নাগরিক সমস্যা ও সরকার-গণমাধ্যমকে আস্থায় রাখুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা মতবিনিময় করেছেন। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভায় রদবদল, সাংবাদিকদের সম্পর্কে একাধিক মন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্য, সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা প্রভৃতি নানা প্রসঙ্গ এ সময় উঠে আসে।
একই দিনে জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে তিনি বিদ্যুৎ-পানি থেকে যানজটসহ নানা বিষয়ে সরকারের সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের টক শোতে সরকারের সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একই সঙ্গে হলুদ সাংবাদিকতার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, এমনভাবে সমালোচনা করা ঠিক নয় যাতে ভালো কাজের উদ্যম হারিয়ে ফেলতে হয়। প্রধানমন্ত্রী সংবাদপত্রের মনোযোগী পাঠক। ব্যস্ততার মধ্যেও টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় তার রয়েছে অগাধ আস্থা। বিভিন্ন বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণে যুক্তি রয়েছে। স্বাধীনতা থাকলেও গণমাধ্যম যা খুশি লিখতে পারে না, টেলিভিশনে যা ইচ্ছা বলা যায় না। এমনও নয় যে কঠোর ও লাগামহীন সমালোচনা করলেই স্বল্পোন্নত দেশটির সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে এটাও আমরা বলতে চাই, মূলধারার সংবাদপত্র ও বেতার-টেলিভিশনগুলো বস্তুনিষ্ঠ অবস্থানে থেকেই দায়িত্ব পালনে যত্নবান রয়েছে। তারা সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয় এবং যখন কোথাও সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে তার সমাধানে পরামর্শ-সুপারিশ তুলে ধরে। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার বেহাল দশার বিষয়টি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। গণমাধ্যমে এ প্রসঙ্গে অনেক সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ-প্রচার এবং প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হওয়ার পরই কেবল যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পূর্ণোদ্যমে কাজে নেমেছে। এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যরা উপস্থিত থেকে এ দায়িত্ব পালন করুন, সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। কিন্তু তারা ভোটারদের প্রতি অঙ্গীকার সঠিকভাবে পালন করছেন না। আমরা বিনয়ের সঙ্গেই বলতে পারি, এ দায়িত্ব বহুলাংশে গণমাধ্যম কর্মীরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এ কাজে কখনও বিচ্যুতি হতেই পারে, কিন্তু উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী যখন বলেন গণমাধ্যম সরকারের মাত্রাতিরিক্ত সমালোচনা করছে এবং এভাবে প্রধানমন্ত্রীর জীবনের প্রতিও হুমকি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তখন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না। সরকার কিংবা অন্য যে প্রতিষ্ঠানের কাজে ভুলত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দেওয়াই গণমাধ্যমের দায়িত্ব। এ কাজে সবাই খুশি হবে এমন আশা করা যায় না। ভুলত্রুটি দূর করায় মনোযোগী হওয়ার পরিবর্তে সাংবাদিকদের দোষারোপ করা হলে তা গণতন্ত্রের জন্যও শুভ লক্ষণ নয়। আমরা জানি, বর্তমান মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, অনেক পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধান করতে হচ্ছে এবং সবকিছু রাতারাতি করা সম্ভব নয়। এ কাজে গণমাধ্যমও তাদের পাশেই রয়েছে। আমরা আশা করব, সরকার তাদের প্রতিপক্ষ মনে করবে না, বরং আস্থায় নেবে। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে যা কিছু বলা হয় তা সবই বিবেকের কণ্ঠস্বর_ এমন দাবি হয়তো করা চলে না; কিন্তু এটাও ঠিক, মনগড়া নয় বরং যা কিছু চারপাশে ঘটে, সেটা তুলে ধরতেই গণমাধ্যম সচেষ্ট থাকে। এ কারণে তাদের যত বেশি করে আস্থায় নেওয়া হবে ততই সরকারের দায়িত্ব পালন সহজ হবে এবং জনগণের কাছেও তাদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
No comments