আইন কানুন- অর্থঋণ আদালত আইনে অনেক গলদ by এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম

র্থিক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণের অর্থ আদায়ের জন্য ১৯৯০ সালে প্রথম অর্থঋণ আদালত আইন নামে একটি বিশেষ আইন প্রবর্তিত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় এ-সংক্রান্ত বিশেষ আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের মতো আর্থিক তথা অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আইনের প্রয়োগ, কার্যকারিতা, উপকারিতা, অপকারিতা, সুবিধা, অসুবিধার ওপর শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আইন যত সতর্কতার সঙ্গে প্রণীত হোক না কেন, বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের সময় এর ফাঁকফোকর বের হতে শুরু করে। অর্থঋণ আদালত আইনের ক্ষেত্রেও এই ধারাবাহিকতার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
বেশ কয়েকবার সংশোধন, সংযোজন করেও আইনটিকে পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল আইনে পরিণত করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালের ১০ মার্চ আগের ‘অর্থঋণ আদালত আইন, ১৯৯০’ রহিত করে প্রণীত হয় ‘অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩’। কয়েক বছর যেতে না যেতেই আবার সংশোধন। তা সত্ত্বেও কি অর্থঋণ আদালত আইন পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে? ১৯৯০ সালের আইনে ছিল মাত্র নয়টি ধারা, ২০০৩ সালের আইনে ৬০টি ধারা। উপরন্তু ৫৮ ধারায় সরকারকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।
আমার জানামতে, অর্থঋণ আদালত বিধিমালা আজও প্রণীত হয়নি। বিধিমালা প্রণীত হলেই আইনের দুর্বল দিকগুলো দূর হবে—এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি আইন প্রণীত হওয়ার পর অন-উদ্ভূত বা এমন সব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দেওয়ানি কার্যবিধি আইন সংশোধন করে দেওয়ানি কার্যবিধিতে ১৫১ ধারাটি সংযোজন করা হয়েছে। এই ধারায় যে ক্ষেত্রে আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান নেই, সে ক্ষেত্রে আদালতের সুবিবেচনায় অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবে। অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর ৫৭ ধারাটিও সীমিত অর্থে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারার মতো। আইনে অনুল্লিখিত বিষয়ের সমাধান হলেও উল্লিখিত বিধানগুলোর সমাধান কীভাবে হবে? অর্থঋণ আদালত আইনের ২১ থেকে ২৩ ধারায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা আপস মীমাংসার বিধান আছে। আবার ডিক্রি জারির পর্যায়েও আপস নিষ্পত্তির সুযোগ রেখে ৩৮ ধারা প্রণীত হয়েছে। আইনের ২১(৯) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোর্ট ফি আইন, ১৮৭০-এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি এই ধারার অধীন কোনো মামলার বিরোধ মীমাংসা সভার মাধ্যমে মীমাংসিত হয়, তাহা হইলে আদালত কোনো পক্ষ কর্তৃক আরজি কিংবা লিখিত বর্ণনার ওপর প্রদত্ত কোর্ট ফি ফেরত প্রদানের লক্ষ্যে আদেশ অন্তর্ভুক্ত করিয়া একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করিবে এবং উহার ভিত্তিতে পক্ষগণ প্রদত্ত কোর্ট ফি ফেরত পাইবার অধিকারী হইবেন।’ কিন্তু কোর্ট ফি সার্টিফিকেট বলে কে কীভাবে কোর্ট ফি ফেরত দেবেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আইনে উল্লেখ নেই। কোর্ট ফি খাতে সরকারের কাছে জমাকৃত অর্থ অফেরতযোগ্য। এই অর্থ কিংবা সমমূল্যের কোর্ট ফি ফেরত প্রদানের জন্য ‘ট্রেজারি রুল’সহ আনুষঙ্গিক অনেক আইন ও বিধির সংশোধন প্রয়োজন। তা ছাড়া নগদ অর্থ ফেরতের জন্য তহবিল বরাদ্দকরণ, কোর্ট ফি ফেরতের বিধি প্রণয়ন ছাড়াই বিগত সাত বছর ধরে এই আইনে বিচার চলছে। ফলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উৎসাহের দিকটিতে ভাটা পড়েছে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত ২০০২ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় কর্মশালায় কোর্ট ফি ফেরতের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি কী হবে, সে সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা হলেও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্ট সর্বপ্রথম আইন ‘অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩’-এ এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। নতুন এ আইনে ডিক্রি জারি মোকদ্দমা দায়েরের বিষয়টিও অপূর্ণাঙ্গ। যদিও আইনের ৩৯ ধারায় ডিক্রি জারিসংক্রান্ত বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সরকারের আছে। আইনের আরও অনেক অসংগতিপূর্ণ ধারা রয়েছে। যেমন ৩৩(১) ধারায় বাদীর খরচে দুটি পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রচারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই বিজ্ঞপ্তির খরচ কীভাবে সমন্বয় করবে এবং কোনো ক্ষেত্রে আদালত ব্যাংক হারের চেয়ে কম সুদ আদায়ের ডিক্রি দিলে, ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট পাওনা কীভাবে সমন্বয় করবে, সে সম্পর্কেও আইনে সুস্পষ্ট বিধান থাকা উচিত ছিল। তাই অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-কে কার্যকর করার জন্য মাঠপর্যায়ে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অসংগতি, দুর্বলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি নিখুঁতভাবে দূর করা প্রয়োজন। আশা করি, কোর্ট ফি ফেরতের বিষয়টি ব্যাখ্যাসহ ভবিষ্যতে অর্থঋণ আদালত আইন আরও নির্ভুল ও কার্যকর আইনে পরিণত হবে।
=============================
আইন কানুন- গাড়ি আটক হলে মালিকের করণীয় by মো. রাশেদ খান  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আমাদের রাজনীতিতে বখাটেপনা' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  স্মরণ- 'আমরা তো কাঁদছিই' by নেয়ামতউল্যাহ  চিত্রকলা- এক পরিবারের বৃক্ষ ও শেকড় সুত্র প্রথম আলো  গল্পসল্প- 'ঢাকা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে' by উম্মে মুসলিমা  কৃষি আলোচনা- 'বরেন্দ্রভূমির কৃষকের বীজবিদ্রোহ' by পাভেল পার্থ  খবর- ৩০ নভেম্বরের হরতালের আগেই মারমুখী পুলিশ  খবর- চট্টগ্রামে ভাঙ্গা ভাঙ্গির রাজনীতি  ফিচার খবর - নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা’র বিরুদ্ধে রাজপথে আনসার-ভিডিপি!  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রটোকল কার' : গরিবের ঘোড়ারোগ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ডা. মিলন' by সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী দলের সহাবস্থান' by ড. তারেক শামসুর রেহমান  আলোচনা- 'উপকূলের মাটির মানুষের কান্না' by জয়নুল আবেদীন  আগামী দিনের লক্ষ্য নির্ধারণে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন  দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার স্বপ্নের নতুন পথ  প্রকৃতি- বাংলাদেশের ঝুঁকি বাড়ছে কমেনি কার্বন নিঃসরণ by ইফতেখার মাহমুদ  প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস 'সামাজিক ব্যবসা অনেক ক্ষেত্রেই বেশিকার্যকর'  আলোচনা- 'তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে করণীয়' by by মোহাম্মদ জমির  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্রের স্বার্থে পারস্পারিক সম্মানবোধ' by ড. আবু এন. এম. ওয়াহিদ  শিল্প-অর্থনীতি 'চরম দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে' by জাহাঙ্গীর শাহ  বিশেষ রচনা- মেডির মিরাকল by মাসুদ রহমান




দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম
আইনজীবী, পঞ্চগড় জেলা বার


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.