ইসরাইলি হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে জীবন-মরণ লড়াই করছে লেবাননের ছোট্ট ইভানা

এখনও ফোটেনি মুখের ভাষা। বয়স মাত্র দুই বছর। এমন একটি শিশুর কি-ইবা অপরাধ থাকতে পারে। তবুও এমন নিরপরাধ শিশুও রক্ষা পায়নি ইসরাইলি সেনাদের হাত থেকে। তাদের বোমার আঘাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় জীবন-মরণ লড়াই করছে শিশু ইভানা। কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় কোন অপরাধে অবুঝ এই শিশুটির ওপর হামলা হলো, তাহলে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া হয়তবা কোনো উত্তর দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। হাসপাতালের বিছানায় অর্ধেক শরীর প্লাস্টারে মোড়ানো শিশুটিকে দেখে যে কেউ মুর্ষে যেতে পারেন। ইসরাইলের বোমার আঘাতে ইভানার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক শরীরই পুড়ে গেছে।

স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননের আল আলিয়াতে বিমানহামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলার সময় বিমান থেকে ফেলা মরণঘাতী বোমার আঘাতে মারাত্মকভাবে পুড়ে যায় অবুঝ ওই শিশুটির অর্ধেক শরীর। এরপর থেকেই হাসপাতালের বিছানায় গভীর যন্ত্রণায় ছটফট করছে মাত্র দুই বছরের ইভানা।

তার মা ফাতিমা গণমাধ্যমকে ওই মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনার সময় ডুকরে কেঁদে ওঠেন। তিনি বলেছেন, ‘সেদিন আমি সকালের নাস্তা তৈরি করছিলাম। আমি রান্না ঘরে ছিলাম আর আমার শিশুটি ছিল দোতলার বারান্দায়। ঠিক ওই সময়টাতেই আমাদের বাড়িতে আছড়ে পড়ে ইসরাইলের বোমা। এতে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে আগুন জ্বলে ওঠে। কালো ধোঁয়ায় প্রায় অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ। যতক্ষণে আমি ইভানার কাছে পৌঁছাই ততক্ষণে আমার বাচ্চাটির শরীরের অর্ধেক পুড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরো বাড়ি কালো ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার পর আমি একা আমার বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে তাকে উদ্ধার করেছি। ওই দিনটা আমার জন্য ভয়াবহ যন্ত্রণার একটি দিন ছিল। মনে হয় এখনও আমি দুঃস্বপ্নের মধ্যে বেঁচে আছি।’

দিশেহারা হয়ে ফাতিমা এবং তার স্বামী মোহাম্মদ দুই সন্তান নিয়ে জানালা থেকে লাফিয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলেন। এরপর তারা দ্রুত টায়ার শহরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তবে তাদের সন্তানের অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাদের বৈরুতের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ইভানাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার মা জানিয়েছেন, তিনি ভাবতেই পারেনি তার মেয়েটা বেঁচে থাকবে। একদম হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন ফাতিমা এবং তার স্বামী।
ইভানার অবস্থা এতটাই করুণ যে সে তার পা নাড়াতে পারছে না। প্রতিটি মুহূর্ত যেন অসহনীয় এক যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে বেঁচে আছে লেবাননের ওই শিশুটি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.