তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার অঙ্গীকার

তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই। এ বছরের শুরুর দিকে তিনি দেশটির ক্ষমতায় আসেন। তারপর বৃহস্পতিবারই তিনি হাইপ্রোফাইল বক্তব্য রেখেছেন। সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করলেও দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের ওপর চীন যে সার্বভৌমত্বের দাবি করেছে, তার জবাবে উইলিয়াম লাই বলেন, তিনি সম্প্রসারণের (অর্থাৎ তাইওয়ানকে চীন দখল করে নেয়ার) বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখবেন। একইভাবে তার দেশকে দখল করে নেয়ার বিরুদ্ধে কাজ করবেন। উইলিয়াম লাই প্রতিশ্রুতি দেন তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার। জলবায়ু পরিবর্তন, সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

উইলিয়াম লাইয়ের বক্তব্যের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নে এর মধ্য দিয়ে লাইয়ের অস্থিরতা প্রকাশ পেয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের ৭৫তম বার্ষিকী পালনের মাত্র ৯ দিন পরেই তাইওয়ানের জাতীয় দিবসের স্মরণ অনুষ্ঠানে রাজধানী তাইপে জনতার উদ্দেশে ভাষণ রাখছিলেন উইলিয়াম লাই। প্রজাতান্ত্রিক চীন ও গণপ্রজাতান্ত্রিক চীন একে অন্যের অধীনস্ত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক্ষেত্রে যথাক্রমে তাইপে ও বেইজিং সরকারকে বুঝিয়েছেন। উইলিয়াম লাই বলেন, এই দেশে (তাইওয়ান) গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাইওয়ানের প্রতিনিধিত্ব করার কোনো অধিকার নেই গণপ্রজাতন্ত্র চীনের। এর আগে লাই বলেছিলেন, জাতীয় দিবসের ভাষণে যোগ দেয়া লোকজন তার কথায় বিস্মিত হবেন না। তিনি তাদেরকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করে তোলার মতো কিছু করবেন না তিনি। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই গত কয়েক মাসে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাকে অনেকেই উস্কানিমুলক হিসেবে দেখেন। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লেভ ন্যাচম্যান বলেছেন, সম্প্রতি লাই যেসব বক্তব্য দিয়েছেন বৃহস্পতিবারের বক্তব্য তার চেয়ে নমনীয়। তার চেয়ে কম উত্তেজনাপূর্ণ। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য খুব কমই রসদ পাবে চীন এর মধ্যে। তা সত্ত্বেও তার বক্তব্যকে ঘৃণা করার জন্য অনেক কারণ বের করে ফেলবে বেইজিং। লেভ ন্যাচম্যান মনে করেন, তার এই বক্তব্যের জবাবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বেইজিং অধিক পরিমাণে সামরিক মহড়া দেবে।

উইলিয়াম লাইয়ের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন এরই মধ্যে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, লাই স্বাধীনতার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য তিনি তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা সৃষ্টির হেয় উদ্দেশ্য নিয়েছেন। মুখপাত্র মাও নিং বৃহস্পতিবার বলেছেন, লাই চিং-তে (উইলিয়াম লাইয়ের চীনা নাম)-এর প্রশাসন যা-ই বলুক বা যা-ই করুক না কেন তাতে কিছু এসে যায় না। তাইওয়ান প্রণালীর দুই পাশে যা আছে তা একই চীনের অধীভুক্ত। এই সত্যকে তারা বদলাতে পারবে না। চীন একীভূত হতে চায় এই ঐতিহাসিক প্রবণতাকে থামাতে পারবে না। এমনিতেই একীভূত হয়ে যাবে। তবে উইলিয়াম লাই বলেছেন, জন্মভূমি তাইওয়ানকে চীন তার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে না। এটা একেবারে অসম্ভব। কারণ, ১৯৪৯ সালে বর্তমান কমিউনিস্ট শাসিত চীনা শাসকগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর কয়েক দশক আগে ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাইওয়ান সরকার। পক্ষান্তরে প্রজাতান্ত্রিক চীন (তাইওয়ান) প্রকৃতপক্ষে ওইসব গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের নাগরিকদের জন্মভূমি হতে পারে, যাদের বয়স কমপক্ষে ৭৫ বছর।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.