বিত বিচার সুবিচার নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার মধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার স্কুলছাত্রী গণধর্ষণ বিচারের রায় ঘোষণার পর বলতে হচ্ছে, বিলম্বিত হলেও এই বিচার প্রয়োজন ছিল। ধর্ষণ মামলার আসামিদের ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সুবিচারের থেকে কম কিছু, তাও বলা যায় না। দৃশ্যত একটি ঘটনায় একটি


নিপীড়িত পরিবার আদালতের মাধ্যমে সান্ত্বনা পেলেও এর প্রতীকী গুরুত্ব বিরাট। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং নির্বাচনে পরাজিত পক্ষের লোকজনের ওপর তখন সরকারি মদদে ভয়ংকর অনাচার করা হয়েছিল। হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ এমন কোনো অপরাধ ছিল না, যা করা হয়নি। সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এই রায় সেই জমাট ব্যথার সিন্দুকের ঢাকনা খুলে দিল এবং সব কটি অন্যায়ের প্রতিকারের প্রতীক হয়ে উঠল। আমরা চাই, এই রায়কে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে বাকি সব ঘটনার বিচারও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাক।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরের প্রহর ছিল এক কালো অধ্যায়। সারা দেশে অনেক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন-নৃশংসতা চালানো হয়। হত্যা ছাড়াও সম্পদ ধ্বংস এবং ধর্ষণ হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নিকৃষ্ট প্রতীক। ওই অবস্থায় ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ব দেলুয়া গ্রামের এক সংখ্যালঘু পরিবারের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। আসামিরা সবাই ছিল বিএনপি-জামায়াতের কর্মী। মেয়েটির বাবা ১০ অক্টোবর ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০০২ সালের ৯ মে পুলিশ আদালতে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বিচার শুরু হয়। আদালতকে অভিনন্দন, দীর্ঘসূত্রতা হলেও তাঁরা ন্যায়বিচারের পথে অবিচল ছিলেন।
উল্লেখ্য, মামলাকে বিপথে চালিত করার জন্য জোট সরকারের সাংসদ এম আকবর আলী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে মামলার পুনঃ তদন্ত নিশ্চিত করেন এবং গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সেই পুনঃ তদন্তে মূল আসামিদের বাদ রেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর দোষ চাপান। কিন্তু বাদীর নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি বেঁচে যায়। দেশব্যাপী সহিংসতার বিরুদ্ধে এ রকম অন্যান্য মামলাকেও হয় বিপথগামী, নয়তো ভণ্ডুল করার চেষ্টা করা হয় স্বয়ং সরকারের মদদে। যা ক্ষমতাসীন জোট সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারটি অস্বীকার করার পাশাপাশি সুবিচারের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সেই বাধা এখন নেই, কিন্তু নির্যাতিতদের ফরিয়াদ এখনো স্তিমিত হয়নি। স্বজন হারানো ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর শোকের অনল এখনো শান্ত হয়নি। সে কারণেই সব কটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হতেই হবে। আশার কথা যে সম্প্রতি সরকারের কাছে এ-বিষয়ক তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। তার আলোকে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে এসব রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার শুরু করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.