ছাত্র-জনতার আন্দোলন: জব্বারের চিকিৎসা হবে তো? by ফাহিমা আক্তার সুমি
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন সকালে আশুলিয়া থেকে শাহবাগে যেতে চেয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে আসি। আবার বাসা থেকে ইপিজেডের সামনে যাই। সেখানে প্রচুর ছাত্র-জনতা জড়ো হচ্ছিলো। আমি তাদের সঙ্গে মিছিলে যাই। আশুলিয়া থানার সামনে যাওয়ার পরে দেখি পুলিশের গুলিতে অনেকে আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আক্রমণ করার চেষ্টা করছিল এ সময় পুলিশ সদস্যরা মসজিদের দিকে চলে যায়। তখন তারা আমাদের ওপরে কিছু করবে না বলে জানায়। আমরা এ সময় মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। তখন পুলিশ আমাদের একদম কাছাকাছি। এ সময় তারা আমাদের থানার দিকে নেয়ার চেষ্টা করে এবং গুলি ছুড়তে থাকে। আমরা শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনতা মিশ্রিত হয়ে যাই। এ সময় তারা আতঙ্কিত হয়ে গুলি করতে থাকে। বেশির ভাগ গুলিগুলো ছুড়েছে ছাদ এবং টাওয়ারের উপর থেকে। আমরা কখনো বুঝতে পারিনি এভাবে গুলি করবে। জীবন বাঁচাতে সবাই এদিকে-সেদিকে ছোটাছুটি শুরু করেছে। এ সময় আমার শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়। এরআগে অনেকগুলো রাবার বুলেট লেগেছিল সেগুলো ১৮ই জুলাইয়ের পরে ছিল। আহত হওয়ার পর আশুলিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নেই। ব্যথা কমলে পরের দিন সকালে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে দুইদিন রেখে আমাকে ১৪ দিন পরে আবার হাসপাতালে যেতে বলেন। ১৪ দিন পর হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানান এটা অপারেশন করার দরকার নেই, যেভাবে আছে এভাবে থাকুক। অপারেশন করলে অনেক ঝুঁকি হয়ে যাবে।
জব্বার বলেন, আমার পেছন থেকে কোমরের নিচের দিকে গুলি লাগে। এরপর পিজিতে ভর্তি হই। সেখানে প্রায় ১০-১১ দিনের মতো ভর্তি ছিলাম। সেখানে চিকিৎসকরা একটি বোর্ড গঠন করেছিলেন। তারা জানান আমার যদি অপারেশন হয় তাহলে প্যারালাইজড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হয় তখন দেখা যাবে। তবে আমার ভয় হচ্ছে এখন এমন একটা সময় যেটা দ্রুত করা যাবে। এবং সবার সহযোগিতা বা ইচ্ছা থাকবে। পরবর্তীতে তো এই মানুষগুলোকে নাও পেতে পারি। শরীরের বুলেটটি বিদ্ধ থাকলে সেটি কতোটুকু ভালো হবে নিয়ে চিকিৎসকরা কথাও বলেছেন বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে। আমার এখন চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। হাঁটাচলা বেশি করলে পায়ে অনেক ব্যথা হয়। গতকাল আমি মেডিকেল থেকে বাসায় এসেছি এতটুকুতেই আমার শরীর অনেক ব্যথা হয়েছে, জ্বর এসেছে। বর্তমানে আশুলিয়াতে ভাড়া বাসায় আছি। যদি বিদেশে যাওয়া লাগে তাহলে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন। আর অপারেশনটি করলে যদি আরও খারাপ কিছু হয় সেজন্য চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমার যদি কিছু হয় তাহলে আমার মা-বোনকে দেখবে কে। দুই বছর ধরে ঢাকায় থাকি। আমরা দুই ভাইবোন। একমাত্র বোন স্বর্ণাকে নিয়ে আশুলিয়াতে থাকি। সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাবা আবুল কালাম আজাদ ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন কোনো সম্পর্ক নেই। মা আরজু আক্তার খাদিজা আমাদের বড় করেছেন। মা এখন জর্ডানে থাকেন। আমার থার্ড সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে দিতে পারছি না। পড়াশোনায়ও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ঠিকমতো মানুষ করার জন্য বিদেশে গেছে। সবকিছু আমার মা বহন করে। আমি আগে একটা টিউশনি করতাম সেটি বাদ দিয়েছি।
তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আমার আফসোস নেই, এর চেয়ে আরও বড় কিছু আমার হতে পারতো। মা-বোনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। একসময় চিন্তা করতাম বিদেশ যাবো কিন্তু গত ৫ই আগস্টের পর থেকে মনে হচ্ছে দেশে থেকেই ভালো কিছু করবো। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে হচ্ছে। মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা চলে আসে যে এই বুলেটটি শরীরে থাকলে ভবিষ্যতে বড় কোনো সমস্যা হবে কিনা। আগে একটা স্বাভাবিক শরীর নিয়ে চলাফেরা করেছি আর এখন ডিফারেন্ট। সবসময় মনে হয় আমার হিপ জয়েন্টের মধ্যে কিছু একটা আছে। আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলাম। আমার ইউনির্ভাসিটি থেকে কিছু সহযোগিতা করেছেন। তাছাড়া সমন্বয়কসহ অনেকে খোঁজখবর নিয়েছেন। তবে আর্থিকভাবে সহযোগিতা না পেলেও তারা পরামর্শ দিয়েছেন। আমি নিজেই এটা চাইনি যদি বিদেশে যেতে হয় তখন তারা আমাকে সহযোগিতাটুকু করুক। আমার বেশি কিছু চাওয়ার নেই শুধু একটু সুচিকিৎসা দরকার।
No comments