অভিযোগ নাকি অজুহাত by ইশতিয়াক পারভেজ

টেস্ট, টি-টোয়েন্টি দুইটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হার! এই পরাজয়ে বের হয়ে এসেছে টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতার কঙ্কাল। যুগ পেরিয়ে গেলেও এই দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনো খুঁজে পায়নি পায়ের তলায় মাটি। মাঝে মধ্যে জয় যেন স্বস্তি হয়ে আসে আবার তা মিলিয়ে যায় হারের বৃত্তে। ২০০০-এ টেস্ট অভিষেক আর ২০০৭ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ এখনো কেন ব্যাটিংয়ে ধুঁকছে! দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অন্যতম সেরা পেসার তাসকিন আহমেদের কন্ঠে এখন একই অভিযোগ। তারা একই সুরে জানিয়েছেন, এই ব্যর্থতার নেপথ্যে দেশের উইকেট এবং ব্যাটারদের স্কিলে ঘাটতি। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দাবি উইকেটে পরিবর্তন এসেছে। আর স্কিলের জন্য তো নামিদামি কোচও দলের সঙ্গে থাকেন। তাহলে ক্রিকেটারদের অভিযোগ কি শুধুই অজুহাত? দলের ক্রমাগত ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘ওরা (ভারত) বিশ্বের সেরা দল। ওরা আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞ। ওদের কন্ডিশনে তো ওরা ভালোই। উইকেট পড়লেও ওরা আমাদের বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হয়েছে। বড় স্কোর হাওয়ায় মারতে গিয়ে আমরা দ্রুত উইকেট হারিয়েছি, ছন্দ হারিয়েছি। ওদের মতো শুয়ে-বসে খেলতে গেলে আমাদের দেশে হয়তো বল মুখে লাগবে। ওরা ছোট থেকেই ভালো উইকেটে খেলে এভাবে খেলার অভ্যাস করেছে। আমাদের স্কিলেও সে কারণেই বড় সমস্যা।’

হ্যাঁ, ভালো উইকেটের কথা বলতে গিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম নিয়ে। সেখানে যে উইকেট তাতে করে ১৩০ থেকে ১৫০ করেই যে কোনো দলকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। হাতে গোনা ম্যাচেই দেখা মিলে ২’শ বা তার কাছাকাছি রানের। এমনকি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) মতো গ্ল্যামারাস আসরগুলোও মিরপুর কেন্দ্রিক। যেই মিরপুরে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ সেখানকার উইকেটই সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। এই মাঠে রান তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় ব্যাটারদের। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রান এখন ডাল-ভাত। অথচ মিরপুরে দুইশোর্ধ্ব রানের ইনিংস দেখতে পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার! এ নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটা ব্যাপার। আইপিএলে বেশির ভাগ ম্যাচই হাই-স্কোরিং হয়। ওরা জানে কিভাবে হাই-স্কোরিং রান তাড়া করতে হয়, হাই-স্কোর কিভাবে করতে হয়। ওদের কাছে ১৮০-২০০ রান খুবই স্বাভাবিক। আমাদের জন্য যেটা ঘরের মাঠে ১৩০, ১৪০, ১৫০ রান। সুতরাং আমাদের এই অভ্যাসটা কিন্তু খুবই কম, এটা বাস্তবতা। এই জন্যই আইপিএলের সঙ্গে বিপিএলেরও একটা বড় পার্থক্য।’ নিজের অবসর ঘোষণার দিনে দলের সাবেক অধিনায়ক ও সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও একই কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, ২০০৭ এ যেখান থেকে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি শুরু করেছে সেখান থেকে এতো দিনে খুব বেশি এগোতে পারেনি দল। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে টি-টোয়েন্টি খেলছি। কিন্তু আমি বলবো যতটা উন্নতি করার কথা ছিল সেটা হয়নি। এই জন্য উইকেট দায়ী, আর আমাদের ব্যাটারদের স্কিলে সমস্যা তো আছেই। তবে এককভাবে ক্রিকেটারদের বা টিম ম্যানেজম্যান্টের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও (বিসিবি) এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।’ অন্যদিকে অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, ‘আমরা যে উইকেটে খেলি সেখানে কিভাবে ১৮০ রান করতে হয় তাই আমাদের জানা নেই অনেকের। এখানে উইকেট পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের স্কিলেও সমস্যা আছে। সেটি নিয়েও কাজ করতে হবে।’ প্রায় প্রতিটি সিরিজ হারের পরই দেশের উইকেট নিয়ে হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু তাতে কী! দুই যুগ পার হলেও পরিবর্তন আসেনি। সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের অভিযোগ এ নিয়ে আসলে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে কথাই চলছে শুধু!

অন্যদিকে এই উইকেটে বেহালদশার জন্য যাকে সবসময় দায়ী করা হয় সেই কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা আছেন বহালতবিয়তে। তাকে বদলালেই মিরপুরের উইকেট ভালো হবে কিনা তা নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘হতেও পারে তাকে বদলালে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এটা তো আমাদের হাতে নেই। আমরা বিসিবিকে জানিয়েছি। তারা সেটি নিয়ে ব্যবস্থা করবে। উইকেট বানানো তো আর আমাদের হাতে নেই। আমাদের কাজ শুধু খেলা।’
দিল্লিতে ভারতের ২২১/৯ স্কোরের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৩৫/৯-এ।
ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছে টানা দুই ম্যাচ। দিল্লি জয়ের যে একমাত্র সুখস্মৃতি ছিল সবশেষ হারে সেটিও হয়েছে মলিন। গতকাল বিকালে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে হায়দরাবাদ পৌঁছেছে দল। শেষ ম্যাচে হারলেই হোয়াইটওয়াশ। তবে অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, ‘আমরা বারবার একই ভুল করছি, যেটা দল হিসেবে ইতিবাচক কিছু নয়। আমাদের উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। আর যদি টস জিতে বোলিং নেওয়ার কথা বলেন, তাহলে বলবো সেটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা প্রথম ৬-৭ ওভারে ভালো বোলিং করেছি। তবে, ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। এরপর তারা (ভারত) ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে নিজের ওপর ভরসা রাখাটা জরুরি। আপনি যদি দেখেন ৬-৭ ওভারের পর কিন্তু আমরা নিজেদের পরিকল্পনা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। যেটা ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দেয়।’

mzamin

No comments

Powered by Blogger.