কোটিপতি জামুকা’র অফিস সহকারী মামুন মিয়া by মতিউল আলম ও এনায়েতুর রহমান

মামুন মিয়া (৩০)। পিতা দুলাল মিয়া ফেরি করে খিলিপান বিক্রি করতেন। কিন্তু জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অফিস সহকারী পদে চাকরি পেয়েই ভাগ্য খুলে যায় মামুনের। ১০ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। চলাফেরা করেন প্রাইভেট কারে। ঈশ্বরগঞ্জের রায়েরবাজার স্টেশন রোডে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় কিনেছেন জমিসহ ৪তলা ভবন। এ ছাড়া নামে-বেনামে রয়েছে ৭ একর জমি।

স্থানীয় দক্ষিণ বনগাঁও গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার হাদিস জানান, মামুনের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বনগাঁও গ্রামে। বাবা দুলাল মিয়া ১০ বছর আগেও আঠারবাড়ি রায়ের বাজারে ফেরি করে খিলিপান বিক্রি করতেন। স্ত্রী, ৩ ছেলেও  ৩ মেয়েসহ ৮ সদস্যের পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে সংসার চালাতেন।  ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাস করার পর আর লেখাপড়া করেননি। ২০১৩ সালে এক সচিবের মাধ্যমে জামুকায় চুক্তিভিত্তিক  অফিস সহায়ক পদে যোগ দেন। এরপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাণিজ্যে নামেন তিনি। দুহাতে টাকা কামানো শুরু করেন।  আড়াই কোটি টাকা দিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা এলাকায় প্রায় ৩ একর জমি ক্রয় করেন মামুন। যার বর্তমান বাজার মূল্যে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ঈশ্বরগঞ্জ থানার আঠারবাড়ী রায়েরবাজার রেল স্টেশন রোডে ৫ শতাংশ জমিসহ ৪তলা বিল্ডিং কেনেন। যার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ১১ই মার্চ দক্ষিণ বনগাঁও নিবাসী জালাল উদ্দিনের ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে ২৬ শতাংশ জমি ৪০ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। দক্ষিণ বনগাঁও গ্রামের সিরাজ মিয়ার কাছ থেকে ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে এবং আঠারবাড়ী নিবাসী আ. খালেকের কাছ থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করে। মামুন মিয়া ক্রয়কৃত সম্পত্তির বিক্রেতাদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন তারা হলেন- স্থানীয় আব্দুর রশিদের নিকট থেকে ২০ শতাংশ এবং মোহাম্মদ-এর নিকট থেকে ৪০ শতাংশ এবং আহাম্মদ আলীর নিকট থেকে ৫০ শতাংশ এবং বিল্লাল হোসেনের নিকট থেকে ৬০ শতাংশ এবং আব্দুল খালেকের নিকট হতে ২০ শতাংশ, আবুল কালাম-এর নিকট থেকে ১০০ শতাংশ, শহীদ মিয়ার নিকট থেকে ২০ শতাংশ, শহীদ মিয়া লবুসহ আরও অনেকের কাছ থেকে জমি রয়েছে। অভিযুক্ত মামুন মিয়ার বর্তমানে নামে ও বেনামে প্রায় ৫০০ শতাংশ-এর উপরে জমি ক্রয় করেছে। যার আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের একজন অফিস সহায়ক পদে চাকরি করে স্বল্প বেতন কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন মামুন- এই প্রশ্ন এলাকাবাসীর।  
স্থানীয় মৃত গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী তাহমিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদ পায়নি। মামুন জামুকাতে চাকরি করে। অনেক মানুষ আছে যারা যুদ্ধ করে নাই, তাদেরকে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ করে দিয়েছে। আমার স্বামীও পাঁচ বছর আগে কাগজপত্র দিয়ে কিছু টাকা পয়সা দিয়েছিল, দুই বছর হয় আমার স্বামী মারা গেছে। মামুনের কাছে টাকা চাইলে আরও হুমকি দেয়। টাকাও দেয় না কাগজপত্রও ফেরত দেয় না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মামুন মিয়া মানবজমিনকে বলেন, তিনি প্রতিহিংসায় শিকার। সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার পিতা ব্যবসা করে তিন ভাইয়ের নামে জায়গা জমি কিনেছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিক্রি করে দেয়ার নামে কোনো টাকা পয়সা নেইনি। প্রাইভেট কারটি আমার না।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.