সাবেক এমপি হাবিব ও তার পুত্রের সম্পদের পাহাড় by প্রতীক ওমর

হাবিবর রহমান। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। সরকারের নানা প্রকল্পে কাজ না করেই টাকা তুলেছেন টানা ১৫ বছর। ক্রমেই টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন। এলাকার মানুষের চোখের সামনে রাষ্ট্রের টাকা, জনগণের টাকায় নিজের সম্পদ গড়ে তুললেন অথচ কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায়নি। কথা বললেই মিথ্যে মামলায় জীবন ধ্বংস করে দিতো। হাবিব ও তার ছেলে আসিফ ইকবাল সনির দাপটে শেরপুর-ধুনটের কেউ কোনোকিছু করার সাহস পেতো না। হাবিব এক সময় পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন। পরে সংসদ সদস্য (এমপি) হন। গত ১৫ বছরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হাবিব। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আর শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দুদকের। ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংসদ সদস্য হওয়ার পর ছেলে আসিফ ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন হাবিবর রহমান। ধুনটে জালশুকায় আদি বাড়ির পাশে ৭০ বিঘা বিল-বাইশা দখল করে তার সঙ্গে দেড়শ’ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলেন বাবু পার্ক সিটি। এ ছাড়া, ধুনট শহরে ২১ শতাংশ জায়গার ওপর বাণিজ্যিক ভবন, শেরপুরের ছনকায় ৫০ বিঘা জমির আসিফ ব্রিক ফিল্ড, শেরপুর শহরের দুবলাগাড়িতে ৩০ বিঘার উপর নির্মাণ করেছেন বাগানবাড়ি ও হিমাগার। অভিযোগ উঠেছে, শত কোটি টাকার সম্পদের বাইরেও তার আছে দেশ-বিদেশে আরও হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। এসব সম্পদের উৎস তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার কথিত এক সাংবাদিক ছিলেন হাবিবের অবৈধ টাকা আয়ের আদায়কারী। বিভিন্ন দপ্তর থেকে নানাভাবে ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতো বাপ ও ছেলে। আদায়কৃত ঘুষের টাকার একটা অংশ পেতেন ওই কথিত সাংবাদিক। একটি টেলিভিশনের লোগো হাতে থাকতো ওই সাংবাদিকের। ফলে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করা সহজ হতো। প্রতিমাসেই আদায় হতো কোটি টাকার উপরে। কথিত ওই সাংবাদিক ২০১৮ সালে তার স্ত্রীর বড় ভাইকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে ধুনটে বদলি করে এনে বসান। ধুনটের চর এবং প্রত্যন্ত এলকায় কাজ করার নামে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ এনে লুট করে নিয়েছে ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে ৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত। ওই কর্মকর্তা এখন বহাল তবিয়তে আছেন। ২০১৮ সালের আগেও ওই দপ্তর থেকে টাকা হরিলুটের সঙ্গে জড়িত ছিল হাবিব এমপির খাস লোক ওই সাংবাদিক। তার হাত দিয়েই সেই টাকার মোটা অংশ চলে যেতো এমপি এবং তার ছেলের ড্রয়ারে। অনুসন্ধানে তাদের দুর্নীতির আরও তথ্য বেরিয়ে আসছে। হাবিব ২০০৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ধুনটের দশ ইউনিয়নে লক্ষাধিক বড় গাছ কেটে নিয়েছেন। ওই গাছগুলো বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনবসতি রক্ষার জন্য লাগনো হয়েছিল। ওই গাছগুলো কাটার পর ধুনটে বন্যা নিয়ন্ত্রণ নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এমপিপুত্র সনি বেশির ভাগ সময় মাদকাসক্ত অবস্থায় থাকতো। একবার ধুনটে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে রাস্তার পাশে একটি বাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ওই ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছিল। পরে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মীমাংসা করেছেন।
বগুড়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাবেক এমপি হাবিবের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে ঢাকা থেকে তদন্ত হচ্ছে। বড় বিষয় বিধায় আমাদের অফিসের কিছু করার নেই।
এদিকে ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে পরিবারসহ আত্মগোপনে অভিযুক্ত হাবিবর রহমান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও নিহতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। মামলা হয়েছে ধুনটের আলোচিত জ্যোতি হত্যার ঘটনাতেও। বিএনপি’র সাবেক এমপি গোলাম মো. সিরাজকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করেও বাপ-বেটার নামে সম্প্রতি মামলা হয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.